ঢাকায় এসেছি পাত্রী দেখতে। ভাবী হুলিয়া জারি করে দিয়েছে, ঢাকা থেকে যেন বউ ছাড়া না যাই। খালি হাতে গেলে সাদা চামড়ার যে কোন মেয়েকে গলায় গছিয়ে দেবে। ব্যাপারটা আমার জন্য ভয়ানক। মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে বিছানায় আগাগোড়া সাদা কাওকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখা আর কাফন পরা লাশ দেখা একই কথা। তাছাড়া যে মেয়ে রবীন্দ্রনাথ বোঝেনা, সুকান্ত, বোঝেনা, বনলতা বোঝেনা, ‘আপনারে ছাড়া করিনা কাহারে কুর্নিশ’ বোঝেনা তার সাথে বাকি জীবন? ওহ নো! আল্লাহ মাফ করো।
বিগত একমাস নীলাঞ্জনা নামের একটা মেয়ের সাথে ঘুরলাম। পেশায় আর জে। রেডিও জকি। নীলাঞ্জনা তার আসল নাম না। রেডিও নাম। সুন্দর একটা নাম আছে। তবে কম অত্যাধুনিক হওয়ায় নামটা সে প্রকাশ করতে চায়না। আমিও চাইলাম না।
নীলার সাথে মিশছি প্রায় একমাস। অন এয়ারে থাকা কালীন প্রচুর কথা বলে। দারুণ উপস্থিত বুদ্ধি, প্রানবন্ত। অফিস থেকে বের হয়ে সম্পূর্ণ পালটে যায় মেয়েটা। চুপচাপ। বুদ্দিও রেখে আসে রেডিও ষ্টেশনে। সৌন্দর্য, সমাজ সচেতনতায় দশে দশ। সমস্যা হল মেয়েটা ঘুরে ফিরে অ্যামেরিকায় কেমন আছি, বাড়িটা কেনা না ভাড়া এসব নিয়েই বেশি প্রশ্ন করছে। একবারও মা বাবা বা আমার গ্রাম সম্বন্ধে প্রশ্ন করেনাই।
সেজান পয়েন্টের সামনে রাতে ভাত বিক্রি করে মতিন চাচা। মাঝে মাঝেই সেখানে ডিনার করি। পঁয়ত্রিশ টাকায় ভাত মাছ। নীলাকে নিয়ে একদিন ডিনার করতে গেলাম। এখানে খাবো শুনে এমন একটা ভাব করলো যেন মস্ত বড় পাগলামি করে ফেলেছি। ভাবটা লুকাতেও বেশি সময় লাগেনাই তার। আমার সাথে সিঁড়িতে বসে খেয়েছে তবে বাকি সময় আর কথা বলেনাই। বাসায় ফিরে গলায় হাত ঢুকিয়ে বমিও করেছে বোধহয়।
আমার প্রতি যথেষ্ট ভালোবাসা তৈরি করে ফেলেছে নীলা। এটাই একটা প্রবলেম। এত সহজে গভির ভালোবাসা তৈরি হওয়া সম্ভব?
গুনাগুণ
(পজেটিভ-)
*নেয়েটা বাসায় কথা কম বলে। ‘ঘ্যান ঘ্যান প্যান প্যান’ লাগার সম্ভাবনা কম।
*বর্তমানে কোন বয়ফ্রেন্ড নেই।
*পড়তে পছন্দ করে।
*মেয়েটা সুন্দরী।
গুনাগুণ
(নেগেটিভ-)
*মেয়েটা লোভী।
*তার মনে গভির কোন দুঃখ আছে। চোখ মুখে কারো রেখে যাওয়া স্মৃতি হেটে বেড়ায়।
*পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে পারেনা।
*ভালো অভিনয় করে, অভিব্যাক্তি লুকানোর প্রবনতা লক্ষণীয়।
*প্রয়োজন মনে করেনা এমন তথ্য মনে রাখেনা, আমার চশমা খুঁজে দিতে পারবে না কোনদিনই।
*মিথ্যে বলে, আমার সামনে বাবাকে বলেছে ‘আমি অফিসে’, তখন আমরা সিনেপ্লেক্সে ছিলাম।
সিধান্ত-
যেহেতু মেয়েটা চার পাঁচদিনেই আমার প্রতি গভির মমতা প্রকাশ করেছে, এই মমতা কাটতেও চার পাঁচদিনের বেশি লাগবেনা। নিজের মত চাপিয়ে দেওয়ার প্রবনতা আছে এবং বাসায় মাঝে মাঝে চিল্লাচেঁচামেচি করে। সামাজিক কোন কাজের সাথে জড়িত নয় অথচ তার মত একজন সেলেব্রেটি আরজে ইচ্ছে করলেই দুইশ মানুষের শীতের কাপড় যোগাড় করে ফেলতে পারে।
মবিন নামে ভার্সিটির এক বড় ভাইয়ের সাথে সম্পর্ক ছিল, এবং সম্পর্কটা অনেক গভীর ছিল, পুরা ব্যাপারটা লুকিয়েছে।
গুড বাই আরজে নীলাঞ্জনা।
পুঃ-১, ভাবী মেয়ের নাম ঠিকানা সহ একটা ছবি মেইল পাঠিয়েছে। হলুদ সর্ষে ক্ষেতে কালো শাড়ি পরা একটা মেয়ে। নাম রেশমি।
পুঃ-২, এবার বিয়ে করেই যাবো এবং বাংলাদেশী কোন মেয়েকেই।
এবার তোর কি হবেরে রেশমি...???