somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অত্যাধুনিক প্রযুক্তি: সেন্সর নেটওয়ার্ক

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার বাসায় গ্যাস বিল সাশ্রয় করার জন্য এই ভরা শীতে ঘুমোতে যাবার সময় বা আগে দুই ঘন্টার মতো রুম হিটার অন রেখে রুম গরম হবার পর স্ট্যান্ডবাই করে দিয়ে ঘুমাতে যাই। কখনো কখনো অনেক রাতে বাসায় ফিরলে হিটার অন করে দিয়েই শুয়ে পড়ি। গরমটা ভাল করে লাগবার জন্য বেডে না ঘুমিয়ে নিচে ফ্লোর মেটের উপরই ঘুমাই। অনেকক্ষণ পর যখন পিঠে গরম লাগে বেশি তখন উঠে হিটার স্ট্যান্ডবাই করে দেই। কিন্তু কখনো কখনো ঘুম থেকে উঠে দেখি হিটার আবার অন! ঘটনা কি? নাহ, এটা কোন ভুত-পেত্নীর আছর না। :)

ঐ হিটারের সাথে সেন্সর নামক এক পাহারাদার লাগানো আছে যে সবসময়ে রুমের তাপমাত্রা মাপতে থাকে। যখনই সহনশীল মাত্রার নিচে নেমে যায় তাপমাত্রা তখনই সে হিটার অন করে দিয়ে গৃহকর্তাকে অতিশীতের হাত থেকে রক্ষা করে। তা না হলে দেখা যেত ঘুমের ভিতরেই মাইনাস ডিগ্রী তাপমাত্রায় হি হি করে কাঁপছি!

তাহলে আমরা এবার জানতে চাই এ সেন্সর মানে কি? খায় নাকি মাথায় দেয়? সেন্সর নেটওয়ার্কই বা কি জিনিস?

বাংলাদেশের লোডশেডিং-এর জামাই আদরের মাঝে থেকে এ সরকারের আমলে আপনারা সবাই কম-বেশি সৌর বিদ্যুত নামটার সাথে পরিচিত। :) এই সৌরবিদ্যুতের যে মূল ইউনিট সেটা হলো 'সোলার সেল'। এটাও একটা সেন্সর যন্ত্র। এর কাজ হলো দিনের বেলায় সূর্যের তাপ সেন্স করতে থাকে, তারপর সে অনুযায়ী বিদ্যুত উৎপাদন করে। একটা সোলার প্যানেলে হাজার হাজার সোলার সেল থাকে। সাথে থাকে ট্র্যাকার, যেটা দিয়ে সকাল-দুপুর-বিকেল সূর্যের গতিপথের পিছপিছ ঘুরে।তবে সোলার প্যানেল থেকে ডিসি বিদ্যুত উৎপন্ন হয় যেটা ব্যাটারী চার্জ করার মাধ্যমে সংরক্ষণ করা হয়। সেটা দিয়ে ফ্যান চালাতে হলে ইনভার্টার দিয়ে এসি বিদ্যুতে পরিবর্তন করে নিতে হয়।

তবে পোস্টের মূল উদ্দেশ্যের বাইরে গিয়ে বলি আমাদের দৈনন্দিন চাহিদা মেটানোর জন্য যে পরিমাণ বিদ্যুত দরকার সেটা সোলার প্যানেল দিয়ে পূরণ করা সম্ভব না, কারণ এটা দিয়ে খুব অল্প ভোল্টেজের বিদ্যুত উৎপন্ন হয়, কিন্তু সোলার প্যানেলগুলোর দাম অত্যধিক।গ্রামে- গন্জে বিশেষ করে দ্বীপ অন্চলে যেখানে বিদ্যুতের তার পৌঁছানো কষ্টকর সেখানে নাই মামা চেয়ে কানা মামা ভাল হিসেবে সৌর বিদ্যুত কাজে লাগে।

তাহলে আমরা কি দেখলাম? একটা সেন্সর (Sensor) এক শক্তিকে আরেকটা শক্তিতে রূপান্তর করে।এটার আরেকটা নাম হলো ট্রান্সডিউসর (Transducer). যেমন ধরুন, তাপ শক্তি থেকে বিদ্যুত শক্তি, আলোক শক্তি থেকে বিদ্যুত শক্তি, শব্দ শক্তি থেকে আলোক শক্তি, চুম্বক শক্তি থেকে শব্দ শক্তি ইত্যাদি ইত্যাদি।

