somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কেম্বডিয়ায় ৭ দিন

১২ ই জানুয়ারি, ২০০৯ দুপুর ২:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কোথা থেকে শুরু করব বুঝতে পারছিনা। যাই হোক সকাল ৭।৪৫মি: এ নমফেন এয়ারপোর্টের বাইরে মায়াবতি মুখের মেয়ে লেন আমাদের রিসিভ করল। চেহারার ভেতর হাম্বলনেস আর দৃঢ়তা ফুটে আছে। একই সাথে অভাব যে ওকে জড়িয়ে আছে তা বোঝাই যায়।

মিষ্টি মিষ্টি করে ইংলিসে সে কথা শুরু করল। বর্ণনা করে যেতে থাকল তার দেশের ইতিহাস। সমস্যা হলো, শুনতে খুব ভাল লাগছিল ওর কথা...খুবই মিষ্টি লাগছিল কানে কিন্তু অর্ধেকই বুঝতে পারছিলাম না অদ্ভুত উচ্চারনের কারনে আর মাঝে মাঝে অদ্ভুত ইংরেজি ব্যবহারের কারনে। ক্লিফের দিকে তাকিয়ে দেখি ও সমানে মাথা নেড়ে নেড়ে বলে যাচ্ছে "উমহু..উমহু...উমহু" আমি অবাক হয়ে যচ্ছিলাম ওর বোঝার ক্ষমতা দেখে। কারন ও এশিয়ান ইংলিস উচ্চারন বোঝে কম। সিংগাপুরের ইংলিশ উচ্চারন বুঝতেই ওর মাঝে মাঝে নাস্তানাবুদ অবস্থা হয়, আর আমি কাজ করি এশিয়ান ইংলিশ টু ইউরোপিয়ান ইংলিশ ট্রান্সলেটর হিসেবে হা হা হা। তাই লেনের কথা যখন আমিই বুঝতে পারছিনা ও বুঝতে পেরছে কি করে সেটা ভেবে মনে মনে নিজেকে গাধা ভাবতে শুরু করেছিলাম আর আরো মন দিয়ে শোনার চেষ্টা করতে থাকলাম লেন কি বলে তা বোঝার জন্য।

হোটেলে লাগেজ ফেলে দিয়েই আমরা গেলাম রাজার বাড়ি ও রাজদরবার দেখতে। শুনলাম রাজা মশাই মিটিং এর জন্য রাজদরবার ব্যবহার করছেন সেই সময় তাই দরবার দেখা যাবেনা তো ঠিক করলাম মিউজিয়ামে ঢু মেরে আসি এই ফাকে।

এর ভেতর লেন আমাদের বলল তাদের বর্তমান রাজার পলিটিক্সে মন নেই উনি নৃত্য চর্চায় সময় কাটান বেশি। আর উনি ঠিক করেছেন কখনো বিবাহ করবেন না। কথাটা শুনেই আমার সরল মনে একটা প্রশ্ন এলো কিন্তু ভদ্রতা বশত করতে পারলাম না সেই মুহুর্তে তবে জমা করলাম ভবিষ্যতের জন্য।

রাস্তায় নেমে দেখলাম যে যেদিক দিয়ে পারে চালিয়ে যাচ্ছে তা গাড়ি বালুন আর টুক টুক বলুন আর রিক্সাই বলুন। কিন্তু মজার ব্যপার হলো কেউ কাউকে ধাক্কা তো দুরের কথা হর্ন পর্যন্ত দিচ্ছেনা, সবাই সবাইকে পথ ছেড়ে দিচ্ছে। আমরা ৭ দিন ছিলাম কেম্বডিয়াতে একদিনও কোনো হর্ন শুনিনি কোনো এক্সিডেন্টের কথাও শুনিনি। শহরের ভেতর ম্যক্সিমাম স্পিড লিমিট ৪০, আর তা সবাই মেন চলছে।

অসাধারন মিউজিয়াম। শত শত বছর আগের পাথর, বুড্ডা মুর্তি আর পাথরের উপর খোদাই করা নকশি কথা ভরা দেয়াল এত শুন্দর ও যত্ন করে ওরা সংরক্ষন করেছে! শুধু তাই নয় ওরা নতুন প্রজন্মকে শেখাচ্ছে কি করে হুবহু একই ভাবে পাথড়ে খোদাই করে ইতিহাস লিখতে হয় ছবির ভেতর দিয়ে পুর্ব পুরুষদের মতো করে যাতে পুরোনো ঐতিয্যকে ধরে রাখতে পারে। হাজার হাজার বছর আগের বুড্ডা মর্ুর্তি দেেখে দেখে নতুন করে একই মুখ একই বুড্ডার হাসি কি করে পাথড় কেটে বানাতে হয় তার শিক্ষা দেবার একটা প্রতিষ্ঠানই ওদের আছে।

