আফ্রিকার কংগো দেশটির দক্ষিনে সীমান্ত শহর লুবুম্বাসি । সৌন্দর্য এবং নাগরিক সুবিধার উপর ভিৎতি করে কংগোর রাজধানী কিনশাসার পরই এই শহরের স্হান । গৃহযুদ্ধে শহরটিকে তেমন একটা ক্ষতিগ্রস্হ করতে পারেনি। শহরটি পুরোপুরি ইউরোপীয়ান (বেলজিয়াম স্হাপত্যর প্রভাব আছে ) ধাঁচে গড়ে ওঠা এক শহর। কংগোর অন্যান্য শহরের তুলনায় এখানকার লোকজন কিছুটা নমনীয়এবং শান্ত প্রকৃতির। এখানকার রাস্তাগুলো বেশ প্রশস্ত এবং রাস্তার দুই ধারে একই প্যাটর্নের ভিলা টাইপ একতলা বাড়ির সারি ।
কংগো যখন বেলজিয়ামদের অধীনে ছিল এই শহরটি তখন গোরাপত্তন হয় বেলজিয়ামদের হাতে।
শহরটিতে আছে একটি হর্স রাইডিং ক্লাব ।এই ক্লাবটি মূলত গড়ে উঠেছিল বেলজিয়াম ঔপেনবেশিক আমলে। তখনকার অভিজাত শ্রেনী তাদের মনোরন্জনের উদ্দেশ্যে এই ক্লাবটি গঠন করেন। এখানে আছে একটি ঘোড়া দৌড়ের ট্র্যাক এবং দর্শকদের বসার ব্যাবস্হা মনে করিয়ে দেয় একসময় এখানে প্রচুর ঘোড়া দৌড়ের আয়োজন হত।সেই সাথে লাগামহীন ভাবে চলতো বাজিকরদের বাজি ধরা ।
এই শহরে আছে একটি চমৎকার গলফ ক্লাব । যদিও আমি গলফের গ বুঝিনা তবে অনেকগুলো গলফ ক্লাব দেখার কারনে একটা আইডিয়া ছিল । লুবুম্ববাসির এই গলফ ক্লাব দেখে মনে হল যে কোন আন্তর্জাতিক মানের টুর্নামেন্টের জন্য এই গলফ গ্রাউন্ড উপযুক্ত।
এই শহরে আরও আছে একটি পাঁচ তারকা হোটেল নাম কারাভিয়া যদিও অব্যবস্হাপনায় ওটাকে এখন আর ৫ তারকা বলা যাবে কিনা সন্দেহ আছে। বর্তমানে কংগোর স্হিতিশীল পরিবেশ এবং একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর অনেক বিদেশী কোম্পানী এই দেশে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে।
ফলে এই পাঁচ তারকা হোটেলে এসে দেখতে পেলাম অনেক বিদেশী লোকের ভীড়। হোটেল লবীতে এবং লাউন্জে অসংখ্য পদচারনায় মুখরিত। ঝাড়বাতির আর গ্লাসের টুংটাং শব্দ সাথে ললনাদের চপল হাসির আওয়াজে বুঝতে পারলাম হোটেলটি তার বিগত যৌবন ফিরে পেতে যাচ্ছে অচিরেই। হোটেলের সদর দরজায় দেখতে পেলাম কাঠের উপর এক খোদাই করা অসম্ভব সুন্দর এক বিশাল চিত্র যা প্রমান করে এই জাতি শুধু হিংস্রতা নয় বরং তারা তাদের মনে লালন করে এক শিল্পী মনের প্রতিচ্ছবি।
হোটেলের ভেতরে কিছুদূর গিয়ে দেখতে পেলাম হোটেলের সুইমিং পুলের পাশে খোলা জায়গায় দর্শকদের মাতিয়ে রেখেছে নাচে আর গানে এক গায়ক তার লাইভ কনসার্টের আসরে । দেরী না করে গানের ফাঁকে দাড়িয়ে গেলাম তার পাশে ছবি তোলার জন্য ।
জাম্বিয়ার সীমান্ত ঘেঁষে এই শহরটি মূলত প্রসিদ্ধ হীরা কেনা বেঁচার জন্য । এই শহরটির আশপাশের বেশকটি স্হানে পৃথিবীর অন্যতম হীরক খনিগুলো অবস্হিত । বুজুঁমায়ি এমন একটি স্হান ।প্রতিবছর কংগো থেকে হীরা পাচার হয়ে ইউরোপের বাজারে প্রবেশ করছে ।
