somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইতিহাসের পাঠশালায়: পর্ব-৩৪ | পবিত্র রোমান সাম্রাজ্য: ১৬৫৮-১৮০৬ সাল

১১ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


প্রথম লিওপোল্ড (১৬৫৮-১৭০৫ সাল): সম্রাট তৃতীয় ফার্ডিনান্ডের মৃত্যুর পর ক্ষমতায় আসেন তাঁর দ্বিতীয় পুত্র লিওপোল্ড। লিওপোল্ডের পুরো নাম ‘লিওপোল্ড ইগনাজ জোসেফ বালতাসার ফেলিসিয়ান’। তাঁর মায়ের নাম ছিল মারিয়া অ্যানা অভ স্পেন। ১৬৫৮ সালে লিওপোল্ড ‘পবিত্র রোমান সম্রাট’ হয়েছিলেন। ১৭০৫ সালে তাঁর মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি সম্রাটের পদে বহাল ছিলেন। ‘পবিত্র রোমান সম্রাটদের’ তালিকা অনুযায়ী তিনি ‘প্রথম লিওপোল্ড’ হিসেবে পরিচিত। ১৬৫৪ সালে লিওপোল্ডের বড় ভাই চতুর্থ ফার্ডিনান্ডের মৃত্যু হওয়ায় তিনিই পিতার উত্তরাধিকারী নির্বাচিত হয়েছিলেন। ‘পবিত্র রোমান সম্রাট’ হওয়ার পাশাপাশি তিনি হাঙ্গেরি-ক্রোয়েশিয়া ও বোহেমিয়ার রাজাও ছিলেন।

লিওপোল্ডের শাসনামলের দুটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল উসমানীয় সাম্রাজ্যের সাথে সংঘটিত যুদ্ধ এবং তাঁর চাচাত ভাই ও ফ্রান্সের রাজা চতুর্দশ লুইসের সাথে তাঁর যুদ্ধের ঘটনা। লিওপোল্ড এক দশকেরও বেশি সময় ধরে উসমানীয় তুর্কি সাম্রাজ্যের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন। এ যু্দ্ধ ‘গ্রেট টার্কিশ ওয়ার’ অর্থাৎ ‘তুর্কি মহাযুদ্ধ’ নামে পরিচিত। দীর্ঘ সময় ধরে সংঘটিত এ যুদ্ধের পর লিওপোল্ড বিজয়ীর বেশ পরতে সক্ষম হন।

এ যুদ্ধে সামরিক দক্ষতা প্রদর্শনের জন্য তিনি স্যাভয়ের প্রিন্স ইউজিনকে বিশেষ কৃতিত্ব প্রদান করেছিলেন। যুদ্ধজয়ের ফলে লিওপোল্ড ‘কার্লোউইটজ চুক্তির’ মাধ্যমে হাঙ্গেরি রাজ্যের তুর্কি অধিকৃত অঞ্চলসমূহ পুনরুদ্ধার করতে পেরেছিলেন। ১৫২৬ সালে ‘মোহাস যুদ্ধের’ পর উসমানীয় তুর্কিরা এসব অঞ্চল দখল করে নিয়েছিল।

ফ্রান্সের সাথে লিওপোল্ডের যুদ্ধ হয়েছিল মোট তিনবার। এ তিনটি যুদ্ধ হল: দি ডাচ ওয়ার, দি নাইন ইয়ারস ওয়ার এবং দি ওয়ার অভ স্পেনিশ সাকসেশন। এর মধ্যে স্পেনিশ সাকসেশনের যুদ্ধটি ইউরোপকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। এ যুদ্ধের কারণ হল স্পেনের প্রয়াত রাজার ইচ্ছার বিরুদ্ধে লিওপোল্ড তাঁর কনিষ্ঠ পুত্রকে স্পেনিশ সিংহাসনের উত্তরাধিকারী বানাতে চেয়েছিলেন।

