somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফিলিস্তিন- ইসরাইল, ইসরাইল- হামাস, হামাস-ফাতাহ।

২০ শে মে, ২০২১ বিকাল ৪:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মধ্যপ্রাচ্যের সংকট নিয়ে অনেক কথাই হচ্ছে, এটা ফিলিস্তিনিদের জন্য স্বাধীনতা যুদ্ধ, গাজা ও পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। গত কয়েকদিনের সংঘর্ষ দেখে মনে হচ্ছে, হামাস তো বেশ প্রিপেয়ার্ড, ভালই জবাব দিচ্ছে, এমনকি, ইসরায়েলের এক জেনারেলও স্বীকার করেছে হামাসের এই প্রভূত উন্নতি।

প্রশ্ন হচ্ছে, ইসরাইলী ওই জেনারেল যা বলেছে, তা কতটুক সত্যি, হতে পারে সে তার পরবর্তী হামলাকে বৈধতা দেয়ার অস্ত্র "আত্মরক্ষা"র ধোয়া তুলতেই এই কথা বলেছে।

প্রশ্ন হচ্ছে, সবল যখন বেপরোয়া হয়ে ওঠে, তখন দুর্বলের করণীয় কী?
কৌশলী হওয়া,
বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চায় জোড় দেওয়া,
নিজেকে স্বাবলম্বী করা,
ভবিষ্যৎ যুদ্ধের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা,
মূল সমস্যাকে এপ্রোচ করা…

আচ্ছা ধরে নিলাম, এই যুদ্ধের অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রতিপক্ষ হামাস নিজেকে স্বাবলম্বী এবং ভবিষ্যত যুদ্ধের জন্য নিজেকে প্রস্তুত বলে মনে করে, তবে তাদের করনীয় কি?

দুর্বল যদি নিজেকে স্বাবলম্বী এবং ভবিষ্যৎ যুদ্ধের জন্য নিজেকে প্রস্তুত বলে মনে করে আর সেই ভবিষ্যৎ যুদ্ধটাই যদি বর্তমান হয়, তখন তাদের করণীয় কী?

কেউ যদি নিজেকে সে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত মনে করে, তবে তার করনীয় তাকে নিজেকেই ঠিক করতে হবে, কেননা যুদ্ধটা একান্তই তার নিজের, আর হ্যা, তাকে অবশ্যই তার করণীয় সম্বন্ধে সতর্ক হতে হবে, কেননা, সামান্য ভুল মারাত্মক পরিণতির কারণ হবে।

বর্তমান সময়ে, বিশেষ করে ২য় বিশ্বযুদ্ধের পরে লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন, সাধারণত কাছাকাছি বা এট লিস্ট পালটা জবাব দেবার সক্ষমতা রাখে এমন দেশসমূহ পরস্পরের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে লিপ্ত হয় না, আলোচনার টেবিলে তারা সকল সমস্যার সমাধান করে, কেননা তারা জানে যুদ্ধের পরিণতি কতটা ভয়াবহ হতে পারে, যেমনঃ যুক্তরাষ্ট্র- রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র- চীণ ইত্যাদি।

যেসকল ক্ষেত্রে এক পক্ষ তুলনামূলক অধিকতর দুর্বল সেখানেই আক্রমণ করা হয়, এর মূল উদ্দেশ্য একটাই, সেটা হচ্ছে প্রত্যেকটা যুদ্ধে বা সংঘর্ষে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ যতটা পারা যায় মিনিমাইজ করা।

আলোচ্য দুই পক্ষের মধ্যে, একটা পক্ষ (ইসরাইল) সংঘাতে তাদের ক্ষয়ক্ষতি মিনিমাইজ করার জন্য পদক্ষেপ (আয়রন ডোম) নিয়েছে, অপর পক্ষ নিয়েছে কিনা, সে আমার জানা নাই, আর সেই পক্ষ ক্ষয়ক্ষতি মিনিমাইজ করার জন্য যদি কোন পদক্ষেপ না নিয়ে থাকে তবে আমার দৃষ্টিতে সে প্রিপেয়ারড না।

আরেকটা বিষয়ে আলোকপাত না করলেই না; যুদ্ধ হয় দুটো রাষ্ট্রের মধ্যে, আলোচ্য ক্ষেত্রে সে যুদ্ধ হওয়ার কথা ফিলিস্তিন ও ইজরায়েলের মধ্যে, কিন্তু বর্তমান যে সংঘর্ষ চলছে, তা চলছে হামাস ও ইজরায়েলের মধ্যে। বর্তমানে ফিলিস্তিনে ক্ষমতায় আছে ফাতাহ এবং তারাই সারাবিশ্বে ফিলিস্তিনকে প্রতিনিধিত্ব করে এবং তারাই সারাবিশ্বে ফিলিস্তিনের বৈধ অথোরিটি বলে স্বীকৃত, সুতরাং, এখানে প্রশ্ন আসে হামাস কে ?

