somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

আশরাফ আল দীন
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ৩০ বছর চাকরি করেছি; অবসর নিয়েছি কর্নেল পদবীতে ২০০৬ সালে। এরপর এযাবৎ প্রিন্সিপাল হিসেবে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে; এখন অর্কিড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ঢাকা-তে। ‘স্কুল সাইকোলোজি’ নিয়েও কাজ করছি।

আমরা কি তাকওয়া হাসিল করেছি?

২৩ শে মে, ২০২০ বিকাল ৪:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"রামাদান" তাকওয়া হাসিলের মাস।
তাকওয়া যদি হাসিল করা না যায় তাহলে এই মাসটা হলো নিরর্থক।
আমাদের এবারের রামাদান লকডাউনে মৃত্যু ভয়ের মধ্যে কাটিয়ে দেওয়া, মসজিদে যেতে না পেরে একা একা ঘরের মধ্যে এবাদতে কাটানো রামাদান!
তবু, আলহামদুলিল্লাহ, ভালোভাবে কেটে গেছে মনে হচ্ছে।
এখন একেবারে শেষ পর্যায়ে এসে গেছি। এই পর্যায়ে এসে দেখতে পাচ্ছি আমাদের কিছু বন্ধু ফেইসবুকে নানা রকম সংঘাতমূলক পোস্ট দিচ্ছেন। সুন্নি-ওহাবি-আহলে হাদিস ইত্যাদি, 8 রাকাত বনাম ২০ রাকাত ইত্যাদির কথা বলে!
পোস্টগুলোর মতামতে থাকছে হুমকি-ধামকি ঘৃণা এবং প্রচন্ড বিরোধপূর্ণ হিংস্র কথাবার্তা!
আমার কাছে মনে হচ্ছে, রমজানের তাকওয়া অর্জনের লেশমাত্র আমাদেরকে স্পর্শ করতে পারেনি! আল্লাহ আমাদেরকে এই ধরনের বিভ্রান্তি থেকে রক্ষা করুন।
এ ধরনের বিভেদপূর্ণ পোস্ট দেওয়ার মধ্যে কি হেকমত আছে আমি এখনো বুঝতে পারলাম না!
তারাবির নামাজ ফরজ নয় ওয়াজিব নয়, নফল। কেউ যদি তারাবির নামাজ মোটেও না পড়ে, তা'ও তাকে বলা যাবে না যে সে ইসলামের বাইরে চলে গেছে। অথবা তার সাওমের হক আদায় হয়নি!
না, একথা বলার উপায় নেই।
রমজান মাসে রোজা রাখাটাই ফরজ।
রাত্রিবেলায় এবাদতের মধ্যে অনেক কল্যাণ আছে, এটা ঠিক।
সেই কল্যাণ যে যতটুকু নিতে চায় নেবে! এটা নিয়ে বিভেদ সৃষ্টি করার কি আছে?
কেউ কম কেউ বেশি এবাদত করবে, এটা তার ইচ্ছা সক্ষমতা অথবা সুবিধা-অসুবিধার বিষয়।
কারো উপর চাপিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন নেই এই নফল এবাদতকে।
কেউ ৮ বা ১২ বা ২০ বা ৩৬ রাকাত নামাজ পড়লেও ঠিক আছে, আবার কেউ সারারাত এবাদত করলেও ঠিক আছে! এটা নিয়ে বিতর্ক করতে হবে কেন?
এইসব গালিগালাজ এবং বিরোধপূর্ণ লেখালেখি পড়ে মনে হচ্ছে, তাকওয়া কারো ধারেকাছেও আসার সুযোগ পায়নি!
আমাদের আল্লাহকে ভয় করতে হবে এবং মুসলমানদের মধ্যে ঘৃণা না ছড়িয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
ইসলামের নানা উপদল বরাবরই ছিল এবং তাদের সকলকে নিয়েই মুসলিম জামাত, মুসলিম উম্মাহ। এদের কাউকেই অমুসলমান বলা যাবে না। সামান্য পার্থক্য যা কিছু আছে এটা মেনে নিয়ে একজন আরেকজনকে সহ্য করতে হবে।
কারণ, ঐতিহাসিক ভাবেই দেখা যায়, সব রকম মতপার্থক্য নিয়েই মুসলমানরা শান্তি পূর্ণ সহাবস্থান করেছে, একসাথে অমুসলমান শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে এবং একসাথে প্রশাসন চালিয়েছে।
