জাতীয় কবি নজরুল ও তার স্ত্রী নার্গিস আজ পৃথিবীতে নেই। নজরুল-নার্গিস ট্র্যাজেডির প্রথম সার্থক আবিষ্কারক নজরুল গবেষক বুলবুল ইসলাম। আজ নজরুলের সমাধি ঢাকায়। নার্গিসের ম্যানচেস্টারে। বুলবুল ইসলামের দৌলতপুরে। কুমিল্লার দৌলতপুরের সৌভাগ্য যে-বুলবুল ইসলামের সেখানে জন্ম হয়েছিলো। তা না হলে বাংলাসাহিত্যে নজরুলের জীবন গবেষণায় দৌলতপুরের ইতিহাস তুলে আনা আরও সময়সাপেক্ষ ছিলো। বুলবুল ইসলাম তার মৌলিক গবেষণার দ্বারা প্রমাণ করেছিলেন যে, ‘নজরুল-নার্গিস’ ট্র্যাজেডির সৃষ্টি হয়েছিলো। বুলবুল ইসলাম ‘নজরুল-নার্গিস‘ অধ্যায়কে নবজন্ম না দিলে নার্গিসকে নিয়ে আজও নানা কল্পকাহিনী রচিত হওয়ার সম্ভাবনা ছিলো।
বর্তমানে কুমিল্লার দৌলতপুর *নজরুল তীর্থভূমি* হিসেবে স্বীকৃত হলেও কবিতীর্থ দৌলতপুর ক্ষমাহীন রূপে অবহেলিত। দরিরামপুর ও কুমিল্লা শহরের পাশাপাশি দৌলতপুরে সরকার প্রধানগণ যান না। এমনকি জাতীয় পর্যায়ে তিনদিনব্যাপী অনুষ্ঠানের নামে কুমিল্লা শহরে আড়াইদিন অনুষ্ঠান হওয়ার পর শেষদিনের বিকেল বেলা দৌলতপুরের অনুষ্ঠানের জন্য বরাদ্ধ করা হয়। রেডিও, টিভি থেকে শুরু করে পত্র-পত্রিকায়ও কবিতীর্থ দৌলতপুর উপেক্ষিত। শুধু তাই নয়-কুমিল্লা শহরে শ্বেতপাথরের স্থায়ী নজরুল স্মৃতিফলক আর স্মৃতিসৌধ নির্মিত হলেও দৌলতপুর তা থেকেও বঞ্চিত হয়। কুমিল্লা শহরে নজরুল চর্চা ও তার স্মৃতি রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে বুলবুল ইসলামের মনে কোনো আপত্তি ছিলো না। তার বক্তব্য ছিলো: কবিতীর্থ দৌলতপুরও যেন বঞ্চিত না হয়।
অত্যন্ত মর্মান্তিক বিষয় হলো কবিতীর্থ দৌলতপুরের মতো জীবদ্দশায় বুলবুল ইসলামও ছিলেন অনেকটা উপেক্ষিত। এমনকি যে দৌলতপুর দৌলতপুর করে তিনি তার সারা জীবন ব্যয় করলেন, সেই দৌলতপুরবাসীও-বিশেষ করে সেই ঐতিহ্যবাহী খাঁ পরিবারও তাকে মূল্যায়ন করেনি। তার জীবনের নানা তথ্য থেকে আজ এই প্রমাণ পাওয়া যায়। এও নজরুল-নার্গিস ট্র্যাজেডির মতো আরেক ট্র্যাজেডিও বটে।
নজরুল-গবেষক বুলবুল ইসলাম আজ আমাদের মধ্যে নেই। নজরুলের ভাষায়:‘হারিয়ে গেছে অন্ধকারে পাই না খুঁজে আজ আর।। আজকে তোমার-আমার মাঝে সপ্ত পারাবার।’
যখন তিনি আমাদের মধ্যে ছিলেন, তখন নানা ট্র্যাজেডি বহন করে বেড়াতেন। জীবদ্দশায় পুনর্বাসনহীন এক ছিন্নমূল শিল্পী ছিলেন তিনি, তাও কম ট্র্যাজিক নয়। তারপরও তিনি আমাদের নজরুলের মতো করেই ভালোবেসেছিলেন। তিনি আমাদের সেবা করতে গিয়ে আর নিজের সেবা করতে পারেননি। নজরুলের ভাষায় তাই তার সম্পর্কেও আজ বলতে হয়:‘ সকলেরে তুমি সেবা করে গেলে নিলে না কারো সেবা।। আলোক সবারে আলো দেয়। দেয় আলোকেরে আলো কেবা।’
অলংকরণ: জসীম অসীম
প্রথম প্রকাশ:
১৯ ফেব্রুয়ারী ১৯৯৮: ৪ ফাল্গুন ১৪০৪: সাপ্তাহিক আমোদ: কুমিল্লা। (সম্পাদকীয়)
দ্বিতীয় প্রকাশ:
৪ মার্চ ১৯৯৯: দৈনিক রূপসী বাংলা।
কুমিল্লা।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে অক্টোবর, ২০২৩ বিকাল ৫:৩৮