somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগ সমাচার === বদরুদ্দীন উমর

১৭ ই জুলাই, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছাত্রলীগের বেসামাল অবস্থাই আওয়ামী লীগের জন্য সংকট সৃষ্টি করেনি। তাদের দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-সৃষ্ট সংকটও এখন আর উপেক্ষার বিষয় নয়। এর বহিঃপ্রকাশ এখন নানাভাবে ঘটছে। এসব বহিঃপ্রকাশ যে সাধারণভাবে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা ও ভাবমূর্তি বিনষ্ট হতে থাকার সঙ্গে সম্পর্কিত এতে সন্দেহ নেই।

প্রথমে ছাত্রলীগের কথা। এ সংগঠনটি বিগত ১৮ মাসের নানা অপকর্মের পরিণামে একটি দুর্নীতিবাজ ও সন্ত্রাসীদের সংগঠন হিসেবে পরিচিত হয়েছে। এর পূর্ব ঐতিহ্য যা-ই থাক, এই হলো এর বর্তমান অবস্থা। সমাজের বিভিন্ন অংশ ও স্তরের লোকজন, বিভিন্ন সংগঠনের লোকজন, এমনকি খোদ আওয়ামী লীগের লোকজনও এদের সমালোচনা কড়াভাবেই করছেন। আওয়ামী লীগ তো ঘোষণা করেই দিয়েছে যে ছাত্রলীগের কোনো কাজের দায়দায়িত্ব তারা আর নেবে না। এর সঙ্গে তাদের কোনো সাংগঠনিক সম্পর্ক আর নেই। কিন্তু আওয়ামী লীগ বেকায়দায় পড়ে বেসামাল ছাত্রলীগকে অস্বীকার করলেও জনগণ তা মেনে নেয়নি, নিতেও পারে না। কারণ, আওয়ামী লীগ তার অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগকে যতই অস্বীকারের চেষ্টা করুক, আওয়ামী লীগের সঙ্গে ছাত্রলীগের গভীর সম্পর্ক তাদের ভালোভাবেই জানা আছে। ছাত্রলীগ এখন আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাচ্ছে বলে তাকে অস্বীকার করলে সেটা হবে জামায়াতে ইসলামী যদি ইসলামী ছাত্রশিবিরকে অস্বীকার করে, তার মতো। এভাবে জামায়াত যদি শিবিরকে অস্বীকার করে তার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য, তাহলে আওয়ামী লীগ কি তা মেনে নেবে? সেটা যদি তারা মানতে না পারে তাহলে আওয়ামী লীগ নিজেদেরই তৈরি সংগঠন ছাত্রলীগকে অস্বীকার করলে জনগণ এবং অন্য সব রাজনৈতিক সংগঠন কেন তা মেনে নেবে? কেন তারা নিজেদের বিচার-বুদ্ধিকে শিকেয় তুলবে? ছাত্রলীগ এখন যেভাবে একটি সন্ত্রাসী ও ক্রিমিনাল সংগঠনে পরিণত হয়েছে তাতে তারা দেশসুদ্ধ লোক তো বটেই, এমনকি আওয়ামী লীগ ও তাদের ঘরানার বুদ্ধিজীবীদের অনেকের দ্বারাও সমালোচিত হচ্ছে। ছাত্রলীগ এখন যে অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে, তাতে এ ধরনের সমালোচনা খুব সহজ। কিন্তু যা সহজ নয় তা হলো, ছাত্রলীগ কেন এ অবস্থা ও চরিত্রপ্রাপ্ত হলো_এ প্রশ্ন উত্থাপন ও তার বিশ্লেষণ করা। এ কাজ অর্থাৎ এই জিজ্ঞাসা আওয়ামী লীগের লোকদের করার ক্ষমতা তো নেই-ই, উপরন্তু কেউ সেই চেষ্টা করলে তারা তার ওপর ফ্যাসিস্ট কায়দায় চড়াও হয় এবং এই চড়াও হওয়ার কাজটি করে থাকেন তাদের ঘরানার সুবিধাবাদী বুদ্ধিজীবীর দল। তাঁরা নিমকহারাম নন। আওয়ামী লীগের অনেক ধরনের নুন তাদের খুনের সঙ্গে মিশে আছে।

কিন্তু কেন ছাত্রলীগ এ অবস্থাপ্রাপ্ত হলো_এ প্রশ্ন আওয়ামী লীগ না করলেও এবং কেউ তা করলে তার ওপর তারা চড়াও হলেও এ প্রশ্নের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। ছাত্রলীগের সমালোচনা করে তাকে আওয়ামী লীগ থেকে পৃথক করে দেখানোর চেষ্টা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের চেয়ে তাদের ঘরানার বুদ্ধিজীবীরা বেশি করছেন। এ কথা নিয়ে তাঁরা পত্রিকার পাতা ভর্তি করছেন। কিন্তু ব্যাপার হলো, ছাত্রলীগ আওয়ামী লীগের পদাঙ্ক অনুসরণ করে ও তাদের নানা প্রকার অপকর্মের দ্বারা প্রণোদিত হয়েই নিজেদের অবস্থানে থেকে সেই কাজই করছে, যা তাদের পিতৃসংগঠনের নেতা-নেত্রীরা ওপরতলায় বসে করছেন। এটা মেনে করার কারণ নেই যে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এসব খবর রাখে না। শুধু তা-ই নয়, তারা নিজেদের নাকের ডগাতেই এসব হতে দেখে। ১৯৭২ সাল থেকে এই শিক্ষাই পেয়ে এসে তারা এখন তাদের পিতৃসংগঠনের ক্ষমতার ছত্রচ্ছায়ায় বেপরোয়া ও বেসামাল হয়েছে। এই সত্য আওয়ামী লীগের নেতা-নেত্রীরা যত শিগগির হৃদয়ঙ্গম করে সেই সত্যের আলোকে নিজেদের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের নীতিনির্ধারণ করেন, ততই তাঁদের জন্য ভালো।

