somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইন্দোনেশিয়া সিরিজ - ১ঃ মেদানের পথে পথে

০২ রা জানুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বিয়ের কয়েক মাস পরে একদিন হটাৎ করেই সিদ্ধান্ত নিলাম ইন্দোনেশিয়া যাবো। ভেনীকে বলা মাত্রই সে রাজী হয়ে গেল। আর বেশি চিন্তা না করে প্লেনের টিকেট কেটে ফেললাম। কারণ, বেশি চিন্তা-ভাবনা করলে আর কোথাও যাওয়া হয় না।

ভেনীদের আসল নিবাস ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিম সুমাত্রা প্রভিন্সের ছোট শহর সাওলন্তুতে। কিন্তু, তার বেড়ে উঠা উত্তর সুমাত্রার রাজধানী মেদান শহরে। তার বাবা-মা মেদান শহরেই থাকে। আমাদের দেশে অনেকের যেমন দিনাজপুর আসল ঠিকানা হলেও ব্যবসার কাজে রাজশাহীতে থাকে, ভেনীদের ব্যাপারটাও অনেকটা তেমন। তাদের আদি নিবাস সাওলন্তুতে হলেও তারা থাকে মেদানে। কারণ, মেদান শহরটি সুমাত্রা দ্বীপে ইন্দোনেশিয়ার যেসব প্রভিন্স আছে তার মধ্য সবচেয়ে বড় আর ব্যবসা-বানিজ্যের সুযোগ-সুবিধাও সেখানে বেশি। তাই ভাবলাম, এবার না হয় মেদান শহরে যাবো। পরেরবার হয়ত অন্য কোথাও।

কুয়ালালামপুর থেকে মেদান খুব কাছে। প্লেনে করে যেতে প্রায় এক ঘন্টার মত সময় লাগে। ঠিক দিন-ক্ষণে আমরাও একদিন প্লেনে চড়ে বসলাম আর মেদান শহরে পৌছেও গেলাম একেবারে সময়মত।

যখন ভেনীদের বাসাতে পৌঁছালাম তখন প্রায় রাত দশটা। ইন্দোনেশিয়ান হিসাবে অনেক রাতই বলা যায়। চারিদিক তাই শুনশান হয়ে গেছে। কিন্তু নতুন জামাই বলে কথা। ভেনীদের বাসাতে একেবারে হৈ-চৈ অবস্থা।

ভেনীরা তিন বোন। মানে আমার দুই শালি। ভেনী সবার বড়। দুই বোনের একজনের নাম উইন্দা। ওর বিয়ে হয়েছে, একটা ফুটোফুটে মেয়েও হয়েছে। মেয়ের নাম রাদিন। বয়স এক বছরের একটু বেশি। উইন্দা মেদানে থাকলেও তার বাসা আমার শ্বশুড়বাড়ি থেকে বেশ দূরে। ভেনীর আরেক বোনের নাম নিনা, এখনো ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। তার ইউনিভার্সিটি অন্য প্রভিন্সের ভিন্ন শহরে। সে তার ইউনিভার্সিটির ডর্মিটরিতে থাকে।

আমার আর ভেনীর মেদান আসা উপলক্ষে শালিরাও শ্বশুড়বাড়িতে চলে আসছে। বেশ উৎসবমুখর পরিবেশ। ভেনীর আম্মা যথেষ্ট অসুস্থ থাকার পরেও খাবার-দাবার আর আদর-আপ্যায়নের কোন কমতি রাখেন নাই। উনার কিডনীতে তখনো সমস্যা। মাঝে মাঝেই উনাকে অক্সিজেন দিতে হয়। উনার রুমে অক্সিজেনের বিশাল সিলিন্ডার, খাটের পাশে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি। কিন্তু, উনার চোখে-মুখে আনন্দটা দেখার মত ছিল। নিজের বড় মেয়ে বিয়ের পর প্রথম মায়ের বাড়ি আসছে এই খুশিতেই তিনি অনেক সুস্থ হয়ে গেছেন। আমার বউয়ের মত তার মাও আবেগপ্রবণ। খুব অল্পতেই উনার চোখ ছলছল করে উঠে। উনি সত্যি সত্যি আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলেন।

ভেনীদের পারিবারিক আনন্দের বর্ণনা এখানে দিতে পারছি না। কারণ, সব কথা লিখে প্রকাশ করা যায় না। কিছু কিছু কথা অনুভব করে বুঝে নিতে হয়। এ ব্যাপারটাও তেমনি।

ভেনীরা তিন বোন একসাথে হবার পর তাদের কথা আর শেষ হতেই চায় না। ভেনীদের এই একতলা বাড়িটাতেই ওরা ছোট থেকে বড় হয়েছে, নিজেরা খুনসুটি আর দুস্টামি করে মারামারি করেছে, সামনের লনে খেলাধূলা করেছে। এর মাঝেই ওদের বাবা-মায়ের বয়স বেড়েছে, চুলে পাক ধরেছে, মেয়েরা একে একে দূরে সরে গেছে। অনেক আগে ওরা তিন বোন বারান্দার সামনের লনে একটা ছোট গাছ লাগিয়েছিল। সেই গাছ আজ বিশাল বড় হয়ে এই বাড়িতে ছায়া দিচ্ছে। অথচ সেই ছোট্ট তিন বোনের কেউ আজ এই বাড়িতে থাকে না। সবাই আজ হটাৎ করে অনেক বড় হয়ে গেছে। সে যে হাজারো স্মৃতির সমাহার। সেইসব কথা বলে আর শেষ হয় না।

