প্রথম কথা: শীতের গ্রাম বাংলার প্রাকৃতিক হাওয়া লাগাইয়া, মনোরম মুগ্ধকর সৌন্দর্য হেরিয়া প্রাণ রাঙাইতে বন্ধুরে লইয়া চলিলাম তেরকান্দা গেরামের দিকে।
১। পিচঢালা পথ যদিও তবু গায় রবি ঠাকুরের গান,
গ্রাম ছাড়া ঐ রাঙামাটির পথ
আমার মন ভুলাই রে'
২। বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ +আর্টসেল)
৩।
এ কি অপরুপ রুপে মা তোমায় হেরিনু পল্লী-জননী। (কাজী নজরুল ইসলাম)
৪। জীবন অথবা মৃত্যু চোখে রবে- আর এই বাংলার ঘাস রবে বুকে (জীবন অথবা মৃত্যু, জীবনানন্দ দাশ)
৫।
যাইতে বাড়ি প্রিয়তমার মনটা করে আঁকুপাঁকু
খালের ওপারে তার বাড়ি, মাঝখানে বাঁশের সাঁকো
লাগে যে ভারি ডর, দেখিয়া সাঁকোর থরথর কাঁপুনি
খালে পইড়া ধরা যে খাব প্রিয়ার ভাইয়ে দিলে দৌড়ানি। হাহাহা... (আকতার, আমি নিজে)
৬।
পানি নেই বলে জালবিহীন জালি
তার জায়গাতেই পড়ে আছে খালি (আকতার)
৭।এইটুকুন পানি। জাল তবু আছে। কেমন করে যে মাছ ধরে মাথায় কিছু আসছে না।
৮। ধানক্ষেত। চারাগাছ। পাশে একটু খালি জায়গা। দুর্বা ঘাস আছে। ছোট্ট একটা মাঠের মতো। সেখানে মহিষ চড়ানো। শীতের মিঠেল রোদে রোদ পোহাচ্ছে মহিষ দুটো।
৯। তোমার দেশে যাব আমি পল্লী দুলাল ভাইগো সোনার
সেথায় পথে ফেলতে চরণ লাগবে পরশ এই মাটি-মার (যাব আমি তোমার দেশে, জসীমউদ্দীন)
১০। খালের ওপারে ঘরবাড়ি। ঘনঘন ঘরবাড়ি। তাই একটু দুরত্ব পরপরই বাঁশের তৈরি সাঁকো বানানো হয়েছে যাতায়াতের জন্য। আমি একটা সাঁকোতে দাঁড়িয়ে কয়েকটি সাঁকো দেখতে পাই। সেগুলোর ছবি তুলি।
১২। কাকতাড়ুয়া সেই সোনালি শিশুকাল থেকে দেখে আসলেও এর নাম জানতাম না। কাকতাড়ুয়া শব্দটির সাথে প্রথম পরিচয় হয় সেলিনা হোসেনের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস 'কাকতাড়ুয়া' পড়ে। তাই কাকতাড়ুয়া দেখলে বা নামটি শুনলেই সেই উপন্যাসের কথা স্বয়ংক্রিয়ভাবে মনে পড়ে যায়। মনে পড়ে যায় উপন্যাসের চরিত্র বুধার কথা।
১৩। কচুরি ফুল। আহা! শৈশবে কচুরি ফুল নিয়ে কত্ত খেলেছি। এখনো শৈশব খুঁজি কচুরি ফুলে।
১৪ । আজ তুমি আসিবে যে মেয়ে,
সেই ডোবা পুকুরের পানা পুকুরের, কলমীলতার
জাল দিয়ে ঘেরা পানি- সেই সে পানিতে নেয়ে।
মনে যদি হয় কলমী ফুলের কতকটা রঙ
লইও অধরে মেখে,
ঠোটেতে মাখিও আর একটুকু হাসি
লাল সাপলার ফোটা ফুলগুলি দেখে।
(আগমনী,জসীমউদ্দীন)
১৫।
"তোমরা যেখানে সাধ চলে যাও- আমি এই বাংলার পারে রয়ে যাব; দেখিব........
