সুন্দরের তাপে জ্ঞান পুরে ছাই হয়ে যায়। অথবা রূপ এতোটাই তেজস্বী যে রূপের গহীনে জ্ঞান চাপা পরে যায়, তাই রূপসীর মেধা থাকলেও সেটা চোখে পরে না । রূপসীর মুখে জ্ঞানের কথা কেউ শুনতে চায় না, শুধু চায় রূপের আগুনে ঝলসে গিয়ে আনন্দ পেতে।সুন্দরী মেয়েরাও নাকি পোড়াতেই বেশী ভালোবাসে। সুন্দরী মেয়ের জ্ঞান থাকতে নেই , কি হবে এই জ্ঞান দিয়ে! আসলে আমাদের সমাজ ওদেরকে এভাবেই দেখতে চায়।তাই সুন্দরীকে আরও সুন্দরী হতে আগ্রহী করে তোলে অন্যান্য মেধার চর্চাকে গৌণ অথবা বাতিল করে দিয়ে। সুন্দরী হওয়াটা খারাপ কিছু নয়। তবে রূপচর্চার এবং শরীর চর্চার সাথে সাথে ব্রেইনচর্চাটাও চালিয়ে যেতে হবে যদি সত্যিকারের সুন্দরী হতে চায় কেউ।সুন্দরী বলতে তো শুধু টুকটুকে চেহারা নয়, শারীরিক এবং মানসিক ভাবে কে কতটা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী সেটাও দেখা হয়।
মিস ওয়ার্ড বাংলাদেশ এর প্রতিযোগিতা সেদিন দেখলাম । প্রতিটি মেয়েই অনেক সুন্দর, তাদের পোশাকে আশাকে, চালচলনে। অনেক উঁচু উঁচু জুতা পরে বেশ ভারী ভারী গাউন পরে দিব্যি হেঁটে যাচ্ছে। এই দক্ষতাটি তারা অত্যন্ত সুন্দর ভাবেই শিখে ফেলেছে।একজন অদক্ষ কেউ হলে ওইরকম জুতা পরে, ভারী লম্বা গাউন পরে তিনবার পলটি খেয়ে পরে যাবে । ওরা অবশ্যই মেধাবী, তা না হলে এই কঠিন কাজটি অত সহজে শিখলো কিভাবে! ওরা চাইলে চর্চার মাধ্যমে সহজেই অনেক কিছুই শিখে ফেলতে পারে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, দেখা যাচ্ছিলো যে ওরা প্রশ্নের উত্তরই দিতে পারছিলো না অর্থাৎ স্মার্ট আনসার দিতে পারছিলো না। যদিও প্রশ্নপর্বও ছিল খুবই আনস্মার্ট।আর এই দেখে ট্রলার গোষ্ঠীর ফেইসবুক ট্রলের বন্যা নেমে গেছে। তবে আমি আশাবাদী, সবে তো শুরু, আস্তে আস্তে ওদের আরও অগ্রগতি হবে।
আর হ্যাঁ, এই ট্রল হওয়াটা কিন্তু খারাপ কিছুও না। এই ট্রল দেখেই ভবিষ্যতে সবাই আরও বেশী সচেতন হবে এবং এই বাংলাদেশ থেকেই মিস ওয়ার্ড এর ট্রফি নিয়ে ফিরবে মেয়েরা একসময়।
একটা কথা না বললেই নয় - যে ব্যক্তিরা পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে দেন , তারা দেখুন কি করেছেন দেশের ভবিষ্যত প্রজন্মকে! আর যে ছাত্র-ছাত্রীরা পরীক্ষার আগে ফাঁস করা প্রশ্নের অপেক্ষায় থাকো তারাও মনে রেখ, এ* এর সার্টিফিকেট হয়তো থাকবে তোমাদের, কিন্তু মস্তিষ্ক শূন্য থেকে যাবে। এই শূন্য মস্তিষ্ক নিয়ে পৃথিবীর কোথাও জায়গা হবে না।সার্টিফিকেটে যে নাম্বারই থাক, সেই নাম্বারটি যেন মগজেও থাকে।আর শিক্ষা ব্যবস্থার তো বেহাল পরিণতি। আমরা সবাই এই ব্যবস্থায় দারুণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।
