somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি এবং ...

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৫:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

[’কাচ্চি খাই’ রেস্টুরেন্ট, বেইলি রোড, ঢাকা]

আমরা রিকশা থেকে নেমে ভাড়া দিতে যাব, অমনি মিম সাথে সাথে তার ব্যাগ হতে দুইশত টাকার একটি কড়কড়ে নোট বের করে রিকশাচালকের হাতে দিল। ভাড়া ঠিক হয়েছিল একশ টাকা। আমি আপত্তি করলেও মিম তাতে সায় দেয়নি। রিকশাচালক ’বিদেশি আফারে ধইন্যবাদ’ বলে বিদায় নিলে আমরা রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করে আসন পছন্দ করে বসলাম।
- তুমি একটু বসো। দুপুরে যে বাইরে খাব ঘরে বলা হয়নি, মাকে বলে আসি।
- বলে আসি মানে? তোমার বাসা কি এখানে?
- না, মানে ফোনে বলব।
- ও ফোনে! তো এখানে বসে বললে সমস্যা কী?
- না কোন সমস্যা নেই।
বাসায় মা ফোন ধরলে বললাম বন্ধুদের সাথে বাইরে খাচ্ছি।
- কথা হয়েছে?
- হ্যাঁ।
- তুমি যে আমার সাথে খাচ্ছো সেটা বলেছ?
- না, ইয়ে মানে বন্ধুদের সাথে খাচ্ছি বলেছি। তোমার কথা বললে অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।
- মানে? তুমি একটা এ্যডাল্ট ছেলে। তোমাকে কেন এত কৈফিয়ত দিতে হবে? কেন মিথ্যে বলতে হবে?
- দেখ মিম, তোমার দেশের সংস্কৃতি আর আমার দেশের কৃষ্টি এক নয়। আর আমাদের পরিবারটি একটি রক্ষণশীল পরিবার। তুমি যেহেতু নৃতত্ত্ব নিয়ে পড়ছ আশা করি তুমি জানো বর্তমানকার আফগান আর ইরানের কট্টর সংস্কৃতির চরিত্র।
- এগুলো পাগলামি এবং প্রকৃতির বিপ্রতীপ। ধর্ম জিনিসটাই আসলে সমস্যা। প্রকৃতিতে কোন ধর্ম নেই আর এজন্যই প্রকৃতি এত সুন্দর। যত গ-গোল এই মানুষদের মধ্যে। তারা নিজেরাই দিন দিন ধ্বংস হচ্ছে আর সেই সাথে প্রকৃতিকেও ধ্বংস করছে। তুচ্ছ একটি ব্যাপারে তোমার মিথ্যে বলাটা মেনে নিতে পারলাম না। ধর্মে থেকেও মিথ্যে বলছো কী অবলীলায়! তোমার দেশ সম্পর্কে যতটুকু জেনেছি তা হল পঁচানব্বই ভাগ মুসলিম অধ্যুষিত কিন্তু দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন। পঁচানব্বই ভাগ ধার্মিক এর সাথে তো দুর্নীতি যায় না।
- তুমি কি রাগ করেছ?
- না না, তোমার উপর আমার কোন ক্ষোভ নেই। আমরা দুই প্রান্তের দুই প্রাপ্তবয়স্ক। আমরা যা করছি সেটা হল চিন্তার মত বিনিময়। কারো ব্যক্তিগত বিষয়ে হস্তক্ষেপ আমার অপছন্দ। ধর্ম আমাদের অনেক নীতি-নৈতিকতা শিক্ষা দেয়। তোমাকে আগেই বলেছি আমি কোন ধর্মে নেই। তাই ধর্মের এসব নীতি-নৈতিকতা মানার কোন বাধ্যবাধকতাও আমার উপরে নেই। কিন্তু এরপরও কোনও তুচ্ছ কিংবা বড় কোন কারণেই আমরা মিথ্যা বলি না।
- ভাল। তবে আমি তো খুব একটা মিথ্যেও বলিনি। তুমি তো এখন আমার বন্ধুর মতোই।
- খুশি হতাম যদি তোমার মাকে বলতে যে আজ বিশ্বের ওই প্রান্তের এক মানুষের সাথে পরিচয় হল।
- একটি সামান্য বিষয় নিয়ে আমরা মনে হয় বেশি বলে ফেলছি। তুমি আমার দেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছ ..
- ওটা আমার বক্তব্য নয়, বৈশ্বিক পরিসংখ্যান।
- ঠিক আছে। পরিসংখ্যান আর বাস্তবতার মধ্যেও কিন্তু ফারাক থাকে। আর এ ব্যাপারে বলতে গেলে আরো অনেক বৈশ্বিক বিষয় চলে আসবে। তুমি আমার দেশে অতিথি। তাই আপাতত চুপ থাকছি। পরে বলব।
- ওকে। দেখ, তোমার মতো একজন অপরিচিতর সাথে আমি এতদূর এসেছি স্রেফ তোমার সরলতা আর ব্যক্তিত্বের কারণে। কিন্তু তুমি যদি তুচ্ছ কারণে আবারো মিথ্যে বল তবে আমাদের এই সুন্দর সম্পর্ক ওখানেই শেষ হয়ে যাবে।
- ঠিক আছে। তোমার প্রতি আমার আগ্রহের কারণ তোমার হাতের ঐ বইটি। নইলে বইমেলা থেকেই আমরা দুজন দুদিকে চলে যেতাম। বইয়ের বিষয়টি না জানা পর্যন্ত আমি কিন্তু তোমার পিছু ছাড়ছি না। তার পেছনে অবশ্য কারণও আছে।
মিম হেসে বলল,
- তবে তো তোমাকে বইয়ের বিষয়টি এখনই জানানো উচিত হবে না।
- কেন?
- তোমাকে ঝুলিয়ে রাখব।
আমরা উভয়ে হাসলাম।
- তবে জানো, খুব দুঃখ লাগে যখন দেখি পৃথিবীটা দিন দিন অনুদার মানুষে ভরে যাচ্ছে। আমার দেশ এ্যমেরিকা, কত উদার একটি দেশ। এখানে সবকিছু ওপেন। তোমার বয়েস আঠারো হলেই তুমি চাইলে বারেও যেতে পারো, চাইলে প্রার্থনালয়েও যেতে পারো আবার চাইলে বিপরীত লিঙ্গের কারো সাথে বিছানায়ও যেতে পারো। কেউ তোমাকে বাধ্য করবে না। তাই বলে এ্যমেরিকা কি রসাতলে গেছে? প্রযুক্তি আর অন্যান্য বিষয়ে আমরা এখনো অপ্রতিদ্বন্দ্বী। নিজের কথাই বলি, সবকিছু হাতের মুঠোয় থাকা সত্ত্বেও আমি এখনো অক্ষতযোনি। আমার যা করার ইচ্ছা ছিল আমি তা করতে পারছি। এতেই আমি খুশি।

