somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, মুসলিম এবং সকল মানবজাতির প্রতি - ২য় পর্ব

১১ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ৩:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[লেখাটি লিখতে আমাকে প্রধান চারটি ধর্মের গ্রন্থগুলো অধ্যয়ন করতে হয়েছে যদিও ধর্মের সংখ্যা আরো অনেক তবে আমার মনে হয়েছে বাকি গুলো প্রধান চারটি ধর্মেরই শাখা-প্রশাখা। কোন ধর্ম শ্রেষ্ঠ এটি খুঁজতে যাওয়া আমার লেখার উদ্দেশ্য নয়। আমি বুঝাতে চেষ্টা করব ধর্ম আসলে কী, কেন ধর্ম আমাদের প্রয়োজন এবং আমাদের ধর্ম কোনটি।]
কোন ধর্ম বা ধার্মিকের সমালোচনা আমার উদ্দেশ্য নয়। ধর্মের ইতিহাস চর্চার পথেও আমি যাবো না। আমি শুধু সত্য এবং বাস্তবতাটি তুলে ধরতে চাই বিবেকের চৌহদ্দিতে আঘাত করে।
পৃথিবীতে যদি ৭০০ কোটি মানুষ থাকে তবে ৭০০ কোটি মানুষের ৭০০ কোটি ধর্ম। একেক মানুষের আকাঙ্ক্ষা একেক রকম। যাকে স্বভাব ধর্ম বলে। আবার মৌলিক চাহিদার প্রশ্নে সব মানুষ এক। ক্ষুধা সবার লাগে এবং সবার খেতে হয়। ধর্ম সেটাই যেটা আপনাকে সৃষ্টিতে আবদ্ধ রাখে। প্রতিদিন আপনার একেক রকম ইচ্ছে মনে উদয় হয়। যদি আমার একটি বাড়ি হত, যদি আমি শ্রেষ্ঠ বক্তা হতে পারতাম, যদি আমার অনেক টাকা হত ইত্যাদি। এই যে ইচ্ছে গুলো এবং ক্ষুধা-তৃষা যা প্রতিদিন আপনাকে তাড়িয়ে বেড়ায়; প্রত্যেকটি একেকটি ধর্ম। এখানে একটি পশুর সাথে আপনার কোন পার্থক্য নেই। পশুরও ক্ষুধা লাগে, ইচ্ছে জাগে। মরে যাবেন জেনেও এ ধর্মের কারণে পারলে পুরো পৃথিবীর জায়গা আপনার কিনে নিতে ইচ্ছে জাগে! মরে যাবেন জেনেও পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতে খুব কষ্ট হয়। আবার প্রতিদিন বা প্রতি সপ্তাহে বা প্রতি মাসে বা প্রতি বছরে যেসব আচার কিংবা রীতি পালন করছেন বিভিন্ন ধর্মের নামে সেটাও ধর্ম। এটি আবার পশুদের নেই। তাই এ ধর্ম পালন করে বা নিজেকে সঁপে দিয়ে বা এ ধর্মের রহস্য অবগত হয়ে আপনাকে প্রথম ধর্মের ঊর্ধ্বে উঠে যেতে হবে। তবেই আপনি গণ্য হবেন সৃষ্টির সেরা হিসেবে। তখন অন্য সব সৃষ্টি আপনার শ্রেষ্ঠত্ব মেনে নেবে। কঠিন মনে হচ্ছে? বিস্তারিত বলছি।
প্রধান চারটি ধর্মের গ্রন্থ এবং দর্শন অধ্যয়নের পর আমার সারাংশ হল-
১. আত্মদর্শনের সাধনার মাধ্যমে ধর্মের ঊর্ধ্বে উঠার কঠিন সমরে জয়লাভ করা,
২. সবকটি ধর্মেই মানবতার গান গাওয়া হয়েছে,
৩. পাপ-পুণ্যের ফলাফল আছে,
৪. কিছু আচার-অনুষ্ঠান পালন ইত্যাদি।
যেহেতু আমি একটি ধর্মের অনুসারী তাই আমাকে কথা বলতে হবে ঐ ধর্মের দর্শনকে ভিত্তি ধরে যদিও দর্শনের প্রশ্নে চারটি ধর্ম একটি স্থানেই দাঁড়িয়ে আছে। অথচ পবিত্র কোরআন বলছে,
”এবং যে অনুসন্ধান করে ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন ধর্ম তা কখনো তার থেকে গ্রহণ করা হবে না” (সূরা আল ইমরান, আয়াত: ৮৫)।
