রামাদানুল মুবারাক
আমরা যারা মুসলিম তাদের জন্য এই মাস অনেক বরকতময়। ধনী গরীব নির্বিশেষে সকলের মনেই পবিত্র এই মাসের ব্যাপক প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। যে যার অবস্থান থেকে যতটুকু সম্ভব ইবাদত করে যান। কারণ এইমাসের ইবাদত আর অন্য মাসের ইবাদতের মাঝেও আছে অনেক পার্থক্য। তাই প্রত্যেকেই নিজের সাধ্যমতো করার চেষ্টা করেন।
তবে এখানে লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো আমরা যা ইবাদত করছি তার তুলনায় আমাদের অজান্তে গুনাহের পাল্লা ভারি হয়ে যাচ্ছে কিনা !! কারণ মনে রাখা উচিৎ এই মাসে ভালো কাজের প্রতিদান যেমন সত্তর গুণ বেশি হয় তেমনি মন্দ কাজের গুনাহও সত্তর গুণই বেশি হয়। কাজেই সাবধান !! এত কষ্ট করে সারাদিন রোজা রেখে রাতে তারাবীর নামাজ পড়ে পুরো মাসে সওয়াবের চাইতে গুনাহই যদি বেশি হয় তাহলে আফসোসের আর অন্ত থাকবে না।
প্রতিনিয়ত যেই অঙ্গের মাধ্যমে আমাদের গুনাহ সঙ্ঘটিত হয়ে যায় তার মাঝে অন্যতম হলো জিহ্বা। গীবত শেকায়েত তো আছেই, প্রতিদিন কতো মানুষকে আমরা এর মাধ্যমে কষ্ট দেই তার ইয়ত্তা নেই। কোনো মানুষকে শারিরিক ভাবে আঘাত করা বা অন্যকোন কাজের মাধ্যমে তাকে কষ্ট দেওয়ার চাইতে এই জিহ্বা দিয়ে যেই কষ্ট দেওয়া হয় তা সবচাইতে কষ্টদায়ক। বলা হয়ে থাকে কথার আঘাত তলোয়ারের আঘাতের চাইতে বেশি কষ্টদায়ক।
রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন "প্রকৃত মুসলিম সেই ব্যক্তি যার যবান ও হাত থেকে অপর মুসলমান নিরাপদ থাকে।"
এই গুনাহ এমনই ভয়ংকর, আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলেও তা মাফ হয়না। কারণ অপরাধ দুই প্রকার। হয়তো সেটা আল্লাহর শানে নয়তো বান্দার শানে। শির্ক ব্যতীত আল্লাহর শানে কোনো গুনাহ হয়ে গেলে সেটা মাফ হওয়ার ব্যাপারে আশা করা যায়। কিন্তু যেইসব গুনাহ বান্দার শানে হয়ে যায় তা মাফ হওয়ার একমাত্র পথ ও পদ্ধতি হলো সেই বান্দার কাছে ক্ষমা চাওয়া। যদি সে মাফ করে তবে আল্লাহ মাফ করবেন। অন্যথায় কোনো উপায় নেই।
হাদীস শরীফে যা ইরশাদ হয়েছে তার মর্ম এইঃ হাশরের মাঠে কোনো একজন মানুষ পাহাড়সম সওয়াব নিয়ে আসবে। আমল নামায় তার সওয়াব মাপা হলে সওয়াবের পাল্লাই ভারী হবে। সে খুশি !! সে আজ সবার চেয়ে আনন্দিত !! কারণ সে জান্নাতী। কিছুক্ষণ পরেই সে চিরসুখের স্থান জান্নাতে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। কিন্তু হঠাত কিছু মানুষ আসবে। তাদের চেহারা বিষণ্ণ। তারা আল্লাহর কাছে অভিযোগ করবে " হে আল্লাহ, এই ব্যক্তির সাথে আমাদের কিছু দেনাপাওনা আছে। সে দুনিয়ায়ে আমার সাথে এমন আচরণ করেছিলো। আমি তার উত্তরে কিছুই বলিনি। সুতরাং আজ আমি আপনার শাহী দরবারে মোকাদ্দমা পেশ করছি। আপনি আমার প্রাপ্য বুঝিয়ে দিন। আল্লাহ তা'আলা তখন সেই বান্দার আমলনামা থেকে কিছু সওয়াব নিয়ে তাকে দিয়ে দিবেন। এরপরে আরেক ব্যক্তি আসবে। সেও একই অভিযোগ করে নিজের প্রাপ্য চাইবে। এভাবে তার আমলনামা থেকে সওয়াব দিতে দিতে একসময় তা তলানিতে সে ঠেকবে। কিন্তু তখনো পাওনাদারদের ভীড় কমবে না। এরপরে আল্লাহ তা'আলা সেই পাওনাদারদের গুনাহগুলো তার আমলনামায় জমা করতে থাকবেন।
কি আশ্চর্য !! কিছুক্ষণ আগেই যাকে জান্নাতে যাওয়ার জন্য মনোনিত করা হয়েছিলো তাকে এবার অধোমুখী করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। হায় আফসোস !! হায় আফসোস !!! কি হবে তখন ? কোথায় যাব আমি ?? কে বাঁচাবে আমাকে ?? জাহান্নামের সেই আগুন থেকে, যা দুনিয়ার আগুনের চেয়ে সত্তর গুণ বেশি শক্তিশালি !!
এইজন্য ভাই, ধীরে ধীরে নিজের সংশোধন শুরু করা উচিৎ। ছোট ছোট বিষয় গুলো দিয়েই শুরু করি। যদিও এটা ছোটখাট কোনো বিষয় নয়। কিন্তু তারপরেও চাইলে আমরা আমাদের অভ্যাসগুলো পরিবর্তন করতে পারি। তর্ক করে হয়তো অনেকেই বলবেন "এইসব কথা তো আর মুখে এমনি আসেনা। সে আমার সাথে খারাপ আচরণ করেছে বলেই তো আমি বলেছি। সুতরাং শোধ হয়ে গেছে। আমাদের ভিতরে আর কোনো দেনাপাওনা নেই।"
আচ্ছা !! আপনি কি করে বুঝলেন আপনার কথা আর তার কথা সমানে সমান হয়েছে !? মানুষ আঘাত পেলে স্বভাবতই দ্বিগুণ ফিরিয়ে দেয়। কারণ তখন মেজাজ খারাপ থাকে। তাই অতো অতো বাছবিচারের ধৈর্য থাকেনা। আর আপনার কাছে তো এমন কোনো মিটার নেই যার মাধ্যমে আপনি আপনার কথার ওজন মাপতে পারবেন ! সুতরাং এমন প্রতিটা ক্ষেত্রেই পদস্খলনের শংকা থেকেই যায়।
তাই সাবধান !! নিজের যবান সংযত রাখুন। যারা প্রকৃত বুদ্ধিমান তারা এই বিষয়টি মাথায় রেখে কখনোই কথার জবাবে কথা বলেনা। তার নিরবতা হয়তো আপনি বোকামি প্রসূত মনে করেন। কিন্তু আপনি ভুল। আপনিই বরং বোকা। নিজের আমলগুলো নির্দ্বিধায় তাকে দিয়ে দিচ্ছেন। নয়তো তার গুনাহ নিজের ঘাড়ে নিচ্ছেন।
আল্লাহ সবার আগে আমাকে এবং সকল মানুষকে এই বিষয়ে যত্নবান হওয়ার তাওফিক দান করুন ....... আমীন।