ওদের গোছলখানায় পাথর দিয়ে বাঁধানো পানি ধরে রাখার বিশাল চৌবাচ্চা। সেখানে পানি টলটল করছে। ইন্দোনেশিয়ার অনেক প্রভিন্সের মানুষ এখনো এই জিনিস বাসাতে বানিয়ে রাখে। সেই ঠান্ডা পানি আমি যখন আমার শরীরে ঢাললাম সেটা আমার শরীর ছাপিয়ে মর্মে গিয়ে প্রবেশ করল। কোথা থেকে যেন এক ভীষণ পুরানো গন্ধ এসে আমার নিজের ছোটবেলার কথা মনে করিয়ে দেয়। ছোটবেলায় যখন দিনাজপুরে নানাবাড়ি যেতাম তখনকার এক সোদা গন্ধ কিভাবে যেন এই হাজার মাইল আর কয়েক দশক পাড়ি দিয়ে এই মেদান শহরে এসে আমাকে পুরোপুরি আচ্ছন্ন করে ফেলে। আমার মনে হতে থাকে সেই আশির দশকের শেষের দিকে নানাবাড়িত টিউবওয়েল থেকে পানি তুলে গোসল করছি। পানিতে সেই পুরানো আদি-অকৃত্রিম গন্ধ। চারপাশ ভীষণভাবে নিস্তরঙ্গ। আমি ঝাপসা চোখে সেই ভীষণ নিঃসীম নিস্তরঙ্গতায় গোসল করতে থাকি।

- মেদানে তোলা বউয়ের ছবি

***

পরেরদিন আমি আর ভেনী মেদান শহর ঘুরতে বের হলাম। আমার শ্বশুড় তাঁর গাড়ি দিতে চাইলেও আমি নিজের মতই ঘুরতে চাচ্ছিলাম। আর গাড়ি নিলে পার্কিং এর ঝামেলা আছে। নতুন শহরে এই ঝামেলার ভিতর দিয়ে যেতে চাচ্ছিলাম না, বরং নিজের মত করে শহরটাকে দেখতে চাচ্ছিলাম।

মেদান বেশ ছিমছাম আর পরিপাটি করে সাজানো শহর। বেশিরভাগ বাসাই ল্যান্ড হাউজ। মানে একতলা বা দুইতলা বাসা যার পুরোটাতে একটা ফ্যামিলি থাকে। বাসাগুলোর সামনে ছোট লন, যাতে বিভিন্ন ফুল-ফলের গাছ। তবে শহরের সেন্টারে অনেক বহুতল ভবন। কোথায় যেন বাংলাদেশের আশির দশকের জেলা শহরগুলোর মত একটা গন্ধ রয়েছে মেদানে।

আমার জন্য শহরটা নতুন হলেও ভেনীর জন্য না। এটা ওর ছোটবেলার শহর। ওর অনেক স্মৃতি, অনেক আবেগ এই শহর ঘিরে আছে। মেদান ওর কিশোরী শহরের মাটি, বৃষ্টির ভেজা ঘ্রাণ। ঢাকা যেমন আমার ধোঁয়া উঠা চায়ের কাপে এক চিলতে নিঃসঙ্গ দুপুর। ঢাকাতে প্লেন থেকে নামার সাথে সাথে যেমন একটা পুরানো ঘ্রাণ আমাকে প্রবলভাবে নাড়া দিয়ে যায়, হয়ত মেদানে আসার পর ভেনীরও এমন লাগছে। আমি ওর চোখেই মেদান শহর দেখার চেষ্টা করছি। ওর স্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটি, পরিচিত রেস্তোরাঁ, খেলার মাঠ, চেনা পথ-ঘাট, বন্ধু-বান্ধবিদের বাসা সবকিছুই যেন আবেগ দিয়ে ঠাসা। আমার চোখে এসব নতুন হলেও, ভেনীর চোখে দেখছি বলে আমিও যেন একটু একটু করে ওর অতীতটা দেখতে পাচ্ছি।