এই শতাব্দীতে এসেই কেবল মুসলিম উম্মাহর ভেতর রাজনৈতিক বিষ ঢেলে দেয়া হয়েছে! এই কাজ করেছে মুসলমানদের শত্রু শয়তানের দোসর পাশ্চাত্যের অমুসলমানরাই। তারা একদিকে পুরো বিশ্বের মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর উপর "ওয়ার এগেইনস্ট টেরোরিজম" নাম দিয়ে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ও ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে এতদিনের শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে আসা উম্মাহর ভেতর শিয়া-সুন্নি-ওহাবী ইত্যাদি বিভিন্ন নামে আত্মঘাতী সংঘর্ষ চালু করে দিয়েছে।
এই সংঘাত আমরাই করছি নিজেরা নিজেদের বিরুদ্ধে! যা হাজার বছর ধরে হয়নি, এই শতাব্দীতে এসে তা'ই হচ্ছে! এই সবই হচ্ছে রাজনীতির নামে, এর মধ্যে কোন ধর্ম নেই। কারণ, ধর্ম আগে ছিল কিন্তু রাজনীতি ছিল না তাই কোনো বিরোধ এবং ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম ছিল না। এখন রাজনীতি এসেছে তাই বিরোধ শুরু হয়ে গেছে ভাইয়ে ভাইয়ে এবং আমরা এক মুসলমান আরেক মুসলমানকে হত্যা করছি!
এমনকি মসজিদে বোমা মেরে ও আত্মঘাতী বোমা ফাটিয়ে মুসলমান মুসলমানকে হত্যা করছে!
এটা ইসলাম নয়, এটাই ভুল রাজনীতি! আমাদেরকে এটা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
একই মুসলিম উম্মাহর ভেতরে নানা উপদল বিভিন্ন মত পার্থক্য সত্ত্বেও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে আগেও বসবাস করেছে, এখনো করতে হবে।
তবে, হ্যাঁ, প্রত্যেক উপদলের মধ্যে কিছু কিছু মানুষ আছে যারা এমন কথাবার্তা বলে অথবা এমন বিদ্বেষপূর্ণ হিংসাত্মক কথা লিখে দেয় যাতে অন্যদের গায়ে আগুন জ্বলে যায়!
কিন্তু সুস্থ বুদ্ধির প্রত্যেক মুসলমানকে এসব ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে যে, এগুলো শয়তানের কাজ! শয়তান মুসলমানদের মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি করার জন্য বিভেদ সৃষ্টি করার জন্য এই ভাবে আমাদেরকে উসকে দিচ্ছে।
কিন্তু, যে কোনো বিবেচনাতেই মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে, আমাদের সমস্ত দল-উপদলকে একসাথে থাকতে হবে।
আমাদের কেউ সুন্নি, কেউ শিয়া, কেউ আহলে হাদিস, কেউ ওহাবী, ইত্যাদি যে নামেই ডাকা হোক না কেন, সকলে আমরা মুসলমান।
আমাদের মধ্যে মৌলিক কোন পার্থক্য নেই। আগেকার দিনে বিগত হাজার বছর ধরে এই পার্থক্য গুলো মেনে নেয়া হয়েছিল, এবং এখনো মেনে নিতে হবে।
তা না হলে মুসলিম উম্মাহ আর কোনদিন প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে না, মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না গর্বিত বিজয়ী শিক্ষিত মুসলমান হিসেবে।
আল্লাহ আমাদেরকে বুঝার তৌফিক দিন। আমিন।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মে, ২০২০ বিকাল ৪:৩২
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×