somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার ওপিনিয়ন

১১ ই অক্টোবর, ২০০৬ সকাল ৮:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



রাসেল আরেফিন

ইমপ্লান্টস : দাতের চিকিত্সায় নতুন প্রযুক্তি


সুন্দর মুখশ্রীর জয় পৃথিবীর সর্বত্র। সুন্দর একটি মুখাবয়বের গর্বিত মালিক হওয়া আসলেও ভাগ্যের ব্যাপার। কিন্তু অনেক সময় দুর্ঘটনা বা অন্য কোনো কারণে অনেকে হারিয়ে ফেলেন মুখের স্বাভাবিক সৌন্দর্য। আবার অনেকে জন্মগতভাবেই মুখের সৌন্দর্য হারিয়ে পৃথিবীতে আসেন।
এ ধরনের ঠোট কাটা, তালু কাটা বা ভাঙা, দাতভাঙা, মাঢ়িভাঙা রোগীদের জীবনের প্রতিটি পর্যায়ের অসহনীয় দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে চিকিত্সাবিজ্ঞানে এসেছে নতুন প্রযুক্তি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকাল ইউনিভার্সিটির প্রোসথোডন্টিক্স বিভাগের প্রধান ডা. আলিয়া সুলতানা এ দেশের হাজারো মানুষের দাত ও মুখের এই সমস্যা সমাধানে সুদূর অস্ট্রেলিয়া থেকে নিয়ে এসেছেন দন্ত চিকিত্সার সেই আধুনিক প্রযুক্তি ্তুইমপ্লান্টস্থ (ওসঢ়ষধহঃং)। তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেলো, দাত ও মুখের এই অঙ্গহানি সমস্যা কিভাবে একজন মানুষের জীবনকে দুর্বিসহ করে তোলে।
সাধারণত দাত না থাকা এবং মুখের তালুর সমস্যার কারণে প্রথমেই একজন মানুষকে খাদ্যের ব্যাপারে অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে হয়। সে তার পছন্দমতো খাবার খেতে পারে না। তার থাকে উচ্চারণের মতো নানান





