সকালে অফিস আসার সময় ইজিবাইকে পাশেই একটি মেয়ে বসেছিল। গাড়িতে উঠার সাথে সাথেই নাকে বিশেষ ধরনের সুঘ্রাণ ঝাপটা দিয়ে গেল! প্রথমে টের পাইনি, তারপর বাকি পথটুকু প্রায় তন্দ্রাচ্ছন্নের মতো চোখ বুজে এলাম, কেন না সেই সামান্য অবকাশেই আমার সময় মুহূর্তেই ফিরে গিয়েছিল শৈশবে, যখন এই বিশেষ সুঘ্রাণ আমাকে প্রায়শঃ আচ্ছন্ন করে রাখত। কাঠের আলামারির একদম উপরের দিকে তিব্বত স্নোর কাচের বোতলে রাখা তুষার-শুভ্র কোমল এই প্রসাধন সামগ্রী তার প্রকারেই এমন বিশেষ, যেন তা কেবলমাত্র মানুষের নরম গালের জন্য প্রস্তুত, এবং আঙুলে নেওয়া মাত্রই মনে হতো, এর চেয়ে কোমল ও শুভ্র আর কিছুই হতে পারে না, আর গালে লাগানোর সময়, এমন কী পরবর্তীতে ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়া সুঘ্রাণ প্রায় সারাদিন আচ্ছন্ন করে রাখত।
সেই সময়গুলোতে প্রসাধন সামগ্রী বিলাস ছিল না, ছিল জীবনের সুন্দরতম অংশ, যখন বেলা পড়ে এলে মায়ের সামনে বসে বালিকা অথবা যুবতীরা মাথা ভিজিয়ে মাখত সুগন্ধী নারিকেল তৈল। সেই সূত্রে গন্ধরাজের লম্বাটে কাচের বোতল ও তার সুঘ্রাণও বিশেষভাবে সুবাস ছড়িয়ে রেখেছে আমার শৈশবে, আর পড়ে আসা বেলায় মায়ের সামনে নিয়মিতভাবে বসে পড়া যুবতীরা প্রথম দিকে মায়ের যত্ন সহকারে মাথার ত্বকে বেশ করে নারিকেল তৈল লাগিয়ে দেওয়ার আরামে চোখ বুজে ফেললেও, পরবর্তীতে ডুরি (কাপড়ের ফিতা) দিয়ে কষে চুল বেঁধে দেবার যন্ত্রণায় চোখ-মুখ কুচকাতো, অথচ তৈল জবজবে বেণীওয়ালা মাথায় তারা যেন হয়ে উঠত সত্যিকারের একেকটি রাজকন্যা, আর রাতে বিছানায় বড় বোনের পাশে শুয়ে, বিছানা জুড়ে সুবাসিত নারিকেল তৈল অথবা রাতের শেষ প্রসাধন তিব্বত স্নোর সুঘ্রাণ আমাকে মোহাবিষ্ট করে তুলত রাতভর অনাবিল স্বপ্ন-গন্ধময় তেপান্তরে উদ্দাম ছুটে বেড়াতে। ফলে ভোর হতো খুব সহজেই, আর চিরচেনা সেই সব মোহনীয় সুঘ্রাণ প্রাণের খাঁজে আগলে রেখে আরও গতিময় ছুটে যাওয়া যেত জীবন পথে।