আমার এই পোস্ট শুধু সেই মা'দের জন্য,
যারা নিজেদের কলিজার টুকরা সন্তানের মুহাব্বতকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কুরবানি করেন!!
.......................................................
কুরআন হিফজ করার জন্য অনেক ছোট বয়সে মায়ের কোল ছেড়েছিলাম।
সময়টা ছিলো আমার জন্য অনেক কষ্টের। যেই বয়সে বাচ্চারা শীতের রাতে মায়ের কোলে ওমের ভিতরে থেকে নিশ্চিন্তে ঘুমায়,আমি সেখানে মাদ্রাসায় শুয়ে শুয়ে আম্মুর কথা ভাবতাম।
রাতে ঘুম ভেঙে যেতো। এরপরে অনেক ঘুমানোর চেষ্টা করতাম,কিন্তু ঘুম আসতো না।দেখতাম, বন্ধুরা সবাই আরামে ঘুমাচ্ছে। কিন্তু আমার চোখে ঘুম নেই।ঘুম না আসার যে কি কষ্ট, ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ বুঝবেনা।
ধীরেধীরে জানালার কাছে যেতাম। জানালার শিক ধরে আনমনা হয়ে দূর বহুদূরে তাকাতাম। শীতের নির্জনতায় মাঝরাতে দু' একটা গাড়ী ছুটে যেতো হুশহুশ করে,,!! রাতের নিরবতা নিস্তব্ধতাকে আরো বেশি করে জানান দিয়ে।
সারাটা সপ্তাহ বৃহঃস্পতিবারে অপেক্ষায় থাকতাম।
সেদিন ছিলো "নীড়ে" ফেরার দিন।আম্মুর মুখ দেখে বিচ্ছেদের সব বেদনা ভুলে যেতাম।
ভিতরের ভালোবাসাটা আব্বু কখনো বুঝতে দেয়নি। কিন্তু আমি সেটা ফিল করতাম।এখনো মনে আছে,,,,
এক শীতের রাতে প্রচন্ড শৈত্যপ্রবাহ হচ্ছে।লেপের নিচে শুয়ে ছোট্ট পা দুটো গরম করার বৃথা প্রয়াস চালাচ্ছি।হঠাৎ কে যেনো আমাদের রুমের দরজায় নক করলো। দেখলাম, আব্বু একটা চাদর
গায়ে দিয়ে বাসা থেকে এই ঠান্ডা বাতাসের মধ্যে হেঁটে আমার জন্য স্লিপিং ব্যাগ নিয়ে হাজির।
যখন আরো দূরের মাদ্রাসায় ভর্তি হলাম, তখন
৩মাসে মাত্র একবার বাসায় আসতাম।
প্রথমে কয়েকবার বিদায়ের সময়ে আম্মু আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে বুক ভাসাতো।
আম্মুর বুকের ভিতরে শেষবারের মতো মুখ লুকিয়ে আমার অনুভূতি তখন কেমন হতো, সেটা নাহয়
নাইবা বললাম।কিন্তু আমি শক্ত হয়ে থাকতাম।
অনেকদিন ধরে জমানো কিছু টাকা আব্বুর অলক্ষে আম্মু আমার পকেটে গুঁজে দিতো।ওই টাকাগুলি নিতে আমার খুবই কষ্ট হতো।মাদ্রাসায়
গিয়ে টাকাগুলি আমি খরচ করতে পারতাম না।আম্মুর মুখটা ভেসে উঠতো। প্রথমে নিতে চাইতাম না।তারপর থেকে আম্মু আমার বইয়ের ফাঁকে টাকা রেখে দিতো।
মুখে কাষ্ঠহাসি নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যখন
রিক্সায় উঠতাম, তখন অশ্রু আর বাধা মানতো না। আম্মু দোতলার বারান্দায় এসে দাঁড়াতো।যতক্ষণ
পারতাম, রিক্সার হুডের ফাঁক দিয়ে আম্মুর দিকে তাকিয়ে থাকতাম। দেখতাম, মা আমার দরজায়
হেলান দিয়ে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে ....!!
বাসে ওঠার আগে আম্মু আবার ফোন
করতো কান্নাভেজা কন্ঠে কিছু উপদেশ দেয়ার
চেষ্টা করতো ... কিন্তু অপ্রতিরোধ্য
আবেগে আম্মুর কন্ঠ থেমে যেতো বারবার......!!
অনেক সংগ্রামের পরে আল্লাহ পুরো কুরআন বুকে ধারণ করার তাওফিক দিলেন।আমাদের মহল্লার মসজিদে তারাবী পড়ালাম।মসজিদের একেবারে পাশেই বাসা ছিলো। রাতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আম্মু তারাবীর
নামাজে আমার তিলাওয়াত শুনতো।তারাবীর পরে ক্লান্ত হয়ে বসায় ফিরে আম্মুর খুশিতে ঝলমলে মুখ দেখেই সব ক্লান্তি ভুলে যেতাম।
ছেলের পিছনে তারাবীর নামাজে পূর্ণ কুরআন শুনতে পেরে এখনো আব্বুর বুকটা ভালোলাগায় ভরে যায়। নামাজ পড়ে বাপ-বেটা বাসায় ফেরার পথে আব্বুর উচ্ছসিত কথার ভঙ্গিতেই সেটা বুঝতে পারতাম।
দুনিয়ায় এই সামান্য ব্যপারে আব্বু আম্মুর এই অসামান্য খুশি দেখে অবাক হই .....!! আর আল্লাহর কাছে মনেমনে প্রতিক্ষণে সিজদায় লুটিয়ে পড়ি। আর অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে দোয়া করি, আল্লাহ যেনো আব্বু আম্মুকে হাশরের মাঠে নূরের মুকুট পরান।
আর আমাকে যেনো জীবনের শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত
কুরআনের সকল বিধিনিষেধ পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে পালন
করার তাওফিক দেন .......... আমীন