রবিবার বিকেল।আমি চোখটা গোল গোল করে কম্পিউটার এর দিকে তাকিয়ে আছি।সিমু ইজ নাও অনলাইন...লেখাটা জ্বল জ্বল করে...আমি ওয়েবকেমটা ঠিক করে নেই...দেখি আমার মেজ বোন কফি নিয়ে বসে আছে...সে থমথমে মুখ করে বলে_হুম বলো কি অবস্থা সবার।আমি গড়গড় করে বলি...
ঘটনা-১
বুয়া আবার আমার চায়ের কাপ ভেঙ্গে ফেলসে,আমি রাগে অন্ধ হয়ে বোকছিলাম...সে বলল একটা কাপ ভাইঙ্গা এত্ত ঝাড়ি খাইতাসি,এমন ঝাড়িতো দুইডা কাপ ভাঙ্গনের...আইচ্ছা তাইলে আরেকটা ভাঙ্গি...এবং সে ঠাস করে অন্য কাপ ও ভেঙ্গে ফেলল... আমার বোন আগ্রহ নিয়ে একটু ঝুঁকে বলল_তারপর?আমি বললাম আম্মা বুয়া কে কিছুই বলে নাই,কারন আজকাল কাজের লোক পাওয়া যায় না।দেখো আমি আমার মগের শোকে কাল জামা পরে আছি। (আমার বোন হাসি আটকে চুপ করে থাকে।)
ঘটনা-২
আপার ৫ বছরের বড় মেয়েটা আজকাল খালি কাগজ খায়...সারাদিন কাগজ খায়।পড়ার বইয়ের কাগজ/গল্পের বইয়ের কাগজ/খবরের কাগজ/টিস্যু পেপার/পলিথিন/(এমন কি টাকাও!!!)সব কিছু চাবায় চাবায় ঘরে ফেলে রাখে।ওর মুখ দেখলে মনে হয় কাগজ না রসগোল্লা খাচ্ছে।কিছুতেই ওকে থামানো যাছে নাহ।বাসার সব বই খাতা তুলে রেখেছি।গতকাল টেলিফোন বিলে কামড় বসাতে গেছে অনেক কষ্টে টেনে বিলটা বাঁচিয়েছি আমি।আপা ওকে বলেছে...আনিকা,তোমার এই কাগজ চাবানোর জন্য আমার তোমাকে দুই চোখে দেখতে ইচ্ছা করে নাহ।সে নির্বিকার ভাবে বলেছে_আচ্ছা আম্মু আজ থেকে আমাকে এক চোখে দেখো।(আমার বোনের কফির মগ হাসিতে কেঁপে উঠে।)
ঘটনা-৩
পরশু আপা আর দুলা ভাই ঝগড়া করেছে,নিজেদের সাথে কথা বলবেনা ঠিক করেছে।এরপর আপা দুলা ভাইয়ের প্রিয় খাবার রান্না করে রেখেছে।আর দুলা ভাই আপার জন্য আপার প্রিয় গানের সিডি এনে বাজিয়েছে।তারপর ঝগড়ার পর কেন নিজে থেকে প্রথমে কেউ কথা বলতে আসে নাই,কেনো তাদের এত ইগো সেটা নিয়ে দুইজনে আবার ঝগড়া করে,আর আপা সব খাবার কেয়ার টেকার এর বউকে দিয়ে দিসে,আর দুলা ভাই সিডিটা ভেঙ্গে ফেলে দিসে।এখন তাদের কথা বন্ধ,তাই আমরা মনের আনন্দে টিভি দেখতে পারি কেউ বকে নাহ। (আমার বোন ও আনন্দে তার ঝকঝকে দাঁত বের করে দেয়)
ঘটনা-৪
