যেহেতু জন্মসূত্রে মা বাবার কাছ থেকে ধর্ম হিসেবে ইসলাম পেয়েছেন তাই হয়তো নিজেকে মুসলিম হিসেবেই পরিচয় দিয়ে থাকেন কিংবা কোন কারণে ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছেন। কিন্তু আপনি কী মনে প্রাণে কাজে কর্মে চিন্তা ভাবনায় আসলেই একজন মুসলিম? আজকে আমরা কতখানি মুসলিম তা জানার চেষ্টা করি।

ইসলাম কি?
সাধারণভাবে, ইসলাম মুসলিমদের অনুসৃত ধর্মের নাম তবে এই ইসলাম শব্দের অর্থ কি? ইসলাম আরবি শব্দ (إسلام), যা অর্থ বশ্যতা, সমর্পণ, আত্মসমর্পণ। যার ধাতু মূল س ل م একত্রে سلم এর অর্থ হয় শান্তি, সন্ধি, আত্মসমর্পণ, আনুগত্য। আর যে ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করে তাকে বলা হয় মুসলিম (مسلم)। অর্থাৎ যে বশ্যতা স্বীকার করে বা আনুগত্য পোষণ করে কিংবা আত্মসমর্পণ করে সেই মুসলিম। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, কার/ কিসের আনুগত্য, কার নিকট বশ্যতা স্বীকার বা কার নিকট আত্মসমর্পণ। ইসলামি পরিভাষায় ইসলাম মানে সর্বশক্তিমান আল্লাহর সমীপে নিজের ইচ্ছাকে সমর্পণের মাধ্যম শান্তি অর্জন। এ সংজ্ঞার সপক্ষে যথাযথ প্রমানসহ বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হলো।
ইসলামের মূলমন্ত্র কি?
কালিমা শাহাদাত হচ্ছে ইসলামে প্রবেশের মূলমন্ত্র। যার অর্থ হচ্ছে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্, আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ ﷺ আল্লাহর রাসুল। এবার "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্" নিয়ে একটু বিশ্লেষণ করা যাক। যার অর্থ " আল্লাহ ব্যতিত আর কোন ইলাহ নেই"। ইংরেজিতে ইলাহ শব্দের অর্থ god. অনেক ইসলামি পণ্ডিত الله আল্লাহ নামটিকে ال+إله এর সন্ধি হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। আর যেহেতু এখানে "লা ইলাহু" না বলে "লা ইলাহা" বলা হয়েছে তাই সকল প্রকার ইলাহকে পুরোপুরি নাকচ করা হয়েছে। সে সূত্র মোতাবেক "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" মানে there is absolutely no god but the God. লক্ষণীয় একই উচ্চারিত শব্দের একটিতে ছোট বর্ণ g এবং আরেকটিতে বড় বর্ণ G লেখা আছে। যারা ইংরেজি সাহিত্যে পড়েছেন তাদের জন্য পার্থক্যটা পরিস্কার কিন্তু অন্যান্যদের জ্ঞাতার্থে বলছি, বিভিন্ন দেবতাদের ক্ষেত্রে god শব্দটি ব্যবহৃত হত, এবং ভিন্নতার কারণে কখনও তা gods, goddess, children of god, king of god ইত্যাদি নানাভাবেও লিখা হত কিন্তু God হচ্ছে the Almighty Supreme One। বলা বাহুল্য যে, একজন মুসলিমের জন্য উচিত নয় আল্লাহকে God হিসেবে অভিহিত করা এতে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অবকাশ আছে। সুরা ইখলাসে আল্লাহর পরিচয় রয়েছে,
