বছরখানেক আগের কথা।
LRT ট্রেনে করে কোথাও যাচ্ছিলাম। ঠিক মনে নেই। ইউনিভার্সিটি স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠে দেখলাম, বসার তেমন কোন জায়গা নেই। তবে একটা শ্বেতাংগ মেয়ের পাশে দুটো সিট ফাঁকা দেখে এক সিট দূরত্ব রেখে বসে পড়লাম। জানিনা কেন, আমি বসা মাত্রই মেয়েটি তার সিট থেকে উঠে গিয়ে অদূরে দুটো মেয়ের মাঝের একটা ফাঁকা সিটে গিয়ে বসল। আমি জানি আমার চেহারা ভালো না, বেশ খারাপ। কিন্তু যাদের চেহারা খারাপ তারাও তো মানুষ। তাদেরও তো অনুভুতি আছে, ভালোলাগা আছে, মান-অপমান আছে, আছে রাগ-অনুরাগ। তারাও তো মানুষ হিসাবে নূন্যতম ভালোবাসা পাবার অধিকার রাখে, অধিকার রাখে বেঁচে থাকার। সেইদিন রাগে, ক্ষোভে, অপমানে আমার চোখে প্রায় জল চলে এসেছিল।
এরপরের ঘটনা এমন। ওই শ্বেতাংগ মেয়ের দুইপাশে যে দুই মেয়ে বসে ছিল, তারা পরের স্টেশনে নেমে গেল। আর দুইটা কুচকুচে কালো, তামিল, বিশালদেহী, মুশকো, মোষের মত, থলথলে, লদলদে ভুঁড়িওয়ালা, গোঁফওয়ালা, লোমওয়ালা, ট্যাটুওয়ালা, কানে দুলওয়ালা, হাতে চুরিওয়ালা, টাকলু, গন্ধযুক্ত, ঘামওয়ালা, লাল চোখের, কুঁতকুঁতে চোখের, হিংস্র চোখের, লালসাপূর্ণ চোখের, লকলকে জিহবার, লালাঝরা জিহবার, থ্যাবড়া নাকের, লোমবের হওয়া নাকের, রোমশ শরীরের, ঘর্মাক্ত, দানব সদৃশ, কামলা সদৃশ, চোর সদৃশ, মেথরের মত, সুইপারের মত, ইতরের মত, অসভ্য, আদিম, পাশবিক, পিশাচ টাইপ, লাফাঙ্গা, উল্লুক, খাটাশ, জংলী, জলহস্তীর মত, বেবুনের মত, শিম্পাঞ্জীর মত, কিংকং, রাজাকারের মত, আলবদরের মত দুই ব্যাটা এসে ওই মেয়ের দুইপাশে বসল।
ভাবলাম এইবার হলতো! এবার কোথায় যাবা তুমি শ্বেতাংগ পাখি। কিন্তু "ওমা!" সেই মেয়ে দেখি ওই দুই পালোয়ান ভোদরের দুই বাহুর মাঝখানে আরামের সহিত নিজেকে সেধিঁয়ে চুইংগাম চিবুতে চিবুতে মোবাইল টিপতে থাকল। সেইদিন রাগে, ক্ষোভে, অপমানে আমার চোখে আবার জল চলে এসেছিল।
এরপর থেকে আমি নিজেই নিজেকে বদলিয়ে ফেললাম। অপমানিত হবার আগের সাম্ভব্য অপমানের প্রতিশোধ নিতে থাকলাম। যেমন বাসে করে আমি কোথাও যাচ্ছি। আমি সাধারণত ভিতরের সিটে জানালার পাশে বসি। আমার পাশের খালি সিটে কোন মেয়ে বসলে বলি "এক্সকিউজ মি, আমি বাহিরে যাবো" এই বলে অন্য সিটে গিয়ে বসি না হয় দাঁড়িয়ে যাই।
বাসের মেয়েরা অভিমানী চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে।
চলবে
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৩৬