এই যে মেয়েটি H2O যে পানির রাসায়নিক নাম, এটা জানে না বা হতে পারে হঠাৎ ভুলে গেছে মঞ্চে এতোগুলো মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে, এর জন্য কম হাসির পাত্র হয়নি।যদিও এ জাতীয় প্রশ্ন করাটাই ভুল হয়েছে। আমাদের দেশে ঐ মেয়েটির মত অবস্থা অনেক মেয়ে বা ছেলের আছে।কারন আমাদের শিক্ষা ব্যাবস্থা আমাদের জ্ঞানের থলিকে খুলে দেয় না।মুখস্ত করে পাশের প্রবণতা প্রায় সবারই। কারন অনেক কিছুই ক্লাসরুম থেকে শিখতে পারে না বা বুঝতে পারে না শিক্ষার্থীরা ।আমি নিজে উপপাদ্য বুঝতাম না, কিন্তু উপপাদ্যে নাম্বার ঠিকি পেতাম, কারন মুখস্তবিদ্যা তো আছেই। কিন্তু ইংল্যান্ডে এসে প্যারেন্টস গাইড এবং ম্যাথ ডিকশনারি পড়ে পড়ে আমার মেয়েকে পড়িয়েছি এবং নিজে শিখেছি , তাই সঠিক রিজনিং এখন বুঝি।না বললেই নয় এদেশের গাইডগুলোও অসাধারন।
আরেকটা খুব কষ্টদায়ক ব্যপার, পরিবার থেকে অনাগ্রহ দেখানো হয় ছেলেমেয়ের আগ্রহের বিষয়কে।ঐ মেয়েগুলোকে যদি বাবা মা ছোটবেলা থেকেই তৈরি করতো তাহলে ওদের হয়তো এরকম লজ্জাজনক অবস্থায় পরতে হতো না।ওরা তড়িৎ উত্তর দিতে সক্ষম হতো।
আরও একটি বিষয় খুবই পীড়াদায়ক, ক্রিয়েটিভ জায়গাগুলোর প্রতি আমাদের বিজ্ঞ মহলের অবজ্ঞাটিও ভয়াবহ মাত্রায়।একবার আমার একজন শিক্ষক বেশ অবজ্ঞা নিয়েই বলেছিলেন , " ও পড়ালেখা করে না শুধু গানা-বাজানা নিয়েই থাকে"। খুব প্রেস্টিজে লেগেছিল, তাও সেটা বলেছিল পুরো ক্লাসের সামনে। তারপর, আস্তে আস্তে গানা-বাজানা প্রায় ছেড়েই দিয়েছি।
এই ধরনের প্রতিযোগিতায় গেলে অবশ্যই স্টেইজ পারফরমেন্সের অভিজ্ঞতা ছোট বেলা থেকেই অর্জন করা উচিৎ। হঠাৎ করে এরকম স্টেইজে দাঁড়ালে সবারই একটি নার্ভাসনেস কাজ করে। এই নার্ভাসনেস দূর করতে স্কুলেই সব বাচ্চাকে কিছু না কিছু পারফর্ম করার সুযোগ করে দেয়া উচিৎ। এতে করে ছেলে মেয়ে আত্মবিশ্বাসী হয়ে গড়ে ওঠে। শুধুমাত্র একাডেমীক শিক্ষাই আসল শিক্ষা নয়, এটা বুঝতে হবে। একাডেমিকালি সাকসেসফুল অনেক মানুষই আছে যারা আত্মবিশ্বাসের অভাবে সঠিক জায়গায় পৌঁছাতে পারে না। এজন্যই এক্সট্রা কারিকিউলার এক্টিভিটিজ উন্নত বিশ্বে অনেক বেশী সমাদত্রিত। আইনস্টাইন ভায়োলিন বাজাতে জানতেন। কারন মিউজিকের রিদমেই ম্যাথসের রিজনিং গুলো রয়েছে। ভালো মিউজিশিয়ান বিশ্বজগতের মিউজিককে বুঝবে, আর এই বিশ্বজগতের সংগীতই আসল গণিত এবং এভাবেই সে হতে পারে একজন মহান গণিতবিদ।
** সুন্দরীদের বলতে চাই একটি কথা- ফেসবুকে শুধু ছবিই দেখবেন না, মেকআপ টিউটোরিয়ালই দেখবেন না, মাঝে সাঝে কিছু কিছু ভালো ভালো লেখাও পড়ুন। সাকসেসফুল মানুষের ইন্টার্ভিউ শুনুন বা দেখুন , দেখবেন সব সমস্যা দূর হয়ে যাবে।আর সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি আমার এই আতলামি সূচক দীর্ঘ লেখার জন্য।আমাকে এখন বলতেই হয় ' আমার এ বাজে স্বভাব কোনদিন যাবে না।' , মানে এই আতলামি স্বভাব। আমি ছোট বেলা থেকেই এরকম।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৫:২৪