আর আজকের শেষ ঘটনা হল_আপা,আমি যেই ছেলেটা কে এক চোখের কোনা মেরেও দেখতে পারতাম নাহ আজকাল তাকে আমার কেমন জানি প্রিয় ধরে গেছে।আপা এইবার প্রায় তার ল্যাপ্টপের সামনে চলে আসে...বলে_বাহ বাহ ভালই তো কিন্তু প্রিয় ধরা মানেকি???আমি একটু কাচুমাঁচু হয়ে বলি_প্রিয় ধরা মানে মোর দেন ভাল লাগা লেস দেন প্রেম প্রেম লাগা।ছেলেটা যেখানেই যায় ৫/৬ টা জিনিস ফেলে দেয়।আমার সাথে হাটতে যেয়ে সব সময় ই আমার পা মাড়িয়ে দেয়।ও পড়ালিখায় ভাল কিন্তু ওর হাতের লেখা টিচাররা বুঝে নাহ তাই কম নাম্বার পায়।কফি মগ নিয়ে ও টেবিলে গোল গোল চাকতির মত নকশা করে আবার মুছে দেয়...আমার দেখতে ভাল লাগে।টঙ-এর চায়ের শেষ বিন্দু পর্যন্ত খেয়ে তৃপ্তির হাসি দেয়।ওকে কমলা রঙের কিছু কিনে দিতে চাইলেই আঁতলে উঠে...হিঃ হিঃ হিঃ...সোনালু ফুল দেখলেই মুগ্ধ হয়ে যায়।আর যখনি ওর সাথে রিকশায় বসি রিকশাগুলো যেন জেট প্লেন হয়ে যায়...সো...সো...করে উড়ে যাওয়ার মত ছুটে চলে।আর ওকে ফোন দিয়ে মিয়াও...মিয়াও বললে অনেক খুশি হয়।আপা হতবাক হয়ে বলে_কি!!!!মিয়াও...মিয়াও!!!আমি অতি উৎসাহ নিয়ে বলি...হুম...আমাকে ও বিড়াল বলেতো তাই।কিন্তু আমি ওকে অনেক দিন হালুম হালুম বলতে বলসি কিন্তু ও বলতে চায় নাহ।
(আপা মাথা চুলকায় আমি বলতেই থাকি) আমিও এখন ওর মত মাফিয়া ওয়ার খেলি।আর ও এখন আমার মত পিস্তা কুলফি ভালবাসে।ই...ই...ই...(খুশিতে আমার হাসিও এ কান ও কান হয়ে যায়)
আপা প্রথমে মিটমিট করে হাসে...তারপর হেসে হেসে গড়িয়ে যায়...বলে_”আমারদের বাসা হল হূমায়ুনি ঢং এর বাসা...এসব হল হূমায়ুনি ঢং...হাঃ হাঃ হাঃ...এসব তো গল্পে ঘটেরে...আমি মুখটা বেজার করি... সে বলে...আপুনি জানিস তোরা কত সুখে আছিস?আমি তোদের থেকে হাজার মাইল দূরে থেকে তোদের কে হিংসা করি...আমার একঁঘেয়ে জীবনে বাঁচার উদ্দীপনা তোদের এর ঘটনাগুলো...বিলিভ মি...তোরা অনেক মজার জীবনে আছিস।প্রতিটি রবিবার আমার কাছে ভালবাসার কারন আমি তোদের কথা জানতে পারি।আজ যাই রে আপু...আর তুই তোর সেই ভাংচুর খান কে আমার হাই দিস তো।(আমি লজ্জায় একটু বেগুণী হয়ে যাই) :#>
আপা চলে যাওয়ার পর তার কথা মত নিজেদের কে আর নিজেকে সুখী ভাবতে থাকি...এমন সময় ঝনঝন করে শব্দ হয়...ছুটে রান্না ঘরে গিয়ে দেখি বুয়া বিশাল এক বাটি ভেঙ্গে ফেলসে...আমাকে দেখে বলে_আফা,ডিনার সেট এর এই একডাই বাকি ছিল ভাঙ্গনের,আইজকা হাত ফস্কায় পইড়া…আমি তাকে আর কথা শেষ করতে দেই না...আমার মাথা ঘুরতে থাকে আর মাথায় ঘুরতে থাকে একটাই কথা তা হল...হূমায়ুনি ঢং...হূমায়ুনি ঢং...হূমায়ুনি ঢং...
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মার্চ, ২০১১ রাত ১২:৪৮