টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা, সহশ্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা, ভিশন টুয়েন্টি ওয়ান বা ফোরটি ওয়ানের মতো অতি দাম্ভিক উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার লক্ষ্যনীয় দ্রস্টান্ত হচ্ছে দখলদার লুটেরা পুজিপতি পেশিবাজ মুনাফাখোরদের ল্যান্ড, ফরেস্ট, এনভাইরোনমেন্ট ও ক্লাইমেটের উপর অতি জোচ্চোরি নির্যাতন চালানোর সুযোগ করে দিয়ে মেকলে তাত্বিক রাজনীতির বিকাশ ও হরিজনদের অতি হরিজন করে জালিয়াত চক্রের ঘরবাড়ি, অফিস, বেডরুম, স্টোররুমকে রিজার্ভ ব্যাংকে পরিনত করা। উন্নয়ন হচ্ছে অতি উন্নয়ন পুজির বিকাশ ও মালিকানা কার হচ্ছে? উতপাদন বাড়লে বাজার অর্থনীতির গতি আসে। উতপাদনের বৃহত্তম ফ্যাক্টর মানবসম্পদের উন্নয়ন সুচক বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশে আদৌ কি তা হচ্ছে? কিছুদিন পুর্বে জাতিসংঘের মানবসম্পদ উন্নয়ন সুচক ব্যুরোর প্রতিবেদন অনুসারে ১৮৬ টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৬ তম। মানবসম্পদ উন্নয়নে বাংলাদেশের বড় সাফল্য আছে তামিল সিনেমার লুঙ্গি উর্দি পরা স্থানীয় গডফাদারের হাসুয়া রামদা বহনকারী কালো কিম্ভুতকিমাকার লম্বা লম্বা চুল গোফের সন্ত্রাসী বাহিনী বাঙ্গালীদের বড় আদর্শ শিক্ষার জায়গা। তামিল সিনেমায় যেমন কথায় কথায় হাসুয়া রামদা ঝন ঝন করে বেজে ওঠে, দখলদার জুলুমবাজ পেশিবাজ শক্তি এমন চির অশান্তির শিক্ষা দেয় যেন ঐ অঞ্চল কোন আধুনিক রাষ্ট্রের অংশ নয়। সেখানে নির্বিচারে মানুষকে কচু কাটা করা যায়। খুন হত্যা ধর্ষন কোন ঘটনাই না।আবার সাধারন মানুষ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তা উপভোগ করে। কোন নৃশংসতাই যেন তাদের অবাক করতে পারেনা। আমরাও আর অবাক হইনা, এ দেশে আজ অবাক হওয়াটাই বড় অবাক ব্যপার। কার্বন গ্যাস বৃদ্ধি পৃথিবীব্যপী বড় উদ্বেগের কারন। প্যারিসের সম্মেলন শেষ। এর আগেও দুটি সম্মেলন হয়েছে সফলতা বিফলতা সকলের জানা। সুন্দরবনের নিকট ভারতীয় কার্বন উতপাদন কারি বাহিনীর দ্বারা নির্মিতব্য প্রকল্প রামপাল দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিবেশবীদ, বিশ্লেষক থেকে স্বল্পজানা মানুষের কাছেও বড়ো উদ্বেগের কারন। যখন সুন্দরবন রক্ষার নামে দেশের পরিবেশবাদী সংগঠন, লেখক, বুদ্ধিজীবি, শিক্ষক সচেতন নাগরিক সবাই ভারতীয় আগ্রাসনবাদী প্রকল্প রামপালের বিরুদ্ধে মিটিং, মিছিল, মানববন্ধন ও বৃহত্তর লংমার্চসহ পত্রিকায় জোর কলম চালাচ্ছেন ঠিক তখনি রংপুর দিনাজপুর অঞ্চলের সমতলভুমিতে অবস্থিত সামাজিক বনায়ন প্রকল্প উজাড় হতে চলেছে।