সিন্দুরমতির কিংবদন্তিতে জানা যায়, এটি হিন্দুদের তীর্থক্ষেত্র। কথিত আছে, সেখানে বাস করতেন এক প্রজাবৎসল রাজা। এক সময় রাজ্যে তীব্র খরা দেখা দেয়। নদী-নালা, খাল-বিল সব ফেটে চৌচির। প্রজারা পানীয় জলের ভীষন কষ্টে পড়েন। জমিদার পড়ে যান দুশ্চিন্তায়। অবশেষে প্রজা হিতৈষী জমিদার স্বপ্নদ্রষ্ট হয়ে রাজ প্রাসাদের অনতি দূরে একটি পুকুর খননের উদ্যোগ নেন। খননকাজে কয়েক হাজার শ্রমিক নিয়োগ করা হলো। কিন্তু অনেক গভীরে খনন করেও পকুরে এক ফোটা জলের ও সন্ধান পাওয়া গেল না। জমিদার কিংকর্তব্যবিমূঢ়। জমিদার আবারও স্বপ্নাদ্রষ্ট হলেন। পরদিন জমিদার স্বপ্নাদেশ অনুযায়ী তার দ’ুকন্যা সিন্দুর ও মতিকে নিয়ে জলবিহীন পুকুরের তলদেশে গিয়ে পুঁজা করতে নামলেন। এমন সময় জমিদারের মনে পড়ে গেল যে তিনি ভূলবশতঃ বেল্য পত্র ছেড়ে এসেছেন। তাই তিনি বেল্য পত্র আনার জন্য পুকুর পাড়ে উঠার সাথে সাথেই পুকুরের তলদেশ ভেদ করে তীব্রবেগে অজস্র জলরাশি বের হয় । নিমিষে পুকুরটি জলে ভরে যায়। এ সময় চেষ্টা করেও সিন্দুর ও মতি ডাঙ্গায় উঠতে পারেনি ।
আবার এক রাতে জমিদার স্বপ্নাদেশ প্রাপ্ত হলেন যে, তার দু কন্যা সিন্দুর ও মতির মৃত্যু হয়নি। বরং তারা দেবত্ব পেয়েছে। এ কথা জেনে জমিদার ও তার পতœী খুশি হলেন। পরবর্তীতে সিন্দুর মতির নামনুসারে পুকুরটির নাম করণ হয় সিন্দুরমতির দিঘী। এলাকাটিও পরিচিতি পায় সিন্দুরমতি হিসেবে। সে থেকেই প্রতি বছর হাজার হাজার হিন্দু ভক্ত সেখানে মিলিত হয়ে পুণ্য স্নানে অংশ নেয়। হিন্দু ধর্মাবলম্ব^ীরা পুকুরটিকে স্রষ্টার স্বর্গীয় দান মনে করেন। বর্তমানে এটি শুধু একটি সু-বিশাল পুকুর নয় এটি একটি কিংবদন্তি। কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার শেষ সীমানা এবং লালমনিরহাট জেলা সদরের প্রত্যন্ত গ্রামে এটি অবস্থিত।
বিগত সরকারের সময়ে এই পুকুরটির চারদিকে সংস্কার করা হয়েছে। পুণ্য স্নানে অংশগ্রহণকারীদের সুবিধার্থে সান বেঁধে আকর্ষনীয় করে তোলা হয়েছে। বর্তমানে প্রত্যন্ত পল্ল¬ীর এ এলাকাটি একটি মনকাড়া পরিবেশে পরিনত হয়েছে।