আমি সামু এর একজন নিয়মিত পাঠক কিন্তু লেখা হয়ে উঠে না খুব একটা. যে বিষয়ে আমি লিখতে যাচ্ছি সেই বিষয়ে আমার জ্ঞান সীমিত. ভুল কিছু পেলে ঠিক করে দেবেন.
আজকাল বাংলাদেশ এর প্রতি ভারত এর বিভিন্ন আচরণ খুব ই আপত্তিকর এবং নিন্দনীয়, যেমন টিপাইমুখ, ইত্যাদি, এবং জাতিসংঘ তে প্রতিবাদ করে বিশ্ববাসী এর নজর এইদিকে আকর্ষণ করার মাধ্যমে বাপারগুলোর সমাধান করার চেষ্টা করাটাই এক্ষেত্রে প্রথম দূরদৃষ্টিসম্পন্ন পদক্ষেপ হবে বলে আমি মনে করি. ভারতের আচরণের প্রেক্ষিতে স্বাভাবিক ভাবেই অনেক বাংলাদেশী আবেগের বশবর্তী হয়ে বিভিন্ন কথা বলছেন যার অনেকগুলাই আমার মতে দেশের জন্য প্রকৃত অর্থ মঙ্গলকারক নয়. তবে আমার ভুল হতেই পারে এবং সেক্ষেত্রে শুধরে দেবেন. আমি এইসব বিষয়ে কিছু কথা তুলে ধরতে চাচ্ছি.
প্রথমত, অনেকেই আজকাল বলছেন ভারতের অন্যায় এর প্রতিবাদে ভারতীয় সকল পণ্য বর্জন করা উচিত. এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে ভারতীয় পণ্য বর্জন করা হলে ভারত আমাদের কাছে পণ্য বিক্রয়ের মাধ্যমে যে আর্থিক লাভ করে তা থেকে বঞ্চিত হবে. আমি ভারতীয় পণ্য বর্জনের বিরুধ্যে নই. করতে পারলে অবশ্যই করা উচিত, যদি তার ফলে আমার দেশের লাভ হয় তাহলেই. নিজের নাক কেটে অন্যের যাত্রাভঙ্গ করাটা বোধ হয় খুব একটা বুদ্ধিমানের কাজ হবেনা. প্রথমত সবার জানা উচিত, জাতি হিসেবে অর্থনৈতিক উন্নতি করার উল্লেখযোগ্য একটি শর্ত হচ্ছে বানিজ্য অর্থাত trade. অর্থনৈতিক উন্নতি এর জন্য বহির্বিশ্বের সাথে বানিজ্য এর খুব বেশি বিকল্প আছে বলে মনে হয় না. এখন চলুন কিছু ফাক্টস জেনে নেই. বাংলাদেশের সাথে বহির্বিশ্বের মোট যা বানিজ্য তার ১৫% ভারতের সাথে. অপরদিকে ভারতের সাথে বহির্বিশ্বের মোট যা বানিজ্য তার ১% বাংলাদেশের সাথে. আমরা যদি কোনো miracle এর মাধ্যমে ভারতীয় সকল পণ্য বর্জন করতে পারিও, ভারত তার বানিজ্য এর ১% হারাবে. ব্লগ এর কারো কি মনে হয় এই বেপারে ভারতীয় কারো তেমন কোনো মাথাবেথা হবে? তারচেয়ে বড় প্রশ্ন, এখানের কেউ কি মনে করেন বিশেষ করে এই বয়কট এর কারণে BSF এর উপর কোনো চাপ আসার কোনো সুযোগ আছে বাংলাদেশের সাথে সঠিক ব্যবহার করার জন্য? এর চেয়েও বড় প্রশ্ন এরকম বয়কট এর প্রেক্ষিতে কোনো কারণে যদি ভারতের কোনো কিছু এসেও যায় তার ফলাফল কি হতে পারে বলে আপনারা মনে করেন? ভারতের সাথে বাংলাদেশের বানিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন হলে কার ক্ষতি বেশি হবে মনে করেন? ভারত না হয় ১% হারাবে, কিন্তু বাংলাদেশের কি হবে? আমাদের সাধের গার্মেন্টস শিল্পের কথা ভাবুন. তার জন্য সল্পমূল্যে সুতা আসে ভারত থেকে. আবার এই শিপ্লের উল্লেখযোগ্য ক্রেতাও ভারত, যাহেতু ওই দেশে কাপড়ের দাম তুলনামূলকভাবে বেশি. কাজেই আমরা যে আজকাল গণহারে বয়কট ইন্ডিয়ান প্রোডাক্স বলে ফেসবুকে গলা ফাটাচ্ছি তা কিন্তু প্রকারান্তে লোক হাসানো ছাড়া কিছুই হচ্ছে না. ভারত আমাদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ সবসময় না করলেও আমাদের সবচেয়ে বড় trading partner. কাজেই তাদেরকে বয়কট করলে আমাদের লাভ হবে না বরং ক্ষতি ই হবে এবং তাদের চেয়ে বহুগুনে বেশি ক্ষতি হবে. সীমান্তে যা হচ্ছে তা একটি মানবীয় বাপার এবং এই জাতীয় সমস্যা সমাধানের সুনির্দিষ্ট পথ আছে, যেমন আন্তর্জাতিক মহলে বাপারটা উত্থাপন করা, ওই দেশের মানবীয় সংস্থা গুলোকে বেবহার করা ইত্যাদি.
