আজকের দিনটা কেমন জানি লাগছে। সবকিছু খুব তাড়াতাড়ি হয়ে গেছে। পড়াশুনা শেষ হল মাত্র। ভেবেছিল নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে তারপর এইসব নিয়ে ভাববে কিন্তু তার আগেই সব ঠিক হয়ে গেল। আগামী পরশু হলুদ তারপরদিন বিয়ে। অবাক লাগছে এই পরিচিত পরিবেশ, পরিবার সবকিছু ছেড়ে চলে যেতে হবে। ভাবতেই গা শিউরে উঠছে।
বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান হওয়ার কারণে সবসময় তাদের দেখাশুনা, শাসন, তাদের ভালবাসা, টুকরো টুকরো সুখ দুঃখ আর পড়াশুনায় বেশি মনযোগী হওয়ার জন্য কখনো কারো সাথে ভালোবাসার বন্ধনে জড়ানোর সুযোগ হয়ে উঠেনি তার। হয়তো সে কখনো নিজেই চায়নি। হয়তো চেয়েছিল বুঝে উঠতে পারেনি।
সে ভেবেছিল এমন একটা মানুষ যে কিনা তার সুখ দুঃখ তার ভালোবাসা, আবেগ সবকিছু বুঝবে। তার মর্যাদা দিবে। ভুল করতে গেলে তাকে ধরিয়ে দিবে, না এইভাবে না করে ওইভাবে করলে হয়তো আর একটু ভাল হোতো। আর সবকিছুর ঊর্ধ্বে তাকে ভালবাসবে।
এখন সে জানেই না মানুষ টা কেমন!!
কথা হয়েছে শুধু একবার। গলাটা কেমন জানি কর্কশ আর শুনেই মনে হচ্ছিল অনেক রাগি আর আবেগ অনুভূতি শূন্য। তারপর থাকেও দেশের বাইরে। তবুও বাবা মায়ের অনেক পছন্দের কারণে সে রাজী হয়ে গেছে।
তার প্রচণ্ড একটা ইচ্ছে যার কথা সে কখনো কাওকে বলেনি। তার আপন মানুষটা, যার সাথে সে সারাজীবন থাকবে সে যেন প্রথম রাতেই কামরাটা অন্ধকার করে না দেয়, যেন প্রথম রাতেই শুধু তার শরীরটাকে না চায়। চায় শুধু মানুষটা যেন তার সামনে এসে হাতদুটো ধরে তাকে বলে, পৃথিবীর কেওই সব সুখ পায়না কিন্তু যতটুকু সুখ পাবো দুজন মিলে ভাগ করে নিবো আর দুঃখগুলোকে আমরা আমাদের নিজস্বতায় পাল্টে দিব। জীবনের প্রত্যেকটা মুহূর্ত ভালোবেসে আপন করে নিবো। হঠাৎ মায়ের ডাকে চিন্তায় ছেদ পড়ে।
আজ সেই বিশেষ দিন। সবকিছু শেষে একা একটা রুমে বসে আছে সে। মানুষটা আসলো, অজানা আতংকে তিন্নির বুক ধড়ফড় করছে। সব নীরবতা ছেদ করে তপু বলল, তিন্নি তুমি কি আমার সাথে একটু ছাদে যাবে?
তিন্নি অবাক হয়ে কোনকিছু না বুঝে তপুর পিছন পিছন ছাদে উঠে এলো। একি! উথাল পাথাল জ্যোৎস্নায় ভেসে যাচ্ছে চারদিক। আজ কি পূর্ণিমা নাকি? সে জানেনা কেন তাহলে?? এত ভালো লাগছে কেন তার?? তপু ছোট্ট একটা টুল দেখিয়ে ওকে বসতে বলে সিঁড়ির দিকে চলে যায়। একটা বেহালা নিয়ে তিন্নির সামনে একটু দুরে দাঁড়িয়ে বাজাতে শুরু করলো। বেহালার সুরে আর অপূর্ব জ্যোৎস্নায় তিন্নির মনে হচ্ছিলো এইজগতের কোথাও নেই তারা। জ্যোৎস্না গলে গলে পরছে মানুষটার গায়ে কি অপূর্বই না লাগছে মানুষটাকে আর সুরের মূর্ছনায় ভেসে যাচ্ছে চারদিক।
কতক্ষণ কেটে গেছে এইভাবে তিন্নি জানেনা। হঠাৎ তপু লজ্জা লজ্জা মুখ করে তার সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসে ওর হাতদুটো ধরে আর সাথে সাথে তিন্নি বিদ্যুৎস্পৃষ্টের মত দাঁড়িয়ে যায়। তপু দাঁড়ানোর সাথে সাথে তিন্নি তাকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে থাকে আর চোখের পানিতে তপুর কাঁধটা ভিজে যাচ্ছে।
তপু চুপ করে তিন্নিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ভাবছিল সবাই হয়তো অনেক সুন্দর করে জীবনের এই অধ্যায়টা শুরু করে তারা নাহয় কেঁদেই শুরু করলো। আর মনে মনে ভেবে নেয় এইটাই যেন তিন্নির জীবনের শেষ কান্না হয়......।