বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
এইখানের বিষয় বস্তু কাউকে হেয় বা ছোট করা না -আমরা সবাইকে শ্রদ্ধা করি।
আল্লাহ কে 'ঈশ্বর' বলেন খ্রীষ্টানরা, জেহোভা বলেন ইহুদীরা, ভগবান বলে ডাকেন হিন্দুরা, আহুরা মাজদা বলে ডাকেন জোরাস্টেইনরা আর শিখরা ডাকেন 'এক ওমকার' যার অর্থ একজন মহান স্রষ্টা আবার কখনো কখনো 'ওহে গুরু' বলে সম্বোধন করেন। যার অর্থ একজন সত্য স্রষ্টা। (উল্লেখ্য শিখরা মূর্তিপুজার ঘোর বিরুধী) শ্রীগুরু গ্রন্থ সাহেব এ উল্লেখ আছেঃ
"আত্মার সৃষ্টিকারী কেবলমাত্র একজন-ই। আমি কি তাকে কখনো ভুলতে পারি।" "সুমহান সেই স্রষ্টার নাম সর্বাপেক্ষা উত্তম, সর্বোচ্চ সন্মানিত। "
সূত্রঃ শ্রীগুরু গ্রন্থ সাহেব- জুবঃ দ্বিতীয় খন্ড
“সেই সত্যের স্রষ্টা সতন্ত্র, ভয়শূন্য, অঘৃণ্য, চিরঞ্জীবী, স্বীয় অস্তিত্বে উদ্ভাসিত, তিনি মহান এবং দয়ালু”।
সূত্রঃ শ্রীগুরু গ্রন্থ সাহেব-খন্ড-১। যাপুজি । ১
শ্রীগুরু গ্রন্থ সাহেবের ১৭৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছেঃ
"কলমাইক পুকারেয়া দোজাহানে কোয়ী
যো কহেম নাপাক হ্যায়, দোজখজওন সোয়ী।"
অর্থঃ "একমাত্র কলেমা তৈয়ব সতত পড়িবে, উহা ভিন্ন সঙ্গের সাথী কিছু নাই। যে উহা না পড়িবে সে দোযখে যাইবে।"
সূত্রঃ শ্রীগুরু গ্রন্থ সাহেবঃ পৃষ্ঠা নং-১৭৪
গুরু নানক কোরআনের বৈধতা স্বীকার করে বলেছেনঃ
"তৌরাত, জবুর, ইঞ্জিল তেরে পড়হ শুন দেখে বেদ।
রহি কুরআন কেতাব কলি যুগমে পরওয়ার।"
অর্থঃ "তৌরাত, জবুর, ইঞ্জিল ও বেদ পড়ে দেখেছি, কিন্তু এই কুরআনই একমাত্র গ্রন্থ যাহা কলি যুগে মানবের মুক্তি দিতে একমাত্র সমর্থ।"
"(১) বেদ ও পুরাণের যুগ চলে গেছে, এখন দুনিয়াকে পরিচালিত করার জন্য কোরআনই একমাত্র গ্রন্থ।
(২) মানুষ অবিরত অস্থির এবং দোজখে যায় তার একমাত্র কারণ হলো এই যে, ইসলামের নবীর (সাঃ) প্রতি তার কোন শ্রদ্ধা নেই।"
(শ্রীগুরু গ্রন্থ সাহেব হতে গৃহীত)
শিখধর্ম
একটি একেশ্বরবাদী ধর্ম। খ্রিষ্টীয় পঞ্চদশ শতাব্দীতে পাঞ্জাব অঞ্চলে এই ধর্ম প্রবর্তিত হয়। এই ধর্মের মূল ভিত্তি গুরু নানক দেবও তাঁর উত্তরসূরি দশ জন শিখ গুরুর (পবিত্র ধর্মগ্রন্থ গুরু গ্রন্থ সাহিব এঁদের মধ্যে দশম জন বলে বিবেচিত হন) ধর্মোপদেশ। শিখ ধর্মমত ও দর্শন গুরমত (অর্থাৎ, গুরুর উপদেশ) নামেও পরিচিত। শিখধর্ম কথাটির উৎস নিহিত রয়েছেশিখ শব্দটির মধ্যে; যেটি সংস্কৃত মূলশব্দ শিষ্য বা শিক্ষা থেকে আগত। শিখ ধর্মমতে ঈশ্বর যাকে ওহেগুরু বলা হয় তার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তিনি নিরাকার, আকাল ও আলেখ। আকাল মানে হচ্ছে সময়হীন, আলেখ মানে হচ্ছে অদৃশ্য।
শিখধর্মের প্রধান বক্তব্য হল ওয়াহেগুরু অর্থাৎ সর্বব্যাপী ঈশ্বরের প্রতীক এক ওঙ্কার-এর প্রতিভূ ওয়াহেগুরু-তে বিশ্বাস। এই ধর্ম ঈশ্বরের নাম ও বাণীর নিয়মবদ্ধ ও ব্যক্তিগত ধ্যানের মাধ্যমে মোক্ষলাভের কথা বলে। শিখধর্মের একটি বিশিষ্টতা হল এই যে, এই ধর্মে ঈশ্বরের অবতারতত্ত্ব স্বীকৃত নয়। বরং শিখেরা মনে করেন ঈশ্বরই এই ব্রহ্মাণ্ডের স্বরূপ। শিখেরা দশ জন শিখ গুরুর উপদেশ ও গুরু গ্রন্থ সাহিব নামক পবিত্র ধর্মগ্রন্থের অনুশাসন মেনে চলেন। উক্ত ধর্মগ্রন্থে দশ শিখ গুরুর ছয় জনের বাণী এবং নানান আর্থ-সামাজিক ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের বক্তব্য লিপিবদ্ধ রয়েছে। গুরু গোবিন্দ সিংহ এই গ্রন্থটিকে দশম গুরু বা খালসা পন্থের সর্বশেষ গুরু বলে ঘোষণা করে যান। পাঞ্জাবের ইতিহাস, সমাজ ও সংস্কৃতির সঙ্গে শিখধর্মের ঐতিহ্য ও শিক্ষা ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। শিখধর্মের অনুগামীরা শিখ (অর্থাৎ, শিষ্য) নামে পরিচিত।
হিন্দু ধর্মঃ
প্রচলিত বিশ্বাসঃ
হিন্দু ধর্মকে সাধারন ভাবে বহু দেবতার ধর্ম হিসাবে গন্য করা হয়,প্রকৃতপক্ষে হিন্দুরা একাধিক সৃস্টিকর্তাই বিশ্বাসী।কিছু হিন্দু ৩ দেবতায়,কিছু হিন্দু ৩০ দেবতায়,কিছু হিন্দু ১০০ দেবতায়,কিছু হিন্দু ৩৩ কোটি দেবতায় বিশ্বাসী।
ব্লগার মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় বলেছেনঃ
দ্বিতীয়ত হিন্দুদের ৩৩ কোটি দেবদেবী আছে বলে একটা রিউমার প্রচলিত আছে । অনেকেই দেবদেবী এবং ঈশ্বরের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারেননা বলে উপহাস করে বলেন হিন্দুদের ৩৩ কোটি ঈশ্বর আছে !!
এই ৩৩ কোটির কনসেপ্ট টা এসেছে মূলত মহাত্মা গান্ধীর একটা উক্তি থেকে । হিন্দু ধর্মে মানুষ মাত্রই পরমাত্মার অংশ অর্থাৎ ঈশ্বরের অংশ বলে ধরে নেয়া হয়।দেবদেবীরা ঈশ্বরের বিভিন্ন শক্তির প্রকাশ , হিন্দুধর্মে এমনটাই বলা আছে ।
ভারত ভাগের সময় মহাত্মা গান্ধী জনশক্তি বুঝাতে গিয়ে বলেছিলেন " আমাদের ৩৩ কোটি দেবদেবী আছে "
উল্লেখ্য গোটা ভারত বর্ষ মিলিয়ে তখন জনসংখ্যা ৩৩ কোটির মতই ছিলো। এই কথা থেকেই ৩৩ কোটি দেবতার কনসেপ্ট এসেছে । বাস্তবে কিন্তু দেবদেবীর সংখ্যা ৩৩ কোটি না ।
পার্থক্যঃ
হিন্দুরা বিশ্বাস করে বৃক্ষ ,সূর্য ,পশু -পাখি,প্রানি – মানুষ এসব কিছু দেবতা বা ঈশ্বর বা স্রস্টা আর মুসলমানরা বিশ্বাস করে এই সব কিছু স্রস্টার। হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্য পার্থক্য শুধু ” র ” এর।
শ্রীমদ্ভগবদগীতায় শ্রীভগবান বলেন,
"সর্বধর্মান্ পরিত্যজ্য মামেকং শরণং ব্রজ।
অহং ত্বাং সর্বপাপেভ্যো মোক্ষয়িষ্যামি মা শুচঃ ৬৬"
(সূত্রঃ শ্রীমদ্ভগবদগীতা, ১৮ তম অধ্যায়, ৬৬ নং শ্লোক)
(শব্দার্থঃ সর্বধর্মান্- সর্বধর্ম, মামেকং- কেবলমাত্র আমাকে, শরণং ব্রজ- আশ্রয় কর বা স্মরণ কর, অহং- আমি, ত্বাং- তোমাকে, সর্বপাপেভ্যঃ- সমস্ত পাপ হইতে, মোক্ষয়িষ্যামি- মুক্ত করিব, মা শুচঃ- শোক করিও না।)
অনুবাদঃ "সকল ধর্ম পরিত্যাগ করিয়া তুমি একমাত্র আমারই শরণ লও; আমি তোমাকে সকল পাপ হইতে মুক্ত করিব, শোক করিও না। ৬৬"
(শ্রীমদ্ভগবদগীতা অধ্যায়ঃ ১৮, শ্লোক- ৬৬, পৃষ্টাঃ ৩৬৭, লেখকঃ শ্রীজগদীশ চন্দ্র ঘোষ)
শ্রীমদ্ভগবদগীতার সপ্তম অধ্যায় (জ্ঞান যোগ) এর ২০ নং শ্লোকেও একই কথা বলা হচ্ছে।
"ত্যক্তা কর্মফলাসঙ্গং নিত্যতৃপ্তো নিরাশ্রয়ঃ ।
কর্মণ্যভিপ্রবৃত্তোহপি নৈব কিঞ্চিত করোতি সঃ ২০ "
(এখানে, সঃ =তিনি, কর্মফলাসঙ্গং = কর্ম ও কর্ম ফলে আসক্তি, ত্যক্তা = ত্যাগ করে, নিত্যতৃপ্ত = সদা তুষ্ট, নিরাশ্রয়ঃ = নিরবলম্ব, সন্ = হয়ে)
অর্থঃ "যিনি কর্মে ও কর্মফলে আসক্তি পরিত্যাগ করিয়াছেন, যিনি সদা আপনাতেই পরিতৃপ্ত, যিনি কোন প্রয়োজনে কাহারও আশ্রয় গ্রহণ করেন না, তিনি কর্মে প্রবৃত্ত হইলেও কিছুই করেন না (অর্থাৎ তাঁহার কর্ম অকর্মে পরিণত হয়)। (শ্রীমদ্ভগবদগীতায়। অধ্যায়-৭ (জ্ঞানযোগ), পৃষ্টা নং ৯৮-৯৯, লেখকঃ শ্রীজগদীশ চন্দ্র ঘোষ)
শ্রীমদ্ভগবদগীতার সপ্তম অধ্যায় (জ্ঞান-বিজ্ঞান-যোগ) এর ৬ নং এবং ২০ নং শ্লোকে শ্রীভগবান স্বীয় অস্তিত্বের একক রুপ বর্ণনা করে বললেন,
এতদযোনীনি ভূতানি সর্বাণীতু্যপধারয়।
অহং কৃত্স্নস্থ্য জগতঃ প্রভবঃ প্রলয়স্তথা ৬
শব্দার্থঃ সর্বাণি ভূতানি = চেতন-অচেতন সকল বস্তু, ইতি উপধারয় = ইহা
জানিও, অহং = আমি, কৃত্স্নস্থ্য জগতঃ = সমগ্র জগতের, প্রভবঃ = উত্পত্তির কারণ, তথা প্রলয়ঃ = এবং প্রলয়ের কারণ।
অর্থঃ সমস্ত ভূত (পরিদৃষ্ট সকল জীব-জড়) এই দু্ই প্রকার হইতে জাত, ইহা
জানিও। সুতরাং আমিই নিখিল জগতের উত্পত্তি ও লয়ের কারণ। (সুতরাং আমি প্রকৃতপক্ষে জগতের কারণ)। (সূত্রঃ শ্রীমদ্ভগবদগীতা, অধ্যায়ঃ ৭ (জ্ঞান-বিজ্ঞান-যোগ),পৃষ্ঠাঃ ১৬০, শ্লোকঃ ৬, লেখক শ্রীজগদীশ চন্দ্র ঘোষ)
এখানে বলা হচ্ছে জগতের সমুদয় সৃষ্টির স্রষ্টা যিনি তিনি এক, তিনিই এই নিখিল জগতের উত্পত্তি ও ধ্বংসের কারণ। তিনি ব্যতিত ভিন্ন কোন উপাস্য নাই। অদৃশ্য দৃশ্য জগতের তিনিই একমাত্র স্রষ্টা (কারণ)।
কামৈস্তৈস্তৈর্হৃতজ্ঞানাঃ প্রপদ্যন্তেহন্যদেবতাঃ।
তং তং নিয়মমাস্থায় প্রকৃত্যা নিয়তাঃ স্বয়া ২০
শব্দার্থঃ তৈঃ তৈঃ কামৈঃ = সেই সেই অর্থাৎ স্ত্রী-পুত্র ধনমানাদি বিবিধ কামনাদ্বার, হৃতজ্ঞানাঃ = অপহৃতজ্ঞান ব্যক্তিরা, তং তং নিয়মম্ = সেই সেই বিবিধ নিয়ম, স্বয়া প্রকৃতি নিয়তাঃ = স্বীয় স্বীয় স্বভাবের বশীভূত হইয়া, অন্য দেবতাঃ প্রপদ্যন্তে =অন্য দেবতার ভজনা করিয়া থাকে।
অর্থঃ "(স্ত্রী-পুত্র ধনমানাদি বিবিধ) কামনাদ্বারা যাহাদের বিবেক অপহৃত হইয়াছে, তাহারা নিজ নিজ কামনা-কলুষিত স্বভাবের বশীভূত হইয়া ক্ষুদ্র দেবতাদের আরাধনায় ব্রতোপবাসাদি যে সকল নিয়ম আছে, তাহা পালন করিয়া অন্য দেবতার ভজনা করিয়া থাকে। (আমার ভজনা করে না।)
(সূত্রঃ শ্রীমদ্ভগবদগীতা, অধ্যায়ঃ ৭ (জ্ঞান-বিজ্ঞান-যোগ),পৃষ্ঠাঃ ১৬০, শ্লোকঃ ২০, লেখকঃ শ্রীজগদীশ চন্দ্র ঘোষ)
এখানে স্বয়ং ভগবান বললেন, মানুষ অল্পজ্ঞান হেতু একক আদি-আনদি স্রষ্টার আরাধনা না করে ক্ষুদ্র শক্তি, পরনির্ভরশীল, অকর্মণ্য দেবতার আরাধনা করে। মানুষ নিতান্তই মোহেবশে অথবা কামনার আসক্তিতে একক স্রষ্টার ভজনা বাদ দিয়ে অন্য নিকৃষ্ট দেব-দেবতার আরাধনা করে থাকে।
আল্লাহর কিছু বানীঃ
সুরা নিসা – (৪)৭৯ নং আয়াত – আল্লাহ বলছেন – আমি তোমাকে [মোহাম্মাদ (সা)] সমগ্র মানব জাতির জন্য রাসুল বানিয়ে পাঠিয়েছি।
সুরা ইমরা্ন (৩) ৮৫ নং আয়াত – আল্লাহ বলছেন – ইসলাম ছাড়া অন্য কোন জীবন বিধান কবুল হবে না ।
সুরা আন নাহল – (১৬) ৩৬ নং আয়াত – আল্লাহ বলছেন – আমি প্রত্যক জাতির কাছে নবী ও রাসুল পাঠিয়েছি।
সুরা নিসা – ১৬৪ – নং আয়াত – আল্লাহ বলছেন – আমি আগে তোমাকে (নবী সাঃ )বলেছি কিছু নবীদের কথা ,কিছু রাসুলদের কথা বাকিদের কথা বলিনি।