"বলুন, তিনিই আল্লাহ, একক/অদ্বিতীয়। আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষী নন বরং সকলেই তার মুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাকে জন্ম দেওয়া হয়নি। আর তার সমতূল্য কেউ নয়। "
সুপ্রসিদ্ধ আরবি অভিধান 'معجم اللغة العربية المعاصرة-এ ইলাহ শব্দের অর্থ লেখা হয়েছে: إله: كل ما اتخذ معبودا بحق أو بغير حق. — প্রত্যেক এমন সত্তা/ জিনিস যাকে মাবুদরুপে গ্রহণ করা হয়েছে, সে প্রকৃত মাবুদ হোক বা মনগড়া হোক। আরবি অন্যান্য অভিধানে শব্দটির ঠিক এরুপ অর্থই ঠাঁই পেয়েছে।
অর্থাৎ ইলাহ অর্থ উপাস্য বা এমন কোন সত্তা যার উপাসনা করা হয়। উপাসনা মানে শ্রদ্ধাপূর্ণ ভক্তি—প্রেম করা, সম্মান করা এবং এমন কাউকে মান্য করা যিনি আমাদের সর্বোচ্চ সম্মানের যোগ্য। ঈশ্বরের উপাসনা করার অর্থ হল কৃতজ্ঞতার সাথে তাঁর শক্তি এবং পরিপূর্ণতাকে স্বীকার করা এবং উদযাপন করা । ইসলামে, উপাসনা বলতে আচার-অনুষ্ঠানকে বোঝায় এবং সেই সাথে ইসলামিক আইন অনুযায়ী করা কাজগুলিকে বোঝায় যা আল্লাহর দ্বারা নির্ধারিত এবং তাকে খুশি করে।
নবুওয়াতের শুরুর দিকে নবীজী ﷺ ও মুশরিকদের মাঝে দ্বন্দ্বের আসল জায়গাটা ছিল তাওহীদ - একত্ববাদ ও বহুত্ববাদের দ্বৈরথ। পৌত্তলিকরা তাওহীদের কিছু বিষয় মানতো, যেমন: আল্লাহ তাঁর সত্তা, গুণাবলী ও কর্মে একক ও অদ্বিতীয়। তাছাড়া আল্লাহই একমাত্র সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, রিজিকদাতা জীবন ও মৃত্যুর মালিক, এগুলোও স্বীকার করতো তারা। তবে সাথে সাথে এটাও বিশ্বাস করতো যে কিছু কিছু সত্তা আল্লাহর দেয়া বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী। তারা আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত এবং বিশেষ বান্দা। যেমন: আম্বিয়ায়ে কেরাম, আল্লাহর আউলিয়াগণ, নেক্কার বুজুর্গ, এবং তাদের বানানো আরো দেবদেবীরা। মুশরিকদের মতে এরা আল্লাহর দেয়া ক্ষমতায় অলৌকিক কর্মকাণ্ড করতেও সক্ষম। এদের তারা মনে করত আল্লাহ ও মানুষের মাঝে মাধ্যম, তাদের কাছে প্রার্থনা করা হলে তারা সেটা আল্লাহর কাছে পৌঁছে দেবে। উচ্চপদস্থ সত্যকে খুশী করা সর্বাত্মক চেষ্টা করত। তাদের ধারণা এ সকল পুণ্যাত্মাদের সন্তুষ্ট করলে আল্লাহ সন্তুষ্ট হবেন। সাধারণত এদের মাধ্যম ছাড়া সরাসরি আল্লাহর ইবাদত তারা করত না। মৃত বুজুর্গদের কবরের উপর সৌধ নির্মাণ করা হত। বছরে এক দুবার এসব তীর্থস্থান ঘিরে মেলা বসতো। তীর্থযাত্রীরা এসে নানা রকম আচার অনুষ্ঠান পালন করে তাদের মনগড়া ইলাহদের খুশি করতে চাইতো। যেমন : শস্য, পণ্য, সোনারূপা দান করা, ভক্তি নিবেদন করা, পশু বলি করা, বুজুর্গের নামে পশু মুক্ত অবস্থায় ছেড়ে দেয়া। সেখানকার সেবক বা পুরোহিতদের মাধ্যমে তারা সেসব কিছু সৌধ বা দেব দেবীর নিকট সমর্পণ করতো। কিছু সাধুকে উদ্দেশ্য করে পৌত্তলিকরা বলত, " বাবা, আমার প্রার্থনা গ্রহণ করুন, এই এই বিপদ সরিয়ে দিন। " পবিত্র কোরআনে আয়াতুল কুরসীতে আল্লাহ তায়া’লা প্রকৃত ইলাহ ও বাতিল ইলাহের মধ্যে পার্থক্য স্পষ্ট তুলে ধরেছেন,