সমস্যা। এছাড়া বিয়ে, চাকরিসহ সামাজিক জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রেও তাকে হেয় ও বিব্রত হতে হয়।
এসব সমস্যার সমাধানে অনেক দিন থেকেই বিভিন্ন চিকিত্সা পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ১৯৭০-এর দশকের শুরুতে এ ধরনের চিকিত্সার জন্য ব্যবহৃত হতো ্তুমেটালিক ডেন্টি্থ নামে এক পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে মাঢ়ির যে দাতটি খোয়া গেছে বা ভেঙে গেছে তার চারপাশে প্রথমে মেটাল ফ্রেম ওয়ার্ক করা হতো। এরপর এ খোয়া যাওয়া দাতটির জায়গায় একটি প্লাস্টিকের দাত বসিয়ে দেয়া হতো। কিন্তু এ পদ্ধতিতে মুখের সৌন্দর্য ফিরে এলেও রোগীদের পক্ষে শক্ত খাবার খাওয়া সম্ভব হতো না। তাই এ পদ্ধতি খুব বেশিদিন টেকেনি।
১৯৮০-র দশকে এসে একই সমস্যা সমাধানের জন্য আসে ্তুফিক্সড বৃজ্থ প্রযুক্তি। এ পদ্ধতিতে যেখানে কৃত্রিম দাতটি বসাতে হবে তার দু্থপাশের দুটি দাত প্রয়োজন অনুযায়ী কাটা বা ঘষে ছোট করা হয়। এরপর ওই দুটি দাতের সঙ্গে কৃত্রিম দাতটি এমনভাবে সংযুক্ত করা হয় যা দেখতে অনেকটা বৃজ বা সেতুর মতো। এই পদ্ধতিটি এখনো পৃথিবীর বহু দেশে প্রচলিত থাকলেও এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। সাধারণত এ পদ্ধতিতে দাত কেটে বা ঘষে ফেলার ফলে দাতে ব্যথা হয়ে থাকে এবং রোগীকে এ জন্য ওষুধ খেতে হয়।
এরপর ১৯৯০-এর দশকে আসে দাতের চিকিত্সায় অনেকটা স্থায়ী সমাধান ্তুইমপ্লান্টস্থ। এ প্রযুক্তিটি সারা বিশ্বে এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে জনপ্রিয়। উন্নত অনেক দেশের পাশাপাশি ইনডিয়া, পাকিস্তান ও বাংলাদেশেও ্তুইমপ্লান্টস্থ-এর ব্যবহার শুরু হয়েছে। ্তুইমপ্লান্টস্থ এতোটাই আধুনিক এবং সূক্ষ্ম প্রযুক্তি যে, রোগীর মুখের দাতটি কৃত্রিম না প্রাকৃতিক তা বোঝার উপায় থাকে না। সাধারণত এ প্রযুক্তিতে প্রথমে মাঢ়ি কেটে দাতের ক্রাউন অংশের ওপর একটি টাইটেনিয়াম ধাতুর তৈরি স্ক্রু বসানো হয়। মূল্যবান ধাতু টাইটেনিয়াম ব্যবহারের ফলে দাত ও মাঢ়ি অন্যান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে মুক্ত থাকে। স্ক্রু বসানো হলে ডাক্তারি ভাষায় তাকে বলা হয় ্তুঅসিওইন্টিগ্রেসন্থ। অসিওইন্টিগ্রেসন হয়ে গেলে ডাক্তার ওই টাইটেনিয়াম স্ক্রুর ওপর রোগীর অন্যান্য দাতের রঙ এবং আকৃতির সঙ্গে মিল রেখে খোয়া যাওয়া বা ফেলে দেয়া দাতটির একটি কৃত্রিম রেপ্লিকা বসিয়ে দেন। এই পদ্ধতিতে টাইটেনিয়ামের যে স্ক্রু ব্যবহার করা হয় ধীরে ধীরে তা মাঢ়ির হাড়ের সঙ্গে মানিয়ে যায়। ফলে রোগী কৃত্রিম দাতের মানসিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পায়। এই পদ্ধতিতে একই সঙ্গে একাধিক দাত এমনকি পুরো একটি মাঢ়িরও ইমপ্লান্টস করা সম্ভব। ইমপ্লান্টস-এর ফলে রোগী তার স্বাভাবিক হাসি ফিরে পায়। এই পদ্ধতির চিকিত্সা গ্রহণকারী রোগীকে উচ্চারণ সমস্যা, শক্ত খাবার গ্রহণ সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় না। রোগী তার পছন্দ মতো খাবার গ্রহণ করতে পারে। এছাড়াও ইমপ্লান্টসের পর রোগীর কোনো ধরনের ব্যথাও অনুভূত হয় না।
এখনো পর্যন্ত সারা পৃথিবীতে ইমপ্লান্টস প্রযুক্তি ব্যবহারে সফলতার হার প্রায় ৯৫ থেকে ৯৭ ভাগ। অত্যন্ত ব্যয়বহুল এই চিকিত্সা পদ্ধতিতে আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত মাত্র একজন রোগীকে চিকিত্সা দেয়া সম্ভব হয়েছে। আমাদের দেশে বেসরকারি পর্যায়ে এ চিকিত্সা পদ্ধতি চালু থাকলেও সরকারিভাবে এখনো চালু করা সম্ভব হয়নি। এখনো এ পদ্ধতির চিকিত্সা ব্যয় এক লাখ টাকার ওপরে। তবে সরকারিভাবে চালু হলে এ খরচ কিছুটা কমার সম্ভাবনা রয়েছে। খরচ কমলেও অবশ্য সবাই এই চিকিত্সা গ্রহণ করতে পারবে না। এ চিকিত্সা গ্রহণের জন্য রোগীর নির্দিষ্ট পরিমাণ শারীরিক সক্ষমতা থাকা প্রয়োজন হয়। যেমন, রোগীর নিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসসহ মাঢ়িতে ইমপ্লান্টস উপযোগী হাড়ের উপস্থিতি থাকা বাঞ্ছনীয়। এছাড়াও রোগীকে নিয়মিত দাতের যত্ন নেয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। সাধারণত দাতের ইমপ্লান্টস করতে ছয় থেকে ১২ সপ্তাহ সময় লেগে থাকে। এ সময়টি রোগীকে অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়।