লিওপোল্ডের যুদ্ধের সাথে পুরো ইউরোপ জড়িয়ে পড়েছিল। যুদ্ধের প্রাথমিক বছরগুলোতে অস্ট্রিয়া বেশ সাফল্য অর্জন করেছিল। শেলেনবার্গ ও ব্লেনহেইমে অস্ট্রিয়া বিজয় লাভ করেছিল। কিন্তু যুদ্ধটি কোনভাবেই শেষ হতে চাচ্ছিল না। লিওপোল্ডের মৃত্যুর পরে আরও নয় বছর ধরে চলেছিল এ যুদ্ধ।


চিত্র: উসমানীয় তুর্কী সৈন্য

১৭০০ সাল থেকে ১৭১৪ সাল পর্যন্ত চলা এ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারি ইউরোপীয় দেশগুলোর ওপর এ যুদ্ধের প্রভাব পড়েছিল খুবই প্রত্যক্ষভাবে। যুদ্ধের অবসানের পর শান্তি প্রতিষ্ঠিত হলেও অস্ট্রিয়া আর আগের মতো শক্তিমত্তা নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি; যেমনটি পেরেছিল অতীতে তুর্কিদের সাথে যুদ্ধের পরে।

প্রথম জোসেফ (১৭০৫-১৭১১ সাল): ১৭০৫ সালে সম্রাট প্রথম লিওপোল্ডের মৃত্যুর পর ক্ষমতায় আসেন তাঁর জ্যোষ্ঠপুত্র জোসেফ। তিনি ছিলেন সম্রাট প্রথম লিওপোল্ডের তৃতীয় রানী ইলিওনরের গর্ভজাত সন্তান। ১৭০৫ সাল থেকে ১৭১১ সালে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত তিনি ছিলেন ‘পবিত্র রোমান সম্রাট’। সম্রাটের তালিকা অনুযায়ী তিনি ছিলেন ‘প্রথম জোসেফ’।

১৬৮৭ সালে যখন জোসেফের বয়স ছিল মাত্র ৯ বছর তখন তিনি হাঙ্গেরির মুকুটধারী রাজা হয়েছিলেন। ১৬৯০ সালে এগারো বছর বয়সে তিনি জার্মানির রাজা হয়েছিলেন। পিতার মৃত্যুর পর তিনি সম্রাটের সিংহাসনের সাথে বোহেমিয়ার সিংহাসনও লাভ করেছিলেন।

জোসেফ ফ্রান্সের সাথে তাঁর পিতার রেখে যাওয়া যুদ্ধ চালিয়ে গিয়েছিলেন। স্পেনিশ সিংহাসনের উত্তরাধিকার নিয়ে ফ্রান্সের রাজা চতুর্দশ লুইসের সাথে তাঁর পিতার এ যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। জোসেফের কনিষ্ঠ ভাই চার্লসকে স্পেনিশ সিংহাসনে বসানোর এক অর্থহীন ঝোঁকের বশবর্তী হয়ে তাঁর পিতা এ যুদ্ধ শুরু করেছিলেন।

জোসেফ তাঁর জনৈক সেনাপতি প্রিন্স ইউজিনের কয়েকটি সামরিক সাফল্যের সুবাধে ইতালির উপর অস্ট্রিয়ান হেজিমনি (প্রভাব) প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ফ্রান্সের রাজা চতুর্দশ লুইসের প্ররোচনায় হাঙ্গেরিতে জোসেফের বিরুদ্ধে একটি বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। জোসেফকে দীর্ঘদিন ধরে এ বিদ্রোহ সামলাতে হয়েছিল। জোসেফের মৃত্যুর পরও ‘পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যে’ সংঘাতের অবসান হয়নি।

ষষ্ঠ চার্লস (১৭১১-১৭৪০ সাল): ১৭১১ সালে সম্রাট প্রথম জোসেফের মৃত্যুর পর ‘পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের’ ক্ষমতায় আসেন তাঁর কনিষ্ঠ ভাই চার্লস। চার্লস ১৭১১ সাল থেকে ১৭৪০ সালে তাঁর মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত ‘পবিত্র রোমান সম্রাট’ ছিলেন। সম্রাটের তালিকা অনুযায়ী তিনি ‘ষষ্ঠ চার্লস’ নামে পরিচিত।