" আল্লাহ তিনি, যিনি ছাড়া কোনও ইলাহ নেই, যিনি চিরঞ্জীব, (সমগ্র সৃষ্টির) নিয়ন্ত্রক, যাঁর কখনও তন্দ্রা পায় না এবং নিদ্রাও নয়, আকাশমণ্ডলে যা-কিছু আছে (তাও) এবং পৃথিবীতে যা-কিছু আছে (তাও) সব তাঁরই। কে আছে, যে তাঁর সমীপে তাঁর অনুমতি ছাড়া সুপারিশ করবে? তিনি সকল বান্দার পূর্ব-পশ্চাৎ সকল অবস্থা সম্পর্কে সম্যক অবগত। তারা তাঁর জ্ঞানের কোনও বিষয় নিজ আয়ত্তে নিতে পারে না কেবল সেই বিষয় ছাড়া, যা তিনি নিজে ইচ্ছা করেন। তাঁর কুরসী আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীকে পরিবেষ্টন করে রেখেছে। আর এ দু’টোর তত্ত্বাবধানে তাঁর বিন্দুমাত্র কষ্ট হয় না এবং তিনি অতি উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন ও মহিমাময়। "(আল বাকারা - ২৫৫)
নবীজি ﷺ যখন তাওহীদ ও একত্ববাদ এর আহ্বান নিয়ে তাদের নিকট আসলেন এবং আল্লাহ ব্যতীত সমস্ত উপাস্যকে ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানালেন অর্থাৎ "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" এর দাওয়াত দিলেন, তখন তা অতি কষ্টকর ও বেশ ভারী মনে হলো। তারা একে পথভ্রষ্টতা ও ষড়যন্ত্র বলে বিবেচনা করলো। তারা বলল : "সে কি সমস্ত ইলাহকে এক ইলাহ পরিণত করেছে? এটা তো বড় আজব কথা!" (সুরা ছ্ব---দ - ৫)
মূলত জাহেলি যুগের মুশরিকরাও আল্লাহকে একমাত্র রব্ব হিসেবে জানতো কিন্তু একমাত্র ইলাহ হিসেবে মানতো না। তাদের মতে রব্ব একজন হলেও, ইলাহ হচ্ছেন একাধিক। সরাসরি রব্বের ইবাদত করার যোগ্যতা বা ক্ষমতা তাদের নেই। সর্বশক্তিমান আল্লাহ পর্যন্ত পৌছানোর জন্য বিভিন্ন ইলাহের ইবাদত করে তাদের সন্তুষ্টি অর্জন করতে হবে।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, "নিশ্চয় আমিই আল্লাহ। আমি ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই। সুতরাং আমার ইবাদত কর এবং আমার স্মরণার্থে নামায কায়েম কর।" (ত্বা-হা-১৪)
অর্থাৎ একমাত্র আল্লাহই ইবাদতের যোগ্য, তাই কেবল তারই ইবাদত করতে বলা হয়েছে। ইলাহ শব্দের অর্থ অনেকে অনেক ভাবে করে থাকেন। কিন্তু এই আয়াত ও জাহেলি যুগের মুশরিকদের কার্যকলাপ দ্বারা স্পষ্ট হয় যে, ইলাহ হচ্ছেন এমন সত্তা যা ইবাদতের যোগ্য। ইবাদত (عبادة) শব্দের অর্থ হচ্ছে পূজা, উপাসনা, সেবা, দাসত্ব, বন্দেগি। ইবাদত শব্দের মূল হচ্ছে عبد (আবদ) যার অর্থ গোলাম, দাস/ক্রীতদাস। অর্থাৎ একজন মুসলিম তাওহিদের ( لا إله إلا الله) ঘোষণা দেয়ার সাথে সাথে এই চুক্তিবদ্ধ হয় যে, সে কেবল আল্লাহর গোলাম, অন্য কোন কিছুর দাসত্ব সে দৃঢ়ভাবে নাকচ করে। আর দাসপ্রথা অনুসারে একজন দাস প্রতি মুহূর্ত তার প্রভুর প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনে বাধ্য। কিন্তু যেহেতু এই দাসত্বের সম্পর্কটা গতানুগতিক মনিব ও গোলামের মধ্যে নয় বরং ইলাহ ও তার গোলামের মাঝে। সহজ কথা উপাস্যের প্রতি উপাসকের উপাসনাসুলভ দাসত্ব। তাই গোলামকে অবশ্যই তার আনুগত্য প্রদর্শনে স্বতস্ফূর্তভাবে সর্বোচ্চ ভক্তি শ্রদ্ধা নিবেদন করে উপাস্যের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য আমৃত্যু চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে, এমন আচরণ বা মনোভাব প্রকাশ করা যাবে না যার দরুণ নিজের ইলাহের প্রতি অভক্তি বা অবজ্ঞা প্রকাশ পায়, এমন কাজ করা যাবে না যাতে ইলাহ অসন্তুষ্ট হয়। অর্থাৎ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলার মাধ্যমে আমরা সর্বশক্তিমান আল্লাহ তায়া’লাকে একমাত্র ইলাহ্ হিসেবে স্বীকৃতি দেই। এখন যদি কোন মুসলিম মাজার পূজা, পীর পূজা, পূর্বপুরুষ পূজাকে সমাজে ইসলামের প্রচলিত প্রথা হিসেবে আঁকড়ে ধরে কিংবা ইসলামকে আধুনিকায়নের আশায় গণতন্ত্র, সুদ, ঘুষ, জুয়া, মদ, ব্যভিচার, সমকামিতা, লিঙ্গ পরিবর্তন, নারীর পর্দাকে বিদ্রূপ , হালাল হারাম অবজ্ঞা করাকে স্বাধীনতা মনে করে, সালাফে সালেহিনের পথকে সেকেলে ভেবে তুচ্ছজ্ঞান করে তবে সে "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" অমান্য করলো। ইলাহ হিসেবে সে নিজের স্বাধীনতা অর্থাৎ স্বীয় প্রবৃত্তিকে গ্রহন করলো। এমন প্রবৃত্তি পূজারী ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে আল্লাহ বলেন," তুমি কি দেখেছ তাকে, যে তার হাওয়া*কে নিজ ইলাহ বানিয়ে নিয়েছে এবং জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও আল্লাহ তাকে গোমরাহীতে নিক্ষেপ করেছেন এবং তার কান ও অন্তরে মোহর করে দিয়েছেন আর তার চোখের উপর পর্দা ফেলে দিয়েছেন। অতএব, আল্লাহর পর এমন কে আছে, যে তাকে হেদায়েত করবে? তবুও কি তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করবে না?"(আল জাছিয়াহ - ২৩) ( হাওয়া*= প্রবৃত্তি, কামনা, বাসনা, ইচ্ছা, আবেগ, আগ্রহ, কল্পনা, খেয়াল, প্রবনতা, পক্ষপাত, প্রিয়বস্তু, ভালোবাসা)
যুগের সাথে তাল মিলাতে গিয়ে বা কোন স্বার্থ সিদ্ধির জন্য যদি কেউ ইসলামে নির্ধারিত রীতিনীতি ও জীবন-বিধানের সাথে অন্য মতবাদের সংমিশ্রণ ঘটাতে চায় কিংবা শরীয়তের বিধানের ঊর্ধ্বে কোন ব্যক্তি বা দলের নিয়ম-কানুনকে অগ্রাধিকার দেয় কিংবা ইসলামী শরীয়তকে সেকেলে মনে করে তবে সে তার "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলো।
একবার মক্কার মুশরিকদের একদল লোক নবীজীর ﷺ কাছে এসে বোঝাতে লাগল কিভাবে উভয়পক্ষকে খুশি রাখা যায়। তারা বলল, " আপনি এক বছর আমাদের দেবদেবীর উপাসনা করবেন, আর আমরা এক বছর আপনার উপাস্যের উপাসনা করবো। যদি আমাদের ধর্ম সত্য হয়, তাহলে আপনিও পুণ্যের একটা অংশ পেলেন, আর যদি আপনারটা সত্য হয়, তাহলে আমরাও পুণ্য পেলাম। " কোরাইশদের এ প্রস্তাবের জবাবে নাযিল হলো সুরা কাফিরূন।