আয়াতটিতে বুঝা যাচ্ছে ’ইসলাম’ ব্যতীত আর কোন ধর্ম নেই। অনেক কোরআন ব্যাখ্যাকারগণ আয়াতটির ব্যাখ্যায় বলেছেন যে ’ইসলাম’ আসার পর পূর্বের সব ধর্ম বাতিল হয়ে গেছে! ভিন্ন ধর্মীরা বলবে তোমাদের আল্লাহ-ই তো অন্য সব ধর্ম বাতিল করে দিয়েছেন আয়াতটির মাধ্যমে সেখানে দর্শনের প্রশ্নে চারটি ধর্ম কীভাবে একটি স্থানে দাঁড়িয়ে থাকে? আসলেই কি তাই? মনে রাখতে হবে বিশ্বজগতের প্রতিপালক কখনো সীমাবদ্ধতার দেয়ালে আবদ্ধ থাকেন না। তাঁর পৃথিবীতে সবাই সমান। আমরা মূর্খরা নিজ নিজ হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য ধর্মে ধর্মে, দলে দলে, আকীদায় আকীদায়, বংশে বংশে, জাতিতে জাতিতে ভাগ হয়ে যাই। কূপমন্ডূক কীভাবে অসীমের জ্ঞানের মর্ম বুঝবে? আর তাই একবোঝা ভুল ভুল ব্যাখ্যা আর তাফসীরে ভরে রেখেছে কোরআন এবং বিকৃত করেছে অন্য ধর্মগ্রন্থগুলো। ভাগ্যিস আরবী কোরআনটি অবিকৃত আছে নইলে পৃথিবী বসবাস অযোগ্য হয়ে যেত।
আয়াতটির মর্ম বুঝার আগে আমাকে বুঝতে হবে ’ইসলাম’ শব্দের অর্থ কী। ’ইসলাম’ অর্থ আত্মসমর্পণ বা সমর্পিত হওয়া। কার কাছে? বিশ্বজগতের প্রতিপালকের কাছে। তিনি কে কিংবা তাঁর সম্পর্কে কোন ধারণা কিংবা তাঁর অস্তিত্বের কোন প্রমাণ কি আমার আছে? উত্তর আসবে ’না’। তো কীভাবে তাঁর কাছে সমর্পিত হবো যাকে দেখা দূরে থাক ন্যূনতম কোন ধারণাই নেই। সেজন্যই তিনি যুগে যুগে পাঠাচ্ছেন তাঁর খলীফা তথা প্রতিনিধি যাঁদের আমরা পাই ’অবতার’, ’নবী’, ’রসূল’, ’মুর্শিদ’ ইত্যাদি রূপে। ’অবতার’ শব্দটি দেখে ইসলাম ধর্মের ভাইয়েরা আবার অন্য ধর্মের শব্দ ভেবে ভয় পাবেন না। কোরআনের সূরা কাওসার-এর শেষ আয়াতের শেষ শব্দটি দেখুন। বাজারের প্রচলিত কোরআন তাফসীরগুলোতে ’অবতার’ শব্দটির অর্থ লিখেছে বিচ্ছিন্ন, নির্বংশ, লেজকাটা যার কোনটাই সূরাটির মূলভাব প্রকাশ করে না। কেন করে না তার ব্যাখ্যা সূরাটির সাথে সম্পর্কিত অন্য কোন লেখায় দেব ইনশাআল্লাহ। বিশ্বজগতের প্রতিপালক অসীম সত্তা। কেউ তাঁকে ডাকে আল্লাহ, কেউ ভগবান, কেউ ঈশ্বর ইত্যাদি। তাঁকে ধরা, ছোঁয়া না গেলেও অনুভব করা যায় তবে কারো মাধ্যমে যাঁদের আমরা পাই ’অবতার’, ’নবী’, ’রসূল’, ’মুর্শিদ’ ইত্যাদি রূপে। তবে ইসলাম ধর্মে বর্তমানে এমন কিছু দল বের হয়েছে যারা মাধ্যম মানতে একদম নারাজ। তারা শুধুমাত্র আল্লাহরই ইবাদত করতে চায় আর কারো কাছে যাওয়ার প্রয়োজন বোধ করে না। বহু পূর্বে ’ইবলিশ’ নামক একজন ব্যক্তিও একই প্রকারের চেষ্টা করেছিলো ’আদম’কে পাশ কাটিয়ে শুধুমাত্র আল্লাহর ইবাদত করার জন্য কিন্তু অসফল এবং লাঞ্ছিত। বিশ্বজগতের পালনকর্তা এতবড় অসীম সত্তা হয়েও নিজেকে প্রকাশ করার জন্য আশ্রয় নিলেন মাধ্যমের যাঁদের আমরা পাই ’অবতার’, ’নবী’, ’রসূল’, ’মুর্শিদ’ ইত্যাদি রূপে। কেন নিলেন? তিনি তো অলৌকিক ভাবে আসমান থেকে পবিত্র গ্রন্থ পাঠিয়ে আমাদের বলতে পারতেন তোমরা ভাল করে আমার প্রেরিত গ্রন্থগুলো পড়ো আর আমার আরাধনা কর। সেটা না করে কেন এত এত ’অবতার’, ’নবী’, ’রসূল’, ’মুর্শিদ’ পাঠালেন এবং এখনো পাঠাচ্ছেন? বইয়ের পোকারা সেসব কি আর বুঝবে। মুখ আছে তাই জীবনভর প্রভুকে ডাকা যাবে কিন্তু সাড়া যে কখনো আসবে না। [চলবে]

১ম পর্বঃ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ৩:২১
১০টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×