ইমপ্লান্টস চিকিত্সার জন্য প্রয়োজন হয় ইমপ্লান্টস ইউনিট, কিড এবং একটি আধুনিক ডেন্টাল ল্যাবরেটরি। আমাদের দেশে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে এ বিষয়ে তাত্ত্বিকভাবে পড়ানো হলেও উপযুক্ত ল্যাবরেটরির অভাবে ডাক্তারদের বিদেশে গিয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণ নিতে হচ্ছে। সাধারণত ইমপ্লান্টসের জন্য মাঢ়ি কাটতে একটি বিশেষ যন্ত্র ব্যবহার করা হয় যা ক্লকওয়াইজ এবং অ্যান্টি ক্লকওয়াইজ দুভাবেই ঘুরতে পারে। এই যন্ত্রটির স্বাভাবিক রিভলিউশন হচ্ছে দেড় থেকে দুই লাখ আরপিএম। তবে ইমপ্লান্টসের জন্য মাঢ়ি কাটতে ব্যবহৃত হয় মাত্র এক হাজার থেকে আড়াই হাজার আরপিএম রিভলিউশন।
অন্যদিকে মুখের অন্যান্য অঙ্গের সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে ব্যবহৃত হয় ম্যাক্ জিলোফেসিয়াল প্রযুক্তি। সাধারণত ঠোট কাটা, তালু কাটা সমস্যার জন্য এ পদ্ধতি ব্যবহৃত হলেও নাক, চোখ এমনকি হাতের আঙ্গুলের সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতেও এ প্রযুক্তি কাজে লাগানো হয়। দুর্ঘটনা কিংবা জন্মগতভাবে তালু এবং মাঢ়ির সমস্যা সৃষ্টি হলে তাকে ম্যাক্ জিলোফেসিয়াল প্রোসথেটিকস (গধীরষষড়ভধপরধষ চৎড়ংঃযবঃরপং) বলে। তালুতে সমস্যার সমাধানের জন্য সাধারণত ্তুসিম্পল অবডিউরেটর্থ (ঝরসঢ়ষব ঙনফঁৎধঃড়ৎ) করা হয়- যা ফিক্সড এবং রিমুভেবল দু-ধরনেরই হয়ে থাকে। অন্যদিকে শিশুদের ঠোট কাটা সমস্যা হচ্ছে ্তুফিডিং এইড প্রোসথেসিস্থ। এই চিকিত্সার জন্য সাধারণত ডাক্তারদের ্তুরুল অফ টেন্থ মেনে চলতে হয়। এজন্য শিশুদের ওজন ১০ পাউন্ড, বয়স ১০ সপ্তাহ এবং রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ ১০ গ্রাম থাকতে হয়। এখনো পর্যন্ত আমাদের দেশে ্তুওরাল অ্যান্ড ম্যাক্ জিলোফেসিয়াল-এর জন্য চারজন রোগীকে চিকিত্সা দেয়া হলেও একজনেরও প্রোসথিকস করা সম্ভব হয়নি।
ডা. আলিয়া সুলতানার ডেন্টাল ইমপ্লান্টস অ্যান্ড ম্যাক্ জিলোফেসিয়াল রিহ্যাবিলেটেশন সেন্টারটি ধানমন্ডিতে অবস্থিত (বাড়ি নং- ২৭৫/জি, (৪র্থ তলা) রোড নং-২৭ (পুরনো), কনকর্ড রয়াল কোর্ট, ধানমন্ডি, ঢাকা)। ডা. আলিয়া সুলতানার সঙ্গে এই চিকিত্সা প্রসারে টিমওয়ার্ক করছেন দেশে এবং বিদেশে উন্নত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আরো তিনজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার। তারা হলেন ডা. মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান, ডা. সাইদ ফারুক শিহাব এবং ডা. মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম নিজামী। তাদের কাজে কনসালট্যান্ট হিসেবে সহযোগিতা করছেন বিদেশে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত আরো আটজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০০৬ সকাল ৮:৩০
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুসের উচিৎ ভারতকে আক্রমন করা , বিডিআর হত্যাকান্ডের জন্য

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৩৭


ইউনুসের উচিৎ ভারতকে আক্রমন করা , বিডিআর হত্যাকান্ডের জন্য

পহেল গাঁয়ে পাকিস্থানি মদদে হত্যাকান্ডের জন্য ভারত পাকিস্থানে আক্রমন করে গুড়িয়ে দেয় , আফগানিস্থান তেহেরিক তালেবানদের মদদ দেওয়ার জন্য, পাকিস্থান... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:১৫

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

ছবি, এআই জেনারেটেড।

ইহা আর মানিয়া নেওয়া যাইতেছে না। একের পর এক মামলায় তাহাকে সাজা দেওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

এমন রাজনীতি কে কবে দেখেছে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২০


জেনজিরা আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামল দেখেছে। মোটামুটি বীতশ্রদ্ধ তারা। হওয়াটাও স্বাভাবিক। এক দল আর কত? টানা ১৬ বছর এক জিনিস দেখতে কার ভালো লাগে? ভালো জিনিসও একসময় বিরক্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের কবিতাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৫


এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।

এখনো চামড়ার বেল্টের বিভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×