যেই ছেলেগুলো জিহাদের নামে ঘর ছেড়ে এখন বিশ্বকে হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছে এবং পাইকারি হারে সাধারণ মানুষ হত্যা করে বেড়াচ্ছে আর নিজেকে মরলে শহীদ বাঁচলে গাজী মনে করছে তাদের উদ্দেশ্যে লেখা।
ভাই, তুমি নিজেকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'আতের অন্তর্ভুক্ত মনে করবে অথচ কাজ করবে ভিন্ন !! তা কি করে হয় ? কোনো দলকে অনুসরণ করতে হলে তার নীতিমালা মেনে চলতে হয়। অথচ তুমি তোমার পছন্দসই নীতি মেনে বাকিগুলো ফেলে দেবে ? তুমি কওমী বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় বড় আলিমদের মেনে চলো, অথচ জিহাদ সম্পর্কে তাঁদের নীতি তুমি মেনে চলো না !! এ কেমন কথা !! আজ সারা বিশ্বে ক্বওমী প্রতিষ্ঠানগুলো দারুল উলুম দেওবন্দকে ফলো করে। সেখানকার প্রবীন আলিমগণ যেই নির্দেশনা দেন তা মেনে চলে।
তাঁরা উপমহাদেশ থেকে ইংরেজ খেদাও আন্দলনের আওয়াজ তুলেছিলেন। ইংরেজদের বিরুদ্ধে তাঁরা জিহাদের ডাক দিয়েছিলেন। সমগ্র উপমহাদেশ তাঁদের আহ্বানে জিহাদে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো। তোমার কি মনে নেই কাসেম নানুতুবীর কথা ? তুমি কি চেনো না শাহ্ ইসমাইল শহীদকে ? কিংবা শাহ্ ওয়ালী উল্লাহ র. কে ? তাঁর সংস্কার আন্দোলন সম্পর্কে কি তোমার জ্ঞান নেই ? মনে নেই শাহ্ আব্দুল আযীয র. এর কথা ? তাঁর সেই ঐতিহাসিক "দারুল হরব" ঘোষণা ? এর প্রেক্ষাপট তোমার মনে নেই ? সাইয়্যেদ আহমদ শহীদ র. এর কথা তুমি জানো না ? তাঁর জিহাদী তৎপরতার ইতিহাস তুমি পড়নি ? তাঁর দাওয়াত ও ইসলাহী তৎপরতা সম্পর্কে তুমি জানো না ? কথিত আছে সেই সময়ে ৪০ হাজার হিন্দু তাঁর কাছে মুসলমান হয়ে বৃটিশদের বিরুদ্ধে জিহাদের বাইয়াত গ্রহণ করেছিলেন। তিনি কারো ঘাড়ে তরবারি ধরেননি। তাঁরা আমাদের থেকে বেশি দূরের নন। জিহাদের ক্ষেত্রে তাঁদের নীতি কি ছিলো ?
আর যারা বাংলাদেশে এহেন কান্ড ঘটাচ্ছে তাঁদের কাছে প্রশ্নঃ আপনারা কি শীর্ষ স্থানীয় আলিমদের মেনে চলছেন ? মাওলানা আব্দুল মালিক, মাওলানা আবু তাহির মিসবাহ, মাওলানা যিকরুল্লাহ খান, মাওলানা মাহমুদুল হাসান, মাওলানা মামুনুল হক্ব, মাওলানা আশরাফ আলী, মুফতি দিলাওয়ার হুসাইন সহ আরো অনেক বড় বড় আলিম এখনো জীবিত আছেন। তাঁদের কাছে কি আপনারা কখনো পরামর্শের জন্য গিয়েছিলেন ? নাকি এই একটা মাত্র ক্ষেত্রে তাঁরা আপনাদের অনুসরণীয় নন !! আপনারা কি উপরোল্লিখিত মুজাহিদীনের সাথে আপনাদের অবস্থানগত কোন পার্থক্যই খুঁজে পান না ? আপনারা কি ইসলাম আর জিহাদ বুঝার ক্ষেত্রে নিজেদেরকে এঁদের চেয়েও বড় কেউ মনে করেন ? আপনাকে যিনি কন্ট্রোল করছেন অর্থাৎ যার কমান্ডে আপনি চলছেন, তাঁর ইলম সম্পর্কে কি আপনি ভালোভাবে অবগত ? আপনি কি রাসূল সাঃ এর জিহাদের নীতি সম্পর্কে ভালোভাবে জানেন ?
