somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রসঙ্গ ঃ অমর একুশে!! মাতৃভাষা-প্রেম তথা পুরনো কাসুন্দি ।

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
পুরনো কাসুন্দি :::




যদি কথিত অত্যাধুনিক বাঙালী বাবুর সম্মুখে গর্ব করে না বলা যায় জনাব,কেমন আছেন?। তাহলে, অতুলপ্রসাদের মোদের গরব -মোদের আশা মুখস্থ করে কী হবে? যদি শিক্ষক মশাই বর্ণ পরিচয় করিয়ে দেন এভাবে, জ-বইরকাজ্জ,-ঞ-নিঅ, ন-দন্তান্ন, শ-তালেবাশ্য, ষ-মদিনাশ্য তাহলে বর্ণের বিকৃত উচ্চারণ শিখে লাভটা কী হবে? যদি বাঙলাভাষী প্রত্যেক বিদ্যার্থীর কাছে বাঙলা একাডেমীর ব্যবহারিক বাঙলা অভিধান না থাকে, তাহলে, বাঙলা একাডেমী দিয়ে কি হবে? যদি বাঙলা মায়ের সন্তান বিদেশ বিভূঁয়ে মাতৃভাষার চর্চা না করে, তাহলে, জাতিসংঘ ভবনের সম্মুখে ভাষা শহিদদের ভাস্কর্য দিয়ে কী হবে? যদি বঙ্গভাষীর দেশেই অলিখিতভাবে বাঙলা ভাষা দ্বিতীয় হয়,তাহলে, সিয়েরা লিওনের সাথে বাংলাদেশের ভিন্নতা কী হবে? যদি প্রমথ চৌধুরীর ভাষায়,কাব্যের ঝুমঝুমি, বিজ্ঞানের চুষিকাঠি,দর্শনের বেলুন,রাজনীতির রাঙালাঠি,ইতিহাসের ন্যাকড়ার পুতুল,নীতির টিনের ভেঁপু, ধর্মের জয়ঢাক -মার্কা পুস্তকাদিতে বইমেলা ভরপুর থাকে, তাহলে, মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলা দিয়ে লাভটা কী হবে? যদি বছরজুড়ে শহিদমিনারে উন্মার্গগামী বেহায়াদের বেলেল্লাপনা নিত্যদিনের চিত্র হয়,নোংরা আবর্জনায় অপরিচ্ছন্ন থাকে,তাহলে, ৮ ফাল্গুন শহিদমিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে পবিত্রতা কী হবে? যদি বঙ্গভাষী বুদ্ধিজীবীর মরদেহে শহিদমিনার কলঙ্কিত হয়,তাহলে, বাঙলাভাষী বুদ্ধিজীবী দিয়ে কাজটা কী হবে? যদি হিজাব পরিহিতা মুসলিম রমণীর আগমনে শহিদমিনার অপবিত্র হয়,তাহলে,হিজাববিহীন তথাকথিত অভিনেত্রীর শহিদমিনারে পদচারণায় ভাষা-প্রেম উপচে পড়লেই কী হবে? যদি গ্রাম্য মানুষের আঞ্চলিক বাঙলা শুনে, শহুরেদের নাসিকা কুঞ্চিত হয়,তাহলে, শহুরে মানুষের অ-আ-ক-খ মার্কা উত্তরীয় গায়ে জড়িয়ে কী হবে? যদি কুরানের ভাষা (আমার বহু সৃষ্টির মাঝে এটাও একটা সৃষ্টি যে, আমি বহু রঙের মানুষ ও বহু ভাষা সৃষ্টি করেছি। সূরা রুমঃ২২) এই হয়, তাহলে, জন্ম ধর্মান্ধ নামকাওয়াস্তে বাঙলাভাষী আলেম দিয়ে কী হবে? যদি ভাষা দিবস ইংরেজি ক্যালেন্ডারানুযায়ি একুশে ফেব্রুয়ারি পালিত হয়,তাহলে, বাঙলা বর্ষপঞ্জীতে আটই ফাল্গুন রেখে কাজটা কী হবে? যদি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মানবিক শাখায় বাঙলা বিষয়ই না থাকে,তাহলে, বাঙলা ভাষার সম্মাননাশ ছাড়া কী হবে?