এরপর যখন আবার ফিরে যখন রাজবাড়িতে গেলাম রাজদরবার দেখতে অবাক হয়ে গেলাম ওদের আর্কিটেক্চারাল কাজ দেখে। যদি আপনারা কেউ থাইল্যান্ড গিয়ে থাকেন তবে নম ফেন অনেকটা থাইল্যান্ড টাইপ। রাজদরবারে একটা সিংহাসন দেখিয়ে লেন যখন আবার বলল রাজামশাই ন্ৃত্য চর্চা করেন এবং ঠিক করেছেন বিবাহ করবেন না তাই একটা সিংহাসন, আমার মনে আবারও দুষ্টু প্রশ্নটা মাথাচারা দিয়ে উঠল হা হা হা... আমি ফিস ফিস করে লেনের কানের কাছে মুক নিয়ে বললাম "তোমাকে একটা প্রশ্ন করতে পারি যদি কিছু মনে না করো" আমি আবার পেটের ভেতর প্রশ্ন ধরে রাখতে পারিনা। কিছু একটা মনে এলে আমার তা না জিঙ্গেস করলে ঘুম হয়না।

ও আমার কার্টেসিতে মুগ্ধ হয়ে হাসি মুখে আমায় অনুমতি দিল প্রশ্ন করার। আমি জিঙ্গেস করলাম "তোমাদের রাজামাশাই কি "gay" ?" ও অবাক হয়ে আমার দিকে তাকাল চোখ বড় বড় করে প্রশ্ন শুনে, যেন ওখানে বাজ পরেছে, এমন কথা ওর সাত জন্মেও বোধহয় শোনেনি। ও উত্তর দিতে পর্যন্ত ভুলে গেল। তারপর বলল " না gay না" ক্লিফ হাসি চেপে আমাকে বকা দিয়ে বললো এ আবার কি কথা।

বাললাম "আমার দোষটা কি সিংগাপুরে, থাইল্যন্ডে এত gay মানুষ যে ন্ৃত্য পটিয়সি রাজামশাই যে gay হতে পারেন এই প্রশ্ন আমার মনে ত আসতেই পারে। আমার দুই বস আর কলিগরা সব gay ছিল সিংগাপুরে", আমার সিংগাপুরে এবং বাংলাদেশে gay বন্ধু আছে আর তারা খুবই ভাল মানুষ, so nothing is wrong asking or being a gay। যাই হোক পরে মাফ চেয়ে নিলাম লেনের কাছে আর ও তখন সত্যিই হেসে ফেলল।

দেখলাম নেপলিয়েনর উপাহার দেয়া লাইব্ররি বিলডিং কেম্বডিয়ান রাজাকে...অসাধারন ইতিহাসের নিদর্শন। দেখলাম অপ্সরাদের নাচের ঘর, জোছনা দেখবার প্রাসাদ, সত্যিকারের রাজা রানিদের পোশাক, থালা বাসন ঘটি বাটি এমনকি মরার আগেই রাজার বানান নিজের সমাধি। ওদেশের রাজারা মারা যাবার আগেই নিজের পছন্দ মতো ডিজাইন করা নিজের সমাধি বানান। মনে হলো রুপকথার দেশে চলে গেছি!!! রাজার পোশােক সোনা, রুপা, হিরে, রুবি, এমারেল্ড আরো নানান দামি পথরে খচিত। কেম্বডিয়া সোনা, রুপা আর জেম্স স্টোনের জন্য বিক্ষাত, ওদের ক্ষনি আছে ওগুলোর।

সেদিন হোটেলে ফিরে ক্লিফকে বললাম "সিংগাপুরে ত তুমি ওদের ইংরেজি বোঝোইনা এখানেত তুমি আমার চাইতে ভাল বুঝলে" ও বলল "কই বুঝলাম, বুঝিনি ত কিছুই কিন্ত প্রশ্ন করতে পারছিলাম না লেনের ক্রমাগত বর্ননার ভেতর, তাইতো বলছিলাম উমহু..উমহু...তার মানে কিছুই বুঝিনি" হা হা হা ।

লেন আমাদের গাইড ছিল নমফেন এ... ছবি দিমাল এখানে ওর...ওহ! আর রাজার বাড়িতে বিরাট কলার মোচা দেখেছিলাম, সেটার ছবি দিলাম। কেম্বডিয়ায় মজা করে কলার মোচার সালাদ বানায়!!!

গল্পটা ভাল লাগলে জানাবেন বাকি ৬ দিনের কাহিনি ছোট ছোট করে লিখব পরে। ভাল থাকুন সবাই।

ছবি:
১। লেন ও আমি রাজবাড়ির সামনে।
২। রাজবাড়ির ভেতর কলার মোচা।
৩। ক্লিফ ও আমি রাজবাড়ির রাজদরবারের সামনে।
৪। নেপলিয়নের দেয়া লাইব্রেড়ি।
৫। আমি মিউজিয়ামে।
৬। আমি আর ক্লিফ রাজদরবারের সিড়িতে।
৭। জোছনা দেখবার প্রাসাদ রাজবাড়ির ভেতর।
৮। লেন
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০১১ ভোর ৬:০৫
২০টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×