দরজা থেকেই ডাক্তার আবীরকে দেখছিল জয়া। চোখের পলক পড়ছে না জয়ার। ঈষত্ ঝুঁকে থাকা ওই দেহবল্লরী, চওড়া কাঁধ, একমাথা ঘনচুল তাকে চুম্বকের মতো কাছে টানে। চেয়ারে বসে আছে আবীর। ল্যাপটপের কি-বোর্ডে আঙুল চলছে। মাত্র কয়েক হাত দূরে দাঁড়িয়ে আছে জয়া। নিঃশব্দে কাজ করে যাচ্ছে আবীর। ওর এই নিমগ্নতাও সম্মোহিত করছে জয়াকে। নিজের অজান্তেই দেহমনে কী এক আশ্চর্য শিহরণ ঢেউ খেলে যায়। সেতারের মতো বেজে উঠতে চায় শরীর। ওর ভেতরে এক নিঃশব্দ আর্তনাদ বলে—আমাকে বাজাও আবীর, আমাকে বাজাও।
আশ্চর্য, জাকিরকে সে কতরূপে দেখে। ঘরোয়া বেশে, সুটেড বুটেড পার্টি অফিস-বেশে, এমনকি নিরাবরণ। কখনও কি আকাঙ্ক্ষা এমন তীব্র আলোড়ন জাগিয়েছে জয়ার রক্তে! মনে করতে পারে না জয়া। ওর বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস নামে। কেন এই ছেলেটি আগে এল না তার জীবনে? প্রখ্যাত সাংবাদিক জয়া হকের আগমনে একটুখানি নীরবতা ভাঙল বুঝি। আবীরের হাত সহসা থেমে গেল। ল্যাপটপ বন্ধ করে হাত দুটো মাথার পেছনে দিয়ে আড়মোড়া ভাঙল। পেছনে তাকিয়ে হঠাত্ বিস্মিত হলো,
এ কি তুমি!
হ্যাঁ আমি। ঋষিবাবুর ধ্যান তাহলে ভাঙল এতক্ষণে?
মুচকি হেসে আবীর বলল, ঋষিবাবু নই, ডাক্তারবাবু। ধ্যান ভেঙেছে আমার অনেক আগেই। তোমার পারফিউমের মিষ্টি গন্ধেই তোমার আগমনী বার্তা পেলাম।
আমার মিষ্টি গন্ধ তাহলে চেন তুমি?
চেনার কী শেষ আছে? চিনতে চিনতেই জীবন কেটে যায়।
বাব্বাহ্! আমার ডাক্তার সোনার ডায়ালগের বহর কত!
আমাকে কী চিরকাল ছোটই ভাববে জয়া। আমি এখন ইন্টার্নশিপ করছি। একগাদা ই-মেইল বসে বসে চেক করছিলাম।
চাকরির খোঁজ?
হ্যাঁ, মনে হচ্ছে শিগগিরই কাজে লেগে যাব। বলতে বলতেই জয়া হকের দিকে তাকিয়ে বলল, তোমার মুখ-চোখ এত কালো দেখাচ্ছে কেন? রাত জেগে বুঝি খুব লেখালেখি হচ্ছে?
জয়া ভাবল, কিছুই কি ছেলেটির দৃষ্টি এড়ায় না? এক মুহূর্তে জয়ার শ্রান্তি জুড়িয়ে গেল। ভালোবাসার মানুষের কাছে এটুকুই তো আশা করে মানুষ। জয়া চোখ পাকিয়ে বলল, চাকরিতে ঢুকলে সুখের জীবন কতটুকু, টের পাবে সোনা।
টের তো এখনই পাচ্ছি। ফর ইয়োর ইনফরমেশন, আজ আমার ডে-অফ। সুতরাং সারাদিন তুমি আর আমি। বলতে বলতে জয়ার কাঁধে হাত রাখল আবীর। আবীরের স্পর্শে জয়ার শরীরের তন্ত্রীতে কাঁপন জাগে। জড়িয়ে ধরে আবীরের গলা। আবীরের ঠোঁট নেমে এল। ওষ্ঠ যুগল বেঁধে নিচ্ছে পরস্পরকে। তীব্র আশ্লেষে আবীরের বুকে মুখ ঘষল জয়া। সর্বাঙ্গে অনুভব করছে পুরুষালি চাপ। কোমল রমণীয় হাড়পাঁজরা যেন গলে যাচ্ছে সেই চাপ আর তীব্র তাপে। জয়া নিজেই উত্তেজনা সংযত করল। সাঁইত্রিশ বছর বয়সে কি আর কচি খুকির মতো আচরণ মানায়? ভাবল আপন মনে। কিন্তু করবেই বা কী? আবীরের মতো মায়াবী এক যুবা পুরুষ। তবে কি নিষিদ্ধ প্রণয় অনুভূতির তীব্রতা বাড়িয়ে দেয়?