দিতীয়ত bsf এর আচরণ এর কারণে অনেকেই বলেন ভারত কে ঘৃনা করা উচিত কারণ তারা তাদের বাহিনী কে সামলাতে বের্থ. এই জাতীয় কথা কিছুটা যথার্থতা পেত যদি আমরা আমাদের বাহিনী সমূহ সামলানোর ক্ষেত্রে মহা সফল কিছু হতাম. কয়েকদিন আগেই ঘটল bdr বিদ্রোহ. এই দেশের ইতিহাসে কু এর কোনো অভাব নেই. এমনকি আজও আমরা আমাদের rab বাহিনী কে সামলাতে পারিনা. rab ইচ্ছা হলেই লিমন এর মত মানুষদের উপর গুলি চালাতে দিধা করছে না. প্রচুর মানুষ ক্রসফাআরে মারা যাচ্ছে আমরা কিছুই করতে পারছি না. আমাদের পার্শবর্তী একটা দেশ তাদের বাহিনী কে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না এই বেপারে মনে হয় আমরা আরেকটু understanding হতে পারি, আরেকটু empathetic আচরণ করতে পারি. বেপারটা us verses them হিসেবে না দেখে একটু গভীরে প্রবেশ করলেই বুঝবেন bsf এর অধিকাংশই আমাদের bdr এর বিদ্রোহ করা জওয়ান দের মতই অত্যন্ত স্বল্পশিক্ষিত, এবং স্বল্পশিক্ষার কারণে অনেকেই হয়ত ভিন্ন ধর্মের মানুষের প্রতি বিদ্বেষী. আমি নিশ্চিত বলতে পারি এমন জওয়ান আমাদের bdr , rab , ইত্যাদি বাহিনী তে অভাব হবে না. এমন বাহিনী গুলোকে আমরাই যদি সামলাতে বের্থ হই, তাহলে ভারত কে এই বাপারে একটু ছাড় কি দেয়া যায় না? ধরুন আপনার ৭ বছর বয়েসের একটা ছেলে আছে. সে সারাদিন প্রচুর দুষ্টমি করে. বাসায় এটা ওটা ভাঙ্গে, আপনি তাকে কিছুতেই সামলাতে পারেন না. আপনার পাশের বাসায় করিম সাহেব থাকেন. উনারও আপনার মতই একটা দুষ্ট ছেলে আছে কিন্তু তার বয়েস ১২, এবং তিনিও তার ছেলেকে সামলাতে পারে না. এখন ধরুন তার ওই ১২ বছরের ছেলেটা মাঝেমধ্যে আপনার বাগানের ফুল নষ্ট করে, এবং আপনার ছেলেটার সাথে মারামারি করে তাকে বেথা দেয়. নিশ্চই আপনি বিরক্ত হবেন, এই বাপারে করিম সাহেবের সাথে আলোচনা করে সমাধান খুজবেন. কিন্তু নিশ্চই আপনি করিম সাহেবকে ঘৃনা করবেন না. বিশেষ করে আপনি নিজেই যেখানে ছেলেকে সামলাতে পারেন না. নিশ্চই একটু হলেও করিম সাহেবের প্রতি empathetic অনুভব করবেন. আর যদি এতটুকু empathy এর ক্ষমতা আপনার মধ্যে না থাকে, তাহলে বলাই বাহুল্য আপনার সাথে প্রতিবেশীদের সম্পর্ক ভালো হবার সম্ভাবনা নিতান্তই কম. এবং তাতে ক্ষতি অন্য যে কারো চেয়ে আপনারই বেশি.
