২০১২ তে বিবিএ শেষ করে একটা আইটি ফার্মে প্রথম জয়েন করি ২০১৩ এর জুন মাসে । এরপর এমবিএ শেষ করে একটা হেলথ প্রোজেক্ট এ চাকরি নিয়ে ঢাকা ছেড়ে দেই। তারপর ব্যবসা করার উদ্দেশ্যে সে চাকরিটাও ছেড়েছুড়ে বাড়ি চলে আসি। কিন্তু ব্যবসা আর করে ওঠা হয়না শেষ পর্যন্ত। ফলশ্রুতিতে আবার জয়েন করি চাকরিতে। তবে এবার মাইক্রোফাইন্যান্সে। ২০১৪ এর ডিসেম্বর থেকে ২০১৮ এর মার্চ মাস পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন বছর এই সেক্টরে থেকে আবারও চাকরি ছেড়ে দেই। এবারে চাকরি ছাড়ার উদ্দেশ্যটা শুধুমাত্রই ব্যক্তি স্বাধীনতার জন্য।
স্বাধীন চাকরি! সেটা আবার হয় নাকি? বাবাকে ছোটবেলা থেকেই দেখেছি চাকরি করেন। কিন্তু নিজের ইচ্ছেমত। তাই নিজের আগ্রহের কথাটা বাবাকে জানাই। প্রথমে অনীহা দেখালেও পরে সম্মতি জানালে আমি আগের কোম্পানিতে রিজাইন দিয়ে বাবার সুপারভিশনে ২০১৮ সালের এই দিনে জয়েন করেই ফেলি স্বাধীন পেশা ইন্স্যুরেন্স এ!
শুরুর দিকটা খুব পজেটিভ ছিল না। যদিও এর পেছনে নানা ফ্যাক্টর রয়েছে। বাহিরের দেশের ঠিক উলটো চিত্র আমাদের দেশের বীমা খাতে। আমাদের দেশের বীমা শিল্পের শুরুটা ভালো হলেও মাঝে খুব খারাপ গিয়েছে। ২০১০ সালে আইডিআরএ (বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর) গঠনের পর বীমা খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা অনেকটা ফিরে এলেও কিছু কিছু কোম্পানির কারণে এখনও সাধারণ মানুষের মনে বীমা সম্পর্কে একটা নেগেটিভ ধারণা রয়েছে। আর যার ফলে ভালো কোম্পানিগুলিকেও কিছুটা ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। আশা করি সরকার এ ব্যাপারে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেবে। যেহেতু মুজিব বর্ষ থেকে ০১ মার্চকে জাতীয় বীমা দিবস ঘোষণা করা হয়েছে, সেহেতু এখন থেকে এই সেক্টরে সরকারের সুনজর থাকবে সেটাই আমাদের কাম্য। যাই হোক যা বলছিলাম, ফিক্সড স্যালারির চাকরি ছেড়ে এমন একটা চাকরিতে জয়েন করেছি যেখানে ইনকামটা হয় সেলস বেইজড! এমন কোন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি নেই যে আপনাকে ফিক্সড স্যালারি দিবে। আর আপনি যতো বড় মার্কেটিং (উন্নয়ন) কর্মকর্তাই হোন না কেন আপনি যদি ডিরেক্ট সেলিং না জানেন তাহলে আপনি এই পেশায় বেশিদিন টিকে থাকতে পারবেন না। যেহেতু চাকরি ছেড়ে ফুলটাইম এই পেশায় এসেছি সেহেতু আমাকে এটার আয়ের উপর ই ডিপেন্ড করতে হবে। তাই একটু টেনশন হচ্ছিল। পরে আবার চিন্তা করলাম ০৬ বছর মার্কেটিং পড়ে যদি এখন মার্কেটিং করতে ভয় পাই তাহলে তো হবে না। যেভাবেই হোক এ পেশায় টিকে থাকতেই হবে। কারণ এর মতো স্বাধীন চাকরি আর নেই। আর বাবা যদি ২৫ বছর এই পেশায় টিকে থাকতে পারে তবে আমি কেন পারবো না? এসব চিন্তা করতে করতেই প্রথম পলিসি সেল করলাম ১৫০০০/- টাকার। এরপর থেকে কনফিডেন্স বেড়ে গেলো। আরও বড় বড় পলিসি সেল করতে থাকলাম। প্রথম বছর ক্লোজিং এ ২০,০০,০০০/- (বিশ লক্ষ টাকা) প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম সেল করলাম। দ্বিতীয় বছর এসে কাজের মজা আরও বেড়ে গেলো। কারণ চলতি বছরের সেলিং কমিশনের সাথে প্রথম বছর যা সেল করেছিলাম তার রেন্যুয়াল বিল আসা শুরু করলো। এখন মনে হচ্ছে নিজের ইচ্ছেটা ধরে রাখলে এ পেশায় উপরে উঠতে বেশি সময় লাগবে না। আজ আমার এই সেক্টরে দুই বছর পূর্তি হলো।
নেগেটিভ দিক বলতে আপনি যদি কোম্পানিতে জয়েন করার আগে কোম্পানি সম্পর্কে ভালো করে খোঁজ নিয়ে তারপর জয়েন করেন তাহলে কোন সমস্যা নেই। আর নিজেকে অবশ্যই সৎ থাকতে হবে। কারণ, পাবলিকের টাকা আপনার হাতে আসবে। আপনি সৎ না হলে এ পেশায় বেশিদিন টিকে থাকতে পারবেন না। নিকট আত্মীয় সহ অনেকেই অনেক সময় নাক সিটকাতে পারে আপনার এ পেশার কারণে। কিন্তু আপনি কনফিডেন্ট থাকলে কোন সমস্যা থাকবে না। কারণ কোন সৎ পেশাই ছোট নয়। আর যারা নাক সিটকাবে তারা কিন্তু আপনাকে বা আপনার ফ্যামিলিকে খাওয়াবে না। আপনার ফ্যামিলি আপনাকেই ম্যানটেইন করতে হবে।
আর পজেটিভ দিক হলো এ পেশায় আপনার স্বাধীনতা আর আয় দুটোই সীমাহীন। আমাদের দেশের জিডিপির মাত্র ০.৫৭% আসে এই সেক্টর থেকে। যেখানে ভারতের প্রায় ৪% থাইল্যান্ড এর প্রায় ৫.৫%! তার মানে হলো আমাদের জন্য মাঠ ফাঁকা। নিজের একটু ইচ্ছা থাকলেই আপনি এ পেশায় সফল হতে পারবেন।
লেখাটা ডেডিকেট করছি আমার বাবাকে। যার হাত ধরে আমার এ পেশায় আগমন ।
০১/০৪/২০২০ ইং
বিকাল ০৫:৪০
গৌরনদী, বরিশাল।
wordpress site
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫১