somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আফ্রিকার পাহাড়ী অরণ্য আর কালো মানুষের কথা (শেষ পর্ব)

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৭ সকাল ৭:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আফ্রিকার কংগো দেশটির দক্ষিনে সীমান্ত শহর লুবুম্বাসি । সৌন্দর্য এবং নাগরিক সুবিধার উপর ভিৎতি করে কংগোর রাজধানী কিনশাসার পরই এই শহরের স্হান । গৃহযুদ্ধে শহরটিকে তেমন একটা ক্ষতিগ্রস্হ করতে পারেনি। শহরটি পুরোপুরি ইউরোপীয়ান (বেলজিয়াম স্হাপত্যর প্রভাব আছে ) ধাঁচে গড়ে ওঠা এক শহর। কংগোর অন্যান্য শহরের তুলনায় এখানকার লোকজন কিছুটা নমনীয়এবং শান্ত প্রকৃতির। এখানকার রাস্তাগুলো বেশ প্রশস্ত এবং রাস্তার দুই ধারে একই প্যাটর্নের ভিলা টাইপ একতলা বাড়ির সারি ।



কংগো যখন বেলজিয়ামদের অধীনে ছিল এই শহরটি তখন গোরাপত্তন হয় বেলজিয়ামদের হাতে।


শহরটিতে আছে একটি হর্স রাইডিং ক্লাব ।এই ক্লাবটি মূলত গড়ে উঠেছিল বেলজিয়াম ঔপেনবেশিক আমলে। তখনকার অভিজাত শ্রেনী তাদের মনোরন্জনের উদ্দেশ্যে এই ক্লাবটি গঠন করেন। এখানে আছে একটি ঘোড়া দৌড়ের ট্র্যাক এবং দর্শকদের বসার ব্যাবস্হা মনে করিয়ে দেয় একসময় এখানে প্রচুর ঘোড়া দৌড়ের আয়োজন হত।সেই সাথে লাগামহীন ভাবে চলতো বাজিকরদের বাজি ধরা ।


এই শহরে আছে একটি চমৎকার গলফ ক্লাব । যদিও আমি গলফের গ বুঝিনা তবে অনেকগুলো গলফ ক্লাব দেখার কারনে একটা আইডিয়া ছিল । লুবুম্ববাসির এই গলফ ক্লাব দেখে মনে হল যে কোন আন্তর্জাতিক মানের টুর্নামেন্টের জন্য এই গলফ গ্রাউন্ড উপযুক্ত।



এই শহরে আরও আছে একটি পাঁচ তারকা হোটেল নাম কারাভিয়া যদিও অব্যবস্হাপনায় ওটাকে এখন আর ৫ তারকা বলা যাবে কিনা সন্দেহ আছে। বর্তমানে কংগোর স্হিতিশীল পরিবেশ এবং একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর অনেক বিদেশী কোম্পানী এই দেশে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে।


ফলে এই পাঁচ তারকা হোটেলে এসে দেখতে পেলাম অনেক বিদেশী লোকের ভীড়। হোটেল লবীতে এবং লাউন্জে অসংখ্য পদচারনায় মুখরিত। ঝাড়বাতির আর গ্লাসের টুংটাং শব্দ সাথে ললনাদের চপল হাসির আওয়াজে বুঝতে পারলাম হোটেলটি তার বিগত যৌবন ফিরে পেতে যাচ্ছে অচিরেই। হোটেলের সদর দরজায় দেখতে পেলাম কাঠের উপর এক খোদাই করা অসম্ভব সুন্দর এক বিশাল চিত্র যা প্রমান করে এই জাতি শুধু হিংস্রতা নয় বরং তারা তাদের মনে লালন করে এক শিল্পী মনের প্রতিচ্ছবি।



হোটেলের ভেতরে কিছুদূর গিয়ে দেখতে পেলাম হোটেলের সুইমিং পুলের পাশে খোলা জায়গায় দর্শকদের মাতিয়ে রেখেছে নাচে আর গানে এক গায়ক তার লাইভ কনসার্টের আসরে । দেরী না করে গানের ফাঁকে দাড়িয়ে গেলাম তার পাশে ছবি তোলার জন্য ।


জাম্বিয়ার সীমান্ত ঘেঁষে এই শহরটি মূলত প্রসিদ্ধ হীরা কেনা বেঁচার জন্য । এই শহরটির আশপাশের বেশকটি স্হানে পৃথিবীর অন্যতম হীরক খনিগুলো অবস্হিত । বুজুঁমায়ি এমন একটি স্হান ।প্রতিবছর কংগো থেকে হীরা পাচার হয়ে ইউরোপের বাজারে প্রবেশ করছে ।




আর এই স্বচ্ছ হীরক স্ফটিকের গায়ে যে কত কালো মানুষের রক্ত ঘাম আর বন্চনার ইতিহাস জঁড়িয়ে আছে কে রাখে তার খবর।কোন দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ সেই দেশের জন্য আর্শীবাদ কিন্তু কংগোর জন্য সেটা ঠিক বিপরীত । এই দেশটির উপর সেই প্রাচীনকাল থেকে আজও পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর লোলুপ দৃষ্টি রয়েছে।এবং বিভিন্ন কৌশলে তারা এই সম্পদ নিজ দেশে পাচার করে নিয়ে যাচ্ছে ।



এই শহরটিতে একটি কপার মাইন আছে এবং সেটা এখন ও উৎপাদনশীল ও কার্যক্ষম । দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা গৃহযুদ্ধর কারণে অনেক আগে থেকেই এই দেশ থেকে বিদেশী কোম্পানীগুলো ব্যবসা গুটিয়ে চলে গিয়েছিল কিন্ত অবস্হা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হওয়ায় এখন আবার বিখ্যাত মাইন কোম্পনীগুলো ফিরে আসতে শুরু করেছে এই দেশে।



লুবুম্বাসি শহরটিতে বেশ কিছু কুটিরশিল্পর দেখার সৌভাগ্য হল।এখানকার একটা বেশ পরিচিত শিল্প হচ্ছে ম্যালাকাইট নামে একধরনের পাথর পলিশ করে এরা খোঁদাই করে বিভিন্ন পশুপাখির মুর্তি , দাবার বোর্ড এবং অনেক কিছুর আকৃতি তৈরী করে ।যা ড্রইংরুমে শোকেসে সাঁজিয়ে রাখার মত ।














এছাড়া ও এই শহরে প্রচুর ভারতীয়দের বাস যারা মূলত ব্যবসা র সাথে জড়িত । এছাড়া শহরটিতে বেশ সুন্দর সুন্দর গীর্জার পাশাপাশি বেশকিছু সুন্দর মসজিদ আছে । এই শহরে মুসলমানের সংখ্যও কম নয় । ঘটনাক্রমে এই শহরটিতে ভ্রমনকালে আমি বাংলাদেশ থেকে ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্য তাবলীগ জামাতের আসার খবর পাই ,মসজিদের কিছু লোক মারফত কিন্তু সময় স্বল্পতার কারনে তাদের সাথে আর দেখা করার সুযোগ আমার হয়নি। আরেকটি মজার বিষয় হচ্ছে জীবনে এই প্রথম আমি প্রথম কোন ইহুদীদের উপাসনালয় দেখলাম এই শহরে । তবে গাইডের মুখে শুনলাম এখন আর কোন ইহুদী এই শহরে বাস করেনা বলে অনেকদিন ধরে এই ইহুদি উপাসনালয়টি বন্ধ আছে ।



এখানকার জনসাধারন বেশিরভাগ সোহেলী ভাষায় কথা বলে । এছাড়া সরকারী ভাষা হিসাবে আছে ফ্রেন্চ ।এখানকার বাজারে বেশ মজাদার এবং মুখরোচক অসংখ্য মাছ পাওয়া যায় যার মধ্য একটি অন্যতম আইটেম হচ্ছে বাচ্চা কুমির । বাজারেগেকে দেখতে পাওয়া যায় অসংখ্য বাচ্চা কুমির মৃত অথবা জ্যান্ত বিক্রী হচ্ছে ।




আর মাত্র কিছুদিন তারপর কালো মানুষদের বিদায় জানাবো।ফিরে যাবো আমার নিজ দেশে ,তবু এই বুকে রয়ে যাবে আফ্রিকার এই কালো মানুষদের হাসিকান্না আর না বলা অনেক কথা ।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুলাই, ২০০৮ সকাল ১০:৩২
১২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×