ভগবত গীতা – অধ্যায় ৭ – স্তব ২০ -যাদের বোধশক্তি পার্থিব আকাঙক্ষার মাধ্যমে বিলুপ্ত হয়ে গেছে,শুধুমাএ তারাই উপদেবতার নিকটে উপাসনা করে।
ভগবত গীতা – অধ্যায় ১০ – স্তব ৩ -তারা হচ্ছে বস্তুবাদি লোক ,তারা উপদেবতার উপাসনা করে ,তাই তারা সত্যিকার স্রস্টার উপসনা করে না।
উপনিষদ – ছান্দোগ্য উপনিষদ – অধ্যায় ৬ – সেকসন ২ – ভলিউম ১ – একাম এবাদ্বিতীয়ম ” স্রস্টা একজনই ,তার কোন শরীক নেই।
শ্বেতাস্বতরা উপনিষদ – অধ্যায় ৬ – অনুচ্ছেদ ৯ – ২য় খন্ড – পৃস্ঠা ২৬৩ – না কছ্য কছুজ জানিত না কধিপহ – তার কোন পিতা মাতা নেই,এমনকি প্রভু নেই।
শ্বেতাস্বতরা উপনিষদ – অধ্যায় ৬ – অনুচ্ছেদ ১ ৯ – না তছ্য প্রতিমা অস্তি – স্রস্টার কোন প্রতিমা নেই
যজুর্বেদ – অধ্যায় ৩২ – অনুচ্ছেদ ৩ – ন তস্য প্রতিমা আস্তি -স্রস্টার কোন প্রতিমা নেই
যজুর্বেদ ,দেবী চাদ এম এ পৃস্ঠা ৩৭৭ – যেহেতু তিনি চিরন্জীব,তাই তাকেই উপাসনা করতে হবে
যজুর্বেদ – অধ্যায় ৪০- অনুচ্ছেদ ৯ – অন্ধতম প্রভিশান্তি ইয়ে অশম্ভুতি মুপাস্তে – যারা অশম্ভুতির পুজা করে তারা অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়।তারা অধিকতর অন্ধকারে পতিত হয় শাম মুর্তির পুজা করে ।অশম্ভুতি হল – প্রাকৃতিক বস্তু যেমন-বাতাস,পানি,আগুন ।শাম মুর্তি হল – মানুষের তৈরী বস্তু যেমন -চেয়ার ,টেবিল ,মূর্তি।
ঋগবেদ – বই ১ – অধ্যায় ১৬৪ ভলিউম ৪৬ -ন তস্য প্রতিমা আস্তি – স্রস্টার কোন প্রতিমা নেই
ঋগবেদ – বই ৮ – অধ্যায় ১ ভলিউম ১ - মা চিদান্যদভি শাংসত – ও বন্ধু , স্রস্টার সাথে কাউকে ডাকিওনা।
হিন্দু বেদান্ত’র ব্রক্ষসূএ -ব্রক্ষ সূএ কে হিন্দু ধর্মে বেদান্ত বা মুল বিশ্বাস বলা হয়, ব্রক্ষ সূএ হচ্ছে – একাম ব্রক্ষ , দ্বিতীয় নাস্তি নেহ না নাস্তি কিঙ্কন -সৃস্টিকর্তা মাএ একজনই ,দ্বিতীয় কেউ নেই , নেই , নেই ,কিছুই নেই ।
মোহাম্মদ সাঃ এর কথা হিন্দু ধর্মেঃ
ভবিষৎ পুরানে ৩য় পর্ব ৩য় খন্ড ১০-২৭ অনুচ্ছেদ -
ম্লেচ্ছদের বসবাসের স্হান নষ্ট হয়ে গেছে ।এখানে যে শত্রুরা রাজত্ব করত,সেখানে এসেছে আর শক্তিশালী শত্রু।আমি এমন একজনকে পাঠাব যার নাম হবে কল্কি অবতার ,মানুষকে পরিচালিত করবেন সরল পথে,হে রাজাভোজ তুমি পিশাচদের রাজ্য কখনই যাবে না।কারন আমি আমার দয়া দিয়ে তোমাকে পবিএ করব ।তারপর দেবতুল্য একজন মানুষ ভোজ রাজার কাছে আসল তারপর বলল যে ,আর্য ধর্ম এ পৃথিবী তে প্রতিস্ঠিত হবে।এটা হবে ঈশ্বর পরমাত্নার আদেশে।আমার অনুসারীদের খাৎনা দেওয়া হবে , তাদের মাথার পিছনে কোন টিকি থাকবে না।তারা মুখে দাড়ি রাখবে।তারা একটা বিপ্লব করবে ।তারা প্রার্থনার জন্য আহবান করবে।তারা সব ভাল খাবার খাবে।
অথর্ববেদ ২০ নং গ্রন্হের ১২৭ নং অনুচ্ছেদ -
১ম মন্ত্রে বলা হয়েছে – তিনি হলেন নরশাংসা ।তিনি কাওরাসা,যাকে রক্ষা করা হবে ৬০ হাজার ৯০ জন শএুর কবল থেকে।
সংস্কৃতে ” নর ” এর অর্থ একজন মানুষ , মানে শাংসা মানে প্রশংসা বা প্রশংসীয়। আর আরবিতে মোহাম্মদ সাঃ এর নাম এর মানে একই।কাওরাসাআরেক অর্থ শান্তির রাজপুএ ।মোহাম্মদ সাঃ ছিলেন শান্তির রাজপুএ ।এর আরেকটা মানে অভিবাসী।আমরা জানি মোহাম্মদ সাঃ মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেছিলেন।তিনি অভিবাসী ছিলেন ।আমরা জানি সেইসময় মক্কায় মোহাম্মদ সাঃ এর শত্রু সংখা ছিল প্রায় ৬০হাজার।
২য় মন্ত্রে বলা হয়েছে – তিনি হলেন উটে চড়া ঋষি।
মোহাম্মদ সাঃ উটে চড়তেন।
৩য় মন্ত্রে বলা হয়েছে – তিনি হলে মহাঋষি।
কেউ বলে মোহাম্মদ কেউ বলে মহাঋষি
৪র্থ মন্ত্রে বলা হয়েছে – তিনি হলে বৈশবী বের।
তিনি হলেন ” বের “।বের মানে যিনি প্রশংসা করে । মোহাম্মদ সাঃ এর আরেন নাম আহমেদ যার অর্থ যিনি প্রশংসা করে ।
বৌদ্ধ ধর্মঃ
বিশ্বাসঃ
বুদ্ধদেব চুপ ছিলেন যখন তাকে ঈশ্বর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল।
অনেক বৌদ্ধ বিশ্বাস করে সব কিছুই ঈশ্বর আর অনেক বৌদ্ধ বিশ্বাস করে ঈশ্বর নেই।
সৃস্টিকর্তার (আল্লাহর) কিছু বানীঃ
সৃস্টিকর্তার শেষ রাসুল হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) hazrat Mohammad (PBUH) Is The Final Messenger Of God (Allah) (রাসুল মানে – বার্তাবাহক)
সুরা নিসা – (৪)৭৯ নং আয়াত – আল্লাহ বলছেন – আমি তোমাকে [মোহাম্মাদ (সা)] সমগ্র মানব জাতির জন্য রাসুল বানিয়ে পাঠিয়েছি।
সুরা ইমরান (৩) ১৯ নং আয়াত – আল্লাহ বলছেন – নিঃসন্দেহে আল্লাহর কাছে ইসলাম একমাএ গ্রহন যোগ্য ব্যাবস্তা ।
সুরা আন নাহল – (১৬) ৩৬ নং আয়াত – আল্লাহ বলছেন – আমি প্রত্যক জাতির কাছে নবী ও রাসুল পাঠিয়েছি।
সুরা নিসা – ১৬৪ – নং আয়াত – আল্লাহ বলছেন – আমি আগে তোমাকে (নবী সাঃ )বলেছি কিছু নবীদের কথা ,কিছু রাসুলদের কথা বাকিদের কথা বলিনি।
বৌদ্ধ ধর্মে হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)
১ । Sacred Books of the East volume 35 pg. 225
আমার পরে আরেক জন বুদ্ধ আসবেন ,তার মাইএি । যার কিছু বিশেষ কিছু বৈশিস্ট থাকবে , আমি এখন ১০০ জনকে নেতৃত্ব দিচ্ছি , সে দিবে হাজার হাজার জনকে।আমরা জানি নবী সাঃ নেতৃত্ব দিয়েছেন হাজার হাজার।
২ । Gospel of Buddha by Carus pg. 217 and 218 (From Ceylon sources)
আনন্দ জিজ্ঞেস করল – হে আশির্বাদ প্রাপ্ত আপনি যখন চলে যাবেন তখন কে আমাদেরকে কে পথ দেখাবে ? তিনি উত্তরে বলল আমি একাই প্রথম বৌদ্ধ না এবং শেষ বৌদ্ধ না পৃথিবী তে ,ভবিষৎতে আরেক জন বৌদ্ধ পৃথিবীতে আসবে যিনি পবিএ ,সত্যবাদী ,যিনি আলোক প্রাপ্ত ,যিনি খুব জ্ঞানী এবং আর বিনয়ী। যিনি মঙ্গলজনক ,যার রয়েছে বিশ্ব জগতের জ্ঞান ।তিনি প্রচার করবেন একটি ভাল ধর্ম ।তিনি যে ধর্ম প্রচার করবেন শুরুতে গৌরবময় থাকবে ,চরম সময়ে গৌরবময় থাকবে , শেষেও গৌরবময় থাকবে । তিনি যে ধর্ম প্রচার করবেন তার ভিত্তি হবে সত্য ,আর সেটাই হবে সঠিক জীবন দর্শন।বুদ্ধের প্রধান শিষ্য আনন্দ তাকে প্রশ্ন করলো – আমরা কিভাবে তাকে চিনব?বুদ্ধ উত্তর দিলেন সে লোকের নাম হবে ” মাইএি ” । মাইএি এর অর্থ ক্ষমাশীল , স্নেহময় ,দয়ালু ,করুনাময়। আরবিতে এই গুলোর মানে ” রাহমা “
সুরা আম্বিয়া ১০৭ নং আয়াত – আমি তোমাকে পুরো মানুষ ও জীব জগতের প্রতি রহমত হিসাবে পাঠিয়েছি।
৩ । Sacred Books of the East volume 11 pg. 36
মহপরিনিব্বান সুত্তা ২নং অধ্যায়ের ৩২ অনুচ্ছেদে আছে – গৌতম বুদ্ধের ক্ষেএে তার কোন প্রকাশ্য বা গুপ্ত শিক্ষা ছিল না।হে আনন্দ জ্ঞান মুঠ বন্ধ করে রাখবে না জ্ঞানটা তোমাদের নিজের কাছে রেখে দেবে না । এটা প্রচার করতে হবে।
মোহাম্মদ সাঃ আল্লাহর নিকট থেকে ওহী হিসাবে যা পেয়েছিলেন ,সেটা সবার কাছে প্রচার করেছেন।আর সাহাবাগনকে বলেছেন এগুলো মানুষের কাছ থেকে লুকিয়ে রেখনা।এটা মানুষের মধ্য প্রচার করতে হবে।
মহপরিনিব্বান সুত্তা ৫নং অধ্যায়ের ৩৬ পৃস্টায় আছে – গৌতম বুদ্ধের যেমন পরিচারক আছে আনন্দ ,একই ভাবে মাইএিরও এক পরিচারক থাকবে।আমরা নবী সাঃ এর সীরাত বা ইতিহাস থেকে জানি মোহাম্মদ (সাঃ) এর পরিচারকের নাম ছিল আনাস রাঃ , তিনি ছিলেন মালিকের পুএ।আনাস রাঃ বলেছেন আমার পিতা মাতা আমাকে ৮ বছর বয়সে নবী সাঃ এর হাতে তুলে দেন ।তার পিতা মাতা নবী সাঃ কে বলেছেন -একে আপনার পরিচারক হিসাবে গ্রহন করুন ।
গসপেল অব বুদ্ধ -২১৪ নং পৃস্টা -এইযে মাইএি আসবেন তার ছয়টা গুন থাকবে ।তিনি আলোকপ্রাপ্ত হবে হবেন রাতের বেলায়,আলক প্রাপ্ত হওয়ার পর তিনি উজ্জ্বল হবেন,তিনি স্বাভাবিকভাবে মারা যাবেন, তিনি রাতের বেলায় মারা যাবেন,মারা যাওয়ার সময় তিনি উজ্জ্বল হবেন,মারা যাওয়ার পর এ পৃথিবীতে তাকে আর স্বশরীরে দেখা যাবে না।এই ছয়টা গুন নবী সাঃ এর মধ্য পাওয়া যায়।
আমরা জানি নবী সাঃ ওহী রাতের বেলায় লাভ করেন।সুরা দুখানের ২-৩ নং আয়াত – কোরআন নাযিল হয়েছিল -মহিমান্বিত রাতে।আমরা জানি নবী সাঃ উজ্জ্বেলিত হয়েছিলেন।তিনি স্বাভাবিকভাবে মারা গেছেন।তিনি মারা যাবেন রাতের বেলা ।আমরা আয়েশা রাঃ এর হাদিস থেকে জানতে পারি নবী সাঃ এর ঘরে তেল ছিল না ।আয়েশা রাঃ পাশের বাড়ি থেকে তেল ধার করে আনলেন।অর্থাৎ তিনি মারা যাওয়ার সময় রাত ছিল।
তথাগতরা তারা শুধু প্রচার করবে ।মানে -যে বুদ্ধ আসবেন তারা শুধু প্রচার করবে।
সুরা গাসিয়া ২১ নং আয়াত – তোমার কাজ শুধু ধর্ম প্রচার করা।
স্বর্গে যেতে হলে তোমার ভাল কাজ গুলোর দরকার হবে ।
সুরা আছর – ১-৩ নং আয়াত – আসরের শপথ ,নিশ্চয় মানুষ ক্ষতির মধ্যে আছে।তারা বাদে যাদের বিশ্বাস আছে ,যারা মানুষকে ধৈর্য আর অধ্যবসায়ের পথে আনে।বেহেশতে যাওয়ার জন্য শর্ত হল ন্যায় নিস্ঠাতা
খ্রিস্টান ধর্মঃ
খ্রিস্টান হচ্ছে একটি সেমিটিক ধর্ম।খ্রিস্টান ধর্ম নামটি ঈসা আঃ সাথে সম্পৃক্ত। ইসলামই একমাএ হচ্ছে অখ্রিস্টান ধর্ম যেখানে ঈসা (যিশু খ্রিস্ট) আঃ কে নবী হিসাবে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে।
বিশ্বাসঃ
কেউ বিশ্বাস করে ঈসা আঃ ছিলেন সৃস্টিকর্তার ছেলে ।কেউ বিশ্বাস করে ঈসা আঃ ছিলেন সৃস্টিকর্তা । এিত্ব বা তিনের এক নামক ঈসা আঃ সৃস্টিকর্তা।
একদিন ঈসা আঃ কে সর্বপ্রথম বিধান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল ।তখন মুসা আঃ যে কথাটি বলেছিলেন তিনিও সে কথাটি পুনরাবৃতি করলেন অর্থাৎ তিনি বললেন শোন ইসরাইল বাসীরা আমাদের সৃষ্টিকর্তা এক।(Mark 12-29 )
আমার কাছে যা শুনতে পাও তা আমার নই বরং যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন
তারই।(Gospel of John 14:24)
আমার কথাগুলো শোন নাজারাথের ঈসা তোমাদের মধ্য থেকে এক মনোনীত বান্দা ,যিনি এসেছেন সম্পর্ন অলৌকিকভাবে ,আর সৃষ্টিকর্তা তা করেছেন তোমাদের সবার উপস্হিতিতে।আর তোমরা উহার সাক্ষী ছিলে (book of ex 2-22)
ইসলামে ঈসা আঃ সম্পর্কে বিশ্বাসঃ
কোন মুসলিম প্রকৃত মুসলিম হতে পারবে না যদি না সে ঈসা আঃ কে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে।
আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে মহান আল্লাহ ঈসা আঃ কে নবী হিসাবে পাঠিয়েছেন।
আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে তিনি অলৌকিকভাবে জন্ম গ্রহন করেছেন।কোন পুরুষের ঔরসজাত ছিলেন না।
আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে তিনি আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষে মৃতকে জীবন দান করতেন।
আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে তিনি আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষে অন্ধকে অন্ধত্ব থেকে ও কুষ্ঠ রোগীকে কুষ্ঠ থেকে মুক্তি দান করতেন।
