রমজান মাস। জানিনা কার ঈমানের কি হালত। তবে সবাই কমবেশি এই মাসে গুনাহ কম করার চেষ্টা করেন।আল্লাহমুখি হওয়ার চেষ্টা করেন। একে অন্যকে ভালো কাজের দিকে দাওয়াত দেন। আমার আজকের আলোচনা এই দাওয়াত নিয়েই।
মুসলিম হিসেবে দাওয়াত আমাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কোনো মুসলিম এ থেকে পিছিয়ে আসতে পারেন না। আপনি একা ভালো কাজ করে জান্নাতে চলে যাবেন আর আপনারই পড়শি আল্লাহর নাফরমানিতে লিপ্ত থেকে জাহান্নামি হবে ইসলাম এটা সমর্থন করে না। এক্ষেত্রে আপনার পড়শিকে আপনারই দাওয়াত দিতে হবে। এবং সেটাও অবশ্যই নরম ভাষায়। কারণ মনে রাখা উচিৎ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আপনার চেয়ে উত্তম হযরত মূসা আলাইহিস সালামকে আপনার পড়শির চেয়ে অধম ফেরআউনের কাছে বিনম্র ভাষায় দাওয়াত দিতে বলেছিলেন।
সুতরাং বুঝে নেয়া উচিৎ এক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান কোথায় !! কেউ আপনার সাথে খারাপ আচরণ করলে আপনাকেও তার সাথে খারাপ আচরণ করতে হবে অথবা অন্য কেউ তার সাথে খারাপ আচরণ করলে আপনি তাকে বাহবা দিবেন ,ইসলামের এই নীতি আপনি কোথায় পেলেন !! ইসলাম তো এমন শিক্ষা দেয় না। তেমন দাঈ কাউকে মনে না ধরলে আপনি আমাদের প্রাণপ্রিয় রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দিকে তাকান। দাওয়াতের ক্ষেত্রে তার নীতিকে অনুসরণ করুন। আপনি সত্যিকারের রাসূলের অনুসারী হয়ে থাকলে কিভাবে একজন পাপী মানুষের প্রতি আপনার ক্রোধ আসে ? রাসূল যতবার আবু জাহলের কাছে দাওয়াত দিয়েছিলেন আপনি কি ততবার তারকাছে গিয়েছেন ?? আপনি কি সেই দরদমাখা কণ্ঠে তার পিঠে হাত বুলিয়ে সত্যের সওগাত তার কাছে পৌঁছেছেন ??
আপনার চিন্তাভাবনাই যদি এমন হয় তাহলে আপনি নিজেকে কট্টর ইসলামপন্থী দাবি করেন কি হিসেবে ?? লজ্জা হয়না ?? আপনি তো মিথ্যুক !! সুন্নতের লিবাসের আড়ালে আপনি শুধু মানুষকে নয় বরং নিজেকেই ধোকা দিচ্ছেন। মনে পড়েনা বনী ইসরাইলের সেই আবেদের ঘটনা ? সারাটা জীবন আল্লাহর ইবাদত করে যার একটা কথার কারণে সমস্ত ইবাদত নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো ??
এগুলোই তো একজন মুমিনের জন্য শিক্ষার বস্তু। এখান থেকেই শিক্ষা পাওয়া যায় "পাপকে ঘৃণা করো, পাপীকে নয়"। সে তো শয়তানের ফাঁদে বন্দী। আর শয়তান আরেক দিক থেকে আপনাকেও তার ফাঁদে বন্দী করে ফেলছে তা আপনি বুঝতেও পারছেন না। সে আপনার মনে ইবাদতের অহংকার ঢুকিয়ে আপনাকে তার চেয়েও বড় ফাঁদে ফেলছে।
কখনও ভাববেন না আপনি একা একা ইবাদত করেই জান্নাতে চলে যাবেন। আপনার আত্মীয় আপনার পড়শির হক আপনারই উপরে। আপনি জান্নাতে যাওয়ার মতো কাজ করলেও তার হক আপনি কতটুকু আদায় করেছেন তার জবাবদিহি না করে হাশরের মাঠে আপনি নিজের কদম বিন্দুমাত্র হঠাতে পারবেন না। তাদের ব্যাপারে আপনার অন্তরের হালত আপনার চাইতে আপনার রব বেশি জানেন। তাই তাদের ক্ষেত্রে কঠোরতা পরিহার করুন নম্রতা অবলম্বন করুন। তাদের জন্য আল্লাহর কাছে তাহাজ্জুদের নামাজে রোনাজারি করুন। বুকে হাত দিয়ে বলুন তো ,জীবনে কতোবার এই কাজটি করেছেন ??
নিজের মনকে এই বিষয়গুলো জিজ্ঞেস করুন তাহলেই আশাকরি করনীয় পেয়ে যাবেন। কট্টর মানসিকতা পরিহার করা আবশ্যক। মনে রাখবেন, যেই আল্লাহ আপনাকে হিদায়াত দিয়েছেন তিনিই আবার হিদায়াত ছিনিয়েও নিতে পারেন। তাই নিজেকে আপনার পড়শির চাইতে বড় কেউ ভাবার কোনো কারণ নেই।
আল্লাহ আমাদের দ্বীনের নিবেদিতপ্রাণ দাঈ হিসেবে কবুল করুন,.......... আমীন।