বেডকভার কিঞ্চিত্ এলোমেলো। সেখানে জড়িয়ে আছে বিশ্বাস, ভালোবাসা এবং মানসিক বোঝাপড়া। অনাবিল বৃষ্টি ফোঁটার মতো গড়িয়ে পড়ে চোখের জল। এলোমেলোভাবে শুয়ে আছে জয়া। মুখ গুঁজে আছে আবীরের বুকের ভেতর। আবীর তার মায়াবী স্পর্শ বুলিয়ে দেয় জয়ার পিঠে। বন্ধ চোখের পাতা এবং কপাল ছুঁয়ে যায় আবীরের ঠোঁটযুগল। একটু থমকায়। টাইম ইজ আপ।
জবাবে জয়া একটুও নড়ে না। চোখ মেলে তাকায়। দুই চোখের বিস্ময় ভালো লাগা ছুঁয়ে যায় শ্যামবর্ণের ছেলেটিকে, যে ওর খুব কাছের। জয়া টেনে নেয় ছেলেটিকে। বুদ্ধিদীপ্ত ছেলেটিকে বড় বেশি আপন মনে হয় জয়ার। নিজের সর্বশক্তি দিয়ে টেনি নিতে চায় ওর সবটুকু। কত জন্মের রুক্ষ পাথুরে মাটিতে যেন ঝরে পড়ে উন্মাতাল বৃষ্টি। আবীরকে নতুন করে আঁকড়ে ধরে জয়া।
জয়া তার একান্ত নিজস্ব চাওয়াগুলো ভুলেই গিয়েছিল প্রায়। নিষম্ফল আক্রোশে সাঁইত্রিশ বছরের আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিনিয়ত দাবিয়ে রেখেছে সে। রাখতে বাধ্য হয়েছে। অসম দাম্পত্যের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা তাকে বানিয়েছে প্রাণহীন মৃত মানুষ।
জয়ার জানা ছিল না সেই মৃতপ্রায় মানবীর প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দু’হাত বাড়িয়ে রেখেছে বেঁচে ওঠার তাগিদে। আবীরের মুহূর্তের ছোঁয়ায় শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বাঙ্ময় হয়ে উঠল। নিজেকে অচেনা লাগে জয়ার। মনে হয়, এ মুহূর্তে যেন ওরা দু’জন অন্য গ্রহের মানব-মানবী। জীবনের এমন কিছু মুহূর্ত মন চায় ধরে রাখতে।
ইচ্ছে করে না ছকে বাঁধা দৈনন্দিন জীবনের নিরানন্দ খাঁচায় ফিরে যেতে। বেশ হতাশা নিয়েই কথাগুলো ভাবল জয়া। আবীরকে বলল, আমার ইচ্ছে হচ্ছে তোমাকে দারুণ একটা উপহার দিই। আবীরের কৌতূহল হলো—দাও না, কী উপহার দিতে চাও। জয়া বলল, দেব, তবে এখনই নয়। অনেক দিন পরে তুমি উপহারটা পাবে। উপহারটা শুধু তোমারই প্রাপ্য।
সেটা কী আমাকে বলা যায় না?