যদি ফরাশিরা, লেখ্য ভাষায় অপ্রয়োজনীয় বিদেশী শব্দের ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ আইন করতে পারে,তাহলে, এমন একটি আইন বাঙলা ভাষার সুরক্ষার জন্য করলে ক্ষতি কী হবে? যদি বাঙলা ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপক হয়েও ধর্মানুভূতিতে আঘাত হানে,তাহলে, এই কুলাঙ্গার অধ্যাপক দিয়ে বাঙলা ভাষার উন্নয়ন কী হবে? যদি অদ্যাবধি রন্ধনগৃহ থেকে বঙ্গভবন পর্যন্ত ভুল বাঙলার চর্চা হয়,তাহলে, মুনীর চৌধুরীর নাটক"কবর"দিয়ে কী হবে? যদি শিক্ষিত আহাম্মক, মূঢ় ও নির্লজ্জের মত বলে ইংরেজি অপেক্ষা বাঙলা ভাষা কঠিন। তাহলে, ঐ শিক্ষিতের মাথায় থুথু নিক্ষেপ করলে কী হবে? যদি বিশ্বের ছয় হাজার ষাট বা তার অধিক ভাষার প্রতি, সর্বোচ্চ সম্মান না দেখাতে পারি,তাহলে, মাতৃভাষা বাঙলার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করলেই কী হবে? যদি পৃথিবীর একটি জাতিই ভাষার জন্য শহিদ হতে পারে,আবার সেই জাতির কাছেই মাতৃভাষা উপেক্ষিত হয়। তাহলে সেই জাতির সম্মানার্থে "আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস" বিশ্ববাসী পালন করলেই কী হবে? যদি কবি,সাহিত্যিক,প্রাবন্ধিক,গল্পকার, বিশ্লেষক, গবেষক, সমালোচক, লেখক সকলেই অপ্রয়োজনীয় বিদেশী শব্দে বাঙলা ভাষাকে বিক্ষিপ্ত করে।তাহলে, মাইকেল মধুসূদন দত্তের বঙ্গ-ভাষা পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হলেই কী হবে? যদি আজও আমাদের মন-মননে বাঙলা উপেক্ষা করে পরভাষাপ্রীতি থাকে, তাহলে, আব্দুল হাকীমের"যে সব বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী। সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।। "এই অমূল্য প্রবাদতুল্য পঙক্তি আমাদের থাকলেই কী হবে? যদি তিরিশ লক্ষ শহয়ীদের রক্তেমাখা ভূখন্ডে রক্ত-শপথ নিতে ব্যর্থ হই। স্বদেশপ্রীতি অন্তরলোকে জাগাতে নিশ্চেষ্ট থাকি।তাহলে, বিশ্বে বাঙলা ভাষার অবস্থান ৭ম,ভাষাভাষীর দিক থেকে ৪র্থ,২০৫০ সালে ১৪-২৫ বছর বয়সী ৩১কোটি ৬০ লাখ লোক কথা বলবে বাঙলা ভাষায়! এই প্রণোদনা মূলক পরিসংখ্যান দিয়ে কী হবে?

আমাদের বাঙলা ভাষার ভাণ্ডার অত্যন্ত সুবিশাল ও সমৃদ্ধ, আর সাহিত্যের কলেবরও অনেক বিস্তৃত। তা সত্ত্বেও আমাদের পরভাষা-নির্ভরতা, মাতৃভাষায় শৈথিল্য প্রদর্শনের কারনে শহিদদের পবিত্র রক্তে সিক্ত বাঙলা ভাষা আজ চরম লাঞ্ছিত, অবহেলিত। যা আমাদের চরম ঔদাসিন্যতার বিষময় ফল। এখনও যদি আমাদের অতীত তিক্ত অভিজ্ঞতার চর্বিতচর্বণ ভাষার প্রশ্নে হয়,তাহলে এর ভবিষ্যৎ ভয়াবহ পরিণতি বিবেকবান মানুষের অনুভূতি-সাপেক্ষে হৃদয়াঙ্গম করতে হবে,তর্ক-সাপেক্ষে নয়। বড্ড বেশী দেরী হলেও, আজ দৃপ্ত শপথ নিতে হবে মাতৃভাষার মমত্ববোধ পুরোমাত্রায় জাগ্রত করার


মুল: আল আমীন ইবনে শাফিক
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৩৭
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিতর্ক করার চেয়ে আড্ডা দেয়া উত্তম

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০১ লা জুন, ২০২৪ রাত ১১:২৬

আসলে ব্লগে রাজনৈতিক, ধর্মীয় ইত্যাদি বিতর্কের চেয়ে স্রেফ আড্ডা দেয়া উত্তম। আড্ডার কারণে ব্লগারদের সাথে ব্লগারদের সৌহার্দ তৈরি হয়। সম্পর্ক সহজ না হলে আপনি আপনার মতবাদ কাউকে গেলাতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে প্রাণ ফিরে এসেছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০১ লা জুন, ২০২৪ রাত ১১:৩৪



ভেবেছিলাম রাজিবের অনুপস্হিতিতে সামু রক্তহীনতায় ভুগবে; যাক, ব্লগে অনেকের লেখা আসছে, ভালো ও ইন্টারেষ্টিং বিষয়ের উপর লেখা আসছে; পড়ে আনন্দ পাচ্ছি!

সবার আগে ব্লগার নীল আকাশকে ধন্যবাদ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙালি নারীর কাছে

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০২ রা জুন, ২০২৪ রাত ১২:৪৬

পরনে আজানুলম্বিত চিকন সুতোর শাড়ি, সবুজ জমিনের পরতে পরতে কবিতারা জড়িয়ে আছে বিশুদ্ধ মাদকতা নিয়ে, গোধূলির আলোয় হেঁটে যায় নিজ্‌ঝুম শস্যক্ষেতের ঘাসপাঁপড়ির আল ধরে, অতিধীর সুরের লয়ে, সুনিপুণ ছন্দে। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন পুরুষ হারানোর গল্প

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০২ রা জুন, ২০২৪ রাত ৩:২৮



একজন পুরুষ মন খারাপ করে
খোলা মাঠে শুয়ে রাতের আকাশ দেখছিল।
হঠাৎ হঠাৎ ক্ষতবিক্ষত চাঁদ
অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছিল মেঘের আড়ালে।
মাঝে মাঝে পুরুষটির চোখ দিয়ে
কোনো এক কষ্টের জল গড়িয়ে পড়ছিল সবুজ ঘাসের উপর।
চোখের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসেন ইক্টু ঘুরাঘুরি করি.... :-B

লিখেছেন সোহানী, ০২ রা জুন, ২০২৪ সকাল ৯:২৩

এক কসাইয়ের লাশ আরেক কসাই কিভাবে কিমা বানাইলো কিংবা কত বিলিয়ন ট্যাকা টুকা লইয়া সাবেক আইজি সাব ভাগছে ওইগুলা নিয়া মাথা গরম কইরা কুনু লাভ নাইরে... আদার ব্যাপারীর জাহাজের খবরের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×