ধরুন, বাংলাদেশের সাথে ভারতের বিভিন্ন কনফ্লিক্টের জন্য ভারতের উলফা বা পশ্চিম বংগের বামেরা বাংলাদেশে হামলা চালাল, এর জন্য কি আমরা বলতে পারব ভারত বাংলাদেশে আক্রমণ করেছে, বা এই যুদ্ধটা ভারত-বাংলাদেশ যুদ্ধ। আমরা সেটা বলতে পারবনা, আমরা বড়জোর যেটা আন-অফিসিয়ালি বলতে পারব সে হচ্ছে, “ভারতের সায় না থাকলে উলফা হামলা চালাতে পারত না” অথবা “ভারত সরকারের ইন্ধনে উলফা এই হামলা চালিয়েছে”। ভারত বরারবরই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলছে।

আচ্ছা, ভারত কি এই হামলার দায়ভার নেবে?
কখনই না, তারা বরং উলফা গোষ্ঠীকে দমন করার চেষ্টা করবে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যখন তাজউদ্দীন আহমেদ ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্ধীরা গান্ধীর নিকট সাহায্যের জন্য যান, তখন ইন্ধীরা গান্ধী তাজউদ্দীন আহমেদকে প্রবাসী সরকার গঠনের পরামর্শ দেন, এই প্রবাসী সরকারকে সাহায্য করলে তা একটা বৈধ কাঠামোকে সাহায্য করা নির্দেশ করে, নইলে এই সাহায্যকে পাকিস্তান তাদের রাষ্ট্রীয় আভ্যন্তরীন বিষয়ে ভারতের হস্তক্ষেপ বলে প্রমাণ করতে পারত, তারা সে চেষ্টা করেছে বটে, কিন্তু প্রবাসী সরকার থাকায় পাকিস্তানের পক্ষে "মুক্তিযুদ্ধকে" পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ সমস্যা ও "মুক্তিবাহিনীকে" বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা ব্যর্থ হয়।

এবারে ফিলিস্তিনের দিকে আবার ফিরে যাই; রাষ্ট্র হিসেবে ফিলিস্তিনের যা কিছু অর্জন, যেমনঃ ১৩৫ টি দেশের স্বীকৃতি আদায়, জাতিসংঘের স্বীকৃতি, ২০০৫ এ গাজা থেকে ইসরায়েলী সেনা প্রত্যাহার, তা মূলত ফাতাহ এর নেতৃত্বে; আর হামাসের অর্জন মাঝে মাঝে কিছু মিসাইল ছুড়ে মারা, পরিণতিতে ইজরায়েলের ৫ জনের বিপরীতে ফিলিস্তিনের ১০০ জন এর প্রাণহানী।

একটা প্রশ্ন করি ফিলিস্তিনের সাথে হামাসের সম্পর্ক কেমন?
২০০৭ এ হামাস ফাতাহ ও ফাতাহ নিয়ন্ত্রিত পিএলও কে বিতাড়িত করে গাজার নিয়ন্ত্রন নেয়, আর আজ পর্যন্ত ফাতাহ- হামাস সংকট বিরাজমান।
স্বাধীনতা সংগ্রামই যেখানে সকলের মুখ্য উদেশ্য, সেখানে ফাতাহ রেখে হামাসকে আলাদা দল কেন গঠন করতে হল?

আমি আগেই বলেছি দুর্বল প্রতিপক্ষের করনীয় সম্বন্ধে, যখন প্রতিপক্ষ অনেক বেশী ক্ষমতাবান (আরব-ইসরাইল সংঘর্ষ ৪৮, ৫৬, ৬৭, ৭৩, ৮২ ও ২০০৬ এ ইসরাইল জয়ী হয়েছিল), ঠিক এরূপ পরিস্থিতিতে কার এপ্রোচটা সঠিক মনে হচ্ছে?

মোটের উপর হামাসের ভূমিকাটা কি?
আসলে হামাস কি একটা ন্যয়সংগত সংগ্রামকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে না, এই আন্দোলনের গ্রহণযোগ্যতা সারা বিশ্বের নিকট প্রশ্নবিদ্ধ করছে না?

ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস নিজেও মনে করেন, হামাসের মিসাইল হামলা বরং স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অগ্রগতিকে ব্যাহত করছে।


(ফিলিস্তিনে যা হচ্ছে, সে বিষয়ে আমরা সকলেই অবগত, এবং বরাবরের মতই আমি শোষিতের পক্ষে, সে মধ্যপ্রাচ্যে ফিলিস্তিন, ইয়েমেন, রোহিঙ্গা, কাশ্মীর, আফগানিস্তান, বাংলাদেশের নাসিরনগর, বিবাড়িয়া প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে; মোদ্দাকথা হচ্ছে যেখানেই মানবতা ও মানুষ বিপন্ন, সেখানেই আমই সেই বিপন্ন মানুষের পক্ষে, আর যুদ্ধের প্রচণ্ডরকম বিপক্ষে, যুদ্ধ পৃথিবীকে ভাল মন্দ যাই দিক না কেন, সাথে দেয় সীমাহীন ধ্বংস আর মৃত্যু।)

সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মে, ২০২১ সকাল ১১:২১
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পুরোনো ধর্মের সমালোচনা বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেই নতুন ধর্মের জন্ম

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:১৫

ইসলামের নবী মুহাম্মদকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তিথি সরকারকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে এক বছরের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে প্রবেশনে পাঠানোর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×