সৃস্টিকর্তার (আল্লাহর) কিছু বানীঃ
সৃস্টিকর্তার শেষ রাসুল হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) hazrat Mohammad (PBUH) Is The Final Messenger Of God (Allah) (রাসুল মানে – বার্তাবাহক)
সুরা নিসা – (৪)৭৯ নং আয়াত – আল্লাহ বলছেন – আমি তোমাকে [মোহাম্মাদ (সা)] সমগ্র মানব জাতির জন্য রাসুল বানিয়ে পাঠিয়েছি।
সুরা ইমরান (৩) ১৯ নং আয়াত – আল্লাহ বলছেন – নিঃসন্দেহে আল্লাহর কাছে ইসলাম একমাএ গ্রহন যোগ্য ব্যাবস্তা ।
সুরা আন নাহল – (১৬) ৩৬ নং আয়াত – আল্লাহ বলছেন – আমি প্রত্যক জাতির কাছে নবী ও রাসুল পাঠিয়েছি।
সুরা নিসা – ১৬৪ – নং আয়াত – আল্লাহ বলছেন – আমি আগে তোমাকে (নবী সাঃ )বলেছি কিছু নবীদের কথা ,কিছু রাসুলদের কথা বাকিদের কথা বলিনি।
ইহুদি ধর্মঃ
অত্যন্ত প্রাচীন, একেশ্বরবাদী ধর্ম। ধারণাগত মিল থেকে ধর্মতাত্ত্বিকগণ ধারণা করেন যে, ইহুদি ধর্মের ধারাবাহিকতায় গড়ে উঠেছে খ্রিস্ট ধর্ম, ইসলাম ধর্ম ইত্যাদি ইব্রাহিমীয় ধর্ম। এই ধর্মের মূল ধর্মগ্রন্থ হিসেবে ওল্ড টেস্টামেন্ট-এর প্রথম পাঁচটি বইকে গণ্য করা হয়ঃ জেনেসিস, এক্সোডাস, লেভিটিকাস, নাম্বার্স, এবং ডিউটেরোনমি। এই পাঁচটি বইকে একত্রে "তোরাহ"ও (Torah) বলা হয়ে থাকে। ইহুদি ধর্মবিশ্বাসমতে, ঈশ্বর এক, আর তাঁকে জেহোবা (Jehovah, YHWH) নামে আখ্যায়িত করা হয়। মোসেয হলেন ঈশ্বরের একজন বাণীবাহক।
ইসলাম ও খ্রিস্টধর্মের মতোই ইহুদিগণ পূর্বতন সকল বাণীবাহককে বিশ্বাস করেন, এবং মনে করেন মোসেযই সর্বশেষ বাণীবাহক। ইহুদিগণ যিশুকে ঈশ্বরের বাণীবাহক হিসেবে অস্বীকার করলেও, খ্রিস্টানগণ ইহুদিদের সবগুলো ধর্মগ্রন্থ (ওল্ড টেস্টামেন্ট)-কে নিজেদের ধর্মগ্রন্থ হিসেবে মান্য করে থাকেন। ইহুদি ধর্ম সেমেটিক ধর্ম হিসেবেও অভিহিত।
বাহাই ধর্মঃ
বাহাই বিশ্বাস হচ্ছে বাহাউল্লাহ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত একেশ্বরবাদী একটি ধর্ম বা বিশ্বাস। ঊনবিংশ শতাব্দীতে পারস্যে(বর্তমানে ইরান) এই ধর্মের উৎপত্তি। মূলত মানবজাতির আত্মিক ঐক্য হচ্ছে এই ধর্মের মূল ভিত্তি।
বাহাই বিশ্বাস অনুসারে ধর্মীয় ইতিহাস স্বর্গীয় দূতদের ধারাবাহিক আগমণের মাধ্যমে ধাপে ধাপে সম্পন্ন হয়েছে। এইসব দূতদের প্রত্যেকে তাঁদের সময়কার মানুষদের সামর্থ্য ও সময় অনুসারে একটি ধর্ম প্রতিষ্ঠা করেছেন। এই সকল স্বর্গীয় দূতদের মাঝে আছেন ইব্রাহিম, গৌতম বুদ্ধ, যীশু, মুহাম্মাদ ও অন্যান্যরা। সেই সাথে খুব সাম্প্রতিককালে বাব ও বাহাউল্লাহ। বাহাই ধর্ম মতে এসকল দূতগণ প্রত্যেকেই তাঁদের পরবর্তী দূত আসার ব্যাপারে, ও তাঁদেরকে অনুসরণ করতে বলে গেছেন।
‘বাহাই’ (উচ্চারণ: bəˈhaɪ) শব্দটি একটি বিশেষণ হিসেবে বাহাই বিশ্বাস বা ধর্মকে নির্দেশ করতে বা বাহাউল্লার অনুসারীদের বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। এটি উদ্ভূত হয়েছে আরবি বাহা’ থেকে, যার অর্থ ‘মহিমা’ বা ‘উজ্জলদীপ্তি’। ধর্মটিকে নির্দেশ করতে পূর্বে বাহাইজম বা বাহাইবাদ পরিভাষাটি ব্যবহৃত হলেও বর্তমানে ধর্মটির সঠিক নাম বাহাই বিশ্বাস।
বাহাইদের ধর্মীয় পুস্তকে ঈশ্বর হচ্ছেন একক, ব্যক্তিগত, অগম্য, সর্বজ্ঞ, সর্বব্যাপী, অক্ষয়, এবং অবিনশ্বর একটি স্বত্বা, যিনি বিশ্বভ্রহ্মাণ্ডের সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা। ঈশ্বরের ও মহাবিশ্বের উপস্থিতিকে চিরকালব্যাপী মনে করা হয়, যার কোনো সূচনা বা পরিণতি নেই। যদিও সরাসরিভাবে ঈশ্বরকে অনুভব করা সম্ভব নয়, তবে তাঁকে তাঁর সৃষ্টির মাধ্যমে স্বজ্ঞা দ্বারা অনুভব করা সম্ভব। আর এজন্য ইচ্ছা ও উদ্দেশ্য থাকা প্রয়োজন, যা প্রকাশ পায় দূতগণের পরিভাষায় ঈশ্বরের সুস্পষ্টকরণের মাধ্যমে।
বাহাই শিক্ষা ও মতবাদের ভিত্তি তিনটি মূল নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এগুলো হচ্ছে ঈশ্বরের ঐক্য, ধর্মীয় ঐক্য, এবং মানবজাতির ঐক্য। এসকল স্বীকার্য থেকে এই বিশ্বাসটি অর্জিত হয় যে, ঈশ্বর নির্দিষ্ট সময় পর পর তাঁর ইচ্ছা স্বর্গীয় দূতদের মাধ্যমে ব্যক্ত করেন। আর এসকল দূতগণের উদ্দেশ্য হচ্ছে মানবজাতির চরিত্র পরিবর্তন ও উন্নয়ন। এছাড়াও যাঁরা এতে সাড়া দিয়েছেন তাঁদের কল্যাণ, এবং নৈতিক ও আত্মিক গুণের বিকাশ। এর ফলে ধর্মের ধারণাটি পরিবর্তিত হয়ে একটি নিয়মতান্ত্রিক, একত্রীকৃত, ও বিকাশমান একটি মাধ্যমে পরিণত হয়েছে, যা যুগ থেকে যুগে পরিবর্তিত হয়।
জোরাস্টেইন ধর্মে স্রষ্টার একত্ববাদঃ
আবেস্তা (ইয়াস্না আবেস্তা, জেন্দা আবেস্তা, কোর্দা আবেস্তা ইত্যাদি) হল জোরাস্টেইন ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ। একেশ্বরবাদী জোরাস্টেইন ধর্মাম্বলীরা সৃষ্টিকর্তাকে ডাকে 'আহুরা মাজদা' বলে। আহুরা শব্দের অর্থ ঈশ্বর বা আল্লাহ আর মাজদা শব্দের অর্থ জ্ঞানী। ইয়াস্না আবেস্তাতে এই জ্ঞানী আল্লাহ বা ঈশ্বরের (স্রষ্টার) পরিচয় সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ
"স্রষ্টা অহুরা-মাজ্দা দীপ্তিমান, মহিমান্বিত, মহান, সর্বোত্তম, অতিমনোরম, দৃঢচিত্ত, জ্ঞানময়, নির্ভূল এবং উদারাত্মা।"
(সূত্রঃ ইয়াস্না আবেস্তা, ৩১:৭, ১১; ৪৪:৭; ৫০:১০; ৫১:৭; ৩১:১৩; ৪৪:২; ৩১:১৩; ৪৫:৩; ৪৮:২-৩; ২৮:৫; ৩৩:১১; ৪৫:৬.১; ৪৪:৩; ৪৭:২; ৩১:৮; ৪৫:৪; ৪৩:৪,৫,৭,৯,১১,১৩,১৫; ৪৪:২; ৪৫:৫; ৪৬:৯; ৪৮:৩; ৫১:১০; ৩০:৫)
