somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

চাঁদপুরে চড়ইভাতি

০৭ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১০:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চড়ুইভাতির সংজ্ঞাটার সাথে যায়না যদিও, তারপরেও এই ক্ষণকাল জীবনের অনুজ্জ্বল, একঘেয়ে জীবনাচারণকে একটু সরিয়ে এদিক ওদিক এই যে শ্রান্তি খোঁজার আয়োজন, তাকে চড়ুইভাতি বললে দোষটা কী? নাহ, কোন দোষ নেই। তাই এই নির্দোষ মন খুঁজে ফেরে সুযোগ। সুযোগটা পাইয়ে দিলো আমার আবৃত্তি দল- মিথস্ক্রিয়া আবৃত্তি পরিসর। সেভাবে বলতে গেলো এটি দলের অফিশিয়াল কোন আয়োজন ছিল না। অগ্রজ, অনুজসহ বেশ কয়েকজন মিথস্ক্রিয়ান আমাদের সহযাত্রী হতে পারেনি- এই মর্মব্যাথা ছিল। সাথে সাথে সবাই মিলে তাগদাও ছিল ঘুরে আসার।
সকালটা ছিল আর দশটা সকাল থেকে একটু হিমশীতল। সকাল ৬ টায় বেড়িয়েছি এটা যেমন একটি কারন, তেমনি এদিন কেন জানি কুয়াশার ছল একটু বেশিই ছিল। এই কুয়াশার ব্যাপারটা টের পাওয়া গেলো ঢাকার বুড়িগঙ্গা ছেড়ে আস্তে আস্তে আমাদের লঞ্চটি যখন আরও অনেকটা দূর এগিয়ে গেলো। রোমাঞ্চ আর রহস্যময়তা সবসময়েই আমাকে আকর্ষণ করে। আমি চাই, প্রত্যেকটা ভ্রমণেই যেন এরকম খানিক রহস্যময়তা থাকে। রহস্য আর রোমাঞ্চ এই ভ্রমণগুলোকে টাটকা আর স্মৃতিগ্রাহ্য করে রাখতে পারে! আমাদের সকালবেলার এই লঞ্চ ভ্রমণটা এমনি রহস্যময় কুয়াশার আবিরে ঢাকা ছিল। আমি আর অনুজ সাব্বির কুয়াশার হেতু খোঁজবার চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম। একটি বিষয় না বললেই নয়, এই ঘন কুয়াশায় আর একটু এদিক ওদিক হলেই সামনে পড়ে যেত আরেকটি ছোট লঞ্চ। এ নিয়ে খানিক মুহূর্ত হট্টগোলও হয়ে গেলো লঞ্চের ভিতর। আমি এই পুরো ব্যাপারটা খুব উপভোগ করছিলাম!
এরই এক ফাঁকে আমাদের সকালের নাস্তা সম্পন্ন। সাথে চললো গানের কলি। উল্লেখ্য, আমরা জ্ঞাতস্বরেই হিন্দি এবং ইংরেজি গান বর্জন করেছি এই খেলায়। আমাদের মুখে ছিল সুমিষ্ট বাংলার কলি। ডিএসএলআর ম্যান ফয়সাল যেন ঐদিন সবচেয়ে আকাঙ্খিত ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। হওয়াটা তো স্বাভাবিকই, তাই না? আমাদের এই যে ঘুরাফেরা, তা স্মৃতির আয়নার রাখার চেয়ে লেন্সের আয়নায় রেখে দেওয়া সময়ের চাহিদার চেয়েও যেন বেশি। সকালে চায়ের কাপে চুমুক দেওয়ায় যে সজীব স্ফূর্তি জাগে মনে তেমনি আমাদের মনেও স্ফূর্তি নিয়ে ছবি তোলা চললো কিছুক্ষন। আমাদের ছবি তোলার আয়োজন দেখে মনে হয় সূর্য দেবতাও সদয় হলেন। তিনি ঘণ্টা খানিক লুকোচুরি করে অবশেষে উদয় হলেন।
কুয়াশার বিচরণ থাকা স্বত্তেও খুব একটা বেশি সময় লাগলো না চাঁদপুরে চলে আসতে। ৩.৩০ ঘণ্টা। অপেক্ষায় ছিলেন প্রীতিভাজন ও অগ্রজ বাপ্পা কাকা। যে দুতিন ঘণ্টা আমরা চষে বেড়াবো চাঁদপুর শহর- তা ভালোভাবে দেখানোর দায়িত্ব নিলেন তিনিই। সাথে খাওয়া দাওয়ার পূর্ব আয়োজন ব্যবস্থাপনায়ও তিনি। বছরে একটা সময় থাকে যখন ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করা হয় কিছু সময়ের জন্য। কাকতালীয় কিনা জানি না, তবে আমরা এই সময়টাতেই চাঁদপুর এলাম! চাঁদপুর যাবো, আর ইলিশ খাবো না- এ কী করে হয়? নাহ, বাপ্পা কাকার চেষ্টায় তা সম্ভব হল। তবে বলা বাহুল্য, বেগ পেতে হয়েছে।
