somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প: নমাজ আমার হইল না আদায়

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কুদ্দুস মিঞা ফজর ওয়াক্তের সময়ই প্রতিদিন ওঠেন, ছোটবেলার অভ্যাস। তার বাবা যখন নামাজ পড়তে উঠতেন, তিনি কুদ্দুস মিঞাকেও টেনে তুলতেন তাঁর সাথে নামাজ পড়বার জন্য। সে সময় তার প্রচন্ড আলসেমী লাগত। কিন্তু পরে অভ্যাস হয়ে গেছে। এখন ভোরে না উঠলে তার শরীর ম্যাজ ম্যাজ করে। নামাজ শেষ করে তিনি বাহির বাড়ির বারান্দায় বসেন। আজ তেমন কোন কাজ নেই, তবে একবার উল্লাপাড়া যেতে হবে। সেটা তিনি গতরাতেই ভেবে রেখেছেন, দুপুরে খেয়েই রওনা হবেন; তাহলে সন্ধ্যা নাগাদ ফেরত আসা যাবে।

কুদ্দুস মিঞার তাতের কারবার। কারিগরেরা এসে কাজের আয়োজন শুরু করেছে। এখন সবই পাওয়ার লুম, আগের আমলের খটখটি নেই বললেই চলে। তবে কুদ্দুস মিঞা শখ করে দুটি খটখটি রেখে দিয়েছেন। ইচ্ছে হলে নিজে গিয়ে বসেন। বেশ মজা পান। তাতগুলো যখন খটখটি শব্দে চলে তিনি তুরীয় আনন্দ লাভ করেন।

জরিনা এর মধ্যে নাস্তার জন্য ডেকে যায়। তিনি ভেতরে চলে যান। নাস্তা সেরে তাত ঘরে যেয়ে মোসলেমের সাথে আগামী ডিজাইনগুলো নিয়ে আলাপ সেরে ড্রামগুলোর কাজে হাত লাগাতে বলে বেড়িয়ে যান।
বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যাবার সময় তিনি মেয়েকে জোরে ডেকে বলেন, এট্টু বাজার থিক্যা ঘুইরা আসতিছি। জরিনা মোবাইলটা হাতে নিয়ে তারাতারি দৌড়ে আসে। ক্যা, মুবাইল ফালায়া যাইতেছ্যাও ক্যা। তালি কিনিছ্যাও ক্যান? কুদ্দুস মিঞা একটু হেসে মোবাইলটা পকেটে রাখেন। এইসব যন্ত্রে তিনি অভ্যস্ত হয়ে ওঠেননি, চানও না তেমন একটা। বলেন, দেরী করব নানে; দুপুরে খায়ায় বারাবোনে, উল্লাপাড়া যাওয়া লাগবি। জরিনা কপট রাগে বলে তুমার কোন ঠিক-ঠিকানা আছে? কইতেছেও এখনি আসবোনে, দেখা গেল কোনে ডুব দিছ্যাও। কুদ্দুস মিঞা কথা বাড়ান না মেয়েরে সাথে। বেড়িয়ে যান বাজারের দিকে।

বাদাই বিলের দিকে থেকে ভালোই বাতাস উঠেছে। কুদ্দুস মিঞা আস্তে ধীরে হেটে বাজারের রাস্তা ধরেন। বাজারে এসে ঘোষালের দোকানে বসে চা দিতে বলেন। দোকানের চায়ে একটা আলাদা স্বাদ পাওয়া যায়; ভালোই লাগে।

চায়ে চুমুক দিতেই চোখে পড়ে করমের ছেলে হেটে আসছে। তিনি হাঁক ছাড়েন, ক্যারে ব্যাটা কোনে গেছিল্যাও? করমের ছেলে সালাম দিয়ে বলে, চাচামিঞ্যা কাশীনাথপুর থিক্যা আসতিছি। ঘোষালকে তিনি করমের ছেলেকে চা দিতে বলেন। বলেন, আইস্যাও, চা খাও। করমের ছেলে এসে কুদ্দুস মিঞার উল্টো দিকে বসে।

