somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সোনার দেশের সোনার শহর - তিম্বাকতু

২২ শে মার্চ, ২০১৯ রাত ১২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



চিত্র: সোনার শহর তিম্বাকতু

হাজার বছর আগের সাহারা মরুভূমির সাহেল অঞ্চলে তিম্বাকতু নামে শহরটি (বর্তমানে পশ্চিম আফ্রিকা মালির একটি শহর) ছিলো উত্তরে থেকে আসা লবন আর দক্ষিনের স্বর্ন ব্যবসায়ীদের এক মিলনক্ষেত্র। এই তিম্বাকতু সেসময়ে পরিচিত ছিল লবন, স্বর্ন আর দাসব্যবসার এক অনন্য বানিজ্য কেন্দ্র হিসেবে। তিম্বাকতুর পাশ দিয়ে বয়ে চলা সাহারার অন্যতম ও একমাত্র প্রানশক্তি নাইজার নদীর নাব্যতা এই বানিজ্যকে পৌঁছে দিয়ে ছিল আফ্রিকার প্রত্যন্ত অঞ্চলে।



চিত্র: প্রাচীন মালির ম্যাপ

১৩ শতকে মালির ইতিহাসে বিখ্যাত রাজা মানসা মুসা কেইটার বিখ্যাত হজ্ব কাফেলার ফেরার পথে আন্দিলুসিয়ার বিখ্যাত মুসলিম স্থপতি আবু ইসহাক আল সাহিলিকে রাজা মানসা মুসা দায়িত্ব দেন তিম্বাকতু শহরে সানকোরা নামের সেই বিখ্যাত মসজিদ সহ ইসলামী বিশ্বের মনীষীদের লেখা সংগৃহীত গ্রন্থের এক অসাধারন গ্রন্থাগার তৈরীর জন্য। তিম্বাকতু শহরের প্রানচাঞ্চল্য আর উদ্দীপনা রাজা মানসা মুসাকে উৎসাহিত করে তোলে এখানে জ্ঞানবিজ্ঞানেরর একটি কেন্দ্র গড়ে তোলার। দিজিয়েনগুয়েরবার (Djinguereber), সানকোরা (Sankoré) এবং সিদি ইয়াহিয়া (Sidi Yahia) ছিল মসজিদ কেন্দ্রিক বিখ্যাত গ্রন্থাগারগুলো , যা কিনা সেসময়কার মুসলিম জ্ঞানীগুনীদের বিচরনে আর তাদের নিজহাতে লেখা পান্ডুলিপির কারনে তিম্বাকতু পরিচিত হয় নতুন আংগিকে।



চিত্র: সানকোরা মসজিদ



চিত্র: দিজিয়েনগুয়েরবার মসজিদ



চিত্র: সিদি ইয়াহিয়া মসজিদ

সোনার শহরে নতুন সোনার খনি গড়ে উঠে এই মসজিদ এবং মাদ্রাসা ভিত্তিক ইসলামী জ্ঞান-দর্শনকে কেন্দ্র করে। আজও যেমন মাটি খুড়লে মালির মাটিতে সোনা খুঁজে পাওয়া যায় একইভাবে এখনও হাজার বছরের পুরোনো সেই জ্ঞান-দর্শনের খোঁজ পাওয়া যায় ব্যক্তিসংগ্রহে রাখা হাতে লেখা প্রাচীন আরবীয় অথবা আফ্রিকান অক্ষরে লেখা সেই ম্যানুস্ক্রিপ্টে।