পরে বলব।
বুঝেছি, তোমার কোনো প্রিয়বস্তু।
প্রিয় বস্তু তো অবশ্যই। সেটা আমি কিছুদিনের মধ্যেই তোমাকে দিতে পারি। কিন্তু তার মর্ম এখন তুমি বুঝতে পারবে না।
মনে হয় পারব।
জয়া বলল, সময়ে সব কিছুর মূল্যায়ন হয়। এখন তুমি যার মূল্য বুঝবে না, সময়ে তা বুঝতে পারবে। কাজেই একটু ধৈর্য ধরো।
এবার আবীরের দিকে জয়া আলতো প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়, কী বোঝা গেল?
সবই বুঝলাম। যা তুমি চাইছ, তা তুমি এখন বলছো না।
অলরাইট।
প্রায় তিন ঘণ্টা পেরিয়ে গেল। আমাদের এখন বেরুনো দরকার। প্লিজ গেট আপ। ফ্রেশ হয়ে নাও। আবীর নিজেকে টেনে তুলে জিন্সের ওপর ব্লু শার্টটা গলিয়ে বেরিয়ে পড়ে। দরজার দিকে তাকিয়ে ওর চলে যাওয়া দেখে জয়া। আবীরের অসম্ভব বুদ্ধিমত্তা ও দায়িত্ববোধ ওকে জয়ার মনের এত কাছাকাছি এনেছে। অদ্ভুত ওর এই সেন্স অব রেসপনসিবিলিটি। নিজেকে আর একা মনে হয় না। ছাব্বিশ বছরের যুবকটির সাহচর্যে জীবনটা এখন অনেক রঙিন।
অলস পায়ে বাথরুমের দিকে এগিয়ে যায় ও। বেসিনের আয়নায় চোখ পড়তেই থমকে যায় একটু। চোখের দৃষ্টিতে খুশির ছোঁয়া। এই নতুন করে পাওয়া ভালো লাগা মনে করিয়ে দিচ্ছে জয়া হক এখনও ফুরিয়ে যায়নি। প্রাণবন্ত এক চঞ্চলা মানবী যেন, আদিকাল থেকে যে পথ চলছে তার পরম প্রিয়তম সঙ্গীর খোঁজে।
জয়ার লেখনীতে ফুটে ওঠে ভালোবাসার সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম নানা বোধ। ও রূপ দিতে পারে মহত্ কোনো বিষয়ের ওপর মানুষের আন্তরিক ইচ্ছেটাকে। জীবনের ক্লেদ আর কুসুম কিছুই বাদ যায় না। লেখনীর মধ্যে নিজেকে উজাড় করে দেয়। তন্ময় হয়ে পড়ে কাজে। তার মনে হয়, প্রতিটি মুহূর্তের অতিক্রান্ত সময় যেন এগিয়ে চলেছে। সময় চলে তার নিজস্ব গতিতে। সুতরাং যা কিছু করার, তা এখনই করতে হবে। আবীরের জন্য শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত রচনা করতে বহু সময় কেটে গেল। একজন তরুণের জীবন কতখানি সুখের ও আনন্দের, তা ফুটে ওঠে সঙ্গীতের ভাষায়। সেই বিখ্যাত সঙ্গীত রচনা করতে গিয়ে মানসপটে আবীরের রূপটি ফুটে ওঠে। শক্ত-সবল পেশির ছেলেটি পৃথিবীর যত সুখ ও আনন্দ নিয়ে ছুটে আসছে ওর দিকে। মনে হচ্ছে আবীরের হাত দু’খানি কণ্ঠলগ্ন হয়ে আছে ওর।
এ যেন এক অকারণ পুলক। জয়া তাকে বলছে, তোমার স্পর্শে পাই সূর্যের তেজ। পাই সকালের হিমেল হাওয়া। তোমার হৃদয়ে ফুটেছে শ্বেত পদ্ম। জীবন ভরে আছে বসন্তে। জীবনকে আমি দেখেছি, যার যে ধারণাই থাকুক না কেন। আশ্চর্য সুন্দর এই জীবন। যৌবনের মধ্য সীমানায় পৌঁছানো এক নারী আমি। একদিন তোমার মতো আমারও টগবগে তারুণ্য ছিল। আমি আমার জীবন, মেধা, শিল্প সবই অর্পণ করেছি উত্তরসূরিদের জন্য। তার বিনিময়ে কিছুই চাইনি। আর তাইতো আমি সুখী।