দসাতির গ্রন্থ মতে আহুরা মাজদার পরিচয় নিম্নরুপঃ
১. তিনি এক।
২. তাঁর সদৃশ্য কিছুই নাই।
৩. তিনি জন্ম-মৃতু্য রহিত।
৪. তাঁর কোন পিতা-মাতা, স্ত্রী-পুত্র নাই।
৫. তিনি নিরাকার।
৬. না কোন চোখ তাঁকে অবলোকন করেছে, না কোন বুদ্ধিমত্তা তাঁর কল্পনা করেছে।
৭. তিনি সকল কিছুর উর্দ্ধে।
৮. তিনি প্রত্যেকের অত্যন্ত নিকটবর্তী।
ইসলাম ধর্মঃ
ইসলাম অর্থ শান্তি। ইসলাম এমন একটি ধর্ম যা সব সময় শান্তির কথা বলে। যারা ইসলাম ধর্মের অনুসারী তাদের বলা হয় মুসলিম। ইসলাম ধর্মটি মূলত পাঁচটি রুকন বা স্থম্ভ এর উপর প্রতিষ্ঠিত। ইসলাম ধর্মের প্রথম স্থম্ভ বা রুকুন হচ্ছে কালেমা বা ঈমান। ঈমান অর্থ বিশ্বাস। আর কালেমা একজন মুসলিম বা ইসলাম অনুসারীর বিশ্বাস কেই প্রতিষ্ঠিত করে। ইসলাম ধর্মের বা মুসলিমদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ হচ্ছে কুরআন। পবিত্র কুরআন পাক এ এই পাঁচটি রুকুন বা স্থম্ভের কথা বিশেষ ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে “তুমি কি লক্ষ্য কর নাই আল্লাহ কিভাবে উপমা দিয়া বুঝাইয়াছেন যেন কালেমা তাইয়্যেবা একটি পবিত্র বলিষ্ট উত্তম বৃক্ষ, উহার মূল মাটির গভীরে সুদৃঢ় প্রতিষ্ঠিত এবং উহার শাখা-প্রশাখা মহাশূন্যে বিস্তীর্ণ, উহার সবসময় আল্লাহর অনুমতিক্রমে স্বীয় ফল প্রদান করিতে থাকে” [সূরা ইব্রাহীম,-২৪-২৫]
ইসলাম এ মূলত পাঁচটি কালেমা আছে। এগুলো হল কালেমা তাইয়্যবা, কালেমা শাহাদাত, কালেমা তাওহিদ, কালেমা তামজিদ এবং কালেমা রাদ্দে কুফর। তন্মদ্ধ্যে কালেমা ‘তাইয়্যবা’ প্রধান। তবে অনেকেই আবার বলেন কালেমা পাঁচটি নয়। কেউ বলেন দুইটি, কেউ বলেন তিনটি, কেউ বলেন চারটি অবার কেউ বলেন ছয়টি। সহিহ হাদিস এর কিতাব গুলোতে কালেমা মূলত কত প্রকার তা নির্দিষ্ট করে পাওয়া যায়নি। বিভিন্ন আলেম গনের মতে মূলত কালেমা পাঁচটি তার মধ্যে কালেমা তাইয়্যবা প্রধান।
কালেমা তাইয়্যবা
কালেমা তাইয়্যবা হচ্ছে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.)।” যার বাংলা অর্থ হচ্ছে “আল্লাহ্ ব্যাতীত কোন ইলাহ(উপাস্য) নেই, তিনি এক ও অদ্বিতীয় এবং হযরত মোহাম্মাদ (সা.) তার প্রেরিত রাসুল।”
এই পবিত্র কলেমার দু’টো অংশ…..
১ প্রথম অংশ লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ, যার অর্থ আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন মাবুদ নাই তিনিই একমাত্র পালনকর্তা, মাবুদ, প্রভু, মালিক, তিনি সারে জাহানের সৃষ্টিকর্তা আমরা সবাই তাঁরই সৃষ্টি, তিনি সকলের প্রভু, আমরা সবাই তাঁর দাস/গোলাম। তিনিই আমাদের একমাত্র উপাস্য, আমরা তাঁরই দাসত্ব স্বীকার করে, কেবল তাঁরই আনুগত্য করি এবং তাঁরই আইন মেনে চলার চেষ্টা করি। কালামেপাকে বর্ণিত আছে যে, ”তিনিই আল্লাহ যিনি আকাশ জমিন ও পৃথিবী এবং এই দু’টোর মাঝে যা কিছু আছে, তাহা সবই ছয়দিনে সৃষ্টি করেছেন”। আল-কোরআন, সূরা সাজদাহ, আয়াত-৪
মহাগ্রন্থ আল কোরআনে বলা হয়েছে, “এবং তোমাদের মা’বুদ তিনি, একমাত্র মা’বুদ; তিনি ছাড়া আর কেহ মা’বুদ নাই; তিনি বড়ই ক্ষমাশীল ও দয়ালু”, আল-কোরআন, সূরা বাকারা আয়াত-৩৬।
অপর এক আয়াতে আল্লাহ বলেন, “তিনিই তোমাদের আল্লাহ্, তিনি ছাড়া আর কেহ মা’বুদ নাই। তিনি প্রত্যেকটি জিনিসের সৃষ্টিকর্তা, অতএব তোমরা কেবল তাঁরই ইবাদত কর। তিনি প্রত্যেকটি জিনিসের দায়িত্বশীল।” আল কোরআন, সূরা আনআয, আয়াত-১০২, অপর আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, “হে মানব সমাজ! তোমরা ভিন্ন ভিন্ন ও একাধিক উপাস্য স্বীকার করা ভাল না, একজন প্রকৃত শক্তিমান মা’বুদই ভাল জেনে রাখ, এক আল্লাহ ব্যতীত তোমরা অন্য যে মা’বুদের নামে ইবাদত কর তাহা সবই অর্থহীন, আর সেই নামগুলো তোমরা এবং তোমাদের বাপ-দাদারা মিলিয়ে রেখেছ। আল্লাহ সে সম্পর্কে কোন যুক্তি প্রমাণ নাজিল করেন না। অথচ হুকুম দেওয়া ও আইন রচনা করার অধিকার একমাত্র আল্লাহ ব্যতীত আর কাহারও নাই তিনি আদেশ করেছেন, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাহারো দাসত্ব করিও না। এটিই সত্য দ্বীন, কিন্তু অনেকেই তাহা জানে না”। আল কোরআন।
২ কালেমার দ্বিতীয় অংশঃ মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ অর্থ হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর রাসূল। আল্লাহ তায়ালা হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কে তাঁর আদর্শ প্রচারের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। এই কালেমা যেহেতু ইসলামের মূল ভিত্তি/বুনিয়াদ, এর উপর ইসলামের অন্যসব হুকুম-আহকাম ইমারত স্বরূপ দাঁড়ানো আছে। এই কালেমার মধ্যে মহান আল্লাহতায়ালার যে পরিচয় দেয়া হয়েছে তাই আল্লাহর সঠিক পরিচয়। আর হযরত মুহাম্মদ সাঃ কেবল মাত্র একজন মানুষই নয়, বরং তিনি আল্লাহর রাসূলও বটে, আর এটা তাঁর আসল পরিচয়। আর আল্লাহকে ভালবাসতে হলে প্রথমেই তাঁর বন্ধু হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে ভালবাসতে হবে। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘হে রাসূল ! আপনি বলেদিন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাসতে চাও তবে প্রথমেই রাসূলের অনুসরণ করো তবেই আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং আল্লাহ তোমাদের মাফ করে দিবেন এবং তোমাদের গুনাহ সমূহ ক্ষমা করে দিবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল করুণাময়।” আল কোরআন, সূরা আল ইমরান।