‘পবিত্র রোমান সম্রাট’ হওয়ার পাশাপাশি চার্লস ছিলেন হাঙ্গেরি-ক্রোয়েশিয়ার রাজা, সার্বিয়ার রাজা এবং অস্ট্রিয়ার আর্চডিউক। এছাড়াও ১৭০০ সালে স্পেনের রাজার মৃত্যুর পর চার্লস স্পেনিশ সিংহাসনের উত্তরাধিকারের দাবীদার হয়েছিলেন। অবশ্য এ দাবী ফলপ্রসু হয়নি।

চার্লসের স্ত্রী ছিলেন এলিজাবেথ অভ ব্রুনসউইক যার গর্ভে তিনি দুই কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন। ১৭১৭ সালে জন্ম নিয়েছিল জ্যোষ্ঠকন্যা মারিয়া থেরেসা এবং ১৭১৮ সালে জন্ম নিয়েছিল কনিষ্ঠ কন্যা মারিয়া অ্যানা। মারিয়া অ্যানা বড় হওয়ার পর অস্ট্রিয়ান নেদারল্যান্ডের গভর্নেস হয়েছিলেন। হাবসবার্গ রাজবংশের শেষ স্বাধীন শাসক ছিলেন তিনিই।

চার্লসের কোন পুত্রসন্তান না থাকায় তিনি কন্যাসন্তানকেই উত্তরাধিকারী হিসেবে প্রস্তুত করতে চেষ্টা করেন। কিন্তু তাঁর এ প্রচেষ্টা প্রচলিত নিয়মের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না। চার্লস তাঁর বড় ভাই ও সাবেক সম্রাট প্রথম জোসেফের সন্তানদের ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা ঠেকাতে তাঁর কন্যাসন্তানকেই বৈধ উত্তরাধিকারী হিসেবে রেখে যেতে চেষ্টা করেন।

এ ক্ষেত্রে চার্ল্স তাঁর পিতা লিওপোল্ডের সময়ে জারিকৃত ডিক্রিকে উপেক্ষা করেন। সে ডিক্রিতে তিনি নিজেও স্বাক্ষর করেছিলেন। চার্লস তাঁর ইচ্ছার স্বপক্ষে অন্যান্য ইউরোপীয় শক্তিসমূহের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করেন। কিন্তু সমর্থন প্রদানের ক্ষেত্রে অন্যান্য রাষ্ট্রসমূহ কঠিন শর্ত দাবী করে বসে।

যেমন ব্রিটেন দাবী করে যে, অস্ট্রিয়াকে তার ‘ওভারসিজ ট্রেডিং কোম্পানি’ বিলুপ্ত করে সামুদ্রিক বাণিজ্য বাদ দিতে হবে। এরপরও চার্লস বেশ কিছু দেশের সমর্থন আদায় করেছিলেন। গ্রেট ব্রিটেন, ফ্রান্স, স্যাক্সনি-পোল্যান্ড, দি ডাচ রিপাবলিক, স্পেন, ভেনিস, স্টেটস অভ দি চার্চ, প্রুশিয়া, রাশিয়া, ডেনমার্ক, স্যাভয়-সার্ডিনিয়া, বাভারিয়া এবং পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের আইনসভা তাঁর উত্তরাধিকার নীতিকে স্বীকৃতি প্রদান করে।

তবে পরবর্তীতে আবার ফ্রান্স, স্পেন, স্যাক্সনি-পোল্যান্ড, বাভারিয়া এবং প্রুশিয়া স্বীকৃতি প্রত্যাহার করেছিল। চার্লসের মৃত্যুর পর তাঁর উত্তরাধিকার নীতি সফলতা পায়নি। চার্লস মৃত্যুবরণ করেন ১৭৪০ সালে। মৃত্যুর মধ্য দিয়ে তিনি আসলে অস্ট্রিয়ান সিংহাসনের উত্তরাধিকারের জন্য একটি যুদ্ধ চালু করে দিয়েছিলেন।