তিনি জিজ্ঞেস করেন, কাশীনাথপুর গেছিল্যা ক্যা?
চায়ে চুমুক দিয়ে করমের ছেলে কিছুক্ষণ বসে থাকে। তারপর বলে, পাবনা যাব মনে করছিল্যাম। মাক আনা লাগবি, মেলা দিন হইল বুর ওহেনে রইছে।
তা কি হলো? ফেরত আইসল্যা যে? গ্যালা না ক্যা?
করমের ছেলে বিরক্ত মুখে বলে, কি করব চাচামিঞ্যা, গাড়ি-ঘোড়া কিছুই চইলতেছে না; সব বন্ধ! কথা নাই বার্তা নাই, সব মনে কয় ষ্টাইক করিছে।
কুদ্দুস মিঞাও বিরক্তি ঝাড়েন। বলেন, ব্যাটা শালাগোরে কেউ তো কিছু কওয়ার নাই; যখন যার যা মনে কয়, কইর‍্যা বইস্যা থাকে। দেশে কি কোন আইন-কানুন আছে?

তারপরেই তার মনে হয় উল্লাপাড়া যাওয়ার কথা। জিজ্ঞেস করেন কিছুই কি চইলতেছে না? আমার তো উল্লাপাড়া যাওয়া দরকার আছিলো।
তা মনে কয় যাইবের পাইরবেননে। বেড়ার দিকে নছিমন যাইতেছে একটা-দুইট্যা; ভাইঙ্গা যাওয়া লাগবিনি মনে কয়।
তালি আর না বসি ব্যাটা। ভাবছিল্যাম দুপুরের পর যাব, কিন্তু এখনি ওঠা লাগবি। ঘোষলাকে টাকা দিয়ে দোকান থেকে বেড়িয়ে যান তিনি।

আমিনপুরের রাস্তা ধরে কাশীনাথপুর চলে আসেন। বাসষ্ট্যান্ডে মানুষের ভীড়। হঠাৎ গাড়ি-ঘোড়া বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপদে পড়েছে সবাই।

ফিলিং ষ্টেশনের কাছেই সুবল দাড়িয়ে আছে কপালে ভাজ ফেলে। কুদ্দুস মিঞা কাছে যেয়ে ডাকেন, তুমি এয়ানে কি কইরতেছ্যাও? সুবল কুদ্দুস মিঞাকে দেখে একটা স্বস্তির হাসি দেয়। বলে, আর কয়ো না; কাইল কাজীরহাট আইছিল্যাম। আইস্যা তো আটকায়া গেলাম মনে কয়।

তুমি কনে যাইব্যা, শাজাদপুর? সুবল হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ে। বলে, যাওয়া তো লাগবিই। দোকানে আইজ কেউ নাই; আমি না গেলি বিক্রি-বাট্টা বন্ধ। আমাগেরোতো কইরা খাওয়া লাগে; পায়ের উপর পা তুইল্যা খাওয়ার যোগার আমাগোরে নাই। শুইনল্যাম তুমি নাকি কারবার আরও বড় কইতেছ্যাও।
২ডা নতুন মেশিন বসাইছি। আরও কয়ডার ইচ্ছ্যা আছে। তুমি শাজাদপুর গেলি ওই পর্যন্ত চল এক সাথিই যাই।
কিন্তু কিছুই তো দেখত্যাছি ন্যা! নছিমন যা আসে, সব মাছির মতন ছাইক্যা ধরতিছে।
খাড়াও একটু, ভীর কমবিনি, কুদ্দুস মিঞা যেন নিজেই নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। চল বইস্যা চা খাই। দুইজনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই চা খায়, বসার জায়গা পাওয়া যায় না। দুই জনের কপালেই চিন্তার রেখা গভীর হয়। দু-একটা মালটানা ভ্যান দেখা যাচ্ছে, তবে মালের বদলে মানুষে বোঝাই!

অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর একটা নছিমন পাওয়া যায়, ততক্ষণে ভীরও খানিকটা কমে গিয়েছে। কুদ্দুস মিঞা দৌড়ে যেয়ে উঠে পড়েন, কিন্তু সুবলের আর জায়গা হয় না। সুবল বলে, তুমি যাও, আমি দেখতিছি কি করা যায়। না হলি কাজীরহাট ফেরত যাবনে। সময় পালি আমার গদিত আইসো দিন দুই বাদে। কুদ্দুস মিঞা মাথা নাড়েন।

নছিমন ছেড়ে দেয়। বোঝাই যাত্রী। সবাই ড্রাইভারকে নানান পরামর্শ দিচ্ছে দেখে-শুনে যাবার জন্য। এই বাহনের কোন নিরাপত্তা নেই; একটু এদিক সেদিক হলেই সোজা খাদে!

