somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যে পাপের বোঝা অভিধানের কোন শব্দ নিতে চায় না - Akter R Hossin

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

sb] প্রসঙ্গ: বীর শহীদদের নাম রাজাকারের তালিকায়
[লেখাটি পড়তে প্রথমে যে সমস্যা ছিল, সেটি এখন ঠিক কর হয়েছে। যারা প্রথমে পড়তে পারেননি তাঁদের কাছে অনুরোধ পোস্টটি আবার দেখুন]
[

চারপাশে যে আলাপ আলোচনা দেখেছি, লোকমুখে যা শুনেছি, তার আলোকে, কল্পনায় একজন রাজাকারের আজকের রাজার হাল এবং একজন বীর মুক্তিযুদ্ধার বিষাদময় জীবন যাপনের চিত্র আঁকতে চেষ্টা করেছি গতকালকের করা একটি পোস্টে। পত্রিকা কিংবা বইয়ের অথেনটিক রেফারেন্স ছিল না কোনো। পুরোটাই ছিল লোকমুখে শোনা। শ্রাবিত কথাগুলোকেই কল্পনায় আঁকা মাত্র।

শীতের নিরব রাত, ভীষণ তিমিরময়। তিমির হননের কবি তিমিরের বিনাশ করে আলো আনয়নের প্রেরণা দিয়ে গেছেনকবিতায় পুরোটাই আলো।

"আমরা বেদনাহীন- অন্তহীন বেদনার পথে।
কিছু নেই- তবু এই জের টেনে খেলি;
সূর্যালোক প্রজ্ঞাময় মনে হ'লে হাসি;
জীবিত বা মৃত রমণীর মতো ভেবে- অন্ধকারে-
মহানগরীর মৃগনাভি ভালোবাসি।
তিমিরহননের তবু অগ্রসর হ'য়ে
আমরা কি তিমিরবিলাসী?
আমরা তো তিমিরবিনাশী
হ'তে চাই।
আমরা তো তিমিরবিনাশী।"

গ্রামজুড়ে নিরব ও নির্জনতা। নির্জনতায় নির্জনতার কবির কবিতায় স্বদেশপ্রীতির তুমুল কোলাহল।

"বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি;
তাই পৃথিবীর রুপ খুঁজিতে যাই না আর"

প্রতি রাতের অভ্যেসের জীবনানন্দ দাশের কবিতা পড়ে ঘুমুতে যাওয়া। কাঁথার নীচে নিজেরই উষ্ণতায় খুব আরামে শুয়ে স্মার্টফোনের স্ক্রিনে পড়ছি অনলাইন পত্রিকা। একটা শিরোনামে চোখ আটকাল।

"রাজাকারের তালিকায় ভাষা সৈনিক, শহীদ ও মুক্তিযুদ্ধার নাম।"

এটাকে কি লেখার ভুল বা তথ্য সংগ্রহের ভুল বলা যায়? আজকের ডিজিটাল যুগেও যদি বলা হয় এটা সজ্ঞানে করা হয়নি, ভুল ছিল তবে বলতেই হয় আমাদের দেশ গোল্লায় যাচ্ছে। হ্যাঁ, এই সাধারণ কাজটুকুও নির্ভুলভাবে সম্পন্ন না হওয়াতে, ডিজিটালাইজেশন না থাকাতে আমি বারবার বলব দেশ গোল্লায় যাচ্ছে। আর এই নিউজটাকেও যারা ডিফেন্স করতে আসবে তাঁদেরকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পজিটিভ মানুষ হিসেবে নোবেল দিলেও অবাক হবার কিছু থাকবে না।

আমার কল্পিত গল্পটা যে কেবলি কল্পনা নয়, বাস্তব সত্য, এই সংবাদটি তার উপযুক্ত উদাহরণ। নব নব বিচিত্র সব প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বিশ্ব এগোচ্ছে বুলেট গতিতে। আমরা এগোতে শুরু করেছি সবেমাত্র। তবে পেছনে রেখে যাচ্ছি পাপের কালিমা। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি শহীদদের বুকের তাজা রক্তের উপর পায়ে হেটে। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি মুক্তিযুদ্ধার বুকের উপর দিয়ে হেটে; তাঁদের পদদলিত করে; ক্ষমার অযোগ্য পাপের চিহ্ন নিয়ে সাথে।

গল্পে যা ব্যক্ত হল। বাস্তব যা সামনে এল। অর্থাৎএকজন রাজাকারের মুক্তিযুদ্ধা হিসেবে স্বীকৃত পাওয়া, ক্ষমতা ও সুখবিলাসে তার জীবন যাপন করা; পক্ষান্তরে একজন মুক্তিযুদ্ধার সার্টিফিকেট না পাওয়া, সম্মান না পাওয়া, তার ভবঘুরে পাগলাটে জীবন কাটানো রাষ্ট্রের জন্য চরম দায়িত্বহীনতা, দুর্নীতি, অকৃতজ্ঞতা ও কৃতজ্ঞতার পরিচয় বহন করে। এটা আমাদের ভারী লজ্জার বিষয়, ভীষণ কষ্টের।

আর, মুক্তিযুদ্ধার নাম, ভাষা সৈনিকের নাম, শহীদদের নাম রাজাকারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়াকে কি বলা যায়? কৃতঘ্নতা? নিমকহারামি? নাহ, এই শব্দেরও বোধ হয় অপমান হয়ে যায় তাতে। কি বলা যায়, কি বলা যায়, ধরছেনা কিছু মাথায়। যায় কি বলা সব ভুলে খুঁজছি অভিধানের পাতায় পাতায়। অভিধানে নেই কালো রঙ কোথাও। শব্দেরা সব উধাও। সব পাতা সাদা। হয়তো শব্দেরা গেছে লুকিয়ে আকাশ থেকে আকাশে, হয়তো গেছে মিলিয়ে শূন্য কিংবা রাত্রির অন্ধাকারে।। কারণ মুক্তিযোদ্ধা, শহীদদের বুকের উপর দিয়ে অগ্রসর হওয়া; তাঁদের রক্তের উপর দিয়ে পায়ে হেঁটে যাওয়ার পাপ অভিধানের কোন শব্দ নিতে চায় না।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই কবিতাটি ভীষণ মনে পড়ছে,

'সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালির হে বঙ্গজননী
রেখেছো বাঙ্গালী করে, মানুষ করো নি"

লেখা: আকতার আর হোসাইন
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ২:০৪
৭টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×