আর এই স্বচ্ছ হীরক স্ফটিকের গায়ে যে কত কালো মানুষের রক্ত ঘাম আর বন্চনার ইতিহাস জঁড়িয়ে আছে কে রাখে তার খবর।কোন দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ সেই দেশের জন্য আর্শীবাদ কিন্তু কংগোর জন্য সেটা ঠিক বিপরীত । এই দেশটির উপর সেই প্রাচীনকাল থেকে আজও পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর লোলুপ দৃষ্টি রয়েছে।এবং বিভিন্ন কৌশলে তারা এই সম্পদ নিজ দেশে পাচার করে নিয়ে যাচ্ছে ।
এই শহরটিতে একটি কপার মাইন আছে এবং সেটা এখন ও উৎপাদনশীল ও কার্যক্ষম । দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা গৃহযুদ্ধর কারণে অনেক আগে থেকেই এই দেশ থেকে বিদেশী কোম্পানীগুলো ব্যবসা গুটিয়ে চলে গিয়েছিল কিন্ত অবস্হা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হওয়ায় এখন আবার বিখ্যাত মাইন কোম্পনীগুলো ফিরে আসতে শুরু করেছে এই দেশে।
লুবুম্বাসি শহরটিতে বেশ কিছু কুটিরশিল্পর দেখার সৌভাগ্য হল।এখানকার একটা বেশ পরিচিত শিল্প হচ্ছে ম্যালাকাইট নামে একধরনের পাথর পলিশ করে এরা খোঁদাই করে বিভিন্ন পশুপাখির মুর্তি , দাবার বোর্ড এবং অনেক কিছুর আকৃতি তৈরী করে ।যা ড্রইংরুমে শোকেসে সাঁজিয়ে রাখার মত ।
এছাড়া ও এই শহরে প্রচুর ভারতীয়দের বাস যারা মূলত ব্যবসা র সাথে জড়িত । এছাড়া শহরটিতে বেশ সুন্দর সুন্দর গীর্জার পাশাপাশি বেশকিছু সুন্দর মসজিদ আছে । এই শহরে মুসলমানের সংখ্যও কম নয় । ঘটনাক্রমে এই শহরটিতে ভ্রমনকালে আমি বাংলাদেশ থেকে ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্য তাবলীগ জামাতের আসার খবর পাই ,মসজিদের কিছু লোক মারফত কিন্তু সময় স্বল্পতার কারনে তাদের সাথে আর দেখা করার সুযোগ আমার হয়নি। আরেকটি মজার বিষয় হচ্ছে জীবনে এই প্রথম আমি প্রথম কোন ইহুদীদের উপাসনালয় দেখলাম এই শহরে । তবে গাইডের মুখে শুনলাম এখন আর কোন ইহুদী এই শহরে বাস করেনা বলে অনেকদিন ধরে এই ইহুদি উপাসনালয়টি বন্ধ আছে ।
এখানকার জনসাধারন বেশিরভাগ সোহেলী ভাষায় কথা বলে । এছাড়া সরকারী ভাষা হিসাবে আছে ফ্রেন্চ ।এখানকার বাজারে বেশ মজাদার এবং মুখরোচক অসংখ্য মাছ পাওয়া যায় যার মধ্য একটি অন্যতম আইটেম হচ্ছে বাচ্চা কুমির । বাজারেগেকে দেখতে পাওয়া যায় অসংখ্য বাচ্চা কুমির মৃত অথবা জ্যান্ত বিক্রী হচ্ছে ।
আর মাত্র কিছুদিন তারপর কালো মানুষদের বিদায় জানাবো।ফিরে যাবো আমার নিজ দেশে ,তবু এই বুকে রয়ে যাবে আফ্রিকার এই কালো মানুষদের হাসিকান্না আর না বলা অনেক কথা ।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুলাই, ২০০৮ সকাল ১০:৩২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




