somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তামাক কোম্পানির পক্ষে নয়, দেশ ও জনগণের স্বার্থে কাজ করুন

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৯ বিকাল ৫:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সরকার জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অনেক প্রসংশনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তার মধ্যে আইন ও বিধিমালা প্রণয়ণের মাধ্যমে ক্ষতিকর তামাকজাত পণ্য নিয়ন্ত্রণ অন্যতম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের মধ্যে “তামাকমুক্ত বাংলাদেশ” বাস্তবায়নের দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন, যা তামাক নিয়ন্ত্রণে আমাদের একটি মাইল ফলক এবং এ লক্ষ্য অর্জনে সরকারী-বেসরকারী সংগঠনগুলো নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। তামাক নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের গৃহীত ও চলমান পদক্ষেপসমূহ বিশ্বব্যাপী প্রসংশিত।

কিন্তু, সরকারের তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত এবং অর্জনসমূহকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে বিগত দিনের ন্যয় তামাক কোম্পানিগুলো বিভিন্নভাবে কূট-কৌশল প্রয়োগ ও অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন আইন ও নীতি গ্রহণ বিলম্বকরণ ও প্রভাব বিস্তার, মিথ্যা ও মনগড়া তথ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে নীতি-নির্ধারকদের বিভ্রান্ত করছে।

জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে এসব বিভ্রান্তকর তথ্য জনপ্রতিনিধি ও নীতিনির্ধারকের মাঝে প্রভাব বিস্তারে ধূর্ত তামাক কোম্পানিগুলোর এক ধরনের কুটকৌশল। শুধু তাই নয়, রাষ্ট্রের জনগনের কল্যাণে প্রণীত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটির প্রতিও তাদের শ্রদ্ধা প্রদর্শনের কোন সদিচ্ছাও পরিলক্ষিত হচ্ছে না। তাদের মূল উদ্দেশ্য মুনাফা অর্জনের জন্য তামাকজাত পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ।


এছাড়াও সরকারকে প্রতিবছর হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেয় তামাক কোম্পানিগুলো। অতীতে দেখা গেছে, রাজস্ব ফাঁকির কু-কীর্তি ঢাকতে নিজস্ব হাইকমিশনারদের মাধ্যমে জালিয়াতিরও আশ্রয় গ্রহণ করেছে তামাক কোম্পানিগুলো। এছাড়াও কর্মসংস্থানের নামে বিড়ি শ্রমিকদের নিয়ে প্রতিবাদ মিছিল, গণস্বাক্ষর গ্রহণ করে স্মারকলিপি প্রদানের মাধ্যমে নীতি নির্ধারকদের প্রভাবিত করার অপচেষ্টা দীর্ঘদিন ধরে অব্যাহত রেখেছে কোম্পানিগুলো। যা আমাদের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্যকে ব্যহত করার পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য রক্ষায় বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার বাস্তবায়নেও প্রতিন্ধকতা সৃষ্টি করছে।