তুমি এক যৌবনদৃপ্ত পুরুষ। সুখ নামক বস্তুটি তুমিই। তুমি প্রত্যুষের আলো। তোমার কণ্ঠস্বর হৃদয়ে ভাষা জোগায়। যা কিছু তোমার ছোঁয়ায় আর স্পর্শে সুন্দর হয়েছে, তাই মহিমান্বিত হোক।
জয়া এসব কিছু ফুটিয়ে তুলেছে তার লেখনীতে। তার মনে হচ্ছে, পৃথিবীর সবাই এ লেখা পড়তে পারবে। এ লেখা সূর হয়ে ছড়িয়ে পড়বে সবুজ বন-পাহাড় এমনকি মরুভূমিতেও। তার এই শ্রোতৃমণ্ডলীকে সে অনেক ভালোবাসে।
দুই
আবীরের বয়স এখন চল্লিশ। সে এখন একজন নামকরা ডাক্তার। ইতিমধ্যে তার প্রসার ছড়িয়ে পড়েছে। বেইলি রোডের নাটক পাড়ার কাছে ওর পৈতৃক বাড়ি। ছেলেবেলা থেকেই নাটকের প্রতি ঝোঁক আবীরের। ডাক্তার হওয়া সত্ত্বেও নাটকের চরিত্রগুলো আবীরকে বেশ স্পর্শ করে। কারণ মানুষের জীবনকেই নাটকে তুলে ধরা হয়। আর এ জন্য মানুষ গাঁটের পয়সা খরচ করে নাটক দেখতে যায়। ওর বন্ধু কামাল শিল্প-সাহিত্যের সমঝদার। ওর মতে, লেখা হচ্ছে প্রতিভার দর্পণ।
কামাল বলে, নতুন বেশভূষা মানুষকে পাল্টে দেয়। এ জন্য মঞ্চে পোশাকের হেরফেরে খুনি হয়ে যায় নায়ক। কামালের কথায় ফিলোসফি কাজ করে। ডিসেম্বরে বেইলি রোডের নাটকপাড়া সরগরম থাকে। আবীর প্রায়ই বিভিন্ন কনসার্টে যায়। এবারও চিরাচরিত নিয়মে ও নন্দনের কনসার্টে এল। কনসার্ট শুরু হলো। এর আগে ছোটখাট কনসার্ট দেখলেও এতবড় কনসার্ট ও আর দেখেনি। সঙ্গীতের জগত সব সময়ই ওর ওপর প্রভাব বিস্তার করে। হঠাত্ আবীরের কল্পনার রাজ্যে ছেদ পড়ল। যারা শিল্পীদের নাম ঘোষণা করছিলেন, তারা যেন ওর নামটি উচ্চারণ করলেন।
কামাল বলল, মনে হচ্ছে তোর নাম ঘোষণা দিল। আবীর থতমত খেল। কামাল বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে। রুবীর চেহারায় খেলে গেল আনন্দের দ্যুতি।
কী হয়েছে রুবী? তোমরা সবাই অমন চুপ মেরে গেলে কেন? কাতর কণ্ঠে আবীর জানতে চাইল। রুবী বলল, ঘোষণাটা শোনই না। ঘোষক বলে চলেছেন প্রিয় শ্রোতৃমণ্ডলী, আমি আবারও ঘোষণা দিচ্ছি, আজকের অনুষ্ঠানের পরবর্তী সঙ্গীতটি হচ্ছে প্রয়াত প্রখ্যাত সাংবাদিক জয়া হকের রচিত গান। এই গানটি তিনি উত্সর্গ করেছেন স্বনামধন্য বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক আবীর মজুমদার এফআরসিএসকে। সুরকার ও গীতিকারদের ধারণা অনুযায়ী ছবিটি মুক্তি পাওয়ার আগেই গানটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। শিল্পীর পক্ষ হয়ে রয়্যালিটির টাকা গ্রহণ করবেন ডাক্তার আবীর।