খইরঙা হাঁসটিরে নিয়ে যাবে যেন কোন কাহিনীর দেশে-
'পরণ-কথা'র গন্ধ লেগে আছে যেন তার নরম শরীরে,
কলমিদামের থেকে জন্মেছে সে যেন এই পুকুরের নীড়ে
নিরবে পা ধোয় জলে একবার-- তারপর দূরে নিরুদ্দেশে
চলে যায় কুয়াশায়- তবু জানি কোনদিন পৃথিবীর ভিড়ে
হারাব না তারে আমি- সে যে আছে আমার এ বাংলার তীরে"
(তোমরা যেখানে সাধ চলে যাও, জীবনানন্দ দাশ)
১৬। রাস্তার পাশে ধানক্ষেতের মধ্যে ঈদগাহ মাঠ। সাথে আছে একটি পুকুর। একজন লোক ঘাস কাটছে। চারদিকে গাছ গাছালি। মাঠ ও পুকুর ঘিরে গাছের বেষ্টনী। সুশীতল বাতাস। নানান ধরণের পাখিদের কিচির মিচির শব্দে মনে প্রশান্তি লেগেছিল।
১৭ পাখপাখালির মধুর সুরে, মধুর গানে
নিরবতায় কোলাহল, আনন্দ মনে (আকতার)
১৮।
ধানক্ষেতে সেনাবাহিনীর তৈরি করা মাটির ভিতর ঘর। ওরা এখানেই ঘুমায়। প্রস্ততি নেয়। রাতের বেলার গুলি ছুঁড়ে রণ প্রস্তুতি নেয়। লোকজন দেখতে আসে। ওরা সুন্দর ব্যবহার করে মানুষের সাথে। ওদের অতিরিক্ত খাবার ওরা গরিবদের দেয়। ভাত, তরকারি। চা পাতা, গুড়ো দুধ। চিনি ইত্যাদি। ইশ, পুলিশের আচরণ যদি সেনাবাহিনীর মতো হতো!
১৯।
ফুলটা দেখেই মধুর সেই শৈশবের কথা মনে পড়ে গেল। এই ফুলের ডাটা ফেলে মুখে দিয়ে টান দিয়ে রস খেতাম। প্রচুর খেয়েছি, প্রচুর। খুব মিষ্টি লাগতো। তাই এই ফুলকে মধুফুল বলতাম আমরা। প্রকৃত নাম এখনো অজানা। কেউ জানলে জানাবেন।
২০। শরৎ যে কবে চড়ে গেছে তার সোনালি মেঘের ছটা (ধানক্ষেত, জসীমউদ্দীন)
কাশবনে নেই তাই কাশফুল
২১। আমাদের গ্রামটা অনেক আগেই গ্রাম থেকে উপশহর হয়েছে।এখন শহর হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। মাঠের বড় অভাব। ধানক্ষেত কাটা হলে সেখানে পিচ বানিয়ে ক্রিকেট খেলা হয়। ছোট্টরা খেলছে। আমিও খেলি তাঁদের সাথে। খেলা পারি না বলে বড়দের সাথে কম খেলি। হাহাহাহ...
