somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাধারণ জীবনের ভালোবাসা

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৬…………
রাত প্রায় ৮ টা হবে।শহরের পাশে একটা বস্তি।ওই
বস্তির ই একটা ঘরে বসে আছে ময়না।শীত বিদায়
দিয়ে বসন্ত এসে গেলেও শীত তার প্রভাব
এখোনো বিস্তার করে যাচ্ছে।হইতোবা আরো
কিছুদিন শীত তার প্রভাব দেখাবে।গুটিশুটি মেরে
ঘরের ১ কোণে বসে আছে ময়না।বয়স ৭-৮
বছর হবে।ঘরের ১ কোণে একটা বাতি জ্বলছে।
বাতির আলোতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে ময়নার ওই
নিষ্পাপ মুখ খানা।মেয়েটা ফর্সা কিন্তু বস্তিতে থাকার
দরুন তার মুখখানা অনেক রুক্ষো।কারন সে তো
তার মুখে দামি সাবান অথবা ফেস ওয়াস লাগাতে পারে
না।চুলগুলা উশকো খুশকো।গায়ে একটা জীর্ণ
ময়লা জামা যা শীতের সাথে লড়ায় করে অবশ্যয় হার
মানে।শীত প্রায় শেষের পথে তবুও মেয়েটার
১ টা শীতের কাপড় জোটেনি।
ময়না অন্যদিন সন্ধ্যাবেলাই ঘুমিয়ে যাই কিন্তু
আজকে ও ঘুমোই নি।কারন আজকে অর বাবা রহিম
কাজে যাবার সময় বলে গেছে আজকে ওর জন্য
শীতের কাপড় নিয়ে আসবে।তাই ময়না ওর বাবার
জন্য অপেক্ষা করছে।রহিম রিক্সা চালাই।প্রতিদিনের
রোজগার খুবই সামান্য কিন্তু তা দিয়ে সংসার
কোনো মত চলে যাই
রহিম আজকে যাওয়ার আগে বলে গেছে
আজকে নাকি রোজগার একটু বেশি হবে।সকাল
বেলা রহিম যখন কাজে যাচ্ছিল তখন,-
-কই গো ময়নার মা কই গেলা।(রহিম)
-এই তো আমি ,কি হইলো ডাকতাছো ক্যান?(হাছিনা)(
ময়নার মায়ের নাম হাছিনা)
-কামে যামু তো,আজকে ওই বড় বাজারের ব্যাগ ডা
দ্যাউ তো।
-ক্যান আইজ ব্যাগ বড় ডা লাগবো ক্যান?
-আরে আইজ রোজগার একটু বেশি হইবো তাই
বাজার করে আনমু।
-বাজান তুমি কামে যাওনের আগে ক্যাম্নে জানলা
যে আইজ বেশি রোজগার হইবো?(ময়না)
-শোন মা,আইজ হইলো ১৪ তারিখ,ভালেন্টাইন না
কী যেনো হইবো আইজ তাই রাস্তাই বেশি
লোকজন বারোইবো।
-বাজান, তাইলে তুমি আমার লাইগ্যা কি আনবা?