মেদান অনেক পুরানো শহর। একসময় পুরো ইন্দোনেশিয়া ডাচদের কলোনি ছিল। সেই ডাচদের তৈরি অনেক স্থাপত্য এখনও মেদান শহরে জ্বলজ্বল করছে। সেই কলোনিয়াল সময়ের নিশ্বাস আর দীর্ঘশ্বাস মিশে রয়েছে মেদানের অলিতে-গলিতে। শহরটাতে সবকিছুই কেমন যেন পুরাতন, কিন্তু পরম সযত্নে রাখা। মনে হয়, ইতিহাসের পাতা থেকে উঠে আসা গল্পের ছবি। মেদান শহরে মিশুকের মত একটা বাহন আছে যেটা দেখলে অনেকটা কলোনিয়াল সময়ের কথা মনে হয়। ওরা এটাকে বলে বেচাক। বেচাকে যাত্রী বসার জায়গাটা অনেকটা ঘোড়া-গাড়ির মত। মেদানের প্রাচীণতার সাথে বেচাক খুব সুন্দরভাবে মানিয়ে গেছে। মেদান শহর দেখে মনে হচ্ছে, এক লাফে কয়েক দশক আগের পৃথিবীতে চলে এসেছি।

খরচ কমানোর জন্য ট্যাক্সি ক্যাব না নিয়ে বেচাকে করেই চলাচল করার সিদ্ধান্ত নিলাম। ছোট্ট হালকা বাহন, আমাদের দুইজনের জন্য সবচেয়ে ভালো আর আরামদায়ক।

শুরুতেই গেলাম সান প্লাজ়া শপিং সেন্টারে। ইন্দোনেশিয়ানরা শপিং করতে অসম্ভব পছন্দ করে এবং ওদের জীবনের অন্যতম প্রিয় অনুষঙ্গ এটা। তাই ওদের শপিং সেন্টারগুলো হয় বিশাল বিশাল। ইন্দোনেশিয়ানরা সুযোগ পেলেই শপিং সেন্টারগুলোতে চলে যায়। সেখানে পারিবারিক আড্ডা হয়, খাওয়া-দাওয়া হয়, কেনাকাটা হয়, গান-বাজনা, মুভি দেখা সবই হয়। সান প্লাজাও এর ব্যতিক্রম না। প্লাজার ভিতরে বাচ্চাদের ব্যস্ত রাখার জন্য প্রতি ফ্লোরে রয়েছে বিশাল ট্রেন। সারা ফ্লোরে সেই ট্রেন ঘুরে বেড়াচ্ছে। জায়গায় জায়গায় আছে বাচ্চাদের জন্য গাড়ি, ইলেকট্রিক ঘোড়া সহ বিভিন্ন বন্য প্রাণীর প্রতিমূর্তি। বাচ্চাদের কলকাকলিতে মূখরিত পুরো সান প্লাজা।
মেদান শহরে প্রচুর চাইনিজ বংশোদ্ভুত ইন্দোনেশিয়ান বাস করে। বলতে গেলে শহরের এক-চতুর্থাংশ লোকই চাইনিজ বংশোদ্ভুত। ভারতীয় বংশোদ্ভুত ইন্দোনেশিয়ানও আছে বেশ। ভারতীয়দের ভিতর বেশিরভাগই তামিল। শহরে আছে চাইনিজিদের ঐতিহ্যবাহী এলাকা চায়না টাউন। আরো আছে ভারতীয় অধ্যুষিত এলাকা যার নাম “কামপুং মাদ্রাজ”। এমনকি এই শহরের নাম “মেদান” শব্দটাও এসেছে ভারতীয় তামিল শব্দ “মেইধানাম” থেকে, যার অর্থ “ভূমি”।

সান প্লাজার কাছেই কামপুং মাদ্রাজ। ভেনী বলল সে যখন হাইস্কুলে পড়ত তখন থেকেই সে নিয়মিত এই এলাকায় আসত। কারণটা আমি ঠিকই অনুমান করতে পারলাম। আমি জানি সে হিন্দি ছবির বিশাল ভক্ত। হিন্দি ছবির রোমান্টিসিজম ছোট থেকেই তাকে প্রবলভাবে টানত। মনেহয়, এই কারণেই সে আমাকে বিয়ে করেছে। ওর সাথে পরিচিত হবার পর আমি ভারতীয় নায়ক-নায়িকাদের একটু একটু করে চিনতে শিখেছি। হাইস্কুলে পড়ার সময় সে হিন্দি ছবির সিডি কেনার জন্য বাইক চালিয়ে কামপুং মাদ্রাজে আসত। পরে অবশ্য আমি লক্ষ্য করেছি যে পুরো ইন্দোনেশিয়াতেই হিন্দি ছবির কম-বেশি ভালোই জনপ্রিয়তা রয়েছে।

এভাবেই শহরটা দেখতে দেখতে যখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল তখন আমরা মেদানের সবচেয়ে বড় মসজিদ রায়া আল মাসুন-এর সামনে। শতবর্ষ পুরানো অস্ট-ভূজাকৃতির এই বিশাল মসজিদটির নকশা করেছিলেন দুইজন ডাচ স্থাপত্যবিদ। মসজিদটি মধ্যপ্রাচ্য, ভারতীয় এবং স্প্যানিস স্থাপত্য সংমিশ্রণের এক অপূর্ব নির্দেশন। এই মসজিদের অনিন্দ্য সুন্দর মার্বেল পাথরগুলো নাকি সেই শতবর্ষ আগে ইতালি, জার্মানি আর চীন থেকে আনা হয়েছিল। সন্ধ্যার আলো-আঁধারিতে মসজিদের সামনে অনেক নারী-পুরুষের সমাগম। মসজিদের সামনের বিশাল খোলা জায়গা সবাই যে যার মত ব্যস্ত। মালয়শিয়ার মত ইন্দোনেশিয়াতেও মেয়েরা মসজিদে নামায পড়ে।