আর দশটা মফস্বল শহরের মতোই ছোটখাট, ছিমছাম, নদী আর খালবিল ঘেরা এই শহরটিও সুন্দর। শহরের একটি উল্লেখযোগ্য স্থান মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ ‘অঙ্গীকার’ এ গেলাম। স্মৃতিস্তম্ভটি এর প্রতিষ্ঠাতার(এরশাদ)মতোই বিবর্ণ আর সময়ের ভারে ক্ষয়ে যাচ্ছে। সবাই মিলে বাপ্পা কাকার ইচ্ছেমতন শ্মশান এলাকাটাও ঘুরে আসলাম। অবশ্য এর আগে শহরের তাজ হোটেলে সিঙ্গারা আর ঠাণ্ডা পানীয় দিয়ে হালকা ভুঁড়িভোজ হয়ে গেলো। রোদের ঔজ্জ্বল্যতায় ভুলেই গিয়েছিলাম যে সকালে আসার পথে কী ভয়ংকর কুয়াশাটাই না ছিল। উল্লেখ্য, শহরে রিকশার চল খুব কম। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় গ্যাসচালিত সিএনজি সদৃশ একধরনের গাড়ি চলে যেখানে ৬/৭ জন বসে চলা যায়। আমরাও যে ১০ জন ছিলাম তারা দুটো গাড়ি নিয়ে শহরের এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ঘুরছি। সময় হাতে ২/৩ ঘণ্টা। এরমাঝেই যা দেখা যায় আরকি।
দুপুরের খাবার শেষে আমাদের হাতে আছে ৪০/৫০ মিনিটের মতো। ফিরতি লঞ্চ ছাড়বে বিকেল ৩.৩০। এর ফাঁকে শহরের বিখ্যাত ‘ওয়ান মিনিট’ দোকান থেকে তাদের স্পেশাল আইসক্রিম খাওয়া হল। তারপরেই গেলাম শহরের সবচেয়ে দর্শনীয় স্থান বড়স্টেশন এলাকার নদীর মোহনা দেখতে। একে তিন নদীর (পদ্মা, মেঘনা, ডাকাতিয়া) মোহনাও বলা যেতে পারে। অসম্ভব সুন্দর জায়গা। বলা ভালো, বিকেল বেলায় হালকা রোদে এ জায়গায় আসতে পারলে খুব ভালো হত। কিন্তু আমাদের কপালে দুপুরের কটকটে রোদই বরাদ্দ ছিল। তবে এতে ভালোর ভালো হচ্ছে ডিএসএলআরে তোলা আমাদের ছবিগুলোতে এক স্বর্গীয় রূপ চলে আসলো!
চলে আসা কিংবা ফেলে আসার মাঝে যেমন এক বিশাদ কাজ করে, তেমনি কাজ করে একধরনের প্রাপ্তি। সেই প্রাপ্তির রেশ খালি চোখে দেখা হয়ত সম্ভব নয়। এই প্রাপ্তি হচ্ছে অদেখাকে দেখার, দেখাকে বারবার দেখার। আর এই দেখতে গিয়েই আমাদের জীবনের সঞ্চয় বক্সে জমা হয় কত না অভিজ্ঞতা। কোন অভিজ্ঞতাই ঠুনকো বা অমূল্য নয় আমার কাছে। আমি মনে করি মিথস্ক্রিয়ার আমরা যারা আছি তারা নিশ্চয় এমনটিই ভাবে কিংবা ভাববে। দলের সাধারন সম্পাদক মেহেদী ভাইয়ের সাথে এ নিয়েই কথা বলছিলাম। আশাপ্রকাশ করলাম, বছরে অন্তত ১ বার দলের সবাইকে নিয়ে এভাবে বেড়িয়ে আসবো আমরা।
বিকেলে লঞ্চে কেবিনের সামনের জায়গাটিতে মিষ্টি রোদ আর তুমুল বাসন্তি বাতাসের খেলা। একটা দীর্ঘসময় নিয়ে চললো আমাদের কবিতা পড়া। আমরা সবাই সবার মতো করে পছন্দের কিছু কবিতা আবৃত্তি করার চেষ্টা করলাম। আর সাথে ছিল চাঁদপুর থেকে নিয়ে আসা ক্ষির। চললো খাওয়া, ফুরুলো বিকেল। সন্ধ্যার অন্ধকারে দ্বীপ জলা ঢাকা শহর চলে আসলো খুব কাছে আর সমাপ্তি ঘটলো আমাদের চড়ইভাতির।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১০:১০
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০, কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×