আল্লাহর আইন অনুসরণ করার লক্ষ্যে তিনি মহানবী (সাঃ) কে রাসূল মনোনীত করে দুনিয়াতে প্রেরণ করেন। তাঁর মাধ্যমে তিনি আমাদের প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন, কাজেই আমরা মুহাম্মদ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর দেখানো পথে তাঁর সব আইন-কানুন, বিধি-বিধান মেনে, তাঁর অনুসরণে জীবন যাপন করলে এই কালেমার হক আদায় হবে, নচেৎ তার বিপরীত হলে তাকে অমান্য করারই নামান্তর
হে মুহাম্মাদ! আপনার পূর্বে আমি যত নবী পাঠায়েছি, তাঁদের সকলের প্রতি ওহী যোগে এই আদেশ করেছি যে, আমি ব্যতীত আর কেহ ইলাহ নাই, অতএব তোমরা সকলে কেবলমাত্র দাসত্বকর, আল-কোরআন, সুরা আম্বিয়া-২৫
প্রচলিত বিশ্বাস যে, আল্লাহ অকল্পনীয় আকৃতিধারী নির্দিষ্ট কোনো জীব, ব্যক্তি বা ব্যক্তি জাতীয় ‘কিছু!‘ যিনি ৭ম আসমানের উর্দ্ধে ছেদ্রাতুল মোনতাহার (বরই বাগানের প্রান্তে) আশেপাশে বসবাস করেন (দ্র- সং ই বিশ্বকোষ ২য় খণ্ড ২য় সংস্করণ, পৃ ১৯৩; ই ফা)। মতান্তরে তদূর্ধ্বের ৭ সাগরের উর্দ্ধে বসবাসরত ৮টি পাঠার পিঠে আল্লাহর আরশ। (দ্র- মেশকাত, ১০ ম খণ্ড (১৯৯০), হাদিছ নং ৫৪৮১, পৃ ১৮৯, ১৯০; এমদাদিয়া লাইব্রেরি)
১. হু আল্লা হু আহাদ (১১২- ইখলাছ-১) অর্থ- হু = সে; আল্লাহ = উপাস্য; হু = সে; আহাদ = একাকার বা ময়।
ক. ‘সে’ই উপাস্য; অর্থাৎ অজানা অস্তিত্ত্বশীল ‘কিছু’ বলতে যা বুঝায় আল্লাহ তা নয়; অর্থাৎ ‘কিছু না বা অকিছুকে বুঝাবার জন্য নামপুরুষ ‘সে’ ব্যবহৃত হয়। মানুষ অজানার উপাসনা, প্রার্থনা বা ছালাত করে তাই আল্লাহ অর্থ উপাস্য।
খ. আহাদ শব্দটি অহেদ এর বহুবচন। অহেদ = এক, একটি, একজন। আহাদ = একাকার বা ময়; একাকার অর্থে এক নয় বহুও নয়।
গ. ১ এর আগে শুন্য (০) ও পরে দুই (২) আছে; অর্থাত ১ (এক) উভয় দিক থেকে শরিকী এবং সীমিত সংখ্যা। পক্ষান্তরে আল্লাহ লা শরিক, অসীম, একাকার বা ময়।
ঘ. তবুও অনস্তিত্ত্ব স্বত্তাকে অস্তিত্ত্বশীল মানুষের বুঝার জন্য যেকোন পুরুষ বা পার্ছন ব্যবহার করতেই হয়।
ঙ. আল্লাহ যে এক বা একজন নয় বরং 'একাকার' তা নিশ্চিত বুঝার জন্যই কোরানে কখনো আমি, কখনো তুমি, কখনো সে; আবার কখনো আমি আবার কখনো আমরা বহুবচন শব্দ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কিন্তু একাকারের প্রশ্নে ঐ সকল ব্যবহারের কোনই ভেদমর্ম বা পার্থক্য নেই; আল্লাহ যাবতিয় ব্যকরণ-বৈয়াকরণের উর্দ্ধে, তুলনাহীন একাকার বা ময়।
চ. কোরআন বলে, ‘দৃশ্য-অদৃশ্য ব্যাপিয়া আল্লাহর অবস্থান, দৃশ্য-অদৃশ্যের জ্যোতি বা জ্ঞানই আল্লাহ।‘ ‘আল্লাহ’ উপলব্ধি, অনুভূতি ব্যতিত ধরা, ছোয়া, দেখা বা পাওয়ার বিষয়বস্তু নয়; আল্লানুভূতির প্রধান সুত্র ‘আমি’র আমিত্ব’ জীবের স্ব স্ব অন্তরের অন্তস্থল।
২. অ’ লামু-আন্নাল্লা-হা...তুহশারূন (৮: আনফাল-২৪) অর্থ- জেনে রেখো! আল্লাহ জীবের অন্তরের অন্তঃস্থলে।
৩. আল্লাহু...আলীম। (২৪: নূর-৩৫) অর্থ- উপাস্য দৃশ্য-অদৃশ্য বা বস্তু-অবস্তুর (আকাশ-পাতাল) জ্যোতি বা জ্ঞান। এই জ্যোতির উপমা: আলোর জগৎ, যার মধ্যে আছে একটি দ্বীপ, দ্বীপটি একটি কাঁচের আবরণের/পর্দার মধ্যে স্থাপিত; কাঁচের আবরণটি উজ্জ্বল তারকার মতো। এটা জ্বালানো হয় মূল্যবান জলপাইর মত তেল দিয়ে যা সৃষ্ট নয়। এতে আগুন সংযোগ ছাড়াই আলো বিকিরণ করে। আলোর উপরে আলো। উপাস্য যাকে খুশি তার দিকে আকর্ষণ করেন-।
পর্যালোচনাঃ
১ নং আয়াতে আল্লাহর একাকারের সাক্ষি।
২ নং আয়াতে জীবের অন্তরের অন্তঃস্থলই আল্লাহ উপলব্ধির সূত্র বলে ইঙ্গিত দেয়।
৩ নং আয়াতে মানুষের অন্তরের অন্তঃস্থলের ৩টি স্তর বা ধাপের কথা বলে দেয়: ক. দেহ ভাণ্ড খ.তার মধ্যে একটি প্রজ্বলিত দ্বীপ ৩. দ্বীপটি উজ্বল তারকা (৫ কোণ) বিশিষ্ট কাঁচের আবরণ বেষ্টিত। অর্থাৎ জীব বা মনুষ্যদেহের অন্তর, অন্তরের অস্তঃস্থলে তার অবস্থান। ঐ ৩টি স্তরকে ‘আমি, তুমি ও সে’ বলা হয়; অর্থাৎ ক. স্থুলদেহ খ. সূক্ষ্মদেহ ৩. জ্যোতি/নূরদেহ। ‘সে’ বা নূরদেহ সর্বদা অজ্ঞাত থেকেও আশা-ভরসা ও উপলব্ধি শক্তির জগতে সদা সর্বত্রই বিরাজমান। দেহের অণু-পরমাণু ব্যাপিয়া জীবনের অবস্থান থেকেও সর্বদাই জীবন অসীম, অজানা, অচেনা। ৫ কোণ বিশিষ্ট স্পষ্ট/বাস্তব তারকা অর্থাত- ২ হাত + ২ পা + ১ মাথা = ৫। জ্যোতি/নূরদেহেরও ৫ কোণ/দিক ১. আমিত্ব = স্বত্ত্বানুভূতি ২. মহব্বত = আকর্শন ৩. এরেদা = ইচ্ছা ৪. এলেম = জ্ঞান + ৫ নম্বরে নূরদেহ স্বয়ং।
৪. আল্লাহু...আজীম [২ বাকারা- ২৫৫] ভাবার্থ- উপাস্য ‘সে’ ব্যতীত অন্য কোন ‘সে’ বা খণ্ডিত ‘সে’ নেই। ‘সে’ চিরঞ্জীব, অনাদি। ‘সে’ বা জীবন (শক্তিকে) তন্দ্রা-নিদ্রা স্পর্শ করে না। দৃশ্য-অদৃশ্যে যা কিছু আছে সবই (জীবনশক্তি) ‘সে’। এমন কে আছে যে জীবনীশক্তি (সে) ব্যতীত জীবনের অন্বেষণ করে? তাদের (বস্তু/দেহ) অতীত ভবিষ্যৎ একমাত্র জীবনই জানে। ‘সে’র ইচ্ছার বিরুদ্ধে ‘সে’র জ্ঞান আয়ত্ত করা দেহের পক্ষে অসম্ভব; দৃশ্য-অদৃশ্য ব্যাপিয়া ‘সে’র বা জীবনের অবস্থান; আর তাদের (বস্তু অবস্তুর) ভারসাম্য রক্ষায় ‘সে’ ক্লান্ত হয় না। (অর্থাৎ ‘সে’ বা জ্যোতিদেহই আল্লাহ)
