somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কিছু স্মৃতি ....

২৩ শে জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার এই পোস্ট শুধু সেই মা'দের জন্য, যারা নিজেদের কলিজার টুকরা সন্তানের মুহাব্বতকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কুরবানি করেন!!
.......................................................
কুরআন হিফজ করার জন্য অনেক ছোট বয়সে মায়ের কোল ছেড়েছিলাম।
সময়টা ছিলো আমার জন্য অনেক কষ্টের। যেই বয়সে বাচ্চারা শীতের রাতে মায়ের কোলে ওমের ভিতরে থেকে নিশ্চিন্তে ঘুমায়,আমি সেখানে মাদ্রাসায় শুয়ে শুয়ে আম্মুর কথা ভাবতাম। রাতে ঘুম ভেঙে যেতো। এরপরে অনেক ঘুমানোন চেষ্টা করতাম, কিন্তু ঘুম আসতো না।দেখতাম, বন্ধুর সবাই আরামে ঘুমাচ্ছে। কিন্তু আমার চোখে ঘুম নেই।ঘুম না আসার যে কি কষ্ট, ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ বুঝবেনা।ধীরেধীরে জানালার কাছে যেতাম। জানালার শিক ধরে আনমনা হয়ে দূর বহুদূরে তাকাতাম। শীতের নির্জনতায় মাঝরাতে দু' একটা গাড়ী ছুটে যেতো। সারাটা সপ্তাহ বৃহঃস্পতিবারে অপেক্ষায় থাকতাম।সেদিন ছিলো "নীড়ে" ফেরার দিন।আম্মুর মুখ দেখে বিচ্ছেদের সব বেদনা ভুলে যেতাম।

ভিতরের ভালোবাসাটা আব্বু কখনো বুঝতে দেয়নি।কিন্তু আমি সেটা ফিল করতাম।এখনো মনে আছে,,,, এক শীতের রাতে প্রচন্ড শৈত্যপ্রবাহ হচ্ছে।লেপের নিচে শুয়ে ছোট্ট পা দুটো গরম করার বৃথা প্রয়াস চালাচ্ছি।হঠাৎ কে যেনো আমাদের রুমের দরজায় নক করলো। দেখলাম, আব্বু একটা চাদর গায়ে দিয়ে বাসা থেকে এই ঠান্ডা বাতাসের মধ্যে হেঁটে আমার জন্য স্লিপিং ব্যাগ নিয়ে হাজির।

যখন আরো দূরের মাদ্রাসায় ভর্তি হলাম, তখন ৩মাসে মাত্র একবার বাসায় আসতাম।প্রথমে কয়েকবার বিদায়ের সময়ে আম্মু আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে বুক ভাসাতো।আম্মুর বুকের ভিতরে শেষবারের মতো মুখ লুকিয়ে আমার অনুভূতি তখন কেমন হতো, সেটা নাহয় নাইবা বললাম।কিন্তু আমি শক্ত হয়ে থাকতাম।অনেকদিন ধরে জমানো কিছু টাকা আব্বুর অলক্ষে আম্মু আমার পকেটে গুঁজে দিতো।ওই টাকাগুলি নিতে আমার খুবিই কষ্ট হতো।মাদ্রাসায় গিয়ে টাকাগুলি আমি খরচ করতে পারতাম না।আম্মুর মুখটা ভেসে উঠতো।
প্রথমে নিতে চাইতাম না।তারপর থেকে আম্মু আমার বইয়ের ফাঁকে টাকা রেখে দিতো।

মুখে কাষ্ঠহাসি নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যখন রিক্সায় উঠতাম, তখন অশ্রু আর বাধা মানতো না।আম্মু দোতলার বারান্দায় এসে দাঁড়াতো।যতক্ষণ পারতাম, রিক্সার হুডের ফাঁক দিয়ে আম্মুর দিকে তাকিয়ে থাকতাম।দেখতাম, মা আমার দরজায় হেলান দিয়ে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে ....!! বাসে ওঠার আগে আম্মু আবার ফোন করতো কান্নাভেজা কন্ঠে কিছু উপদেশ দেয়ার চেষ্টা করতো ... কিন্তু অপ্রতিরোধ্য আবেগে আম্মুর কন্ঠ থেমে যেতো বারবার......!!

অনেক সংগ্রামের পরে আল্লাহ পুরো কুরআন বুকে ধারণ করার তাওফিক দিলেন।আমাদের মহল্লার মসজিদে তারাবী পড়ালাম।মসজিদের একেবারে পাশেই বাসা ছিলো। রাতে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আম্মু তারাবীর নামাজে আমার তিলাওয়াত শুনতো।তারাবীর পরে ক্লান্ত হয়ে বসায় ফিরে আম্মুর খুশিতে ঝলমলে মুখ দেখেই সব ক্লান্তি ভুলে যেতাম।ছেলের পিছনে তারাবীর নামাজে পূর্ণ কুরআন শুনতে পেরে এখনো আব্বুর বুকটা ভালোলাগায় ভরে যায়।নামাজ পড়ে বাপ-বেটা বাসায় ফেরার পথে আব্বুর উচ্ছসিত কথার ভঙ্গিতেই সেটা বুঝতে পারতাম।

দুনিয়ায় এই সামান্য ব্যপারে আব্বু আম্মুর এই অসামান্য খুশি দেখে অবাক হই .....!! আর আল্লাহর কাছে মনেমনে প্রতিক্ষণে সিজদায় লুটিয়ে পড়ি। আর অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে দোয়া করি, আল্লাহ যেনো আব্বু আম্মুকে হাশরের মাঠে নূরের মুকুট পরান।আর আমাকে যেনো জীবনের শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত কুরআনের সকল বিধিনিষেধ পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে পালন করার তাওফিক দেন .......... আমীল

সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×