" বলুন, হে কাফিরগণ, আমি এবাদত করি না, তোমরা যার এবাদত কর। এবং তোমরাও এবাদতকারি নও, যার এবাদত আমি করি এবং আমি এবাদতকারি হবো না, যার এবাদত তোমরা করে আসছো। আর তোমরাও এবাদতকারি হবে না , যার এবাদত আমি করি। তোমাদের জন্য তোমাদের দীন আর আমার জন্য আমার দীন।"
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়া’লা অনেক আয়াতে তাওহীদে (أُلُوهِيَّة) উলুহিয়্যাত তুলে ধরেছেন। প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সকল কথা ও কাজ তথা সকল প্রকার এবাদত একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট করা এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য যে কোন বস্ত্তর এবাদতকে অস্বীকার করার নাম তাওহীদে উলূহিয়্যাহ। কতিপয় আয়াত নিচে উল্লেখ করা হল:
১. আল্লাহ স্বয়ং এ বিষয়ের সাক্ষ্য দেন এবং ফিরিশতাগণ ও জ্ঞানীগণও যে, তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই, যিনি ইনসাফের সাথে (বিশ্ব জগতের) নিয়ম-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করছেন। তিনি ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই, তাঁর ক্ষমতা পরিপূর্ণ এবং হিকমতও পরিপূর্ণ।"(আলে ইমরান-১৮)
২. তিনিই সেই সত্তা, যিনি মায়ের পেটে যেভাবে ইচ্ছা তোমাদের আকৃতি দান করেন। তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। তিনি পরম পরাক্রান্ত এবং সমুচ্চ প্রজ্ঞারও অধিকারী। (আলে ইমরান-৬)
৩. তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এক নাফ্স থেকে, তারপর তা থেকে তার জোড়া সৃষ্টি করেছেন এবং চতুষ্পদ জন্তু থেকে তোমাদের জন্য দিয়েছেন আট জোড়া*; তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেন তোমাদের মাতৃগর্ভে; এক সৃষ্টির পর আরেক সৃষ্টি, ত্রিবিধ অন্ধকারে; তিনিই আল্লাহ; তোমাদের রব; রাজত্ব তাঁরই; তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই। তারপরও তোমাদেরকে কোথায় ফিরানো হচ্ছে? (আয্-যুমার-৬)
৪. যদি আসমান ও যমীনে আল্লাহ ছাড়া অন্য ইলাহ থাকত, তবে উভয়ই ধ্বংস হয়ে যেত। সুতরাং তারা যা বলছে, আরশের মালিক আল্লাহ তা থেকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র।(আল আম্বিয়া-২২)
৫. আল্লাহ বলেন, তোমরা দু’-দু’জন ইলাহ গ্রহণ করো না। তিনি তো একই ইলাহ । সুতরাং তোমরা আমাকেই ভয় কর। (আন নাহ্ল-৫১)
৬. আল্লাহ কোন সন্তান গ্রহণ করেননি এবং তার সঙ্গে নেই অন্য কোন ইলাহ । সে রকম হলে প্রত্যেক ইলাহ নিজ মাখলুক নিয়ে পৃথক হয়ে যেত, তারপর তারা একে অন্যের উপর আধিপত্য বিস্তার করত। তারা যা বলে, তা হতে আল্লাহ পবিত্র। (আল মু'মিনূন-৯১)
৭. মানুষ তাকে ছেড়ে এমন সব ইলাহ গ্রহণ করে নিয়েছে, যারা কোন কিছু সৃষ্টি করতে পারে না; বরং খোদ তাদেরকেই সৃষ্টি করা হয়। তাদের নেই খোদ নিজেদেরও কোন ক্ষতি বা উপকার করার ক্ষমতা। আর না আছে কারও মৃত্যু ও জীবন দান কিংবা কাউকে পুনরুজ্জীবিত করার ক্ষমতা।(আল ফুরকান-৩)