শহীদনগর আসতেই যোহরের আজান পড়ে যায়। কুদ্দুস মিঞা ঠিক করেন এখানে নামাজ আদায় করেই আবার রওনা দেবেন, কিছু না পাওয়া গেলে মাসুমদিয়া ফেরত যাবেন। তিনি নেমে যান।

নামাজ শেষ করে রাস্তায় দাড়াতেই একটা নছিমন পেয়ে যান তিনি। কুদ্দুস মিঞা তাতে উঠে বসেন। যাত্রীরা হঠাৎ এই বিপত্তির তালাশে ব্যস্ত। তিনি বুঝতে পারেন এখন অবধি কোন কারণ খুঁজে পাওয়া যায় নি। যে দেশে জলজ্যান্ত মানুষ হারিয়ে যায়, খুঁজে পাওয়া যায় না, সেখানে এই সামান্য বিপত্তির কারণ অনুসন্ধান অনভিপ্রেত মনে হয় তার।

সদা ব্যস্ত ঢাকা-পাবনা মহাসড়কে নছিমনের ভটভট শব্দ ছাড়া আর কোন শব্দ নেই। রাস্তার উপরে শুকোতে দেওয়া ধানের উপর শালিকের ব্যস্ত পদচারণা। এছাড়া আর কোন বৈচিত্র নেই এই যাত্রায়।

মহিষাগোলা পার হয়ে পুন্ডুরিয়ার দিকে আসতেই কাগেশ্বরীর গন্ধ নাকে লাগে কুদ্দুস মিঞার। নদীর গন্ধে তার উৎফুল্ল বোধ হয়। খাড়া সূর্যের নীচে ছাদবিহীন নছিমনে বসেও তিনি উপভোগ করেন সেই গন্ধ। নদীর পাড়ের মানুষ তিনি, আত্রাইয়ের পাশেই তার বাড়ি।

নছিমন কাগেশ্বরীর উপর নতুন ব্রীজ পার হতেই স্লোগানের শব্দ ভেসে আসে। দূর থেকেই দেখা যায় পুন্ডূরিয়া বাজারের দিক থেকে একটা ছোটখাট মিছিল আসছে চাকলা বাসষ্ট্যান্ডের দিকে। নছিমন আরও এগিয়ে গেলে বোঝা যায় চাকলার দিক থেকেও একটা মিছিল আসছে।। যাত্রীদের মধ্যে অসহায় চাঞ্চল্য দেখা যায়। ড্রাইভারও কিছুটা ইতস্তঃত করে সোজা টান দেয়। ইতিমধ্যে মিছিলকারীরা শ্লোগানে শ্লোগানে মহাসড়কের অনৈতিক নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে দেয়। হঠাৎ করেই মিছিলকারীদের ভেতর কর্মচাঞ্চল্য বৃদ্ধি পায় এবং বোঝা যায় তারা বিবাদমান প্রতিপক্ষ। এর সত্যতা প্রমাণে চুম্বকের বিপরীত মেরুর ন্যায় একে অন্যের দিকে যুদ্ধংদেহী ভঙ্গীতে এগিয়ে আসে।

ঘটনার আকস্মিকতায় যাত্রীরা সবাই হকচকিয়ে যায়। ততক্ষণে নছিমন দুই বিবাদমান দলের মাঝে এসে পড়েছে। যাত্রীরা ড্রাইভারের চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করে তাকে গতি বাড়াতে বলে। বিবাদমান দলগুলিও তাদের কর্মযজ্ঞের গতি বাড়িয়ে দেয় এবং বিদ্যুতগতিতে একে অন্যের দিকে ইট-পাটকেল ছুড়ে মারে। কুদ্দুস মিঞা নদীর গন্ধে অবগাহন শেষ না করেই বাস্তব বর্তমানে এসে উপস্থিত হন এবং অসহায় বোধ করেন।

একজন যাত্রী ড্রাইভ্রারকে উদ্দেশ্য করে বলে, শালার ব্যাটা শালা, এক্সেলেটরে চাপ দে, এক্সেলেটরে চাপ দে, তারাতারি যা।