বর্তমান সরকারের আমলে শুধু ছাত্রলীগকেই মহা-উপদ্রব হিসেবে আখ্যায়িত করে আওয়ামী লীগকে 'উজ্জ্বল' ভাবমূর্তির অধিকারী বলে ধরে নিলে বা প্রচার করলে তার দ্বারা পরিস্থিতির বেহাল অবস্থা বোঝা যে সম্ভব হয় না শুধু তা-ই নয়, এ পরিস্থিতি পরিবর্তনের কোনো পথই খোলা থাকে না। এ নিয়ে খোদ আওয়ামী লীগের মধ্যেও যে চিন্তাভাবনা একেবারে নেই, তা নয়। এ চিন্তাভাবনার মধ্যে অনৈক্যও আছে, যার বহিঃপ্রকাশ ঘটছে তাদের নিজেদেরই পরস্পরবিরোধী বক্তব্যের মধ্যে।

১০ জুলাই ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সভায় টাঙ্গাইল থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের এক সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী বলেন, 'বিএনপির কর্মীরা ডাকাত, আর আওয়ামী লীগ কর্মীরা ছিঁচকে চোর। আগে বিএনপি নেতা-কর্মীরা গ্রেপ্তার হলে পুলিশকে প্যাকেট বিরিয়ানি খাইয়ে সরাসরি নিজেরা জেল থেকে বের হয়ে আসত। আর বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা গ্রেপ্তার হলে টুকু সাহেবের (স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী) সহযোগিতা নেন।' (সমকাল ১১-৭-২০১০)। এ সময় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিজে সভায় উপস্থিত থাকলেও এ বক্তব্যের বিরুদ্ধে তিনি মুখ খোলেননি! এর থেকে কি কিছুই প্রমাণিত হয় না?

পরদিন ১১ জুলাই রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আওয়ামী লীগের অন্য এক সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের উপরিউক্ত মন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, 'চাঁদাবাজি আমরা কে কতটা করি, সেটা ব্যবসায়ীরা ভালো জানেন। তাই কাচের ঘরে বসে ইট ছুড়ে কোনো লাভ নেই।' (কালের কণ্ঠ ১২-৭-২০১০)। এর অর্থ কি এই দাঁড়াল না যে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ব্যবসায়ীদের থেকে চাঁদা আদায়, অর্থাৎ ঘুষ আদায় করে থাকেন? কাজেই সে অবস্থায় চাঁদাবাজি ইত্যাদির বিরুদ্ধে কিছু বলার দ্বারা কাচের ঘরে ইট মেরে ভাঙার মতো ব্যাপার ঘটতে পারে?

শুধু তা-ই নয়, ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর মন্ত্রিসভা গঠনের সময় পুরনো নেতাদের বাদ দিয়ে কয়েকজন ছাড়া বাকি সব নতুন লোক মন্ত্রিপরিষদে নেওয়ার বিষয়টির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি আরো বলেন, '১৮ মাসে যারা যোগ্যতা-দক্ষতা অর্জন করতে পারে না, দায়িত্ব পালন করতে পারে না, তারা ১৮ বছরেও পারবে না।' (ঐ)। আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার পর তাদের সরকার যে সঠিকভাবে নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে, এ বক্তব্যের মধ্যে সে কথাই আছে।

আওয়ামী লীগের মন্ত্রিত্ব, ক্ষমতা ভাগাভাগি ইত্যাদি নিয়ে দলের মধ্যে যে প্রবল অসন্তোষ, বিদ্বেষ ও মতানৈক্য প্রথম থেকেই আছে, এটা সবারই জানা। এর বহিঃপ্রকাশ অনেকভাবেই ঘটে থাকে। ওপরে দুই আওয়ামী লীগ নেতার বক্তব্য প্রাসঙ্গিকভাবে এখানে দেওয়া হলো এ কারণে যে এটা হলো মাত্র দু-একদিন আগের ঘটনা।

এ আলোচনা শেষ করার আগে ছাত্রীলীগ এবং আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ডের মধ্যে যে ঐক্য আছে এবং তারা যে আওয়ামী লীগ নেতাদের থেকেই শিক্ষা গ্রহণ করে বেপরোয়া হয়েছে, এর ভূরি ভূরি দৃষ্টান্ত ও প্রমাণ আছে। তবে এ ক্ষেত্রেও মাত্র কয়েকদিন আগে ঘটা একটি ঘটনার উল্লেখ করা দরকার। মিরপুর এলাকার এক আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য আশুলিয়ায় যানজটে আটকা পড়া অবস্থায় ট্রাফিক পুলিশকে তাড়াতাড়ি তার জন্য রাস্তা পরিষ্কার করতে হুকুম করলেও পুলিশের পক্ষে সেটা সম্ভব না হওয়ায় তিনি পুলিশ অফিসারকে থাপ্পড় মারেন। পরে ওই পুলিশ অফিসার উপরিউক্ত সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এ নিয়ে পুলিশ বিভাগের মধ্যে যথেষ্ট ক্ষোভেরও সৃষ্টি হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের এর থেকেও বড় বড় অনেক সন্ত্রাসী কাজের রিপোর্ট সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়। এসব সন্ত্রাসের সঙ্গে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী তৎপরতার তফাত কোথায়?
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৫২
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×