ফলে ১৭৪০ সাল থেকে ১৭৪২ সাল পর্যন্ত ‘পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের’ সিংহাসন ছিল শূণ্য। এ সময় কার্যত এ সাম্রাজ্যের সাময়িক বিলুপ্তি ঘটেছিল। ১৭৪২ সালে এ সাম্রাজ্য আবার প্রতিষ্ঠিত হলেও হাবসবার্গ রাজপরিবারের কারও হাতে ক্ষমতা আসেনি। এটি ছিল হাবসবার্গ রাজবংশের দীর্ঘ তিনশ’ বছরের একটানা শাসনের পর প্রথম ক্ষমতা হারানোর ঘটনা।

১০. উইটেলসবাক রাজপরিবার (১৭৪২-১৭৪৫ সাল)

সপ্তম চার্লস (১৭৪২-১৭৪৫ সাল): ১৭৪২ সালের ২৪ জুন ‘পবিত্র রোমান সম্রাটের’ আসনে বসেন সম্রাট সপ্তম চার্লস। তিনি উইটেলসবাক রাজবংশের সদস্য ছিলেন। সপ্তম চার্লস ১৭২৬ সালে বাভারিয়ার প্রিন্স ইলেক্টর হয়েছিলেন। তিনি ছিলেন তিন শ’ বছরের মধ্যে প্রথম কোন সম্রাট যিনি হাবসবার্গ রাজপরিবারের সদস্য ছিলেন না। উত্তরাধিকারভিত্তিক ক্ষমতা লাভের যে ধারা এতদিন ধরে চলে আসছিল তার বাইরে এসে নির্বাচিত সম্রাট হওয়ার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন তিনি। ১৭৪৫ সালের ২০ জানুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেছিলেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি সম্রাটের পদে ছিলেন।

১১. হাবসবার্গ-লোরাইন রাজপরিবার (১৭৪৫-১৮০৬ সাল)

প্রথম ফ্রান্সিস (১৭৪৫-১৭৬৫ সাল): ১৭৪৫ সালে ‘পবিত্র রোমান সম্রাটের’ আসনে বসেন সাবেক সম্রাট ষষ্ঠ চার্লসের জামাতা সম্রাট প্রথম ফ্রান্সিস। ১৭৬৫ সালে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি এ পদে বহাল ছিলেন। প্রথম ফ্রান্সিস তুসানির গ্রান্ড ডিউকও ছিলেন। তবে তাঁর সাম্রাজ্যের প্রকৃত ক্ষমতা ছিল তাঁর স্ত্রী মারিয়া থেরেসার হাতে। সাবেক সম্রাট ষষ্ঠ চার্লস তাঁর এই কন্যাকেই তাঁর ক্ষমতার উত্তরাধিকারী বানাতে চেয়েছিলেন।

সম্রাট প্রথম ফ্রান্সিস এবং তাঁর স্ত্রী মারিয়া থেরেসা মিলে হাবসবার্গ-লোরাইন রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ফ্রান্সিস ১৭২৮ সাল থেকে ১৭৩৭ সাল পর্যন্ত লোরাইনের ডিউক ছিলেন। ১৭৩৭ সালে লোরাইন ফ্রান্সের অধীনে চলে যায়। পোলিশ সাকসেশন নিয়ে সংঘটিত যুদ্ধের পর শান্তি চুক্তির ভিত্তিতে লোরাইন ফ্রান্সের অধীনে গিয়েছিল।