তৃতীয়ত সীমান্তের বিষয়টা ওদের perspective থেকেও বোধ হয় দেখা দরকার. কয়েকদিন আগে হাবিবুর কে নিয়ে যে ঘটনা ঘটল সেটা একটা অমানবিক ঘটনা কোনো সন্দেহ নেই. সেটাকে কেন্দ্র করে ভারত কে আমরা প্রচুর ধুয়েছি. ওই bsf জওয়ানদেরকে বরখাস্ত করা হয়েছে. সবই ঠিক আছে. আমি নিজেও bsf এর এরকম অবমাননাকর আচরণের নিন্দা জানাই. কিন্তু একটা বাপার মনে হয় বাদ রয়ে গেল. ব্লগে একজনকেও লিখতে দেখলাম না যে হাবিবুর এর উচিত হয়নি সঠিক অনুমতি ছাড়া অন্য একটি দেশে প্রবেশ করা. একজনকেও বলতে শুনলাম না আমাদের উচিত সীমান্তের মানুষরা যাতে ভারতে প্রবেশ করার চেষ্টা না করে সেই বাপারটা দেখা. মনে রাখতে হবে যে আমাদের দেশের মানুষ এবং তাদের কাজকর্ম বিশেষ করে অন্য দেশে তাদের কাজকর্ম এর দায়ভার অনেকটা আমাদের উপর আসে. অন্য দেশে কোনো বাংলাদেশী মানুষ বেআইনি কাজ করলে দেশের নাম খারাপ হয়. আপনার সন্তান অন্য বাড়িতে চুরি করতে গিয়েই ধরা খেয়ে মার খেলে আপনি নিশ্চই ওই বাড়ির লোকদেরকে দুষবেন না আর ওদেরকে দু একটা কথা বললেও আপনার ফোকাস থাকবে নিজের সন্তান কে ঠিক করার দিকে যাতে সে আর চুরি না করে. আমি জানিনা হাবিবুর ভারতে কি জন্য গিয়েছিল. কিন্তু এইটুক জানি যে ভারতে প্রবেশ করার ভিসা তার ছিল না অর্থাত সে বেআইনি ভাবে ভারতে ঢুকেছিল. এটাও মনে রাখার বিষয় যে ভারত একটা সার্বভৌম দেশ, এবং যদি আমরা চাই আমাদের সার্বভৌমত্ব কে তারা সম্মান করুক, তাহলে আমাদের উচিত ওদের সার্বভৌমত্ব কে সম্মান করা. হাবিবুর কে যেভাবে টর্চার করা হলো তা অবশ্যই নিন্দনীয় কিন্তু bsf যদি তাদের দেশের সীমান্তে হাবিবুর কে বেআইনি ভাবে অবস্থান করতে দেখামাত্র গুলি করত আমার মনে হয়না তাতে তাদের খুব একটা দোষ দেয়া যেত. আমাদের bgb এর উপরও কিন্তু নির্দেশ আছে সীমান্তে বেআইনি ভাবে কাউকে ঢুকতে দেখলেই যেন গুলি করা হয়, এবং সেই নির্দেশ মত বেআইনিভাবে সীমান্ত অতিক্রমকারী burmese দেরকে প্রায়ই গুলি করে মারা হয়. বাংলাদেশে এমনিতেই জনসংখা সমস্যা, তার উপর যদি burma থেকে বেআইনি ভাবে মানুষ ঢোকে তাহলে গুলি না করে উপায় কি? এদেরকে গুলি করে কি bgb বা bdr অপরাধ করে? যদি সেটা অপরাধ না হয়, তাহলে নিশ্চই মানবেন যে বাংলাদেশ থেকে কেউ বেআইনিভাবে ভারতে প্রবেশ করার চেষ্টা করলে তাদেরকে গুলি করে মারাটা তাদের অপরাধ নয় বরং বাংলাদেশীদেরই উচিত এমন কাজ না করা এবং সরকারের উচিত সীমান্তে এই বাপারে সচেতনতা গড়ে তুলা যাতে এমন চেষ্টা কেউ না করে. মনে রাখার বিষয় বাংলাদেশের মতই ভারতের অতিরিক্ত জনসংখা সমস্যা রয়েছে, এবং অনেক বাংলাদেশীই বেআইনিভাবে ভারতে প্রবেশ তো করেই, এমনকি ওদের ration card থেকে শুরু করে Voter id কার্ড তা পর্যন্ত পেয়ে যায়, এবং এই বাপারটা নতুন শুরু হয়েছে এমন না বরং বহু বছর ধরে হয়ে আসছে. কাজেই এসব রোধের জন্য ভারত যদি একটু extreme বেবস্থা নেয়, ওদের মনে হয় খুব বেশি দোষ দেয়া যায় না. নিজেকে প্রশ্ন করে দেখুন, আপনি ভারতীয় হলে আপনিও এটাই সমর্থন করতেন. কাজেই হাবিবুর এর ঘটনায় ওই টর্চারকারী দেরকে নিন্দা করার পাশাপাশি হাবিবুর এর মত মানুষদেরও সমালোচনা হওয়া উচিত, কারণ তারাই ভারতীয় দের কাছে আমাদেরকে সস্তা করে ফেলছে, এবং অন্য দেশে আমাদের সুনাম নষ্ট করছে. এখানে হাবিবুর যদিও ভিকটিম, সেই যে প্রথম অপরাধ করেছে সেটা মানতেই হয়. আমাদের bgb এরও উচিত কোনো ভারতীয় (কিনবা burmese) বেআইনি অনুপ্রবেশকারী দেখামাত্র গুলি করা এবং বাংলাদেশের মানুষ যেন দেশের বাইরে বেআইনিভাবে যেতে না পারে সেদিকেও খেয়াল রাখা.
আশা করি সহমত হবেন, আর না হলে বিপরীত যুক্তি দেবেন এবং ভুল হলে শুধরে দেবেন. ধন্যবাদ.
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ৯:১৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