বাসাতে ফিরে এসে দেখি ভেনীর আম্মা অনেক কিছুই রান্না করেছেন। তিনি এমনিতেই অসুস্থ। আমার জন্য এত খাটা-খাটুনি করা আসলে ঠিক হচ্ছে না। তার উপর তিনি আবার আমার জন্য বাংলাদেশি স্টাইলে খাবার রান্না করার চেষ্টা করছেন। আমি উনাকে বলে দিয়েছি যে আমার জন্য আলাদাভাবে কোন খাবার রান্না করার দরকার নেই। তিনি যদি আমাকে সত্যি মুগ্ধ করতে চান, তাহলে ইন্দোনেশিয়ান খাবার দিয়েই করুক। বিদেশে গিয়ে নিজ দেশের খাবার খেতে চাই না।

- মেদানের পোস্ট অফিস


***

জীবন ইন্দোনেশিয়াতে অনেকটা বেহেস্তের মত হয়ে গেল। আমার প্রতিদিনের রুটিন হল সকালে ঘুম থেকে উঠে নাস্তা-পানি করে এক কাপ চা খাওয়া। কিছুক্ষণ ইন্দোনেশিয়ান টিভি চ্যানেলগুলোতে গুতাগুতি করা। সে সময় ইন্দোনেশিয়াতে “ক্লোজাপ ওয়ান”-এর মত একটা অনুষ্ঠান হত। দেখতে দেখতে আমিও সেটার ভক্ত হয়ে গেলাম। শালি আর তাদের বান্ধবীরা যখন এসব নিয়ে কথা বলত আমি সেখানে জ্ঞান ফলাতে ভুলতাম না।

দুপুরে খাওয়ার পর ঘুরতে বের হতাম। ভেনী আর আমি শহরের পথে পথে ঘুরতাম, ওর বন্ধু-বান্ধবীদের বাসাতে আড্ডা দিতাম, ওদের প্রিয় রেস্তোরাঁয় খেতাম। সন্ধ্যা নামার পর ছোট শালি নিনাকে নিয়ে কারাওকে গান গাইতে যেতাম।

কারাওকে একটা জাপানি কালচার। এটা রেস্টুরেন্টের মত একটা জায়গা যেখানে ফ্যামিলি বা কয়েকজন বন্ধু একসাথে আড্ডা দেবার মত মাঝারি সাইজের সাউন্ড-প্রুফ রুম থাকে। সেই রুমে একটা বিশাল মনিটর থাকে যেখানে বিভিন্ন জনপ্রিয় গানের কথা বাদে শুধু সুর রেকর্ড করা থাকে। মনিটরে প্রিয় গানটা সিলেক্ট করলে সেটার সুর বিশাল স্পিকারে বাজতে থাকে। তখন মূল গানের সুরের সাথে তাল মিলিয়ে মাইক্রোফোনে নিজের গলায় গানটা গাইতে হয়। খেতে খেতে গান গাইতে গাইতে পরিবার বা বন্ধুদের সাথে আনন্দ করা আরকি।

আমার ছোট শালি নিনার সাথে বিয়ের আগে থেকেই আমার খুব দহরম-মহরম। ওর গানের গলা খুবই ভালো। সে যখন ইংরেজি গানগুলো গায়, তখন অবিকল মূল গানের আবেগটা আনতে পারে। স্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটি লেভেলে গান গেয়ে ও অনেক নাম কুড়িয়েছে। তার খুব শখ আমার সাথে একটা ইংরেজি গানের কভার করার।

এদিকে আমার গানের গলা ভয়ংকর বেসুরো। যদিও আমি মিউজিক এক-আধটু বুঝি কিন্তু সেটা গিটার বাজানো, রিদম প্রোগ্রামিং এসবের মধ্যই সীমাবদ্ধ। বুয়েটে থাকতে নিজের একটা ব্যান্ড ছিল, বাসাতে ছোট্ট একটা স্টুডিওর মত ছিল। কিন্তু আমি কখনোই গান গাইতাম না। আমি ছিলাম মিউজিশিয়ান। সেই ভরসাতেই নিনার সাথে কারাওকে আসা। অবশ্য কারাওকে যারা আসে তারা কেউ সুর সম্রাট তানসেন না। সবাই আমার মতই। মজা করতেই সবাই আসে পরিবার বা বন্ধুদের নিয়ে।

কিন্তু আমার শালি গানের ব্যাপারে যে পরিমাণ খুঁতখঁতে তাতে তার সাথে আমার আর ইহজনমে কোন গান কভার করা হবে না। বেশ কয়েকদিন চেষ্টার পর আমার শালি হাল ছেড়ে দিল আমার ব্যাপারে। পরে সে নিজেই কোথা থেকে একটা গিটার নিয়ে আসল। আমি গিটার বাজাই সে গান গায়। এভাবেই ভালো চলছিল।