আমার প্রতিটি প্রশ্নের জবাব দিতে না পারলেও অন্তত শেষ প্রশ্নের জবাব দিন। জিহাদ সম্পর্কিত রাসূল সাঃ এর প্রতিটি হাদীস অধ্যয়ন করুন। বিশ্বসেরা হাদীস ব্যখ্যা গ্রন্থগুলো পড়ুন। জিহাদ সম্পর্কিত আয়াত এবং এর তাফসীর পড়ুন। এরপর নিজের দিকে তাকান। দেখুন তো প্রতিটি শর্ত আপনার ভিতরে আছে কিনা ? নিজেকে কট্টর ইসলামপন্থী দাবি করার আগে নিজের দিকে ভালো করে তাকান। অনেকে মনে করেন পুরোপুরি শরিয়াহ এর পাবন্দ হওয়া মুজাহিদদের জন্য জরুরী নয়। আশ্চর্য কথা !! সাহাবা রাঃ গণ কি শরিয়াহ এর পুরোপুরি পাবন্দ ছিলেন না ? রাসূল সাঃ এর নীতি কখনো তরবারি কেন্দ্রিক ছিলো না। তিনি উদারতায় বিশ্বাসী ছিলেন। কিন্তু আপনাদের দেখে তো মনেহয় এর বিপরিত। কি করে আপনাদের রাসূলের সেইসব জানবাজ মুজাহিদ সাহাবাদের সাথে মিলানো যাবে ? তাঁদের অন্তর ছিলো রাসূল সাঃ এর মতো কোমলতা এবং উদারতায় ভরপুর।
দাওয়াতের ক্ষেত্রে রাসুল সাঃ এর নীতি দেখুন !! ওয়াহশী, রাসূলের প্রাণপ্রিয় চাচার হত্যাকারী। রাসূল চাইলেই তাকে পিষে ফেলতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেন নি। বরং আপন চাচার হত্যাকারীর কাছে বারে বারে দূত পাঠিয়েছেন। ওয়াহশী একেবারে বাড়ির কাছে ছিলো না। যাওয়া আসায় প্রায় এক সপ্তাহ লেগে যেত। মরুভূমির সফর ছিলো। রাসূল নিজে এত কষ্ট করেছেন এবং সাহাবাদের দিয়ে করিয়েছেন একজন কাফিরের জন্য। তাও আবার আপন চাচার হত্যাকারীর জন্য।
যুদ্ধের সময় এক কাফির একজন সাহাবার তরবারির আওতায় এসে গেলো। কাফির প্রাণভয়ে কালিমা পড়ে নিলেও সাহাবী তাকে হত্যা করে ফেলেন। এই ঘটনা রাসূল সাঃ এর কানে গেলে তিনি সাহাবীকে ডেকে হত্যার কারণ জিজ্ঞেস করলেন। কালিমা পড়ার পরেও কী কারণে তাকে হত্যা করস হলো!! সাহাবী উত্তর দিলেনঃ সে তো প্রাণভয়ে কালিমা পড়েছিলো। রাসূল সাঃ এবার ক্রোধান্বিত হয়ে বললেনঃ তুমি কি সেটা তার বুক ফেড়ে দেখেছিলে ?
এইসব ঘটনা বলতে থাকলে হয়তো লেখা শেষ হবেনা। তবে জ্ঞানীর জন্য ইশারাই যথেষ্ট। আমার মনেহয় শুধু এতটুকু চিন্তা করলেই যথেষ্ট হবে যে, উম্মতের প্রতি রাসূল সাঃ এর যেই দয়া আর ভালোবাসা ছিলো তা কি আমার ভিতরে আছে ? নাকি আছে শুধু বুক ভরা জিঘাংসা ?!!
কালের এই ক্রান্তিলগ্নে এসে নজরুলের সেই লাইন মনেপড়ে .........
"তোর প্রেম দিয়ে কর বিশ্ব নিখিল ইসলামে মুরিদ ..."