somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প: পড়শী

৩০ শে জুলাই, ২০২১ রাত ৯:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হ্যাঁ গো টুনির মা, আসো আমাদের বাসায়। এইমাত্র রান্না শেষ করলাম। আসো একটু গল্প করি।
সাজেদা বেগম আর টুনির মা। দুই অসম বয়সের দুই নারী। দারূণ সখ্যতা।
ফুফু, আমার রান্না আরেকটু বাকী আছে। টুনির বাবারও বাসায় আসার সময় হয়ে গেল। নিচতলা থেকে উঠে এসে বলে গেল টুনির মা। বয়স ২৫শের কাছাকাছি। ফুফুর পন্চান্ন।
আজ ডালের চচ্চড়ি, শুটকি ভর্তা আর রুই মাছের ঝোল। ভাতিজার বাড়িতে থাকেন। একা মানুষ। ছেলে আছে একজন। সারাদিনই কাজে কর্মে বাইরে থাকে। এখানে ভাতিজার ছেলেমেয়েদের দেখাশোনা করেন। নাতিরা তাকে ভালই বাসে। ভাতিজার বৌ আছে। তার সাথে মিঠেতিতে সম্পর্ক। বৌ-শ্বাশুড়ীর সম্পর্ক যেমন হয় আর কি!

ফুফুর কাছে নিচতলার বৌ টাই বেশি পছন্দ! ভালই মিলেছে তার সাথে। ঘুম থেকে উঠে হালকা কিছু খেয়ে একবার নিচে গিয়ে গল্প করে আসে। আবার দুপুরের রান্না-বান্না হয়ে গেলে খাবারের পর আবারো বেশ লম্বা সময় ধরে গল্প। এভাবেই সময় কাটায় দুইজন।

আজ কি রানলা?
কৈ মাছ ভুনা। ফুফু, এখন কথা বলার টাইম নাই। টুনির বাবা এলো বলে! চুলার উপরে ভাত রেখে এসেছি। টুনিকে এখনো গোসল করাইনি। একটু শাক ভাজিও করেছি। যাই তাড়াতাড়ি। বিকেলে খেয়ে দেয়ে চলে আসবেন আমাদের বাসায়। তখন কথা বলবোনি। এখন যাই।

হ্যাঁ, আমিও এখনও গোসল করিনি। এতো যাই যাই কর কেন, যাবা আর কি! নাতিরা আমারে এমন জ্বালায়। খেয়ে দেয়ে বেসিন কেমন নোংরা করে রেখেছে দেখ! এ নিয়ে কয়েকবার পরিষ্কার করলাম! ভর্তা করতে গিয়ে মরিচে হাতটা জ্বলে গেল!

বিকেল প্রায় চারটা! মাত্র খাওয়া শেষ হলো। বড় নাতিটাও সাথে খেয়ে উঠলো।
মেঝোটা রুমে দরজা আজ প্রায় সারাদিন বন্ধই রেখেছে। সকাল থেকে অনলাইন ক্লাস। এইবার ক্লাশ নাইনে। এখন মনে হয় ঘুমোচ্ছে। না খেয়েই ঘুমিয়ে গেল। নাস্তা খেয়েছে সেই এগারোটায়।

ঢাকা শহরের ইটের দালানের ভিড়ে পড়ন্ত বিকেল বোঝা যায় না, যেটা গ্রামে বোঝা যায়। গাছের ছায়াগুলো একপাশে হেলে পড়ে। সূর্যের তেজ কমে আসে। শহরে অনেক গরম! সারাদিন ফ্যানগুলো মাথার উপর ঘুরতে থাকে। তবুও গরমের কমতি নাই।

সাজেদা বেগম গোসল করতে ঢুকলো। সারাদিন কাজের শেষে গায়ে একেবারে আঠা আঠা লাগে। বৌ থাকলেও এই সংসারে তিনিই রান্না-বান্না করেন। ভাতিজা উনার হাতের রান্না পছন্দ করেন। বৌ এর রান্না খেতে তেমন মজা পান না।

বৌ- এরও সুবিধা। সংসারে কাজের চাপ কমে গেল। আর আছে চার বছরের ছেলেটা। দূরন্ত! একরত্তি ছেলে। সবাইকে মোটামুটি ব্যস্ত রাখে। এ নিয়ে হাসান আলির সংসার।
ছেলেটা দাদিকেও ব্যস্ত রাখে নানান আবদারে। তাকে টুনির মাদের বাসায় নিয়ে যেতে হবে। লেইস ফিতা থেকে ক্লিপ কিনে দিতে হবে, বেলুন কিনে দিতে হবে। চা দিয়ে পরোটা খাবার সময় একই মগে তাকে চা দিতে হবে। না হলে দাদির সাথে চিৎকার চেঁচামেচি। কান্নাকাটি করে শেষ।
টুনির সাথে রাকিবের অনেক বন্ধুত্ব! রাকিব ছোট্ট ছেলেটির নাম।

আসরের নামাজ পড়ে দাদীর হাত ধরে টুনিদের বাসায় গেল রাকিব। টুনির সাথে ছুটোছুটি, দূরন্তপনা!

......
আজ শুক্রবার। এলাহী কারবার। টুনিদের বাসায় প্রতিবেশীদের দাওয়াত। সে সুবাদে বাড়িওয়ালার বাসার সবাই দাওয়াত পেয়েছে। ফুফু সাজেদা বেগম সকাল থেকে ব্যস্ত। সূরা কাহফ পড়ে, নাতিদেরকে নাস্তা খাইয়ে দিয়ে টুনিদের বাসায় গিয়ে টুনির মাকে কাজে সাহায্য করে। দুজনে মিলে অনেক আইটেম রান্না করে ফেলেছে। মুরগী ঝোল, ডিম ভুনা, রুই মাছ ভুনা, গরুর গোশত ভুনা, করলা দিয়ে বুটের ডাল, পুঁইশাক দিয়ে মাছের মুড়ো, চিংড়ির কোরমা,পোলাও, আরো কত কি! সাজেদা বেগম বেশ উপভোগ করেন টুনির মায়ের সাথে সময় কাটানোতে, কাজ করতে, গল্প করতে। মেহমানদের খাওয়া হয়ে গেলে, এরপর সারা বিকেল জুড়ে গল্প। বেলা কেটে যায় প্রতিদিন এভাবেই।

আর ঐদিকে রাকিব তার দাদুকে অনুসরণ করতে থাকে। দাদু কখন টুনিদের বাসায় যাবে, কতসময় ধরে সেখানে থাকবেন। সেও সাথে যাবে খেলা করতে। মায়ের বারণ শুনবে না, দুপুরে ঘুমোবে না। কেবলি দস্যিপনা! আর নয়তো মোবাইল ফোনে ভিডিও দেখা একটানা।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০২১ রাত ৯:০৭
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×