৫. ইন্না-রাব্বি ক্বারীবুম্মুজিব। [১১ হুদ-৬১] ভাবার্থ- নিশ্চয়ই উপাস্য (আল্লাহ) অতি নিকটে; ডাকলেই সাড়া দেয়। [অর্থাৎ জীবনের ডাক জীবনই শোনে]
৬. অ নাহনু...অরীদ। (৫০ কাফ-১৬) ভাবার্থ- এবং আমরা নিকটের চেয়েও নিকটে (গ্রীবা ধমণী)। [অর্থাৎ দেহ ও জীবনের মধ্যে দূরত্ব নেই; জীবন + দেহ = আল্লাহ]
৭. অলিল্লা...আরর্দ্ব। (৪ নিছা-১২৬) ভাবার্থ- উপাস্য দৃশ্য-অদৃশ্য বস্তু-অবস্তু (আসমান-জমীন) সবকিছুই ঘিরে আছেন)। (অর্থাৎ প্রকৃতি আল্লাহ/জীবনীশক্তির মধ্যে ডুবে আছে; পানি যেমন মাছকে, বাতাস যেমন সৃষ্টিকে ঘিরে থাকে)
৮. কুল্লু মান...আল একরাম। (৫৫ রহমান-২৬, ২৭) ভাবার্থ- ‘যা কিছু’ সবই নশ্বর; অবিনশ্বর কেবলমাত্র তোমার প্রতিপালকের অবস্থান, যিনি মহিমময়, মহানুভব। অর্থাৎ দেহবস্তু নশ্বর কিন্তু জীবন-জ্যোতিদেহ অবিনশ্বর যিনি দেহবস্তুর রক্ষক; তিনি বের হয়ে গেলে দেহ আর রক্ষা হয় না।
৯. হু অ মায়াকুম...বাছিরুন। (৫৭ হাদিদ- ৪) ভাবার্থ- তোমরা যেখানেই থাক না কেন! তিনি তোমাদের সঙ্গেই থাকেন। [অর্থাৎ জ্যোতিজীবনদেহই আল্লাহ]
১০. লা তুদরিকুহু...খাবিরু। (৬ আনআম- ১০৩) ভাবার্থ- তিনি দৃষ্টির অধিগম্য নন! কিন্তু দৃষ্টিশক্তি তাঁর অধিগত। এবং তিনিই সূক্ষ্মদর্শী সম্যক পরিজ্ঞাত। অর্থাৎ বস্তু/দেহ জীবনকে দেখে না কিন্তু জীবন দেহকে দেখে।
অর্থাৎ সৃষ্টির মৌল এ্যটম, নিউট্রন, প্রোটন, ইলেক্ট্রন ইত্যাদি ‘কিছু’ সৃষ্টিকল্পে যেমন পরস্পর মুখাপেক্ষী, সহযোগী, সম্পূরক তেমন ‘আল্লাহ’ একক বা মৌল নয় বরং ‘অকিছু’ একাকার, কারো মুখাপেক্ষী নয়; বরং ঐ অজানাময় থেকেই পরবর্তী সবকিছুর সৃষ্টি
আল্লাহ = আমিত্ব, মহব্বত, এরেদা ও এলেম বা স্বত্বানুভূতি, আকর্ষণ, ইচ্ছা ও জ্ঞান। এই চারটি মৌলের সর্বনামই উপাস্য, আল্লাহ বা ‘সে;’ উহারা নিজেরাই চক্রাকারে আবর্তন বিবর্তনে নিজেদের স্রষ্টা যেমনঃ
আমিত্ব = আকর্ষণ + ইচ্ছা + জ্ঞান = আল্লাহ/নূরদেহ।
আকর্ষণ = আমিত্ব + জ্ঞান + ইচ্ছা = আল্লাহ/নূরদেহ।
ইচ্ছা = জ্ঞান + আমিত্ব + আকর্ষণ = আল্লাহ/নূরদেহ।
জ্ঞান = ইচ্ছা + আকর্ষণ + আমিত্ব = আল্লাহ/নূরদেহ।
উল্লিখিত চক্রের উর্দ্ধের বিষয়ই ‘আল্লাহ’ যা অতীতে অজানা ছিল, বর্তমানে অজানা আছে এবং ভবিষ্যতেও অনুরূপ অজানা থাকবে; এজন্যই আল্লাহর আর এক অর্থ ‘কিছু নয় যা’ বা নির্দিষ্ট অস্তিত্ত্বহীন বা অজানা।
১১. দৃশ্য-অদৃশ্যের কোনো কিছুই ‘সে’র নিকট গোপন নয়; - তিনি প্রবল পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময় (৩ এমরান- ৫, ৬, ১৮, ১২৬) ; অর্থাৎ প্রকৃতি, শক্তি ও জ্ঞান-বিজ্ঞানই আল্লাহ। আল্লাহ কখনও ওয়াদা খেলাপ করেন না (৩ এমরান-৯); অর্থাৎ প্রকৃতি বা শক্তির বিধান অলঙ্ঘনীয়। আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল ও দয়াময় (৩ এমরান-৩১, ১৫৫)। অর্থাৎ ধৈর্য ও দয়াশক্তিই আল্লাহ। সবকিছু আল্লাহর-ঘিরে আছেন (৪ নিছা-১২৬); অর্থাৎ আকাশ + জমিন/ দৃশ্য + অদৃশ্য বা বস্তু + অবস্তু অথবা জানা + অজানার সর্বনামই = আল্লাহ। ইহা এমন দুই সংখ্যার যোগ অঙ্ক, যার ফল নিরূপণ করা মানুষের অতীতে অসাধ্য ছিল বর্তমানেও অসাধ্য এবং ভবিষ্যতেও অসাধ্য থাকবে।
একাকার আল্লাহর অনুরূপ অসংখ্য খণ্ডিত পরিচয় রয়েছে কোরানে। ঐ সকল সহজ সরল ঠিকানা পরিচয় ভুলিয়ে সপ্তম আসমানে বা তদুর্ধ্বে আল্লাহকে বা তাঁর অস্তিত্ব খোঁজার পরামর্শ একটি কওমকে বিভ্রান্ত করার জন্য পরমাণু বোমার চেয়েও মারাত্মক ভুমিকা পালন করেছে।
আল্লাহকে কেউ দেখতে পায় না, কোনো দিন দেখতে পায়নি, দেখতে পাবে না, কারণ ‘সে’ অবিনশ্বর।
অবিনশ্বর কেবলমাত্র তোমার প্রতিপালকের সত্তা, যিনি মহিমময়, মহানুভব (৫৫ রহমান-২৬, ২৭)।
রাগ-অনুরাগ, প্রেম-ভালোবাসা, ইচ্ছা-অনিচ্ছা, জ্ঞান-প্রাণ সবকিছুই অকিছু বা নিরাকার ‘শক্তি’ নামে একাকার। বিবর্তন সূত্রে এবং স্বতন্ত্র ব্যক্তির ধ্যান-সাধনা বলে নূর বা জ্যোতিদেহ স্ব স্ব রূপে বা সাকারে প্রকাশ, পরিচয় হয়। আর নিরাকার অর্থই যে কোনো আকারে প্রকাশে শক্তিময়।
একাকার আল্লাহর নামে ‘আমি বা আমরা’ ব্যবহার উভয়ই অর্থহীন; কিন্তু মানুষের বুঝার জন্য ব্যবহার করতেই হয়। স্রষ্টা সম্বন্ধে আদিকাল থেকে মানুষ সাধন-ভজন, গবেষণা করে আসছে এবং অনাদিকাল পর্যন্ত এই গবেষণা চলবে। ‘আমি’ আছি বলেই তো হাজার প্রশ্ন, হাজার সমস্যা, হাজার গবেষণা, হাজার সন্দেহ, বিতর্ক। আমি নেই আর কোনো প্রশ্নও নেই, সন্দেহ-বিতর্কও নেই।
অতএব ‘আমি’ কে! এই একটি প্রশ্নের সমাধান হলেই সকল প্রশ্নের অবসান হয়। আর প্রশ্নের অবসান হওয়ার অর্থই আমি শান্ত, আমি স্থির, আমার কোনো অভিযোগ নেই, নেই কোনো চাওয়া-পাওয়া, আমি কোনো কিছুর মুখাপেক্ষী নই, আমি স্বয়ংক্রিয়, আমি শান্তি, আমি শান্ত, অব্যয়, অক্ষয়; আমি কথিত বেহেস্তেরও উর্ধ্বে। ‘আমি’ দেহ বা বস্তুর সীমায় আবদ্ধ হলেই শয়তান নামক সন্দেহ, সংশয় অতঃপর ভোগান্তি, পরিণাম লয়-প্রলয় তথা ধ্বংসলীলা ঘটে।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০১৫ রাত ১১:৫১