২২। তরুণ কিশোর ! তোমার জীবনে সবে এ ভোরের বেলা,
ভোরের বাতাস ভোরের কুসুমে জুড়েছে রঙের খেলা।
রঙের কুহেলী তলে,
তোমার জীবন ঊষার আকাশে শিশু রবি সম জ্বলে। (তরুণ কিশোর)
২৩। আলোর চুমায় এই পৃথিবীর জ্বর
কমে যায়; তাই নীল আকাশের স্বাদ-সচ্চলতা-
পূর্ণ করে দিয়ে যায় পৃথিবীর ক্ষুধিত গহ্বর।
(অনেক আকাশ, জীবনানন্দ দাশ)
২৪। দুইটা পাখি বসে আছে। খুব কাছে গিয়ে ছবি তুলার চেষ্টা করলাম। রোদে আমার ছবি তোলার প্রতিবিম্ব দেখা যাচ্ছে। এই পাখিটারও নাম জানিনা।।আমাদের গ্রামে ডাকে ক্যাচ কাওয়া(কাক)।
২৫ ।একটু কাছে যেতেই একটা ক্যাচ কাওয়া উধাও। আরেকটার উড়ো উড়ো ভাব।
২৬। এইবার উড়াল দিয়েই দিল। এই ছবিটা তুলতে পেরে আমি খুউব খুশি।
২৭।
কপি ক্ষেত। শিম গাছও লাগানো হয়েছে পাশে। দড়ি দিয়ে জালের মতো বানানো উপরে, সেখানে শিম গাছ বেয়ে উঠবে।
২৮। লাউক্ষেত
২৯. পথের কেনারে মোর ধানক্ষেত, সবুজ পাতার পরে
সোনার চড়ায় হেমন্তরাণী সোনা হাসিখানা ধরে (ধানক্ষেতে, জসীমউদ্দীন)
৩০।বনের পরে বন চলেছে বনের নাহি শেষ
ফুলের ফলের সুবাস ভরা এ কোন পরীর দেশ) (দেশ,জসীমউদ্দীন)
৩১। মিঠেল রোদে আমার ছায়া পড়েছে বনলাছে।
৩২।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন-
'অতি ক্ষুদ্র অংশে তার সম্মানের চিরনির্বাসনে
সমাজের উচ্চ মঞ্চে বসেছি সংকীর্ণ বাতায়নে।
মাঝে মাঝে গেছি আমি ও পাড়ার প্রাঙ্গণের ধারে;
ভিতরে প্রবেশ করি সে শক্তি ছিল না একেবারে' (ঐকতান)
তাই মনের জড়তা সংকোচন ভুলে,
"তোমার মায়াবী নয়নে বিছাত দূর স্বপনের চুম।
শিথিল দেহটি এলাইয়া দিয়া বন লাছের গায়।"
ঘুমায়ে ঘুমায়ে ঘুমেরে যে ঘুম পাড়াইতে নিরালায়। (গোরী গিরির মেয়ে, জসীমউদ্দীন: বন লাছ হল খর কুঞ্জ। মূল লেখাটি 'ঘন তুষারের গায়'
৩৩।
ঘুমের অভিনয় করতে গিয়া চোখ লাইগা গেছিল সত্যি সত্যি। তাই বিকেলের মৃদু আলোতেও তাকারে পারছি না ঠিকমতন।
৩৪।
মনের যত ময়লা- দূর করতে কাপড়ে ময়লা
লাগিয়েছি; উল্লাস জোয়ারে ভেসেছি- দেখে অপরুপ বাংলা (আকতার)
৩৫।
সন্ধ্যে বেলায় ধান সেদ্ধ করার দৃশ্য।
তুমি যদি যাও সে-সব কুড়ায়ে
নাড়ার আগুনে পুড়ায়ে পুড়ায়ে
খাব আর যত গেঁটো- চাষীদের ডাকিয়া নিমন্ত্রণে
হাসিয়া হাসিয়া মুঠি মুঠি তাহা বিলাইব দুজনে (নিমন্ত্রণ, জসীমউদ্দীন)
৩৬। সবুজ রঙের শাক সবজি চারদিকে, মাঝখানে লাল শাক। কখনো আবার ধানখেত, কাঁচা গাঢ় সবুজ রঙের মাঝে লাল শাকের চাষ করা হয়। কি মনোরম দৃশ্য। যেন আমাদের পতাকা হয়ে, পতাকার রঙে সেজেছে বাংলা মা। যদি এই দৃশ্যটা উপর থেকে ড্রোন ক্যামেরায় নেয়া যেত তাহলে এই ছবি দেখে সবাই ভাবতো বাংলাদেশ এর পতাকাটিই আঁকা হয়েছে।
প্রত্যেকবারই শীতকালে, গ্রাম বাংলার অপরুপ এই দৃশ্যটা নয়ন ভরে দেখি। দেখতেই থাকি।। খুব, খুউউব উপভোগ করি।