একদিন শ্বাশুড়ি বললেন, তিনিও কারাওকে আসবেন। আমার তো মাথায় হাত। শালির সাথে উল্টা-পাল্টা গেয়ে পার পেলেও শ্বাশুড়ির সামনে এই বেসুরো গলায় গান গেয়ে ইজ্জত খোয়াতে চাই না। কিন্তু তিনি নাছোড়বান্দা। অবশেষে, তিনি আসলেন। সাথে আনলেন তার আরো দুই বান্ধবিকে। নিনাও তার বান্ধবিদের নিয়ে আসছে। আমার আরেক শালি উইন্দা তার পিচ্চি মেয়ে রাদিনকে নিয়ে এক কোণে ব্যস্ত। ভেনী আরেক কোণে চিন্তিত মুখে বসে আছে। নিনার বান্ধবীরা বেশি বেশি দুস্টামি করছে। আমি ডায়াসে দাঁড়িয়ে। হাতে গিটার, মুখের সামনে মাইক্রোফোন। এতগুলো মেয়ে আমার সামনে বসে আছে আমার সুরেলা কন্ঠে গান শোনার জন্য। আমি ওদের কাছে যেন এক ভিনদেশি রকস্টার। পুরো টান টান উত্তেজনা।

আমি ভাবছি, হে ধরণী তুমি দ্বিধা হও। আমি গিটার-মাইক্রোফোন সহ তোমার ভিতর ঢুকে যাই।

কিন্তু ধরণী দ্বিধা হয় না। তাই আমি চোখ বন্ধ করে ভাবতে থাকি এখানে কেউ আমার গলার সুর বিচার করতে আসে নাই। আমার কাছে কেউ জো স্যাট্রিয়ানির মত গিটার বাজানো আশা করে না। কেউ আমার কাছে কুইন ব্যান্ডের ভোকালিস্ট ফ্রেডি মারকুরির মত সুরেলা কন্ঠ আশা করে না। সবাই যেটা আশা করে সেটা হল একটা সুন্দর সময়, একটা সুন্দর স্মৃতি। কিছুদিন পর আমি আর ভেনী আবার কুয়ালালামপুর ফিরে যাবো। নিনা তার ইউনিভার্সিটিতে ফিরে যাবে। উইন্দা তার নিজের পরিবার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বে। আমার শ্বশুড়বাড়ি আবার খালি হয়ে যাবে। কিন্তু থেকে যাবে কিছু স্মৃতি। সেই স্মৃতিটাকে তো আমি সুন্দর করে দিতেই পারি। সব দ্বিধা ঝেড়ে ফেলে আমি বাংলাদেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড ক্রিপটিক ফেটের “প্রতিবাদ” গানটি নিজের মত গেয়ে গেলাম।

চোখের যত জল, মনের ব্যাথা ভয়
তুমি দাও আজ করে উজাড়
আমি নেবো, আপন করে
যেনো এসবই ছিলো আমার
যতদিন আছি আমি খুঁজবো তোমায়
দেখব এর শেষ কোথায়
যখনই আমি খুব কাছাকাছি
ঠিকানা দূরে সরে যায়
হায় … … …

আমার খুব প্রিয় একটা গান। কেমন গাইলাম জানি না। জানার চেষ্টাও করি নাই। কিন্তু আমার সব আবেগ ছিল এই গানে। আমার ফেলে আসা জীবনটাকে চোখের সামনে দেখার চেষ্টা করেছি গানটা গাইবার সময়। আমার গান শুনে পিচ্চি রাদিন হয়ে গেল উত্তেজিত। সে হাততালি দিয়ে তারস্বরে চিৎকার শুরু করে দিল। আমার শ্বাশুড়ি খুব আবেগপ্রবণ হয়ে গেলেন। আমি সবাইকে আমার গানের অর্থ বুঝিয়ে দিলাম।

আমার শালি গাইল জর্জ বেনসনের নাথিং গোনা চেঞ্জ মাই লাভ ফর ইউ। বলা-বাহুল্য তার গান অসম্ভব সুন্দর হল। নারী কন্ঠে এই গান শুনে আমার মনে হল ভিন্ন জগৎ থেকে এসে কেউ এই কারাওকে এসে গান গাইছে। আমার শ্বাশুড়িও একটা গান গাইলেন। মেয়ের মত উনারও গানের গলা খুব ভালো। কিন্তু আমি গানের অর্থ বুঝলাম না, কারণ গানটা ইন্দোনেশিয়ার এক লোকগীতি। পরে উনিও আমাকে গানের অর্থটা বুঝিয়ে দিলেন। গানের অর্থটা এমন যে একটা মেয়ে তার প্রেমিকের জন্য একটা দ্বীপে প্রতীক্ষা করছে অনন্তকাল ধরে। আমাদের দেশের গানের কথাগুলোও তো এমন।