তাহলে আমরা নানারকমের সেন্সরের প্রকারভেদটা একটু দেখে নেই,

১। ম্যাকানিক্যাল সেন্সর (পিজোইলেকট্রিক ইফেক্ট কাজে লাগায়, নদীর জোয়ার ভাটা নির্ণয়ে, বন্যা পরিস্থিতিতে পানির উচ্চতা মাপতে পারে)
২। ম্যাগনেটিক, ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক সেন্সর (হল ইফেক্ট কাজে লাগায়)
৩। থার্মাল সেন্সর (এটা আমার রুমে কাজ করে)
৪। অপটিক্যাল ট্র্যান্সডিউসার (ফটোভোল্টায়িক ইফেক্ট কাজে লাগায়, এটা হলো গিয়ে সোলার সেল)
৫। ক্যামিক্যাল এবং বায়োলজিক্যাল সেন্সর (বিভিন্ন ফুড মনিটরিং-এর কাজে, ব্লাড প্রেশার মাপতে, হার্টের অবস্থা ইত্যাদি চেক করতে ব্যবহৃত হয়)

ব্র্যাকেটের ভিতরে কিছু তাত্ত্বিক ইফেক্টের কথা বলা আছে, মানে এই সেন্সরগুলো কিভাবে কোন পদ্ধতিতে সেন্সিং-এর কাজ করে সেই নামগুলো। এগুলো সাধারণের না জানলেও চলবে, কেবল এই লাইনের টেিক লোকেরা নিজ দায়িত্বে পড়ে বুঝে নিলেই হবে বা অনেকে জানেও। :)

এবার আমরা একটু বুঝে নেই সেন্সর নেটওয়ার্ক কি জিনিস? মনে করুন কোন এক স্থানের পরিবেশের ব্যাপারে আপনার উপাত্ত দরকার। তাহলে কি করতে হবে অনেকগুলো সেন্সর ডিভাইস (Sensor/ Actuator) সেখানে ছড়িয়ে দিতে হবে, তাদের কাজ হবে আশপাশের পরিবেশ থেকে কাঙ্খিত তথ্য সংগ্রহ করা, যেমন ধরেন তাপমাত্রা, এরপর সেটাকে মেশিন বুঝবে সেরকম ভাষায় পরিবর্তন করা মানে ইলেকট্রিক সিগনালে রূপান্তর করা। এদের সবার মাঝে বিভিন্ন টপোলজিতে কানেকশান থাকবে। কানেকশান হতে পারে রিং টপোলজিতে (Ring Topology) বা মেশ টপোলজিতে (Mesh Topology) বা আর কোনভাবে। আবার কানেকশান হতে পারে তারসহ (Wired) বা তারছাড়া (Wireless). বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারহীন সেন্সর নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা হয়, ঝামেলা কম, কস্ট কম তাই। সেন্সর নেটওয়ার্ক সাধারণত এডহক নেটওয়ার্কের (Adhoc Network) ন্যায় কাজ করে।



এরপর একটা মাস্টার থাকে (Gateway Sensor node) বা ধরেন গিয়ে মোবাইল ফোনের যে বেইস স্টেশন (Base Station) আছে সেরকম কিছু, তার কাজ হলো বিভিন্ন সেন্সর নোড থেকে উপাত্তগুলো সংগ্রহ করা, কোন নোড নষ্ট হয়ে গেল কিনা, তার আয়ু শেষ হয়ে এলো কিনা এসব দেখা। যদি লিন্কের মাঝখানের কোন নোড নষ্ট হয় তাহলে বিকল্প কানেকশান তৈরী করা, নোডগুলোতে পাওয়ার সাপ্লাই দেয়া ইত্যাদি ইত্যাদি। এরপর সে উপাত্তগুলো জোগাড় করে উপরের মহলে পাঠায় প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবার জন্য।


সেন্সরের আরেক রকম দুই ভাগ হলো: স্মার্ট সেন্সর এবং ভার্চুয়াল সেন্সর।

স্মার্ট সেন্সরের কাজ শুধু কেবল তথ্য সংগ্রহ করা না, সেখানে সিগনাল প্রসেসিং-এরও কাজ হয়, কিছু মেমোরী থাকে, তাৎক্ষণিকভাবে কিছু জরুরী সিদ্ধান্ত নেবার মতো ক্ষমতা থাাকে, জরুরী পরিস্থিতির তৈরী হলে ( নদীতে হঠাৎ বন্যা বা বনে দাবানল ছড়িয়ে পড়লে) এলার্মিং ফাংশানও তৈরী করতে পারে। ভার্চুয়াল সেন্সর, স্মার্ট সেন্সরেরই একটা পার্ট।