৮. (হে নবী! তাদেরকে) বল, তোমরা বল তো, আল্লাহ যদি তোমাদের শ্রবণশক্তি এবং তোমাদের দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নেন এবং তোমাদের অন্তরে মোহর করে দেন, তবে আল্লাহ ছাড়া কোন্ ইলাহ আছে, যে তোমাদেরকে এগুলো ফিরিয়ে দেবে? দেখ, আমি কিভাবে বিভিন্ন পন্থায় নিদর্শনাবলী বিবৃত করি। তা সত্ত্বেও তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়। (আল আনআম-৪৬)
৯. বলে দাও, আল্লাহর সঙ্গে যদি আরও ইলাহ থাকত, যেমন তোমরা বলছ তবে তারা আরশ-অধিপতি (প্রকৃত ইলাহের)-এর উপর প্রভাব বিস্তারের কোন পথ খুঁজত। (বনী-ইসরাঈল-৪২)
১০. (হে রাসূল! তাদেরকে) বল, আচ্ছা তোমরা কী মনে কর? আল্লাহ যদি তোমাদের উপর রাতকে কিয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী করে দেন, তবে আল্লাহ ছাড়া এমন কোন ইলাহ আছে কি, যে তোমাদেরকে আলো এনে দিতে পারে? তবুও কি তোমরা শুনবে না?
বল, তোমরা কী মনে কর? আল্লাহ যদি তোমাদের উপর দিনকে কিয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী করে দেন, তবে আল্লাহ ছাড়া এমন কোন ইলাহ আছে কি, যে তোমাদেরকে এমন রাত এনে দেবে, যাতে তোমরা বিশ্রাম গ্রহণ করতে পার? তবে কি তোমরা ভেবে দেখবে না? (আল ক্বাসাস-৭১,৭২)
১১. তোমাদের ইলাহ এক ইলাহ। অতঃপর যারা আখিরাতে বিশ্বাস করে না, তাদের অন্তর অস্বীকারকারী এবং তারা অহঙ্কারী। (সুরা নাহল:২২)
১২. বল, ‘আমি তোমাদের মতই একজন মানুষ। আমার নিকট ওহী প্রেরণ করা হয় যে, তোমাদের ইলাহই এক ইলাহ। সুতরাং যে তার রবের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং তার রবের ইবাদাতে কাউকে শরীক না করে’। (সুরা কাহফ:১১০)
আরবের পৌত্তলিকরা যতটা ভক্তি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সহিত তাদের মনগড়া ইলাহদের উপাসনা করতো, তাদের কল্যানকামী মনে করতো, তাদের সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করতো, মুসলিম হিসেবে আমাদের সকলের প্রতি অপরিহার্য যে, আমরা আমাদের সর্বোচ্চ ভক্তি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সাথে আল্লাহর হুকুম আহকাম মেনে চলবো এবং জীবনের প্রতিমুহূর্তে নিষ্ঠার সাথে সর্বাগ্রে আল্লাহর প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করবো, এমন কার্যকলাপ ও চিন্তা ভাবনা থেকে বিরত থাকবো যাতে আল্লাহ অসন্তুষ্ট না হন, যে কোন পরিস্থিতিতে আল্লাহর ফয়সালাকে আমাদের জন্য কল্যানকর হিসাবে মেনে নিবো। পৃথিবীর যে প্রান্তে মুসলিম থাকুক, ইসলাম সব প্রান্তে একই, আরবের ইসলাম আর উপমহাদেশের ইসলাম ভিন্ন নয়। কারণ ইসলামের মূলমন্ত্র একটাই "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্"।
তথ্যসুত্র:
রাসুলে আরাবী
মুসলিম বাংলা
Al-wafi dictionary
Wikipedia
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:১১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