সম্প্রতি, একটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের তথ্যানুযায়ী, আইন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা দীর্ঘদিন থেকে তামাক কোম্পানি দ্বারা প্রভাবিত হয়ে জনস্বার্থ বিরোধী কাজ করছেন। সন্তান তামাক কোম্পানিতে চাকুরী করে বিধায়, এই কর্মকর্তার যোগসাজশে বিভিন্নভাবে সরকারের জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে প্রণীত আইন ও নীতি বিলম্বকরণ ও তামাক কোম্পানির পক্ষে কাজ করার তথ্য উঠে এসেছে প্রতিবেদনে। শুধু সরকারী কর্মকর্তা নয় বরং এমন আরো অনেক বেসরকারী অসাধু কর্মকর্তারা তামাক কোম্পানির পক্ষে কাজ করছেন বিধায়, সকলক্ষেত্রে মুনাফালোভী তামাক কোম্পানির স্বার্থ উদ্ধার হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে জনস্বার্থ চরমভাবে উপেক্ষিত থাকছে! এ অবস্থার পরিবর্তন দরকার! নইলে সরকারের সদিচ্ছার পূর্ণ বাস্তবায়ন ও কাঙ্থিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন প্রায় অসম্ভব! কাজেই তামাক কোম্পানির পক্ষে নয়, দেশ ও জনগণের স্বার্থে সকলের কাজ করা উচিৎ।
বাংলাদেশ তামাক নিয়ন্ত্রণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক গৃহিত বৈশ্বিক চুক্তি এফসিটিসি (ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল) এ স্বাক্ষর ও অনুস্বাক্ষর করেছে। এর অনুচ্ছেদ ৫.৩ দেশের আইনকে তামাক কোম্পানির আগ্রাসন থেকে বাঁচানোর ‘রক্ষাকবচ’।
এই অনুচ্ছেদের মূল কথা হলো “প্রতিটি দেশ তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্য গ্রহীত নীতি এবং আইনকে তামাক কোম্পানির বাণিজ্যিক এবং কায়েমী স্বার্থ থেকে রক্ষা করবে।” এর মূল লক্ষ্য হলো “তামাক নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কিত নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে তামাক কোম্পানির প্রভাবমুক্ত রাখতে রাষ্ট্রসমূহকে সহযোগিতা প্রদান করা।”

এফসিটিসি আর্টিকেল ৫.৩-তে বলা হয়েছে, এতে সমর্থনকারী রাষ্ট্রসমূহ তামাকজাত দ্রব্যের ক্ষতি ও তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতিতে তামাক কোম্পানীর হস্তক্ষেপ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করবে। তামাক কোম্পানীর সাথে যোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ করবে এবং যে সকল ক্ষেত্রে যোগাযোগ করা হবে তার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে। তামাক কোম্পানীর সাথে অংশীদারিত্ব বা শর্তহীন অপ্রয়োগযোগ্য চুক্তি করবে না, তামাক কোম্পানী কর্তৃক প্রদানকৃত তথ্যের স্বচ্ছতা ও সত্যতা নিশ্চিত করবে এবং তামাক কোম্পানীর সামাজিক দায়বদ্ধতার আওতায় কর্মসূচী নিয়ন্ত্রণ করবে।


সুতরাং, কার্যকর তামাক নিয়ন্ত্রণে এফসিটিসি’র যথাযথ বাস্তবায়নে একটি গাইডলাইন প্রণয়ন অত্যন্ত জরুরী। পাশাপাশি, সরকারী-বেসরকারী সংগঠনগুলো তার কর্মচারীদের আচরণ নিয়ন্ত্রণে ‘কোড অব কন্ডাক্ট’ প্রণয়ন করা হলে নীতিতে তামাক কোম্পানির প্রভাব প্রতিহত ও তাদের সামাজিক দায়বদ্ধতার আড়ালে তামাকের প্রচারণা কর্মসূচী নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে। কাজেই করতে হলে নীতি নির্ধারণের সকল ক্ষেত্রে এই অনুচ্ছেদটির উপযুক্ত চর্চা জরুরী।

সরকার এসডিজিসহ বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সমন্বিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ক্ষতিকর তামাকজাত পণ্য নিয়ন্ত্রণ করা গেলে এসডিজি’র অনেকগুলো গোল অর্জন ও ২০৪০ সালের মধ্যে “তামাকমুক্ত বাংলাদেশ” অর্জন সম্ভব হবে। কাজেই, নির্দিষ্ট সময়ে কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন করতে হলে জনস্বাস্থ্যকে সর্বাগ্রে প্রাধান্য দিতে হবে। প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাসহ সকলকে মনে রাখতে হবে, তামাক কোম্পানির স্বার্থ নয়, বরং দেশের সামগ্রীক উন্নয়নে জনস্বার্থকে প্রধান্য দিতে হবে।

সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুন, ২০২০ বিকাল ৩:৪০
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×