আবীরের বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। উথলে ওঠা অশ্রু সংবরণের চেষ্টা করেও সে তা কিছুতেই মানাতে পারছে না। মুখ ঢেকে ফেলল সে। উথাল-পাথাল হৃদয়ে সঙ্গীতের সুর আর কানে ঢুকছে না। সুরস্রোতে ভেসে আসা স্বচ্ছ হাওয়ার আবেশ তাকে স্বাভাবিক করে তোলে।
আবীর স্পষ্ট বুঝতে পারছে বাজনার সুরে সুরে ফুটে উঠেছে তাদের দু’জনের গল্প। সেই ছাব্বিশ বছরের যুবকের কাহিনী। সবেমাত্র যৌবনের নৌকায় ঢেউ লেগেছে। পালে লেগেছে হাওয়া। যৌবনের মধ্যগগনে দাঁড়িয়ে ছিল যে নারীটি। পরম মমতায় তাকে কাছে টেনে নিয়েছে। উদ্দাম প্রেমের সঙ্গে সোহাগ মাখানো মমতা। ভোলা যায় না সেসব দিন। মেডিকেলের একাকী সেই দিনগুলোতে সব দিক থেকে যে নারীটির সাহচর্যে দিন কেটেছে তার। সে-ই তাকে চৌদ্দ বছর পর এই দারুণ উপহারটি দিল। এই তো তার সেই উপহার। প্রখ্যাত সাংবাদিক জয়া হক। গভীর কৃতজ্ঞতায় বুক ভরে ওঠে। কথা ছিল বেঁচে থাকলে ওরা প্রতিবন্ধী শিশুদের কল্যাণে কাজ করবে। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল আবীর, গানের রয়্যালিটির সামান্য অর্থটুকু ওদের কল্যাণে ব্যয় করবে। সঙ্গে নিজেও কন্ট্রিবিউট করবে।
আবীর তার অশ্রু সংবরণ করল না। সঙ্গীতের সুর তার জীবনপাত্র কানায় কানায় পূর্ণ করেছে। এ যেন মহত্ জীবনের পথে এক দীপশিখা। এ গান সেই গান, যেখানে দুঃখ ভালোবাসাকে ম্লান করতে পারে না। যেখানে অন্যের সুখে বাধা হয় না কেউ। সুরের মধ্য থেকে ভেসে আসে কণ্ঠস্বর। তুমিই আমার সুখ। আমার শ্রেষ্ঠতম আলোকরেখা। আবীর বিহ্বল হয়ে পড়ে।
গান থামে। চতুর্দিকে দর্শকের করতালি। সবাই আবীরকে দেখে। বুঝতে পারে সাংবাদিকের অমর সঙ্গীতের প্রেরণাদাতা তাহলে এই যুবকই! কিছুটা বিস্ময় সবার চোখে। তিনি আজ বেঁচে নেই। যদি এখানে উপস্থিত থাকতেন, আবীর পরম মমতায় তার গলা জড়িয়ে ধরে চুপিচুপি বলত, আই লাভ ইউ। আবীরকে মনে রাখার জন্য কৃতজ্ঞতায় মনে মনে ধন্যবাদ জানালো। জীবনের তাত্পর্য বুঝিয়ে দেয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল।
জনশূন্য ফাঁকা রাস্তায় হাঁটতে থাকে আবীর। রুবী নীরবে অনুসরণ করে আবীরকে। কোনো দিকে দৃষ্টি নেই তার। মাতালের মতো হেঁটে চলেছে। তার জীবনে অলৌকিক ঘটনার মতোই এই গানের বিস্ময়কর উত্সর্গ। এ অনির্বচনীয় সুখানুভূতি তাকে আচ্ছন্ন করে রাখে। মনে পড়ে জয়া হকের সেই নিষ্পাপ মুখখানি। যে তাকে ভালোবাসতে শিখিয়েছে, যার সাহচর্যে প্রথম জেনেছে জীবনে বেঁচে থাকার আনন্দ। আবীরও তার বাকি জীবনের অর্জনগুলো এমন মানবিকতায় উত্সর্গ করতে চায়—যেখানে বেঁচে থাকবেন জয়া হক। তাঁর নামে একটি ফ্রি ক্লিনিক চালু করলে কেমন হয়, তা ভাবল আবীর। চোখ সিক্ত হয়ে উঠল তার।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ৯:৪৭