-তোর লায়গ্যা আইজ আমি ১ টা সোয়েটার আনমূ মা।
-আচ্ছা বাজান মনে কইরা আইনো কিন্তু।এই পাতলা
কাপড়ে খুব শীত লাগে।
-আচ্ছা মা আনুম।আর শোনো ময়নার মা আইজ
রাইতে আমি ভাল বাজার কইরা আনুম।তাই আমি আওনের
পর রান্না করতে যাইও।
-আচ্ছা ,দেইখা শুইনা যাইও।সাবধানে রিক্সা চালাইও।
(হাছিনা)
রহিম অশিক্ষিত মানুষ।দিন তারিখের হিসাব টা তেমন
রাখে না।কিন্তু আজকে যে কী একটা দিবস আছে
সে ভালো করেই মনে রেখেছে।কারোন
গত বছর এই দিনে রহিম অনেক টাকা রোজগার
করেছিলো।রহিমের রিক্সাই অনেক লোক
সেদিন উঠেছিলো তবে সবাই ডাবল ।একটা
মেয়ে এবং একটা ছেলে।রহিম সেদিনের কথে
ভাল ভাবেই মনে রেখেছে কারন সেইদিন সবাই
তারে ভাড়ার সাথে সাথে কিছু বকশিস ও দিছিলো।
সেদিন রহিমের কোনো সময় ও রিক্সা নিয়ে
বসে থাকতে হই নি।একের পর এক যাত্রী উঠার
তালেই ছিলো।তবে বেশির ভাগ যাত্রীই পার্কের
অথবা সিনেমা হলের উদ্দেশ্যেই তার রিক্সাই
উঠেছিলো।
তাইতো রহিম আজ ও প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে।রহিম
আজকে যাওয়ার সময় তাইতো তার মেয়েকে
একটা আশা দিয়ে এসেছে।আজকে ভাল খাবার তার
পরিবারের মুখে তুলে দেবে সেই প্রতিশ্রুতি
দিয়ে এসেছে।
রহিম সারাদিন রিক্সা চালিয়েছে আজ।রিক্সা টা নিজের না।
সন্ধ্যার সময় মহাজনের রিক্সা বুঝে দিয়ে এবং
মহাজনের টাকা শোধ করে রহিম্নিজেরটা হিসাব
করে দেখে।আজ তার অবশিষ্ট ৫৪৫ টাকা আছে
যেখানে অন্যদিন তার ২০০-২৫০ টাকা থাকে।রহিম
বাজারে যাই এবং একটা মুরগি আর আনুসঙ্গিক কিছু বাজার
করে।বাজার করার পর তার কাছে আরো ৩০০ টাকা
অবশিষ্ট রয়ে গেছে।সে ফুটপাতের ধারের
দোকানে যাই মেয়ের জন্য ১০০ টাকা দিয়ে একটা
সোয়েটার আর হাছিনার জন্য ১৮০ টাকা দিয়ে ১ টা লাল
টুকটুকে শাড়ি কেনে।মনে মনে খুব খুশি আজ
রহিম।কতই না খুশি হবে আজ তার পরিবারের লোক।
অবশেষে ৮-৩০ এ রহিম বাড়ি ফেরে।
-ময়না ,মা কই গেলি?(রহিম)
-বাজান আইছো।(অনেকটা উতসুক এবং উত্তেজিত
ময়না)
-হ মা আইছি।
-সে কহোন থেইক্যা আমি তোমার জন্য বইয়া
আছি,আর তুমি এহোন আইলা?
-কী করব রে মা একটু দেরি হইয়া গেলো।এই ল
তোর শীতের কাপড়।ময়নার মা কই গেলা।এই লও
বাজার আনছি।জলদি রাইন্দা আনো খুব খুদা লাগছে।
হাছিনা বাজার নিয়া রান্না করতে চলে যাই।এদিকে ময়না
তার শীতের কাপড় পেয়া খুব খুশি।সে যেনো
খিদার কথা ভুলেই গেছে।ওর চোখে মুখে কি
একটা খুশির আভা।যদিও খুব সামান্য মুল্যের কাপড় তবুও
খুব দামী ময়নার কাছে।
অবশেষে ৯-৩০ এ রান্না শেষ হই।খাওয়া শেষ
করে ষুতে যাই তারা।ছোট্ট একটা ঘর তাদের।
ঘরের মাঝে একটা বেড়া দিয়ে দুই ভাগ করা।
একপাশে ময়না থাকে আর অন্য পাশে রহিম এবং
হাছিনা।ময়না ঘুমিয়ে পড়েছে।রহিম ও ঘরে গিয়ে
শুয়ে পড়েছে।হাছিনা খাবার পর সবকিছু গুছাচ্ছে।রহিম
ঘরে হাছিনার জন্য অপেক্ষা করছে,কারন যে শাড়িটা
সে এনেছে সেটা এখোনো দেইনি ও।
কিছুক্ষন পর হাছিনা কাজ সেরে ঘরে যাই।
-বউ আইছো।(রহিম)
-হ আইছি।(হাছিনা)
-এই ন্যাউ,তোমার লাইগ্যা ১ খান শাড়ি লইয়া আইছি।
-শুধু শুধু শাড়ি আনবার গেছো ক্যান।
-আরেহ আইজকে একটু বেশি রোজগার হইছে
তো তাই ভাবলাম একটা শাড়ি নিয়াই যাই।
-ও ভাল করছো।
-তোমারে না লাল শাড়িতে খুব ভাল লাগে তাই বাইছা
বাইছা এই লাল খান লইয়া আইছি।জানো বউ আইজ যহন
রিক্সা চালাইতেছিলাম তহন শুধু দেহি সব লোকজন
কেও তাগো বউ আর কেউ তাগো ভালবাসার
মানুষরে লইয়া ঘুরতাছে।কেউ পার্কে কেও
ছিনেমা হলের সামনে।আমার তহন খুব ইচ্ছা
করতেছিলো তোমারে নিয়াও ওইরাম ঘুরমু কিন্তু
আমগো মতন গরিবের কি তা সাজে?
