আমি আর পল এ্যালান তখন ছিলাম মাত্র কলেজ কিড। এই দুই জনে মিলে আমার ছোট্ট ঘরটিতে বানিয়ে ফেল্লাম প্রথম সফটওয়্যার যা মাইক্রোকমপিউটারে চলতে পারে। পল আমাকে একটি জনপ্রিয় গল্পের কথা বলেছিল; যাতে ছিল এমন একটি সময়ের কথা যখন প্রতিটি ঘরে ঘরে একটি করে কমপিউটার থাকবেই। আর তখনই আমরা সিদ্ধানত নিলাম আমাদের ভবিষ্যৎ নিমর্াণ করবো সফটওয়্যার দিয়েই। ব্যস, এভাবেই তৈরী হয়ে গেল মাইক্রোসফট। আমাদের কাজকর্ম ছিল একেবারেই সাধাসিধে, আমি আর পল; কোক আর পিজা ভালবাসতাম আর কাজ করতাম। কেউ আমাদের খুব একটা পাত্তাও দিত না। একমাত্র পলই ছিল আমার সহকমর্ী। কিনতু পরিস্থিতিটা আজ একটু যেন পাল্টে গেছে। যদিও এখন আমি পিজা আর কোকের পাগল তবে কাজ করি আমার 15,000 সহকমর্ীর সাথে। আজকাল প্রতিদিন হাজার হাজার ই-মেইল আসে আমার কাছে। কত্ত আজগুবি প্রশ্ন যে মানুষ করতে পারে। আমি কোন ছবি সবচেয়ে ভালবাসি?( শিন্ডলার্স লিস্ট !! নিশ্চয়ই) সব ইমেইলের জবাব যদি দিতে যাই তবে আমার দিন এভাবেই কেটে যাবে। তাই অনেক ইমেলেরই জবাব দেওয়া হয় না। তবুও সবার প্রশ্ন থেকেই যায়। এক দিন এক ছেলে আমাকে একটি অদ্ভুত প্রশ্ন করে ফেল্ল। যদিও অনেকের কাছে প্রশ্নটি এমন কোন দার্শণিক কথা বলে মনে নাও হতে পারে তবুও আমার মনে হয়, কথাটি সবাইকে জানিয়ে দেওয়াই দরকার। সে আমাকে বলেছিল; খুব কি দেরী হয়ে গেছে সফটওয়্যার ইন্ড্রাস্ট্রী তৈরী করার? আমিও কি সফটওয়্যার তৈরী করে আপনার মত ধনী হতে পারি না? এর উত্তর কি হতে পারে বলে আপনি মনে করেন? আমি সব সময় মনে করি; This is a great time to be in Software! আমি কখনই বলবো না তুমি আরেকটি মাইক্রোসফট বানিয়ে ফেলতে পারবে। কিনতু এটি সবসময়ই বলবো- তুমি এক কাজ কর, বছরে দুই মিলিয়িন কামিয়ে নিতে পার! বেশি না 200৳ দরে 10,000 কপি সফটওয়্যার বিক্রি করে তা কামিয়ে নিতে পার বছরে। ( বিশ্বাস নাও হতে পারে , কিনতু কথাটা একেবারে সত্যি!) ছোট সফটওয়্যার কোমপানীগুলো আমাকে সবসময় আনন্দ দেয়। তারা চালু হয় মাত্র দুই-একজন দিয়ে। হয়তো বা একটা ছেলে অথবা মেয়ে। তারা তাদের বন্ধুদের কাছে ডাকে, আর সাহায্য চায়। সাহায্যও তারা পেয়ে যায় সহজেই। তাদের বানানো সফটওয়্যারগুলোও আমাকে দারূণ আনন্দ দেয়। কারণ, এগুলো খুব চমৎকার হয়ে থাকে। তারা নিজেদের প্রোডাক্টের জন্য জান-প্রান দিয়ে খাটে। অবশেষে, তারা একজন কাস্টমার খুজে নেয়। পরবতর্ীতে তারা আরও কাস্টমার পায়। সফটওয়্যার তৈরী করতে হলে প্রথমেই স্ট্র্যাটেজী ঠিক করাটা বেশী দরকার। তুমি মাইক্রোসফট ওয়ার্ড বা পাওয়ার পয়েন্টের মত সফটওয়্যার তৈরী করবে না। কারণ; তারা আগের থেকেই অনেক শক্তিশালী। এর চেয়ে শক্তিশালী একই সফটওয়্যার বানানোর মত টাকাও তোমার নেই। তাই তোমরা বরং কিছু কাস্টমাইজ সফটওয়্যার বানানোর দিকে ঝুকে পড়তে পারো। যেমন বিশেষ কোমপানীর একাউন্ট সেকশনের সফটওয়্যার, মেডিসিন, ইনসু্যরেন্স আরও কত কি! অবশ্য এতেও অনেকে খুব একটা খুশি নাও হতে পারো। চাইতে পারো