পাখি বিত্তান্ত
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
পাখি বা পক্ষী নিতান্তই একটি নিরীহ এবং নির্দোষ প্রানী। কালে কালে এর সৌন্দর্য কবি এবং প্রেমিক-প্রেমিকাকে করেছে বিমোহিত। কবি-বাউল কত শত কবিতা এবং গান রচনা করেছেন তার ইয়ত্ত্বা নেই এবং গুণে শেষ করা যাবে না। পাখির সৌন্দর্যের জন্যই মানুষ একে খোলা আকাশ থেকে নামিয়ে নিয়ে এসে খাঁচায় পুরে নাম দিয়েছে কেজ বার্ড (cage bird)! কিন্তু কে জানত পাখি মানুষের উপর এত বড় প্রতিশোধ নেবে তাকে চৌদ্দ শিকের ভেতর পাঠিয়ে!
যাই হোক, আমরা বানিয়েছি 'বার্ড ওয়াচিং ক্লাব', হয়েছি পক্ষী বিশারদ, পড়েছি কাব্যগ্রন্থ 'পাখির জন্য শোক', 'আগুন পাখি' আরও কত কি? কিন্তু তাকে তুষ্ট করার জন্য যত যাই করি, পাখি বোধ করি তাকে খাঁচায় পুরে ফেলা হেলা-ফেলাভাবে নেয় নি। তাই রাগ মনের গভীরে পুষে রেখেছিল।
আর মানুষেরও চাইবার শেষ নেই। শুধু চোখের ক্ষুধা এবং মনের ক্ষুধা মেটালেই চলবে না, তার রয়েছে জঠরের জ্বালা। তাই একদিন পাখি হাড়িতেও চড়ল। নিত্যদিনের হাঁস -মুরগী তো আছেই, সাথে যোগ হল কোয়েল, মৌসুমী পরিযায়ী পাখি। দামী হোটেলে গিয়ে আমরা খেতে শুরু করলাম 'Balinese Roast Duck', 'Bird Nest Soup'! পাখি দিয়েই তৈরী হয়ে গেল বিশাল ইন্ডাষ্ট্রি। অল্প-বিস্তর অনেকেই ভালো ব্যবসা করলেন; আবার কেউ বার্ড ফ্লুর কবলে পড়ে সব খোয়ালেন। কিন্তু যাকে চড়িয়েছি হাড়িতে, তার কি রাগ যায় শুধু আড়িতে?
এখানে থামলেও চলত। কিন্তু না, মানুষের সব নিত্য নতুন চাহিদা। তাই কেউ গান-বাজনার মত পরিবেশক্ষয়ী দিকে না গিয়ে গায়ক পাখি কিনে পুষতে শুরু করলেন। ঈদের আনন্দে যোগ হল নাটক 'সব পাখি ঘরে ফেরে না'; যেমনটা গেয়েছেন সামিনা নবী 'ফেরারী পাখিরা কুলায় ফেরে না'। তাই তিনি তাদের ডাকতে নিষেধ করেছেন।
কিন্তু মানুষ তা শুনবে কেন? যে পাখিকে তারা এতভাবে ব্যবহার করেছে, তার পালক দিয়ে লিখেছে, বালিশ বানিয়েছে, ঘর সাজিয়েছে, গোশত পাকিয়ে উদর পূর্ণ করেছে, ব্যবসা করেছে, সৌন্দর্য দিয়ে চোখের তৃপ্তি মিটিয়েছে, গান শুনে আত্মার প্রশান্তি এনেছে, কবিতা ও গানে চিন্তার খোরাক যুগিয়েছে, তাকে গায়ে না চড়ালে হয়!
তো কি করা হল? তাকে গায়ে চড়ান হল। আর গায়ে চড়াতে গিয়েই বাধল যত বাগড়া। প্রেমিকা প্রেমিকের কাছে তাকে চায়; আর তাকে গায়ে চড়াতে না পেরে করে আত্মহত্যা, বউ চলে যায় বাপের বাড়ি...হেন কান্ড নেই যা ঘটল না।
কিন্তু কি সেই ঘটনা যার জন্য এত কিছু? না, তেমন কিছু না। পাখিকে শুধু গায়ে চড়িয়ে নাম দেওয়া হল 'পাখি ড্রেস'! পাখিও পেল মওকা। বলল এইবার প্রতশোধের পালা। আমরা অবশ্য শুনতে পাইনি, তাই সাবধান হতে পারিনি। কিন্তু যা হবার তাই হল। 'চোখ গেল' পাখির নামের মত কি এক কাগুজে আইনের পাল্লায় পড়ে মানুষের নাশ হল। তার মান-ইজ্জত সব গেল। ফলাফল বার্ডস সিনেমার মতই ভয়াভহ। যাই হোক ঠাকুরের তোতা পাখির মত শেষ পর্যন্ত মানষের শিক্ষা পূর্ণ হল, তাই এখন শুধুই খস খস শব্দ!
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
একাত্তরের এই দিনে
শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন
হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে
তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না
সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন
লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা
ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।
মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন
জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না
নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন