somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তেল গ্যাস ইজারা দিলে কেন আমার পেটের ভাত হজম হয় না !!!

২৭ শে জুন, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত কিছুদিন হল ফেসবুক , মিডিয়ায় একটি বিষয় বেশ আলোচিত হচ্ছে । ইস্যুটা হচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে করা 'প্রোডাকশন শেয়ারিং কনট্রাক্ট ' ওরফে পিএসসি - ২০০৮ এর আলোকে কনকো ফিলিপসের সাথে বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন সংক্রান্ত চুক্তি । বিষয়টাকে বিশেষজ্ঞদের আলোচনার বিষয় মনে করে অনেকেই হয়ত গা মাখাচ্ছেন না । তাই আমি গত দুইদিন হালকা পড়াশোনা করে যা বুঝলাম তাই নিজের ভাষায় আপনাদের বুঝানোর একটা ব্যর্থ প্রয়াস নিচ্ছি ।





শুরুতেই একটা উদাহরণ দিই ।
ধরুন আপনি বাজার থেকে মুরগী,গরু আর খাসীর মাংস কিনে নিয়ে আসলেন । রান্না করার তেল-মশলাও আপনার । রান্না শেষে আপনারই বাসার বুয়া গরু আর খাসীর মাংস তো পুরাটা নিয়ে গেলই । মুরগীর মাংসের তরকারী দিল আপনাকে মাত্র ২০ % । আর যদি রান্নার মশলা জোগাড় করতে না পারেন তাইলে ওই ২০% ও পাবেন না । যাহা ছিল নিয়ে গেল সোনার তরীর মত সবটুকু নিয়ে চলে যাবে । এবার আপনি একটু ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করে দেখুন এমন কাজের বুয়া রাখবেন কিনা ?


উপরের উদাহরণের সাথে এবার বাস্তবের সামঞ্জস্য খোঁজার চেষ্টা করি আসুন ।


চুক্তিপত্রের সর্বপ্রথম সমস্যা যা বুঝলাম তা হল জ্বালানীর সংজ্ঞা ।

চুক্তিপত্রের ২ নং ধারার ১ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ,

এর তাৎপর্য হল চুক্তিপ্রাপ্ত কোম্পানী পেট্রোলিয়াম অনুসন্ধান ও উত্তোলন করবে ।

এখন পেট্রোলিয়ামের সংজ্ঞা দেওয়া এভাবে

দেখতে পাচ্ছি পেট্রোলিয়ামের সংজ্ঞায় তরল হাইড্রোকার্বনের উল্লেখ আছে । আর আমরা কমবেশী সবাই অবগত আছি খনিজ তেল , অ্যাসফাল্ট , বিটুমিন এরাও তরল হাইড্রোকার্বনের অন্তর্গত ।

সমস্যা দানা বাঁধছে তখনই যখন ১৫নং ধারার ৫অনুচ্ছেদের ৪ উপঅনুচ্ছেদে বলা হচ্ছে

আর লক্ষ্য করলে দেখবেন শুধুই গ্যাসের কথা উল্লেখ আছে । যদি যথেষ্ট পরিমাণ তেল কিংবা অন্য খনিজ পাওয়া যায় তখন?? একটা বড় ফোঁকর তাই থেকেই যাচ্ছে । ব্যাপারটা অনেকটা গরু খাসী দুইটাই বুয়া নিয়ে চলে যাওয়ার মত নয় কি??


গ্যাসের ভাগ বাটোয়ারা কিভাবে হবেঃ

বঙ্গোপসাগরে বিশাল সম্পদ আছে সেটাকে ২৮ টি ব্লকে ভাগ করা হয়েছে তার মধ্যে দুটি ব্লক কনোকো ফিলিপসকে দেয়া হচ্ছে। যেটা বাংলাদেশের জন্য বিপদ সেটা হল, কস্ট রিকভারী এবং প্রফিট শেয়ারিং হওয়ার পরে বাংলাদেশ তার অংশ পাবে।

কস্ট রিকভারী হল তারা অনুসন্ধান ও উত্তোলনের খরচ উঠানোর জন্য মোট গ্যাসের ৫৫ শতাংশ রেখে দিবে । আর বাকী ৪৫ শতাংশ হল প্রফিট শেয়ারিং । এটা দুই পক্ষের মধ্যে ভাগাভাগি হবে এবং এখানে দরকষাকষির একটা ব্যাপার আছে । সরকার যেহেতু এখনো চুক্তিটি জনসমক্ষে প্রকাশ করছে না তাই ধরে নিলাম সর্বোচ্চ ২০ শতাংশই বাংলাদেশ পাচ্ছে । তবে কোনভাবেই বাংলাদেশ ২০% এর বেশি গ্যাস পাবে না। এবং সেই গ্যাসটা স্থলভাগে আনতে হলে বাংলাদেশের নিজের অবকাঠামো তৈরী করে আনতে হবে। এই অবকাঠামো বলতে পাইপ লাইন তৈরী করতে হবে গ্যাস আনার জন্য যা একটা বিশাল ব্যয়সাধ্য ব্যাপার।

আর ৮০% গ্যাস তারা পেট্রোবাংলাকে অফার করবে কেনার জন্য। পেট্রোবাংলা না কেনে তবে তারা দেশের মধ্যেই কোন তৃতীয় পক্ষকে ক্রয়ের প্রস্তাব দিবে । নইলে তারা সেটা এলএনজি(তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) করে বিদেশী রপ্তানী করবে এই বিধান রয়েছে পিএসসি ২০০৮ এ।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে যদি পেট্রোবাংলা পাইপলাইন তৈরী করতে না পারে?
উত্তরঃ
সেক্ষেত্রে পেট্রোবাংলা তার ২০ শতাংশ গ্যাস রেখে দেওয়ার ক্ষমতা হারাবে । এই কথাটার অর্থ হল স্থানীয় ব্যবহারের জন্য আমরা কোন গ্যাস পাবো না । আমাদের বাধ্যতামূলকভাবে কোম্পানীর পাইপলাইন দিয়ে গ্যাস রপ্তানী করে দিতে হবে । এর ফলে এমন অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে যখন আমরা একই সঙ্গে LNG(Liquified Natural Gas) আকারে রপ্তানি করবো কম দামে এবং অপেক্ষাকৃত বেশি দামে LNG গ্যাস আমদানি করবো বিদেশ থেকে।

চারপাশে শুধু সন্দেহের বেড়াজালঃ

সন্দেহ যখন আসে তখন তো চারদিক থেকেই আসে । আরও প্রশ্ন জাগতেই পারে কেন সম্প্রতি অনুমোদিত ২০০৯-১২ সালের জন্য প্রণীত রপ্তানি নীতিতে এই প্রথমবারের মতো রপ্তানি নিষিদ্ধ পণ্যের তালিকা থেকে বিশেষ ভাবে এলএনজি গ্যাসকে বাদ রাখা হলো। রপ্তানি নীতি ২০০৯-১২’র পরিশিষ্টঐক এর ৮.১ (ক) ধারায় রপ্তানি নিষিদ্ধ পণ্যের তালিকার নীচেই লেখা হয়েছে:

‘‘সকল পেট্রোলিযাম এবং পেট্রোলিয়াম জাত উৎপাদন, তবে প্রাকৃতিক গ্যাস জাত দ্রব্য ছাড়া (যেমন, ফার্নেস অয়েল, লুব্রিকান্ট অয়েল, বিটুমিন, কনডেনসেট, এমটিটি, এমএস)।’’ তারপরেই আবার লেখা হয়েছে, ’’অবশ্য এই নিষেধাজ্ঞা উৎপাদন বণ্টন চুক্তির অধীনে বিদেশি বিনিয়োগকারী সংস্থাসমূহের অংশ পেট্রোলিয়াম বা এলএনজি রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।’’


আমাদের নিজেদেরই কি এই কাজটা করার সক্ষমতা ছিল নাঃ

প্রফেসর ম তামিম আত্মপক্ষ সমর্থনে প্রথম আলোতে যা লিখেছেন তা অনেকটাই গা বাঁচানো । তিনি বুঝাতে চেয়েছেন ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে আজ পর্যন্ত বাপেক্স তেমন কোন অভিজ্ঞতাই অর্জন করতে পারে নাই অথচ ২০০২ সাল পর্যন্ত আমাদের গ্যাসের ৯০-৯৫% গ্যাস আমরা নিজেরাই উৎপাদন করতাম। সেটা এখন নেমে দাঁড়িয়েছে ৪৭%। এই ৪৭% গ্যাস সরকার রাষ্ট্রীয় গ্যাস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান তিনটির কাছ থেকে কেনে প্রতি হাজার কিউবিক ফুট ২৫ টাকায়। যেখানে উপরের হিসাব মোতাবেক বিদেশী কোম্পানির কাছ থেকে কিনতে খরচ হয় ২৩৬ টাকা (আবু আহমেদের হিসাব মোতাবেক ২৫০ টাকা)। মজার ব্যাপার হচ্ছে- প্রতি হাজার কিউবিক ফিট এই ২৫ টাকায় বিক্রি করেও এবং তার বাইরেও সরকারকে রাজস্ব যুগিয়েও বিজিএফসিএল ও সিজিএফএল প্রতিবছর মুনাফা করে ।

এখন যদি বাপেক্সকে অকার্যকর করে রেখে বলা হয় তাদের অভিজ্ঞতা নাই ব্যাপারটা কি ইন্টার্নীর ডাক্তারের কাছে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা চাওয়ার মতই হয়ে যাচ্ছে না???

এইগুলা সবই কমবেশী পুরান কথা । নতুন করে বলতে হইতেসে কারণ বাঙালী মনভোলা । তারে সব সময়ের দৌড়ের উপর রাখতে হয় । আমি
৩ তারিখের হরতাল সমর্থন করছি । বিষয়সংশ্লিষ্ট হওয়ার কারনেই প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কিছুটা প্রতিবাদ আশাটাই স্বাভাবিক । আমিও প্রতিবাদের সাথে থাকবো । আপনিও থাকবেন কিনা চিন্তা করুন । বাড়ীতে ডাকাত পড়লে যদি প্রতিরোধের চেষ্টা এখন না করেন শেষে কিন্তু খেসারত আপনাকেই দিতে হবে ।


তথ্যসূত্র :

গ্যাস ব্লক ইজারা: এবার সাগর লুটের লাগলো ধুম
তেল-গ্যাস বুঝো না, স্বাধীনতা বুঝো?
পিএসসি-২০০৮: সহজ পাঠ

এবং
চুক্তির পক্ষে বুয়েটের অধ্যাপক ম তামিমের বক্তব্য (মডেল পিএসসির প্রণেতা)
এবং তার যুক্তি খন্ডন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অর্থনীতিবিদ ডঃ এম এম আকাশের বক্তব্য
৫৩টি মন্তব্য ৫০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×