somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কার মুখে কালি মাখছি আমরা, দেশের মুখে না সরকারের মুখে?

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৩:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কোন দাবিই আন্দোলন ছাড়া কোন কালেই আদায় হয় নাই। না কাদলে মা’ও অনেক সময় দুধ দিতে ভুলে যায়। তাই দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন একটা অধিকার ও দায়িত্ব। কিন্তু সেই আন্দোলন হতে হয় শান্তিপূর্ণ, যৌক্তিক ও সমর্থনযোগ্য। অন্যায়-অন্যায্য দাবিতে আন্দোলন কোন অধিকারের মধ্যে পড়ে না। আন্দোলনে যেন অন্যের অধিকার খর্ব না হয় সেদিকেও কড়া নজর রাখা উচিত। নিজের অধিকার, দাবি আদায় করতে গিয়ে যেন অন্যের অধিকার ক্ষুন্ন না হয় সেদিকে কজনই নজর রাখে।


সম্প্রতি ঢাকায় একটা দুর্ঘটনায় কলেজ শিক্ষার্থী মারা গেলে সড়ক পরিবহন আইন পাশের দাবি জোড়ালো ভাবে সামনে চলে আসে। শিক্ষার্থী হত্যার ঘটনা সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে একজন শ্রমিকবান্ধব মন্ত্রী দাত কেলিয়ে হেসে আন্দোলন চাঙ্গা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সেই আন্দোলনে অবশ্য বিএনপি জোট ঘি ঢালতে চেষ্টা করেও নিজেদের মনবাঞ্চা পূর্ণ করতে ব্যর্থ হয়। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনে কিছু বিপথগামী শিক্ষার্থী অশ্লীল ভাষায় প্ল্যাকার্ড নিয়ে রাস্তায় দাড়ালে আমরা সমালোচনা করি, কিছু শিক্ষার্থী গাড়িতে মার্কার পেন দিয়ে আঁকিবুকি করে সমালোচনার পাত্র হয়। আবার সেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে কেউ কেউ এ্যাম্বুলেন্সকে নির্বিঘ্নে যেতে দিয়ে, সাড়িবদ্ধভাবে রিক্সাসহ যানবাহন চলতে বাধ্য করে, সিটবেল্ট পড়ে নিয়মতান্ত্রিকভাবে গাড়ি চালাতে বাধ্য করে, ঝাড়ু হাতে নিজেরা রাস্তা পরিস্কার করে সকলের প্রশংসার দাবিদার হন। দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের পর সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ পাস করে সরকার।

সরকার সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ পাস করলে নাখোশ হন পরিবহন সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের সংগঠন। শ্রমিকরা তাদের নাটের গুরুদের নির্দেশে মামার বাড়ির আবদার নিয়ে মাঠে নামে। শ্রমিকদের সকল দাবিই অযৌক্তিক তা কিন্তু নয়। তাদের দাবিতেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যুক্ত আছে যা আমাদের অনেকেরই দাবি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে শ্রমিকদের দাবি আদায়ের ভাষাটা। তারা যে ভাষায় আন্দোলন করে সে ভাষা তারা কোথা থেকে শিখেছে আল্লাহ মালুম! তাদের গুরুজনদের ভাষাও যে মধুর তা কিন্তু নয়। শ্রমিকদের আন্দোলনের ভাষা তাদের শিক্ষারই পরিচয় বহন করে বলেই মনে হয়।


বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের আট দফা দাবিগুলো হচ্ছে ১) সড়ক দুর্ঘটনায় সকল মামলা জামিনযোগ্য করা, ২) শ্রমিকের অর্থদন্ড ৫ লাখ টাকা করা যাবে না, ৩) সড়ক দুর্ঘটনা তদন্ত কমিটিতে শ্রমিক প্রতিনিধি রাখা, ৪) শিক্ষাগত যোগ্যতা ৫ম শ্রেণি করা, ৫) ওয়েস্কেলে জরিমানা কমানো ও শাস্তি বাতিল, ৬) সড়কে পুলিশ হয়রানি বন্ধ করা, ৭) শ্রমিকের নিয়োগপত্রে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকের সত্যায়িত থাকার ব্যবস্থা রাখা ও ৮) শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান ও লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়ম বন্ধ করা। শ্রমিক ফেডারেশনের আটটি দাবির অধিকাংশই সমর্থ যোগ্য। শুধু মামলা জামিনযোগ্য করা, অর্থদন্ড মৌকুফ, শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করা মামার বাড়ির আবদারের মতই শোনায়। আবার তদন্ত কমিটিতে শ্রমিক প্রতিনিধি রাখা, পুলিশের হয়রানি বন্ধ করা, প্রশিক্ষণ দেয়ার দাবিগুলো অত্যন্ত যৌক্তিক ও সময়োপযোগী।

শ্রমিকরা তাদের যৌক্তিক দাবি আদায়ে মাঠে নেমেছে। তারা গাড়ি চালাবে না, ভালো কথা। কিন্তু অন্যের গাড়ি বের করলে, এমনকি মটর সাইকেলে বের করলে তাদের কেন আতে ঘা লাগে। গাড়ি না চালানো শ্রমিকদের অধিকার, গাড়ি চালানোওতো নাগরিকদের অধিকার। শ্রমিকরা আন্দোলন করছে তাদের নিজস্ব ভাষায়। গাড়িতে কালি মাখছে, পোড়া মবিল দিয়ে মুখ কালো করছে, বাদ যাচ্ছে না কলেজ ছাত্রী, মটর সাইকেল আরোহিও। ইজিবাইক থেকে শ্রমিকরা যাত্রী নামতে বাধ্য করছে। এই যে কালিমা লেপন, এটা কার মুখে? দেশের মুখে মাখছে না সরকারের মুখে। সরকারের খুটিতে ভর করে শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা শ্রমিকদের দিয়ে আজ যে কাজগুলো করছে এর দায় সরকারও এড়াতে পারবে না। স্বেচ্ছাচারিতার একটা সীমা থাকা উচিত। শ্রমিক ফেডারেশন নেতাদের উচিত তাদের শ্রমিকদের গাড়ি চালনায় প্রশিক্ষণ দেয়া, মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া, রাষ্ট্রের নিয়ম কানুন সম্পর্কে অবহিত করে তা মানার মানসিকতা গড়ে তোলা এবং নিজেরাও কিছুটা শিক্ষা নেয়া। নইলে দেশের মুখে কালি মাখতে মাখতে একসময় দেশ আরো অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে যাবে। দেশের মুখ উজ্জল হলেই আপনাদের মত উচু তলার মানুষের মুখ জ্বলজ্বল করবে, সম্মান পাবেন।

সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৫৪
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×