কিন্তু এসব নিয়ে এখন পর্যন্ত কোন পত্রিকা বা টেলিভিশনে একটি প্রতিবেদন পর্যন্ত চোখে পড়েনি। সরকারি মালিকানা খাশ জমিতে লাগানো এসব বনভুমি এখন অনেকটা মৃতচারন ভুমি। বনবিভাগের শত শত হেক্ট্রর জমির গাছ কেটে এখন সেখানে চাষাবাদ করা হচ্ছে। অথচ এ ব্যপারে বনবিভাগ এখন পর্যন্ত নির্লিপ্ত। বনবিভাগ উজাড় হয়ে যাওয়ার পিছনে বনদস্যু, ভুমিখেকো লূটেরা স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও প্রভাবশালি মহলের সাথে বন কর্মকর্তাদের যে হাত রয়েছে তার প্রকাশ্য প্রমান আছে।অনেক সময় ভুমিহীন প্রান্তিক মানষদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বন কেটে সেখানে বাড়ি করে দেওয়ার প্রলভন দেখাচ্ছেন সরকাদলীয় নেতারা, কিন্তু অধিকাংশ সময় বঞ্চিত হচ্ছেন এসব সাধারন মানুষ।আমার নিজের এলাকায় টাকা নিয়ে বাড়ি করে না দেওয়ার কারনে কিছুদিন পুর্বে স্থানীয় এক নেতাকে লাঞ্চিত করে ভুক্তভোগী এক ব্যক্তি তার জের ধরে ঐ ব্যক্তি এখন এলাকা ছাড়া। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সরকার দলীয় নেতারা জমি দখল করছেন ঠিকই কিন্তু ভুমিহীনদের ভাগ্যে সে ফরমাস আর জুটছেনা। গত ১০ বছর পুর্বে রংপুর দিনাজপুর বনবিভাগের অধিনে যে জমি ছিল তা এখন অর্ধেকে নেমে এসেছে। অবশিষ্ট যা বাকি রয়েছে তাও দখল করার জন্য চলছে পেশীশক্তির জোর লড়াই।মাত্র কিছুদিন আগে বনাঞ্চলের জমি দখলকে কেন্দ্র করে দিনাজপুরের মধ্যপাড়া রেঞ্জের গিলাঝুকি মৌজায় দুই গ্রুপের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই দুইজন মারা যায়। বন পাহারার প্রয়োজনীয় অভাবে রাতে গাছ কাটা দিনের বেলা গাছের গোড়ালি বা মুড়া তুলে পরে তা মালিকানা জমির সাথে মিলিয়ে দখল করে ফেলা এই হচ্ছে সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের বর্তমান নিয়তি। বন কর্মকর্তাদের দুর্নিতি অযোগ্যতার কারনে প্রশাসনিক কোন ব্যাবস্থাই এদের বিরুদ্ধে কার্যকর হচ্ছেনা। অভিযোগ এমনো আছে যে লাখ টাকার বিনিময়ে বন কর্মকর্তারাই এসব কাজের মুল হোতা হিসাবে কাজ করছেন। এমন অবস্থা ধারাবাহিক থাকলে আগামী ৫ বছরের মধ্যে সামাজিক বনায়ন প্রকল্প যে ইতিহাস হবে তা নিশ্চিত করে বলা যায়। সরকার পরিবেশ প্রকৃতি জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষন ও উন্নয়নের দেশের সংবিধানের কাছে দায়বদ্ধ হওয়া সত্তেও সে দায় যেন কোনভাবেই নিতে চাইছেনা। সংবিধানের দ্বিতীয় অধ্যায় রাষ্ট্র পরিচালনার মুলনিতির অনুচ্ছেদ ১৮(ক)তে সুস্পস্টভাবে ঊল্লেখ আছে ্যে রাষ্ট্র বর্তমান ও ভবিষ্যত নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষন ও উন্নয়ন করিবেন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ জীব বৈচিত্র্য, জলাভুমি, বন ও বন্য প্রানী সংরক্ষন ও নিরাপত্তা বিধান করিবেন। সংবিধানের মর্যাদা রক্ষার খাতিরে হলেও এখনি দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে সামাজিক বনায়ন প্রকল্প রক্ষায় সরকার এগিয়ে আসবেন এমনটাই আশা সবার।
আশরাফুজ্জামান মন্ডল
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:৫৭