(গত পর্বের পর)
1. ইলম বা জ্ঞান অর্জনকারী মুসলিমদের এক প্রকার ক্ষমতাশীল ব্যক্তি (أولي الأمر), যাদের আনুগত্য করতে আল্লাহ্ তা’আলা নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেনঃ
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ﴾
“হে ঈমাদারগণ! তোমরা আল্লাহ্র আনুগত্য কর, রাসূলের আনুগত্য কর আরো আনুগত্য কর তোমাদের মধ্যকার ক্ষমতাশীলদের”। [সূরা আন-নিসাঃ ৫৯]
এ আয়াতের ‘উলিল আমর’ শব্দের আভিধানিক অর্থে সে সমস্ত লোককে বলা হয়, যাদের হাতে কোন বিষয়ের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব অর্পিত থাকে। এ শব্দটির দ্বারা ওলামা ও শাসক উভয় শ্রেণীকেই বোঝায়। কারণ, নির্দেশ দানের বিষয়টি তাঁদের উভয়ের সাথেই সম্পর্কিত। আল্লামা আবু বকর জাস্সাস এতদুভয় মত উদ্ধৃত করার পর বলেছেন, সঠিক ব্যাপার হলো এই যে, এতদুভয় অর্থই ঠিক। কারণ, ‘উলুল আমর’ শব্দটি উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। আরেকটি কারণ হলঃ দ্বীনী ব্যাপারে সাধারণ মুসলিম নিজের ইচ্ছা ও মতামতের তুলনায় আলেম সমপ্রদায়ের নির্দেশকে অবশ্য পালনীয় বলে সাব্যস্ত করে থাকে। তাছাড়া শরীয়তের দৃষ্টিতেও সাধারণ মানুষের জন্য আলেমদের হুকুম মান্য করা ওয়াজিবও বটে। সুতরাং তাদের ক্ষেত্রেও ‘উলুল আমর’-এর প্রয়োগ যথার্থ হবে।
2. আলেমরাই কিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহ্র দ্বীনের উপর কায়েম থাকবে। আর এর দলীলঃ মুআবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “আল্লাহ্র নির্দেশ আসা পর্যন্ত এ উম্মত আল্লাহর দ্বীন ও হকের উপর অটল থাকবে। যারা তাদের মতবিরোধ করেছে, তারা তাদের অপকার করতে পারবে না”। [সহীহ বুখারীঃ (৬৯), সহীহ মুসলিমঃ (৩৫৪৮)]
3. রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ্র কোন নি’আমতের জন্য উৎসাহ দেননি শুধু মাত্র দু’টি নি’আমত ছাড়া। তা হলঃ ১. ইলম অর্জন ও ইলম অনুযায়ী আমল করা। ২. এমন ব্যবসা, যে ব্যবসা ইসলামের খেদমত করে। আব্দুল্লাহ্ ইবন্ মাসঊদ থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “কোন কিছুর মধ্যে হিংসা নেই শুধুমাত্র দুটি বস্তুর মধ্যে ব্যতীত। যথা: এক লোককে আল্লাহ্ তা’আলা সম্পদ দিয়েছেন, সে এ সম্পদ হতে সৎকাজে ব্যয় করে। এবং অপর লোককে আল্লাহ্ তা’আলা হেকমত ও জ্ঞান দিয়েছেন, সে তা অনুযায়ী বিচার করে এবং তা মানুষকে শিক্ষা দেয়”। [সহীহ বুখারীঃ (১৩২০), সহীহ মুসলিমঃ (১৩৫২)]
4. হাদীসে এসেছেঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘আল্লাহ আমাকে যে জ্ঞান ও হিদায়াত দিয়ে পাঠিয়েছেন তার উদাহরণ হচ্ছে এমন মুষলধারার বৃষ্টির মতো যা ভূমিতে এসে পড়েছে, ফলে এর কিছু অংশ এমন উর্বর পরিষ্কার ভূমিতে পড়েছে যে ভূমি পানি চুষে নিতে সক্ষম, ফলে তা পানি গ্রহণ করেছে, এবং তা দ্বারা ফসল ও তৃণলতার উৎপত্তি হয়েছে। আবার তার কিছু অংশ পড়েছে গর্তওয়ালা ভূমিতে (যা পানি আটকে রাখতে সক্ষম) সুতরাং তা পানি সংরক্ষন করতে সক্ষম হয়েছে, ফলে আল্লাহ এর দ্বারা মানুষের উপকার করেছেন তারা তা পান করেছে, ভূমি সিক্ত করিয়েছে এবং ফসলাদি উৎপন্ন করতে পেরেছে। আবার তার কিছু অংশ পড়েছে এমন অনুর্বর সমতল ভূমিতে যাতে পানি আটকে থাকেনা, ফলে তাতে পানি আটকা পড়েনি, ফসলও হয়নি। ঠিক এটাই হলো ঐ ব্যক্তির দৃষ্টান্ত যে আল্লাহর দ্বীনকে বুঝতে পেরেছে এবং আমাকে যা দিয়ে পাঠিয়েছেন তা থেকে উপকৃত হতে পেরেছে, ফলে সে নিজে জেনেছে এবং অপরকে জানিয়েছে। (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেনীর ভূমি)। এবং ঐ ব্যক্তির উদাহরণ যে এই হিদায়েত এবং জ্ঞান বিজ্ঞানের দিকে মাথা উঁচু করে তাকায়নি, ফলে আল্লাহ যে হিদায়েত নিয়ে আমাকে প্রেরণ করেছেন তা গ্রহণ করেনি। (তৃতীয় শ্রেনীর ভূমি)”। [সহীহ বুখরীঃ (৭৭), সহীহ মুসলিমঃ (৪২৩২)]
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মে, ২০০৭ বিকাল ৫:১১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