শুন্যে নিক্ষিপ্ত ইটগুলোও যাত্রীদের মনোভাব বুঝতে পারে! তারাও তাদের যে উদ্দেশ্যে নিক্ষেপ করা হয়েছে সেই উদ্দেশ্য হাসিল করতে তড়িৎ নীচে নেমে আসে। এর কোন একটা কুদ্দুস মিঞার মাথায় আঘাত করে তাকে চলন্ত নছিমন থেকে ফেলে দেয়। অন্য যাত্রীদের কেউ খেয়াল করে না যে কেউ একজন তাদের মাঝে নেই।

যেভাবে হঠাৎ শুরু হয়েছিল, ঠিক সেভাবেই হঠাৎ সবকিছু থেমে যায়। নছিমন ততক্ষণে অনেক দূর চলে গেছে। শালিকগুলো আবার শুকোতে দেওয়া ধানে ফেরত এসেছে। কাগেশ্বরী পুনরায় তার গন্ধ রাস্তার পাশের ঢালে পড়ে থাকা কুদ্দুস মিঞার নাকে পৌছে দিতে শুরু করেছে, যেন তিনি তার অবগাহন সম্পূর্ণ করতে পারেন!

***

রাত্রির প্রথম প্রহর শেষ না হতেই মোবারক মিঞার বাড়িতে সবাই জেগে ওঠে। চারিদিকে ঘুঁটঘুঁটে অন্ধকার। শুধু মোবারক মিঞার বাড়িতেই দুটো কুপির আলো জ্বলছে। বাহির বাড়ির উঠোনে একটা গরুর গাড়ি দাড়িয়ে আছে। মোবারক মিঞা ঈষৎ চিন্তিত; ফজর ওয়াক্তের আগেই উল্লাপাড়া পৌছুতে হবে, নাহলে ট্রেন ফেল।

মোবারক মিঞা সবাইকে তাগাদা দেন। বাড়ির কামলা মোহামকে ডেকে বলেন, দ্যাখছে কুদ্দুস উইঠছে না? দেরী হয়্যা যাইতেছে। গলা উচু করে ভিতর বাড়িতে আওয়াজ দ্যান, ক্যারে কুদ্দুসের মা, হইল নাকি তোমাগোরে?

কুদ্দুস কাচা ঘুম থেকে উঠে চোখ কচলায়। কাচা ঘুম থেকে উঠলেও তার বিরক্তি নাই। আজ সে প্রথম ট্রেনে চড়বে। সে খুব আগ্রহ বোধ করে এবং কলপাড়ে গিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে তৈরী হয়ে নেয়।

সবাই তৈরী হলে বিদায়-আদায় নিয়ে মোবারক মিঞারা গরুর গাড়িতে উঠে বসেন। মোবারক মিঞা মোহামকে গাড়ি ছাড়তে বলেন। বিসমিল্লাহ বলে মোহাম গরুগুলোকে তাড়া দেয়, হে হ্যাট হ্যাট। গরুগুলো অনাগ্রহ সত্ত্বেও পা তোলে। ক্যাচ কোচ শব্দে গাড়ি রওনা হয়।

***

কুদ্দুস মিঞা বোঝাবার চেষ্টা করে সে কোথায় আছে। মাথার প্রচন্ড যন্ত্রণায় তার সবকিছু তালগোল পাকিয়ে যায়। মাটিতে পড়ে থাকা অবস্থায় সে পা ফেলে হাটতে চেষ্টা করে। ঘোরের মাঝে থেকে সে উঠে আসতে চায়। জরিনার কথা মনে হয়। মেয়েটাকে ডাকলে কেমন হয়? ঠোঁট নেড়ে সে বার দুয়েক জরিনাকে ডাকে, কিন্তু ঠোঁটদুটোই নড়ে শুধু কোন শব্দ বের হয় না। মাথার যন্ত্রণার কারণটাও সে বোঝে না। তার চারিদিকে সব কিছু অন্ধকার। তার খটকা লাগে। সে চোখ খুলে তাকাতে চায়। কুদ্দুস মিঞা নিজেকে খোলা আকাশের নীচে ঢালের উপর খুঁজে পান! মাথার যন্ত্রণাটা তাকে প্রচন্ডভাবে ছেকে ধরে যখন প্রকান্ড সূর্যটা তার চোখে সমস্ত আলো ঢেলে দেয় চারিদিকের অন্ধকার দূর করবার জন্য।

