চিত্রঃ এ আই
সেদিনকার মত আলাপ শেষ, অফিসের সকলেই অতি স্বাভাবিকভাবে
মেহেদী সাহেবকে এই বিষয়ে কথা বলার জন্য অসন্তোষ প্রকাশ করল
যেহেতু, সে এই শাখার ইনচার্জ, এর ইম্প্যাক্ট আল্টিমেটলি সবার উপরেই পরবে।
উহার মাস দুয়েক পড়ে, বিভাগীয় আভ্যন্তরীন নিরীক্ষা বিষয়ক সভা
উপলক্ষে জেলা কার্যালয়ে মেহেদী সাহেবের গমন।
ডিজিএম এর রুম:
ডিজিএম: মেহেদী সাহেব, আপনি ঐদিন যে এক হিন্দু
ডাক্তারের পোস্ট ফেসবুকে শেয়ার করলেন...
অফিসার: ঐ ডাক্তার হিন্দু?
সে তো আমি খেয়াল করি নাই।
ডিজিএম: ওনার পোস্ট ছিল, হুজুরেরা বেশী বেশী বাচ্চা নিতে উৎসাহ দেয়,
এর সমালোচনা করে, রাইট।
অফিসার: রাইট স্যার, এই অধিক জনসংখ্যা আমাদের জন্য অভিশাপ বলেই
আমি ঐটা শেয়ার দিছিলাম, ঐ ডাক্তার হিন্দু বলে না।
ডিজিএমঃ এই যে ফেসবুকে আছে…
অফিসারঃ স্যার দেখাতে হবে না, আমি জানি আমি ওটা শেয়ার করেছিলাম।
ডিজিএমঃ আপনি একজন হিন্দু ডাক্তারের লেখা মুসলিমদের বিপক্ষে,
সেটা শেয়ার করলেন?
অফিসারঃ তার লেখাটা তো মুসলিমদের বিরুদ্ধে না,
ডিজিএমঃ আমি তো দেখলাম, আমি কি মিথ্যে বলছি?
অফিসারঃ তার মূল লেখাটা ছিল জনসংখ্যা বিস্ফোরণ নিয়ে,
অধিক সন্তান জন্মদান নিয়ে, কতিপয় ভেকধারী মোল্লা এইটারে প্রোমোট করছে,
সে এইটার কথা বলছে। সে একজন ডাক্তার,
তার প্রফেশনাল অবস্থান থেকে সে এইটা লিখছে।
ডিজিএমঃ সে কি তাদের হিন্দু ঠাকুরদের বিরুদ্ধে লিখছে?
অফিসারঃ সে যে আলাদাভাবে মোল্লাদের নিয়া লেখছে,
এইটা আমি আলাদা করে মার্ক করি নাই, আর হিন্দু ঠাকুরদের বিরুদ্ধে
লেখছে কিনা, সে জানা নাই।
ডিজিএমঃ এইখানে আপনার নিরপেক্ষতা কোথায় রইল?
অফিসারঃ লেখাটার মূল বিষয়, “জনসংখ্যার বৃদ্ধি”,
ধর্ম কখনোই ইস্যু ছিল না, সংগতকারণেই সেটা আমার ফোকাস ছিল না।
ডিজিএম: আপনি দেখি আজাহারি, ইব্রাহিম সাহেবকে নিয়া ও কি সব লিখছেন।
অফিসার: স্যার, তারা করোনা নিয়া যা বলছে আমি শুধু সেটুকুনই লিখেছি।
ডিজিএম: তারেক মনোয়ার কত জ্ঞানী একজন ব্যক্তি, জানেন সেটা আপনি। (চোখে মুখে প্রসংসা)
অফিসার: সে তো মিথ্যাবাদী, সে যেভাবে ইসলামের নামে মিথ্যাচার করে,
সেটা তো মারাত্মক অপরাধ।
ডিজিএমঃ তার অপরাধ নিয়ে আপনাকে লিখতে হবে না।
তাছাড়া, আপনি তো নামাজই পড়েন না, আপনি এই সব নিয়া কথা বলেন কেন?
(খুব রাগান্বিত ও উচ্চস্বরে, পুরো অফিস এখন শুনছে)
অফিসার: হ্যা, আমি নামাজ পড়ি না, তাই বলে এরা ইসলামের নামে যা খুশি তাই বলবে,
মিথ্যাচার করে যাবে, কিন্তু কিছু বলা যাবে না।
ডিজিএম: সে লাগলে আমরা বলব।
অফিসার: কিন্তু আপনাদেরকে তো মৌন দেখছি, বরং
আমি ইসলাম নিয়ে মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে বলায়, আপনি আমাকে থামাতে চাচ্ছেন।
বিভাগীয় নিরীক্ষা কর্মকর্তার আলোচনায় প্রবেশ,
এতক্ষণ পাশেই ছিলেন, শুনছিলেন।
বিনীকা: ঐ মিয়া, আপনি তো নামাজ ই পড়েন না,
আবার আইছেন, মাওলানাদের নিয়া কথা বলতে,
একজন নামাজী রিক্সাওয়ালা বলতে পারবে,
বাট আপনি বলতে পারেন না। (রাগত ও উত্তেজিত স্বরে)
অফিসার: মানে কি!
একজন অযোগ্য রিক্সাওয়ালা কি বলবে,
তার তো সেই জ্ঞান ই থাকার কথা না, আর আমি বলতে পারব না!
ডিজিএম: না, আপনি কথা বলবেন না, ও লিখবেন ন।
অফিসারঃ ব্যাপারটা এমন হয়ে যাচ্ছে না, একজন রিক্সাওয়ালা ব্যাংকিং সেবা
ও এর দুর্বলতা নিয়ে কথা বলবে, বাট একজন ব্যাংকার বলতে পারবে না!
ডিজিএমঃ না, আপনি বলতে পারবেন না। (হুমকির সুরে)
খানিক পরে, মেহেদী সাহেবের উপলব্ধি হল, ব্যাপারটা খুব বাজে পর্যায়ে পৌছে গেছে, খুব বাজে পর্যায়ে।
অফিসার: স্যার, এতক্ষণ আমি আপনাদের সাথে একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা করছিলাম,
বাট সেটা শেষ মুহূর্তে যেভাবে এস্কেলেট হইল,
এইটায় তো আমি এখন উদ্বিগ্ন ও নিরাপত্তাহীনতা ফিল করছি।
ডিজিএম: আপনি ফেসবুকে আর কিছুই লিখবেন না, কোথাও কিছু বলবেন না,
আপনাকে কেউই কিছুই বলবে না।
মেহেদী সাহেবকে কি কেউ কিছু বলেছিল?
জানেন কিছু আপনারা...
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ৯:৩৪