সবগুলো ছবি Samsung J3(6) দিয়ে তোলা হয়েছে।
অলস ও ঘুমকাতুরে হবার ধরুণ শীতের সকাল উপভোগ করতে পারিনা। যদি উঠতে পারতাম, আর হাতে ভালো একটা ক্যামেরা থাকতো তাহলে একটু ভালো ধরণের ছবি ব্লগ আপনাদেরকে উপহার দিতে পারতাম, নিজেও উপভোগ করতে পারতাম।
একই ধরণের ছবি মনে হয় বেশি দিয়ে ফেলেছি যা বড্ড বিরক্তির কারণ। কিন্তু মন যে মানে না। তাই দিয়েই ফেললাম। ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
এই পোস্টটি নিয়ে কিছু কথা: একাত্তর, নামটা শুনলেই বুকের ভ্বতর চ্যাৎ করে উঠে। চোখের সামনে ভেসে উঠে পাকিস্তানি নরপশুদের বর্বরতা, আমাদের মা বোনের ইজ্জ্বত হারানো, লাখো শহীদের রক্তের স্মৃতি। সবশেষে ভেসে উঠে বিজয়গাঁথারর স্মৃতি সেদিন পোস্ট সংখ্যা নজরে পড়ে। দেখি আমার পোস্ট একাত্তরটি হয়ে গেছে। অথচ একাত্তর নম্বর পোস্টটা শিরোনামে উল্লেখ খুব ভালো করে দেয়ার ইচ্ছে ছিল। আমি একটু আফসোস করলাম কেন আগে চেক করলাম না। আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্য করেন। আমার ইচ্ছে অপূর্ণ থাকেনি। বিতর্ক ও রিপোর্টের কারণে একটা পোস্ট মুছে ফেলা হয়েছে। ফলে এই পোস্টটা একাত্তরতম পোস্ট হয়ে গেল। এই পোস্টটা তৈরি করতে যে কষ্ট করেছি, যে সময় ব্যয় করেছি আরো কোন পোস্ট তৈরি করতে এর সিকিভাগ করিনি। সেই ২৯ ডিসেম্বরে পোস্ট তৈরিরে হাত দিয়েছিলাম। আর সম্পন্ন হল এখন। ১৯ পেরিয়ে বিশে পা রাখা হলো
এসেছে নতুন রুপে নতুন বর্ষ
সকলের মনে লেগে যাক স্বর্গীয় হর্ষ
শুভ ইংরেজি নববর্ষ।
শেষ কথা:
পৃথিবী যান্ত্রিক, জীবন বেগতিক। হতাশায় ভরপুর, মারাত্মক অসুন্দর। তবে যদি প্রকৃতিকে দেখতে পারতাম একজন জীবনানন্দ দাশের চোখে, তবে জীবনের ব্যাকরণ---- চাওয়া পাওয়া, প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির হিসেব নিকেশ তো মেলাতাম না। উল্টো
'হতাশা সব ঝেড়ে ফেলে
হারায়ে যেতাম বাংলার মা'র কোলে' (আকতার)
বাংলার প্রকৃতির অনাবিল অপার সুন্দর্য উপভোগ করতাম, করতেই থাকতাম মুগ্ধ নয়নে, তৃষিত মনে,অবাক বিস্ময়ে। আর আপন মনেই বলে উঠতাম জীবনানন্দ দাশের সেই বিখ্যাত লেখা,
"বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর"
আহা! তখন জীবন হয়ে উঠতো অকৃত্রিম সুন্দর। বেঁচে থাকা হতো সীমাহীন আনন্দের। বেঁচে থাকার ইচ্ছেটা হতো তীব্র থেকে তীব্রতর। ওপারে যাওয়ার সময়ে হলে হয়তো আনমনেই জীবনানন্দ দাশের আরেকটি লেখা মুখ থেকে নিঃসৃত হতো-
"আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে- এই বাংলায়
হয়তো মানুষ নয়- হয়তো বা শংখচিল শালিখের বেশে"
বিঃদ্রঃ খুব সম্ভবত এটাই আমার প্রথম ছবি ব্লগ। ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৩:৫১