বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে,,,,, ঝুম বৃষ্টি,,,,,
নাহিয়ানদের বাসাটা দোতলা। বৃষ্টির মন
মাতানো রিমঝিম শব্দটা শোনা যায়
ব্যালকনিতে বসলে। বাসার পাশে একটু
ঝোঁপের মতো। তারপাশে বিনুদা'র টিনের
ঘর। ঝমঝম আওয়াজটা শুনতে নাহিয়ান তাই
ব্যালকনিতে গিয়ে বসে। শব্দটা কেমন
মাদকতাময়। একটানা শুনতে থাকলে ঘোর
লেগে যায়,,, মন চলে যায় অচিনপুরে,,,,
কল্পনার সাগরে ঢেউ খেলে যায় নাহিয়ানের।
মনে পড়ে মিনার কথা।দেখতে কি সরল মেয়েটা। শুধু দেখতে নয়, ওর কথা বলার ধরণ,,,, চিন্তাভাবনা সবকিছুই ছিলো এক আশ্চর্য সরলতায় মোড়া। বলতে গেলে ওর সরলতায় মুগ্ধ হয়েই প্রেমে পড়ে যায় নাহিয়ান।
প্রথমে মিনার দিক থেকে তেমন সাড়া পাচ্ছিলো না। মেয়েটার কথাবার্তা অনেক আন্তরিক। কিন্তু নাহিয়ান যা চায় মিনা তার ধারেকাছেও যায়না। খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক দু'জনের। তাই নাহিয়ান চায়না উল্টোপাল্টা কিছু বলে সম্পর্ক নষ্ট করতে।
কিন্তু আর কতো !! মনের কথাটুকু বলতে মরিয়া হয়ে ওঠে নাহিয়ান। কিন্তু কিভাবে সম্ভব ? তারা তো বন্ধু,,,,, অন্তত মিনা তো তাই জানে। এমন সময়ে নাহিয়ানের কথা মিনা কিভাবে মূল্যায়ন করবে তা বুঝে উঠতে পারেনা নাহিয়ান। মিনা যদি ঘৃণাভরে তাকে প্রত্যাখ্যান করে!?? যদি এখনকার ফুলের মতো পবিত্র সম্পর্কটা নষ্ট হয়ে যায় !!??
কিন্তু একদিন মনের কথা বলার সুযোগ হয়ে
যায়। নাহিয়ান অবাক হয়ে দেখে, মিনাও তার
ব্যাপারে এমনই ভাবে। মহান প্রভুর দরবারে
শুকরিয়া আদায় করে দুজনে। আসলে একেই
বলে ভাগ্য, নাহিয়ান ভাবে।
একদিন মিনা বিপদে পড়ে যায়। নাহিয়ান
প্রাণপণ চেষ্টা করে তাকে সাহায্য করতে। মিলনের যেই মহা শপথ তারা পাঠ করেছে তাতে তো তা-ই উল্লেখ আছে।একে অপরের সুখদুঃখের আজীবন সঙ্গী হবে,এই তো ছিলো শপথবাক্যের মূলমন্ত্র।
বিপদ আসে,,,, দুজনার প্রচেষ্টায় একসময় তা
কেটেও যায়,,, হঠাৎ নাহিয়ান মিনার মাঝে কেমন একটা পরিবর্তন লক্ষ করে। আগের মতো সেই
আহ্লাদী কথা,,, সেই প্রেমপূর্ণ চাহনি,,, সেই আবেগময় বাক্য কেমন যেন ভাটা পড়ে যাচ্ছে। এরমাঝে যোগ হয়েছে মিনার শীতল আচরণ। আগের মতো আর কথা হয়না,,, জিজ্ঞেস করলে ব্যাস্ততার কথা বলে এড়িয়ে যায়। অবুঝ নাহিয়ান তা-ই বেদবাক্য হিসেবে মেনে নেয়। ভাবে, খুব তাড়াতাড়ি সব ঠিক হয়ে যাবে।
কিন্তু সব ঠিক হয়ে যায়না,,, বরং ক্রমেই জটিল হতে থাকে। আজ বিকেলে ঘটে যায় এক জঘন্য ব্যাপার,,,,,
মিনার ফোনটা হাতে নিয়ে নাহিয়ান দেখছিলো। হঠাৎ একটা ম্যাসেজ আসে। এন্ড্রয়েড ফোনের নোটিফিকেশন বারে ম্যাসেজের কিয়দংশ ভেসে ওঠে,,,, প্রথম শব্দটা "জান,,,,"। চমকে ওঠে নাহিয়ান। হাত থেকে মোবাইল পড়ে যায়। হঠাৎ কি যেন তার শরীরের সমস্ত শক্তি শুষে নিয়েছে।
নিজের শরীরে নিজের কাছেই অনেক ভার মনেহচ্ছে,,,,, মাথাটা ঝিমঝিম করছে নাহিয়ানের।
মিনার হঠাৎ পরিবর্তনের কারণ সে বুঝতে পেরেছে। কিন্তু এখনো সে বুঝে উঠতে পারছেনা মানুষ কেন এভাবে অন্যের মন নিয়ে খেলে !! কি লাভ এতে !!??
ব্যালকনির একমাত্র ইজি চেয়ারটায় বসে নাহিয়ান ভাবতে থাকে আকাশপাতাল,,,,,
ভেবে কূল পায়না,,, চোখ বেয়ে ঝরতে থাকে তপ্ত অশ্রুর ধারা,,,,, আজ আকাশও বুঝিবা তার দুঃখে একটানা কেঁদেই চলেছে,,,,। নাহিয়ান আজ একা,,,,, নিঃসঙ্গ,,,,,,
হঠাৎ বৃষ্টি থেমে যায়। চারদিকটা ভরে যায়
নৈশব্দে,,,। প্রকৃতি যেন পন করেছে
নাহিয়ানের একাকিত্ব বাড়িয়ে দিতে। ঠিক
তখনই,,,, রাতের নিরবতা খানখান করে ডেকে
ওঠে নিঃসঙ্গ ঝিঁঝিঁ,,,, হয়তো নাহিয়ানকে সঙ্গ দেয়ার জন্য। নির্বাক প্রাণী হয়েও হয়তো সে বুঝেছে,,,, বুকের ভেতরটা ভেঙেচুরে যাওয়া নিঃসঙ্গ ছেলেটার একটু সঙ্গ বড় দরকার,,, বড় দরকার।