-লাগবো না অইরাম ঘুরনের।যেম্নে আছি ভালই
আছি।দুই বেলা দুই মুঠো ভাত খাইতে পারলেই
আলহামদুলিল্লা।
-আমি না বউ।তোরে আর আমাগো মায়াডারে খুব
ভালবাসি রে বউ।
-হ আমি জানি।সে আর বলোন লাগবো না।লও
চলো মেলা রাইত হইছে ঘুমামু।
-চল বউ।
রহিম আর হাছিনা দুজনেই সারাদিনের কর্মব্যাস্ত
দিনের অবসান ঘটাতে গিয়ে শুয়ে পড়ে।কিন্তু
কারোর চোখে ঘুম নেই।কিছুক্ষন পরে।
-ঘুমাই গেছো বউ।
-না ঘুমাইনি।
-ক্যান?
-ঘুম যে আহেনা।
-আমার দিকে একটু আগাই আহো না।
-কউ।
-আমার বুকের উপর মাথা ডা রাহো না বউ!
-হুমম রাখছি।
-আমি তোমারে খুব ভালবাসি রে বউ।
-আমিও।
-আমারে একটু শক্ত কইরা জড়াই ধরো না বউ।
অবশেষে আলিঙ্গন।তারপর…………………
এভাবেই দিন কাটে রহিমের মত রিক্সাওয়ালা বা অন্যান্য
দিন মজুরদের।জানেনা ওরা আগামিকাল ওদের কি
হবে।ভাত কী জুটবে দুই বেলা নাকি একবেলা
আধাপেটা খেয়েই দিন কাটাতে হবে ওদের।
তবুও যে অদের ভালবাসার কোনো শেষ নেই।
সেটা ভরা পেটে হোক বা খালি পেটে।
ওদের কাছে ভালোবাসার জন্য স্পেশাল
কোনো দিন নেই।প্রতিটা দিনই ওদের ভালবাসার
দিন।সেটা ফেব্রুয়ারীর ১৪ হোক কিংবা
ডিসেম্বরের ২৪।প্রতিটা দিনই ওদের কাছে
স্বাভাবিক,সাধারন এবং অবশ্যই স্পেশাল।
[নিশ্চুপের দুটি কথাঃগল্পটা সম্পুর্ন কাল্পনিক।জানিনা
কতটুকু দিতে পেরেছি।তবে নিজের মন থেকে
দেওয়ার চেষ্টা করেছি।এটা গল্প হলেও এমন
হাজারটা কাহিনি এভাবেই বাস্তবে ঘটে।কিন্তু আমরা
টের পাইনা কারন আমরা থাকি ইটের তৈরি চার
দেয়ালের মধ্যে আর ওরা থাকে ছোট্ট
কুড়েঘরে।গল্পের মাঝে অনেক ভুলভ্রান্তি
আছে আমি জানি তাই সবাইকে বলছি ক্ষমার দৃষ্টিতে
দেখবেন।]
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অপরূপের সাথে হলো দেখা

লিখেছেন রোকসানা লেইস, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৩৫



আট এপ্রিলের পর দশ মে আরো একটা প্রাকৃতিক আইকন বিষয় ঘটে গেলো আমার জীবনে এবছর। এমন দারুণ একটা বিষয়ের সাক্ষী হয়ে যাবো ঘরে বসে থেকে ভেবেছি অনেকবার। কিন্তু স্বপ্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×