ভালোবাসা আসলে সব দেশেই এক।

- রায়া আল মাসুন মসজিদ


***

ইন্দোনেশিয়াতে এসে প্রথমদিকে ওদের কারেন্সি নিয়ে খুব ঝামেলায় পড়তাম। ওদের টাকাকে “রুপিয়া” বলে। সেই সময় এক রিঙ্গিট ছিল প্রায় তিন হাজার রুপিয়া। এত বড় সংখ্যা হিসাব করতে আমার খুব ঝামেলা হত।

একবার ট্যাক্সি ক্যাবে করে কোথাও যাচ্ছি। মিটারে প্রায় পনেরো হাজার রুপিয়া বিল উঠছে। পনেরো হাজার রুপিয়া কত হয় সেটা বুঝার জন্য আমার মাথার ভিতর জটিল হিসাব শুরু হল। আমার অবস্থা দেখে ভেনী বলল, “এত ঝামেলা করে হিসাব করছো কেন? সহজে কর।” একটু থেমে সে আবার বলল, “পনেরো হাজার থেকে তিনটা শূণ্য বাদ দিলে কত থাকে?”

বললাম, “পনেরো থাকে।”

“এবার পনেরোকে তিন দিয়ে ভাগ দাও। কত হয়?”

“পাঁচ হয়।”

“হ্যাঁ, তোমার বিল হয়েছে পাঁচ রিঙ্গিট।”

আমি আবার মনে মনে পাঁচ রিঙ্গিটকে বিশ দিয়ে গুণ করে বাংলাদেশি টাকাতে কনভার্ট করলাম। বাহ। এতক্ষণ ট্যাক্সিতে ঘুরার পরেও বিল এসেছে বাংলাদেশি টাকায় মাত্র একশত টাকা।

এইরকম আরেকবার এক দোকানে গিয়ে কিছু কেনার পর বিল আসল সাঁইত্রিশ হাজার পাঁচশত রুপিয়া। আমি এক লক্ষ রুপিয়ার একটা নোট দেয়ার পর কত টাকা ফেরত পাবো সেটা হিসাব করতে গিয়ে মাথা হ্যাং হয়ে গেল। পরে হিসাব করাই ছেড়ে দিলাম। দোকান বা রেস্তোরাঁতে যা বিল আসে তা দিয়ে দেই। ওরা যা টাকা ফেরত দেয় সেটা পকেটে রেখে দেই। হিসাব করেও দেখি না কত দিলাম আর কত পেলাম। পকেটে লক্ষ লক্ষ রুপিয়া নিয়ে নিশ্চিন্তে শহরময় ঘুরে বেড়াই।

***

এভাবে দেখতে দেখতে দেশে ফেরার সময় হয়ে গেল। দেশ মানে মালয়শিয়ার কুয়ালালামপুর। ছুটি শেষ, ফিরতে হবে ইউনিভার্সিটিতে। উপায় নাই গোলাম হোসেন!

কিন্তু ভেনী আরো কয়েকদিন মেদানে থেকে যেতে চায়। যদিও ওর ছুটিও শেষ, কিন্তু সে অফিসকে বলে-কয়ে ছুটি আরো এক সপ্তাহ বাড়িয়ে নিয়েছে। আমি ওর আবেগটা বুঝি। তাই ওর ফেরার টিকেট ক্যান্সেল করে আমি নিজেই রওয়ানা দিলাম।

বিদায়ের বেলায় বউকে হাত খরচ দেয়া কর্তব্য।

পকেটে ছিল কয়েক মিলিয়ন রুপিয়া। সবগুলো দিয়ে দিলাম। হিসাবও করলাম না কত দিলাম। নিজেকে খুব “সেই রকম” মনে হচ্ছিল। হোক না সে রুপিয়া, সংখ্যার হিসাবে তো কয়েক মিলিয়ন। আজ না হয় রুপিয়াতে কয়েক মিলিয়ন হাত খরচের জন্য দিলাম, কোনদিন হয়ত ডলারে দিত পারব। এজন্যই তো বলে মানুষ তার স্বপ্নের চেয়েও বড়।

আমার ফ্লাইট ছিলো খুব সকালে। শ্বাশুড়ি আর ভেনী বেশ কান্নাকাটি করছিল। ঠিক যেন বাংলাদেশি আবেগ। শ্বশুড় সাহেব ভোররাতে গাড়িতে করে এয়ারপোর্টে পৌঁছে দিলেন।

সেই সময় মেদান শহরের এয়ারপোর্টের নাম ছিল পলোনিয়া। বেশ ছোট কিন্তু ছিমছাম এয়ারপোর্ট। অবশ্য আমি যাওয়ার কিছুদিন পরেই সেই এয়ারপোর্টটি বন্ধ হয়ে ইন্দোনেশিয়ান এয়ারফোর্সের ঘাঁটি হিসাবে ব্যবহার হওয়া শুরু হয়। পলোনিয়া এয়ারপোর্টের একটা জিনিস আমাকে বেশ অবাক করল। সেটা হল, পলোনিয়া এয়ারপোর্টে “এয়ারপোর্ট ট্যাক্স” আলাদা ভাবে নগদ টাকায় দিতে হয়। সাধারণত, “এয়ারপোর্ট ট্যাক্স” প্লেনের টিকেটের দামের সাথে রেখে দেয়া হয়। কিন্তু পলোনিয়া এয়ারপোর্টে এই সিস্টেম আলাদা। এয়ারপোর্ট থেকে ডিপার্চারের সময় সেই টাকা নগদ দিতে হয়। সুতরাং, কেউ যদি নগদ টাকা হাতে না রেখে পলোনিয়া এয়ারপোর্ট দিয়ে কোথাও যেতে চায়, তাহলে তার ঝামেলাতে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে। পরে অবশ্য মেদান শহরের নতুন এয়ারপোর্টে এই সিস্টেমটি বাদ দেয়া হয়েছিল।

