(এই লেখাগুলি একান্তই আমার ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা)
২০০২ সালের কথা।আমি তখনো চলচিত্র পরিচালনায় আসিনি।কিন্তু বাবার শুটিং স্পট থাকার সুবাধে প্রায়শই চলচিত্রের বিভিন্ন লোকেদের সাথে উঠাবসা করতাম।প্রায় সময় সেখানে বিভিন্ন শুটিং ইউনিট আসত,শুটিং করে আবার চলেও যেত।উল্লেখ্য,খাগড়াছড়ি তে তখন শুধুমাত্র একটাই শুটিং স্পট ছিল,সিকদার শুটিং স্পট,খাগড়াছড়ি শহর থেকে আরেকটু আগে,আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র সংলগ্ন।এখনো আছে,তবে এখন পিকনিক স্পট হিসেবেই জনপ্রিয়।আমি আর আমাদের ম্যানেজার, দুই জনেই এটা পরিচালনা করতাম।
একসময় আমাকে সিনেমায় অভিনয়ের নেশায় পেয়ে বসে।হোক সেটা অতি সাধারন চরিত্র,কিন্তু অভিনয় আমাকে করতেই হবে।বিভিন্ন নায়ক,নায়িকা,পরিচালক এমনকি ক্যামেরা ম্যান থেকে শুরু করে কস্টিউমের দায়িত্ব পালনকারী লোকদের ও অনূরোধ করতাম,ছোট একটা রোল দেয়ার জন্য।কেউ সেই সুযোগটা দেয় নি।সবাই বলত অভিনয় এত সহজ না।আসলেই তাই,এই কথাটা আমি বুঝেছিলাম আরো পরে,২০০৫ সালের দিকে,যখন চিত্র পরিচালনায় এসেছিলাম।
এক দিনের কথা,সম্ভবত শুক্রবার ছিল সেদিন।"নিষিদ্ধ রাত্রি"ছবির শুটিং এ ময়ূরী আপা,মেহেদি,কাবিলা সহ আরো অনেক সহশিল্পীরা এসেছিলেন।পরিচালক ছিলেন কালাম ভাই।ময়ূরী আপা এর আগেও দুই তিনবার এসেছিলেন।সেই সুবাধেই তার সাথে একটা ভাল সম্পর্ক ছিল।ময়ূরী আপাই কালাম ভাইকে বলে তার সাথে থাকার ব্যাবস্থা করে দিয়েছিলেন।তার পর থেকেই আমি কালাম ভাই এর সাথে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছি,প্রায় ২ বছর।এই দুই বছর সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করার সময় অনেক ধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছে।চলচিত্র জগতকে ঘিরে সাধারন মানুষের যে ধ্যান ধারনা,ভেতরে গিয়ে সেই ধারনা পুরোটাই পালটে গিয়েছিল সেই সময়।
কালাম ভাই মানুষ হিসেবে খুব ভালো।উনি আমাকে অনেক হেল্প করতেন,অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ তিনি আমাকে দিয়ে করাতেন।যার ফলে মাত্র দুই বছরের মধ্যেই আমি ছবি পরিচালনা শুরু করি।
২০০৫ সালের শেষ সময়ে,ডিসেম্বরের ১৮ তারিখ আমি আর আমার বন্ধু মাসুদ মিলে দুজনের যৌথ পরিচালনার প্রথম ছবি "জুয়াড়ি'র" মহরত অনুস্টান করি হোটেল র্যাডীসন ব্লু এর বলরুমে।চাষি নজরুল ইসলাম সহ অনেক খ্যাতিমান পরিচালক সেখানে উপস্থিত ছিলেন।কিন্তু দুঃখের বিষয়,কালাম ভাই এই অনুস্টানে ছিলেন না।আমি উনার কাছ থেকে চলে যাচ্ছি,সম্ভবত এই বিষয় টি নিয়ে উনি রাগ করেছিলেন।পরে অবশ্য ময়ূরী আপার মধ্যস্থতায় উনার সাথে মিল হয়।উনি অনেক বার আমার শুটিং চলাকালে ঘুরতে এসেছেন,বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন।বিশেষ করে কস্টিউমের ব্যাপারে আমি একেবারে আনাড়ি ছিলাম।কালাম ভাই এর সহযোগিতা ছাড়া আমার একার পক্ষে ছবিটি করা কোন ভাবেই সম্ভব ছিল না।আর নায়িকা ছিলেন ময়ূরী আপা,নায়ক ছিলেন উস্তাদ জাহাংগীর।ময়ূরী আপা আর জাহাংগীর ভাইও অনেক সহযোগিতা করেছিলেন।
২০০৬ সালের march মাসের ২১ তারিখে আমার প্রথম ছবি শুভমুক্তি দেয়া হয়।প্রায় ৩০০ টির বেশি হলে একযোগে মুক্তি পায় "জুয়াড়ি"।খুব যে সুপার-ডুপার হয়েছিল তা বলব না,কিন্তু খরচ উঠে প্রায় ৯ লাখ টাকার উপরে লাভ হয়েছিল প্রযোজকের।খুশিতে তিনি আমাকে এবং ময়ূরী আপাকে একটি করে ব্যাংকক ভ্রমনের প্যাকেজ কিনে দিয়েছিলেন,যেখানে আমি পরে ময়ূরী আপাকে নিয়ে ব্যাংকক থেকে ঘুরে এসেছিলাম।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:৫১