চিত্র: প্রাচীন আরবীয় অক্ষরে লেখা ম্যানুস্ক্রিপ্ট



চিত্র: সেই প্রাচীন পান্ডুলিপিগুলো বিভিন্নভাবে বাঁধাই করে রক্ষন করা হত।

রাজা মানসা মুসা কেইটার বিখ্যাত হজ্ব কাফেলার গল্প একান সেকান থেকে ছড়িয়ে পড়লো বিশ্বময়। কেউ সেটা নিছক গল্প বলে ক্ষান্ত দিলেও , সেই সূদুর ইউরোপের সোনালোভীদের দল হন্য হয়ে খুঁজে ফিরতে লাগলো এই মালিতে আসার পথ। সেই পথা তাদের খুঁজে পেতে প্রায় চারশ বছর লেগে গেল। সে আরেক গল্প আরেকদিন না হয় বলা যাবে। এই মানসা মুসার সোনার গল্পে বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা অবশেষে সারা বিশ্ব ঘুরে স্থিতু হয়ে নিজ দেশে ফেরার আগে এই মালিতে এসেছিলেন ১৩৫২ খ্রীষ্ঠাব্দে ২৮ শে জুন যার বর্ননা আছে তার ভ্রমন কাহিনীতে । মালিতে ইবনে বতুতা যখন প্রথম পা রাখেন তখন মানসা মুসা পরে মানসা মুঘার হাত ঘুরে মালির রাজা তখন মানসা সুলায়মান। ইবনে বতুতার ভ্রমনকাহিনীর বর্ননাতে খুঁজে পাওয়া যায় মানসা সুলায়মান ছিলেন একজন অত্যন্ত কিপটে স্বভাবের রাজা । তিনি তার পূর্বসূরীদের মত দানবীর ছিলেননা । এমনকি রাজা মানসা সুলায়মানের পাঠানো উপহার দেখে হাসিতে ফেটে পড়েছিলেন ইবনে বতুতা কারন সেটা ছিল তিন টুকরো রুটি, তেল দিয়ে ভাজা গরুর একটা টুকরা মাংশ আর কদুর খোলে টক দই। অবশ্য পরবর্তীতে মানসা সুলায়মানের সাথে রাজ দরবারে দেখা হলে ইবনে বতুতা বেশ কড়াভাবেই অনুযোগ করে রাজাকে বলেছিলেন যে এধরনের উপহার তিনি কোনভাবেই রাজার কাছে থেকে আশা করেননি, উপরন্ত রাজা মানসা সুলায়মানের উপহারের গল্প তিনি কিভাবে অন্যদেশে ভ্রমনের সময় বলবেন এই সম্পর্কে প্রশ্ন করলে , রাজা লজ্জা পেয়ে তৎক্ষনাৎ তেত্রিশ মিথকাল ( সে সময়ে মালিতে ব্যবহৃত সোনার মুদ্রা) দিয়ে কোনরকমে ইবনে বতুতার মুখ বন্ধ করেন।



চিত্র: রাজা মানসা সুলায়মানের সাক্ষাতে ইবনে বতুতা

ইবনে বতুতার লেখায় আরো জানা যায় সে সময়ে মালিতে সময়মত নামাজ পড়া ছিল একটা বাধ্যবাধকতার মত বিষয়। এমনকি দেরীতে মসজিদে গেলে নামাজের জায়গা পাওয়া বেশ কঠিন হয় পড়ে বিশেষ করে জুম্মার দিনে। শুক্রবারে জুম্মার নামাজে সকলে ধবধবে সাদা পোশাক পড়ে যায় । এবং সেসময়ে ছেলেমেয়েদের জন্য কুরআন মুখস্ত করা ছিল প্রায় ফরযের মত। এমনকি কেউ যতক্ষন না কোরআন মুখস্ত না করবে সেসময় পর্যন্ত তাদের শেকলে পা বেঁধে রাখা হত। তিম্বাকতুর অন্যতম আকর্ষন এই ম্যানুস্ক্রীপ্ট বা পান্ডুলিপি বিষয়ে বিস্তৃত কাহিনী রয়েছে । এই বিষয়ের অনেক অজানা গল্পের না হয় আরেকদিন করা যাবে।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মার্চ, ২০১৯ রাত ১২:৫৩
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×