***

ইন্দোনেশিয়া সম্পর্কে বাংলাদেশিদের অনেকেই তেমন কিছু জানে না বা জানলেও ভুল জানে। তাই দেশটি সম্পর্কে কিছু তথ্য শেয়ার করলাম। অনেকেই এসব তথ্য আগে থেকেই জানতে পারে। কিন্তু আবার চোখ বুলাতে অসুবিধা কি?

১/ অনেকেই ইন্দোনেশিয়ার টাকার মান দিয়ে তাদের অর্থনীতি বিচার করে যেটা সবসময় সঠিক তথ্য দেয় না। অনেকেই হয়ত জানে না যে জাপানের টাকার মান বাংলাদেশি টাকার চেয়ে কম। অথচ, জাপানের অর্থনীতি পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতিগুলোর মধ্য একটি। শুধু জাপান না আরো অনেক ভালো অর্থনীতির দেশের টাকার মান বাংলাদেশের চেয়ে কম। এদের মধ্য উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হল আইসল্যান্ড, আলবেনিয়া, আর্মেনিয়া, কাজাকিস্থান, ইরান, ইরাক, নর্থ কোরিয়া, কম্বোডিয়া, বেলারুস, কলম্বিয়া, কোস্টারিকা এবং চিলি। সাউথ-ইস্ট এশিয়াতে ইন্দোনেশিয়া সবচেয়ে বড় অর্থনীতি। জিডিপি হিসাবে এটা পৃথিবীর সপ্তম বৃহত্তম অর্থনীতি, যেটা প্রায় ট্রিলিয়ন ডলার USD-এর বেশি।

২/ সামরিক শক্তির দিক দিয়েও ইন্দোনেশিয়া বেশ শক্তিশালী। ২০২০ সালের GFP রিভিউ অনুযায়ী পৃথিবীর ১৩৮ টি দেশের মধ্য সামরিক শক্তির দিক দিয়ে ইন্দোনেশিয়ার অবস্থান ষোলতম। সেই রিভিউ অনুসারে ইসরাইল, স্পেন, পোল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে, সুইডেন, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস এবং কানাডার অবস্থান ইন্দোনেশিয়ার পিছনে। সাউথ-ইস্ট এশিয়াতে একমাত্র ইন্দোনেশিয়ার এয়ারক্রাফট তৈরির সক্ষমতা আছে। এছাড়াও যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিন তৈরিতে ওদের পারদর্শিতা অনেক। ওদের তৈরি এসব এয়ারক্রাফট ও যুদ্ধযান ইউরোপেও রপ্তানি হয়।

৩/ আকারের দিক দিয়ে ইন্দোনেশিয়া বেশ বড়। দেশটি পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রায় ৫১০০ কিলোমিটার বিস্তৃত। তুলনার জন্য যদি বলা হয়, তাহলে ঢাকা থেকে মালয়শিয়ার কুয়ালালামপুরের দুরত্ব প্রায় ২৫৫০ কিলোমিটার। তারমানে ঢাকা থেকে কুয়ায়ালামপুরের দূরত্ব যত ইন্দোনেশিয়ার এক মাথা থেকে আরেক মাথার দূরত্ব তার দ্বিগুন। এমনকি আমেরিকার ইস্ট-টু-ওয়েস্ট কোস্টের মাঝে যে দূরত্ব ইন্দোনেশিয়ার এক মাথা থেকে আরেক মাথার দূরত্ব তার দেড় গুন বেশি। তবে আকারের দিক দিয়ে আমেরিকা ইন্দোনেশিয়ার চেয়ে বড়।

৪/ ইন্দোনেশিয়া পৃথিবীর সর্ব-বৃহত্তম দ্বীপ-রাস্ট্র। আকারের দিক দিয়ে পৃথিবীতে ইন্দোনেশিয়ার অবস্থান পনেরোতম।

৫/ ইন্দোনেশিয়া দেশটি ছোট-বড় প্রায় আঠারো হাজার দ্বীপ নিয়ে গঠিত। প্রতি দ্বীপে যদি মাত্র একদিন করেও থাকা হয়, তাহলে ইন্দোনেশিয়ার সব দ্বীপ দেখতে প্রায় পঞ্চাশ বছর সময় লাগবে।

৬/ ইন্দোনেশিয়ার সব সমুদ্র সৈকতের দৈর্ঘ্য যোগ করলে হয় প্রায় এক লক্ষ কিলোমিটার। এর মানে, ইন্দোনেশিয়ার সমুদ্র সৈকতগুলোর দৈর্ঘ্য পুরো পৃথিবীর পরিধির দ্বিগুন।

