এক সময় আমার মন খুব এডভাঞ্চারাস ছিল। নতুন কিছু দেখা, নতুন কিছু করতে পারা, নতুন মানুষদের সাথে পরিচিত হওয়া, জানা, এসবে আমার আগ্রাহের, উৎসাহের কোন কমতি ছিল না। এই উৎসাহ থেকে প্রায় এভারেস্ট জয় করার অবস্থা আমার! এভারেস্টে না পারলেও, কোরিয়ার হালাসান এর ২০০০ ফুট এর অর্ধেক পর্যন্ত উঠেছি…যদিও ট্রেকিং নয়! কিন্তু সেই পর্যন্ত পৌঁছানোও একটা ভীষণ কর্মযজ্ঞ এবং সাহসের ব্যাপার!
এখন তায়েফের সেই পাহাড়গুলো ট্রেকিং করার আগ্রহ! দেশে তাজিনডং, এখনো যাওয়া হয়নি! তায়েফের ৬০০০ ফুট উঁচু পাহাড়ে গাড়িতে অনায়াসেই ওঠা যায়, সেই অভিজ্ঞতা আছে। কিন্তু সেখানে সামিত হয় কিনা ঠিক জানি না!
জীবনের সাহসের কোন কমতি ছিল না, আজো নেই! আছে কেবল সংগতির অভাব!
আমি আমার ছাত্রদের বরাবরই একটা কথা বলি, গত ১৫ বছর ধরে বলে এসেছি,
We Can! We Can! We Can!
‘পারি না’ বলে ডিকশনারীতে কোন শব্দ রেখ না! সেই ফার্স্ট ব্যাচের ছাত্রী থেকে শুরু করে আজকের ছাত্রী পর্যন্ত, একই কথা!
‘পারি না’ বলে ডিকশনারীতে কোন শব্দ রেখ না!
আমি প্রায়ই বলি, চিত্রনাট্য আমিই লিখবো! ভাগ্য বলে ব্যাপার আছে, কিন্তু আমার তো জানা নেই, আমার ভাগ্যে ভবিষ্যতে কি আছে? তাই লাইফ গোল এবং চলার পদ্ধতি, কর্মপরিকল্পনা, আমারটা আমিই করবো! বাকী আল্লাহ্র ইচ্ছা!
আমার সৌদি দেশটা অনেক ভাল লেগেছে, অবশ্য দেখেছি অল্প! মক্কা আর মদীনার শহরের এবং মসজিদুল হারাম এবং নববীর যেই শান্তি, সেটা নিজভূমে, নিজ বাসায়, নিজ পরিবারেও পাওয়া যাবে না! আল্লাহর অশেষ রহমতের জায়গা সেটা!
এই তো, আজ থেকে শুরু হচ্ছে কদরের রাতের ইবাদত! সব মসজিদে শুরু হচ্ছে ইতিকা’ফ। মহিলারাও তারাবী পড়ছে জামায়াতে, ইতিকাফেও অনেকে বসে যাবে। এই বাংলাদেশেই। একেবারেই অবাক হবেন না! এটাই আমরা পেরেছি গত বিশ-পঁচিশ বছরের প্রচার-প্রচারণায়। আমরা পেরেছি!
আমরা পেরেছি এই দেশ থেকে হিল্লা বিয়ে দূর করতে, দোররা মারা বন্ধ করতে। সমাজ পঞ্চায়েতের অপব্যবহার বন্ধ করতে। জঙ্গীবাদ অনেকটাই স্মিত। মাঝে মাঝে মাথাচাড়া দিতে চায়! কিন্তু পারে না! আমরা পেরেছি!
কেবল দূর্নিতি দূর করা অনেক দূরহ ব্যাপার হয়ে গেল, অনেকটা রাজনীতি জড়িয়ে আছে এসবের সাথে!
আমরা আরবী শিক্ষাকে সার্বজনীন করার চেষ্টায় আছি, সৌদি বা মধ্যপ্রাচ্যের সাথে একই দিনের ক্যালেন্ডার প্রবর্তন করার চেষ্টায় আছি, এ দেশে বায়তুল মাল প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা চলছে গত কয়েক বছর ধরে। ইনশাল্লাহ পারবো একদিন!
পাহাড়ীদের তাদের নিজস্ব ভাষায় লেখাপড়া করা, সাহিত্য চর্চা করার শক্তিশালী মাধ্যম গড়ে ওঠার অনেকটা কাজই এগোচ্ছে, যদিও মন্থর গতি। উত্তরাঞ্চলে এবং পাহাড়ে রিজার্ভয়ার করার চেষ্টা চলছে। পাহাড়ে বন উজার হয়ে গেছে! অনেক বৃক্ষরোপণ করতে হবে। বর্ষাকাল আসছে, সবাই মিলে চেষ্টা করবো!
এবার উত্তরাঞ্চলের নদীগুলো কিছুটা হলেও পানিপ্রবাহ ছিল, একেবারেই শুকিয়ে যায়নি! আশার আলো দেখতে পাচ্ছি!
যখন খুব চাপ অনুভব করি, এক স্যার পরামর্শ দিয়েছিলেন ডিভাইস থেকে দূরে থাকো!
এক শিক্ষক বলেছিলেন এডভেঞ্চার করতে করতে অচেনা, মুখোশধারীর হাতে ধরা পড়ো না। নিজের আশপাশের পরিচিত মানুষদের সাথে চলো। অনেক অনেক উপকারী পরামর্শ!
আরেকজন বলেছিলেন, এই সমাজে অনেকে ভাল কাজের অফার দেবে, মন্দ কাজেরও অফার দিবে। ভাল-মন্দ বুঝে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারাটাই বুদ্ধিমত্তা! টাকা প্রয়োজন, কিন্তু টাকার দাস হওয়াটা প্রয়োজনীয় নয়!
দাসত্বপনা এই সমাজ থেকে অনেক অনেক বেশি দূর করতে হবে। আমরা বৃটিশদের ২০০ বছরের শাসনের অভিযোগ আনি। কিন্তু এর পরে আরো প্রায় ৭০-৮০ বছর চলে গেল, আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে এখনো কষ্ট হয় কেন? আমরা তার আগে কি মুঘল, তুর্কী, ইরানী – ওদের সাথে ছিলাম না? কিছুই রপ্ত করিনি তাদের থেকে? নিজেদের কোন নিজস্ব দর্শন নেই?
তাহলে এক বৃটিশ জাতি কি করে আমাদের উপর এতোটা প্রভাব তৈরী করে? এই ছুতো দেয়াটা কি আমাদের জাতিগত শৈথিল্যের বহিঃপ্রকাশ নয়? আমরা এখনো জাতি হিসেবে সুগঠিত নই। তাই খুব সহজেই অন্যের হাতের পুতুলে পরিণত হবার মানসিকতা দেখাই। খুব খারাপ!
যায় দিন ভাল, আসে দিন খারাপ! অতএব, সাধু সাবধান!
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৫০