আরও বেশি। কিনতু আমার মতে সেটি স্মল ফরচুনের জন্য খুব রিস্কি হয়ে যেতে পারে। ভাবো তো, যখন মাইক্রোসফট ডস অপারেটিং সিস্টেম তৈরী করলো আইবিএম পিসির জন্য তখন কি ঘটেছিল? আজকাল ছেলে-মেয়েদের বাবা মায়েরা আমাকে প্রায়ই প্রশ্ন করে; কি ভাবে আমি আমার সনতানের ভবিষ্যৎ কমপিউটারে গড়ে তুলতে পারি। আমি উত্তর দিই, তাদের যতটুকু সম্ভব শিতি করে তুলুন। হাই-স্কুল ও কলেজের গন্ডি পার হতে দিন। তাদের শেখান কি করে শিখতে হয়? ক্যাথি ক্রিডল্যান্ড, একজন স্কুল শিকিা যিনি ওহিও স্টেটের একটি স্কুলে পড়ান। আমাকে অভিযোগ করে একটি চিঠি লিখেছেন। "তুমি তোমার হাই স্কুল লাইফ শেষ করোনি, কিনতু দুনিয়ার সবচেয়ে বড়লোক বনে গেছ। তাই আমার ছাত্ররা আজকাল আর পড়াশুনা ঠিক মত করতে চায় না। তারা পালিয়ে বিল গেইট্ হতে চায়।" আমার উত্তর ছিল সহজ আর একেবারেই স্ট্রেইট কাট, আমি তো হাই স্কুল পালাইনি। আমি তিন বছর হাভার্ডেও তো পড়েছিলাম এবং যখন পড়েছি তখন খুব ভাল করেই পড়েছি। তারপর একেবারে নিশ্চিত হয়েই পড়া ছেড়েছি। কিনতু এমন কি কোন সফল্য দেখেছ তুমি? যে কমপিউটারের দুনিয়ায় খুব সাফল্য পেয়েছে কিনতু মাত্র হাইস্কুল পাশ বা পালানো? আমি নিজেও শুনিনি। তাই তোমার ছাত্রদের ভাল কার পড়তে বল, আমার কাছে এমন অনেক ব্রিলিয়ান্ট কমপিউটারবিদ এসেছে যারা, ভাল কমপিউটার জানে কিনতু মাত্র স্কুলে পড়ে বা স্কুলের পড়াও শেষ করেনি। আমি তাদের মাত্র একটি কথাই বলেছি এবং সেটি হল- NO। আরও জানতে চাও? অবশ্য স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ই তোমাকে সব শিখিয়ে দেবে না। তোমাকে আরও জানতে হবে। লাইব্রেরী বা যে কেড তোমাকে জানতে সাহায্য করতেই পারে। প্রচুর জান এবং শেখ। সেটাই তোমাকে সাহায্য করবে। আরেক অভিভাবক আমাকে বলছে, আমার ছেলে শুধু কমপিউটারে A+ পায় কিনতু অন্য সব বিষয়ে তার মার্কিং প্রায় বলতে গেলে ফেল। আমি তাকে সতর্ক করে দিলাম। কারণ, এমনটি কখনই করা উচিত নয়। শুধু কমপিউটারের প্রতি ইন্টারেস্ট তার পৃথিবীকে ছোট করে দিচেছ। আরও অনেক কিছুই শেখার আছে। যা তার জীবনে অনেক কাজে লাগবে। কিনতু সে নিজেকে বঞ্চিত করছে। এটা অনুচিত। হাই-স্কুল বা কলেজে ভাল করার মা েঅবশ্য এই নয় যে তুমি পরবতর্ী জীবনেও ভাল করবে কিনতু তুমি যেখানে বিশাল ভ্যারাইটির সাবজেক্টকে জানার সুযোগটা পাচছ; তা তুমি নেবে না কেন? কেন তুমি শুধু কমপিউটারে তোমার জীবন ও জানাটাকে ছোট করে ফেলবে।তাই শেষ কথা হলো। প্রচুর জানতে চেষ্টা করো। আর কোক-পিজার কথা ভুলে যেও না। তারা আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। বিল গেইটস্ হতে; সত্যিই!! - আহমেদ শামসুল আরেফীন

Lecturer, Daffodil International University Dhaka, Bangladesh. Web :
Click This Link
N.B : This Article was First Published by Monthly Computer Barta. Reference : 1.http://www.microsoft.com/billgates/
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০০৬ রাত ১১:৪৯