৭/ পৃথিবীর দ্বিতীয়, তৃতীয় আর ষষ্ঠ বৃহত্তম দ্বীপগুলো হল যথাক্রমে পাপুয়া, বোর্নিও এবং সুমাত্রা। এর মধ্য পাপুয়াতে দুইটা দেশঃ পাপুয়া নিউ গিনি আর ইন্দোনেশিয়ার বেশ কয়েকটা প্রভিন্স। বোর্নিওতে তিনটা দেশঃ ব্রুনেই, মালয়শিয়ার বেশ কয়েকটি প্রভিন্স আর বাকি ৭৩ ভাগ জায়গা জুড়ে ইন্দোনেশিয়ার বেশ কয়েকটি প্রভিন্স। সুমাত্রা দ্বীপে শুধু ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন প্রভিন্স। প্রতিটা দ্বীপই আয়তনে কয়েকটি বাংলাদেশের সমান।

৮/ ইন্দোনেশিয়ার জীব-বৈচিত্র্য ভীষণভাবে ব্যাপক। পৃথিবীর প্রাণীকূলের অনেক প্রজাতি শুধুমাত্র ইন্দোনেশিয়াতেও পাওয়া যায়। পৃথিবীর বৃহত্তম কয়েকটি বনভূমি ইন্দোনেশিয়ায় অবস্থিত।

৯/ ইন্দোনেশিয়ার ল্যান্ডস্কেপ খুবই সুন্দর ও বৈচিত্র্যময়। ইন্দোনেশিয়া “প্যাসিফিক রিং অফ ফায়ার” এর উপর অবস্থিত হওয়ার সারা দেশ জুড়েই রয়েছে অসংখ্য জীবন্ত আগ্নেয়গিরি। এমনকি পথের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দিগন্তের কাছে জীবন্ত আগ্নেয়গিরির দেখা মেলে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আগ্নেয়-লেক “লেক টোবা” ইনোনেশিয়ার সুমাত্রায় অবস্থিত। বর্তমান পৃথিবীর মানুষের ডাইভার্সিটিতে এই লেকের বিশাল অবদান রয়েছে। প্রায় পঁচাত্তর হাজার বছর আগে এই আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুপাতের ফলে পৃথিবীর প্রায় সব মানুষ বিলুপ্ত হতে বসেছিল। পরে বেঁচে যাওয়া আফ্রিকার কিছু জাতিগোষ্ঠী থেকে বর্তমান পৃথিবীতে মানুষের এত ডাইভার্সিটি তৈরি হয়।

১০/ শুধু প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যই না, মানুষের বৈচিত্র্যেও ইন্দোনেশিয়া পৃথিবীতে অদ্বিতীয়। ইন্দোনেশিয়াতে রয়েছে তিনশোর বেশি জাতি যাদের রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন পোশাক, ঐতিহ্য ও ভাষা। পৃথিবীতে সবচেয়ে বহুভাষী দেশগুলোর মধ্য একটি ইন্দোনেশিয়া। দেশটিতে এখনো প্রায় ৬০০ রকমের ভাষা প্রচলিত রয়েছে। দেশটির পূর্ব দিকের প্রভিন্সগুলো থেকে যখন একেবারে পশ্চিমের প্রভিন্সগুলোতে (পাপুয়া দ্বীপের প্রভিন্সগুলোতে) যাওয়া হয় মানুষের গায়ের রঙ একদম ফর্সা থেকে পুরোপুরি আফ্রিকান কালোতে পরিণত হয়।

১১/ এশিয়ার মধ্য ইন্দোনেশিয়াই প্রথম স্যাটেলাইট ১৯৭৬ সালে মহাকাশে উৎক্ষেপণ করছিল। ১৯৭৬ সালের আগে শুধুমাত্র আমেরিকা আর কানাডার স্যাটেলাইট ছিল। এমনকি রাশিয়াও তখনো স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করতে পারে নাই।

১২/ শুধু যুদ্ধযান ও সামরিক সরঞ্জামেই না, ভারী শিল্পেও ইন্দোনেশিয়া বেশ এগিয়ে। ইন্দোনেশিয়ার তৈরি আধুনিক ট্রেনের বগি ও বাস বাংলাদেশের পরিবহন খাতে সম্প্রতি যোগ হয়েছে।

১৩/ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসাবে ইন্দোনেশিয়া ১৯৩৮ সালে ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপ ফুটবলে অংশগ্রহণ করে। তবে দেশটির নাম ছিল তখন “ডাচ ইস্ট ইন্ডিজ”।

***

ইন্দোনেশিয়া সহ বিভিন্ন দেশ সম্পর্কে জানতে ও দেখতে আমার চ্যানেলগুলোতে চোখ রাখতে পারেন।

ফেসবুকঃ দেশে বিদেশে ট্রাভেলিং

ইউটিউবঃ লিটল ট্রাভেল
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৮:৪৯
২৬টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×