তাহলে এই হলো অতি সংক্ষেপে সেন্সর নেটওয়ার্কের টেকি গ্যাজানি।




এবার এই নেটওয়ার্কের মজার কিছু এপ্লিকেশন দেখি,

১। ব্যস্ত শহরে রাস্তার জ্যাম কমানো(SFPark Program) :

Click This Link

আমেরিকার সানফ্রানসিস্কো শহরে হাজার হাজার ম্যাগনেটিক সেন্সর লাগানো হয়েছে যাতে করে ড্রাইভাররা খুব সহজে শহরে পৌঁছেই কোন পার্কিং করার জায়গা খালি আছে সেটা খুঁজে বের করতে পারে। এর জন্য ড্রাইভারদেরকে একটি ওয়েবসাইট বা স্মার্ট ফোন ব্যবহার করতে হবে।

২। বডি সেন্সর নেটওয়ার্ক অথবা বডি এরিয়া নেটওয়ার্ক (BSN / BAN):

শরীরে তাপমাত্রা, ব্লাড প্রেসার, ডায়াবেটিসসহ একজন রোগীর অনেক কিছুই ডাক্তার দূরে বসে মনিটর করতে পারবেন।




৩। বনের দাবানল সেন্স করা:

Click This Link

শীতকালীন শুষ্ক সময়ে অনেক সময়েই বিভিন্ন বনে গাছে গাছে সংঘর্ষ হয়ে দাবানল ছড়িয়ে যেতে পারে। চীনে পাঁচ মিনিটের ভিতরে সেই দাবানল সেন্স করার একটা পাইলট প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে।






সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৩৮
২৭টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজত্ব আল্লাহ দিলে রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েম আমাদেরকে করতে হবে কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:০৬



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) কেড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তির কোরাস দল

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৫



ঘুমিয়ে যেও না !
দরজা বন্ধ করো না -
বিশ্বাস রাখো বিপ্লবীরা ফিরে আসবেই
বন্যা ঝড় তুফান , বজ্র কণ্ঠে কোরাস করে
একদিন তারা ঠিক ফিরবে তোমার শহরে।
-
হয়তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাইডেন ইহুদী চক্তান্ত থেকে বের হয়েছে, মনে হয়!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮



নেতানিয়াহু ও তার ওয়ার-ক্যাবিনেট বাইডেনকে ইরান আক্রমণের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো; বাইডেন সেই চক্রান্ত থেকে বের হয়েছে; ইহুদীরা ষড়যন্ত্রকারী, কিন্তু আমেরিকানরা বুদ্ধিমান। নেতানিয়াহু রাফাতে বোমা ফেলাতে, আজকে সকাল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজ ২৫শে বৈশাখ। ১৬৩তম রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আমার গাওয়া কয়েকটি রবীন্দ্রসঙ্গীত শেয়ার করলাম। খুব সাধারণ মানের গায়কী

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০৫

আপনারা জানেন, আমি কোনো প্রফেশনাল সিঙ্গার না, গলাও ভালো না, কিন্তু গান আমি খুব ভালোবাসি। গান বা সুরই পৃথিবীতে একমাত্র হিরন্ময় প্রেম। এই সুরের মধ্যে ডুবতে ডুবতে একসময় নিজেই সুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্ব কবি

লিখেছেন সাইদুর রহমান, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৭

বৈশাখেরি পঁচিশ তারিখ
কবি তোমার জনম
দিন,
বহু বছর পার হয়েছে
আজও হৃদে, হও নি
লীন।

কবিতা আর গল্প ছড়া
পড়ি সবাই, জুড়ায়
প্রাণ,
খ্যাতি পেলে বিশ্ব জুড়ে
পেলে নভেল, পেলে
মান।

সবার ঘরেই গীতাঞ্জলী
পড়ে সবাই তৃপ্তি
পাই,
আজকে তুমি নেই জগতে
তোমার লেখায় খুঁজি
তাই।

যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×