***

গরুর গাড়ি আস্তে-ধীরে এগিয়ে চলে। বালক কুদ্দুস অবাক বিস্ময়ে রাতের আধারের মাঝেই সবকিছু আবিষ্কার করতে চায়। তার চোখ পড়ে মাটির রাস্তার দু’পাশের ঝোপঝাড়ের মাঝে জ্বলজ্বলে জোড়া আলোগুলোর দিকে। সে ভয় পায়। জিজ্ঞেস করে, অগুলান কি বাজান? মোবারক মিঞা ছেলেকে অভয় দেন, শিয়্যাল; ডরের কিছু নাই।

কুদ্দুস ছাউনির ভিতর থেকেই ইতিউতি দেখবার চেষ্টা করে তার পরিচিত কিছু পাওয়া যায় কিনা/ রাতের আধারে জোনাকিগুলো ছাড়া আর কিছুরই সে ভাজ পায় না।
সে আবার জিজ্ঞেস করে, আমরা এহন কনে?
তালগাছি চইলা আসছি।
তালগাছি ক্যা? আমরা কি খালার ওনে যাইতেছি? ট্রেনে চড়ব না?
মোবারক মিঞা হেসে বলেন, এই পথেই যাওয়া লাগবি। উল্লাপাড়া সামনেই।

গরুর গাড়ির হালকা দুলুনি কুদ্দুসের চোখে ঘুম নিয়ে আসে।

***

কোথাও মৃদু গুঞ্জন হচ্ছে। কুদ্দুস মিঞার কানে থেকে থেকে গুঞ্জনের শব্দ ভেসে আসে। তিনি গভীর ঘুম থেকে উঠে আসবার চেষ্টা করেন। শব্দের উৎসটা ধরতে পারেন না। তিনি আবার চোখ খুলে তাকাতে চেষ্টা করেন। তার মনে হয় দিনের আলো মরে গেছে। আলোটা অনেক সহনীয়, কিন্তু মাথার যন্ত্রণাটা প্রচন্ডভাবেই আছে। তিনি পাশ ফিরে তাকাতে চেষ্টা করেন। তার মনে হল কালচে একটা স্রোতের ধারা গড়িয়ে গেছে। বেশ কিছু মাছিও ওড়াওড়ি করছে। তবে কি মাছিগুলোই গুঞ্জণ করছে? তিনি আবার গুঞ্জণটা শুনতে পান। শব্দের উৎসের দিকে হাত বাড়াতে চান, কিন্ত পারেন না।

কাগেশ্বরীর তীরে সন্ধ্যা নামতে শুরু করেছে। আকাশে রঙের খেলা দেখিয়ে সূর্য বিদায় নিচ্ছে। কুদ্দুস মিঞার নামাজের কথা মনে হয়। কিন্তু বুঝতে পারেন না এটা কোন ওয়াক্ত, ফজর না মাগরিব? পাখির ডাকও তার কানে আসে। ভাবেন ফজর ওয়াক্ত হয়ে এল! তার ঘুমের ঘোরটা ভাংছে না কেন? বেঘোর কুদ্দুস মিঞার কান আজানের শব্দ খোঁজে!

***

গরুর গাড়ির দুলুনি থেমে গেলে কুদ্দুসের ঘুম ভেঙ্গে যায়। প্লাটফর্মের হালকা আলোয় দেখা যায় ‘উল্লাপাড়া ষ্টেশন’। কুদ্দুসের তর সয় না। মোবারক মিঞা মোহামকে তাড়া দেন মালপত্র নিয়ে প্লাটফর্মে তোলার জন্য। ট্রেন আসার সময় হয়ে গেছে। প্লাটফর্মে ব্যস্ততা দেখা যায়। দূর থেকে ট্রেনের হুইসেলের শব্দ শোনা যায়।

ষ্টেশনের পাশের একটা ছাপড়া মসজিদে মুয়াজ্জিন ফজর ওয়াক্তের আজানের প্রস্তুতি নিয়ে পশ্চিম দিকে মুখ করে দাড়ান।

বালক কুদ্দুস তার আসন্ন যাত্রার জন্য আগ্রহ নিয়ে প্লাটফর্মে অপেক্ষা করে।



‘নমাজ আমার হইল না আদায়’
সিঙ্গাপুর।
রাত্রি ২:২৫; ফেব্রুয়ারী ১৬, ২০১৪ (সমাপন)
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১:১৭
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×