আমাদের কাচ্চি চলে এসেছে। আমি মিমকে তার পাত্রে বেড়ে দিলাম।
- তোমার চমৎকার আতিথেয়তার জন্য ধন্যবাদ। আমি নিজেও নিতে পারতাম। দারুণ সুঘ্রাণ।
- খেয়ে দেখ, তারপর বলো। তোমার সাথে এই এখন একটি বিষয়ে আমার মিল পেলাম।
- কী বিষয়ে?
- কৌমার্যের প্রশ্নে।
আমি কি বেশি সাহসী হয়ে গেলাম? নাকি নাবালক হতে সাবালক হচ্ছি?
- কুমার তো বটেই, আমার তো মনে হচ্ছে তুমি আজই প্রথম কোন যুবতীর স্পর্শ পেলে।
আমরা হাসলাম।
- চমৎকার একটি ডিশ। বাদাম জুসটিও দারুন। আর এটা কী?
মিম বোরহানীর বোতলটির দিকে ইঙ্গিত করল।
- এটাও একটি জুস, হজম সহায়ক। কাচ্চির সাথে সাথে এটাও একটু একটু করে পান করবে। আশা করি পেটে কোন সমস্যা হবে না।
- তোমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কি ছেলে-মেয়েরা আলাদা বসে?
- না তো, কেন?
- তোমাকে দেখে মনে হল।
- তোমার মতো আমিও হাতের মুঠোয় অনেক কিছু থাকা সত্ত্বেও নিজেকে গুটিয়ে রেখেছি। বলতে পারো ঘরকুনো। তবে আমি বসে থাকিনি। আমি ফ্রিল্যান্সিং করে আয় করি। সেই সাথে স্পিরিচুয়ালিজমের চর্চা করি যা আমাকে আত্মিক ভাবে অনেক শক্তি আর প্রশান্তি দেয়। আর অধ্যয়ন তো আছেই।
- স্পিরিচুয়ালিজম? স্পিরিচুয়ালিজম বলতে তুমি কি সুফিবাদ চর্চা বুঝাচ্ছো? নাকি আত্মা হাজির কিংবা যাদুবিদ্যা অথবা মায়াবিদ্যা ...
- তোমার এই বইটিতে কিছু প্রশ্নের উত্তর পাবে। বাকিটা জানতে হলে আরো অনেক দূর এগোতে হবে। কিন্তু তোমার হাতে এ বইটি কেন?
মিম এবার নড়েচড়ে বসল। অনেকটা আকুতির স্বরে সে আমার নামটি উচ্চারণ করে বলল,
- তোমাকে একটি প্রস্তাব দেব, তুমি কিছু মনে করতে পারবে না। আশা করি রাখবে।

আমি কি ঘাবড়ে গেলাম? কী এমন প্রস্তাব মেয়েটি দিতে পারে? একেবারে অসংকোচে?
(চলবে)
পূর্ববর্তী অংশ

সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৫:৫৩
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×