চিত্র: পবিত্র রোমান সম্রাটের মুকুট

অন্যদিকে, এই চুক্তি অনুযায়ী ফ্রান্সিস এবং লোরাইন রাজবংশকে দেওয়া হয় তুসানির গ্রান্ড ডাচি। প্রথম ফ্রান্সিস সম্রাটের পদে বসার পর পুরনো লোরাইন ডাচিটি আবার ফিরে পান। ফ্রান্সিস তাঁর ভাই প্রিন্স চার্লস আলেকজান্ডারকে নামেমাত্র এ ডাচির ক্ষমতা প্রদান করেন। ১৭৬৬ সালে এ ডাচিটি উত্তরাধিকারসূত্রে আবারও ফ্রান্সের সাথে সংযুক্ত হয়। সংযুক্ত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত প্রিন্স চার্লস আলেকজান্ডারের হাতেই ছিল এ ডাচি।

দ্বিতীয় জোসেফ (১৭৬৫-১৭৯০ সাল): ১৭৬৫ সালে ‘পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের’ ক্ষমতা লাভ করেন সম্রাট দ্বিতীয় জোসেফ। তিনি ছিলেন সম্রাট প্রথম ফ্রান্সিস এবং তাঁর স্ত্রী মারিয়া থেরেসার জ্যোষ্ঠপুত্র। দ্বিতীয় জোসেফ ১৭৬৫ সাল থেকে ১৭৯০ সাল পর্যন্ত ‘পবিত্র রোমান সম্রাট’ ছিলেন এবং ১৭৮০ সাল থেকে ১৭৯০ সাল পর্যন্ত সবগুলো হাবসবার্গ ভূখণ্ডের শাসক ছিলেন। দ্বিতীয় জোসেফ ছিলেন লোরাইন রাজবংশের প্রথম ব্যক্তি যিনি অস্ট্রিয়ান অঞ্চলসমূহ শাসন করেছিলেন।

দ্বিতীয় জোসেফ ‘এনলাইটেন্ড এবসোলিউটিজম’ এর প্রবর্তনে বিশ্বাসী ছিলেন। তাঁর আধুনিকতাবাদী ধর্মীয় সংস্কারনীতি একটি প্রভাবশালী বিরোধী পক্ষের জন্ম দিয়েছিল। এর ফলে তাঁর সংস্কার কর্মসূচিসমূহের বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্থ হয়েছিল। তিনজন ‘গ্রেট এনলাইটেনমেন্ট মনার্ক’ এর মধ্যে একজন ছিলেন তিনি। তাঁর মতো আরও দু’জন ‘গ্রেট এনলাইটেনমেন্ট মনার্ক’ ছিলেন রাশিয়ার দ্বিতীয় ক্যাথারিন এবং প্রুশিয়ার দ্বিতীয় ফ্রেডারিক।

দ্বিতীয় জোসেফের ধর্মীয় মতাদর্শ ও নীতিসমূহ এখন ‘জোসেফিনিজম’ নামে পরিচিত। তিনি কোন পুত্র সন্তান রেখে যাননি। ১৭৯০ সালে তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর উত্তরাধিকারী হন তাঁর কনিষ্ঠ ভাই লিওপোল্ড।

দ্বিতীয় লিওপোল্ড (১৭৯০-১৭৯২ সাল): ১৭৯০ সালে সম্রাট দ্বিতীয় জোসেফের কনিষ্ঠ ভাই লিওপোল্ড ‘পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের’ সিংহাসনে বসার পর সম্রাট দ্বিতীয় লিওপোল্ড হিসেবে পরিচিতি পান। ‘পবিত্র রোমান সম্রাট’ হওয়ার পাশাপাশি তিনি হাঙ্গেরি ও বোহেমিয়ার রাজাও হয়েছিলেন। ১৭৬৫ সাল থেকে ১৭৯০ সাল পর্যন্ত তিনি অস্ট্রিয়ার আর্চডিউক এবং তুসানির গ্রান্ড ডিউক ছিলেন। লিওপোল্ডও তাঁর ভাইয়ের মতো ‘এনলাইটেন্ড এবসোলিউটিজম’ এর অনুসারী ছিলেন। ১৭৯২ সালে তাঁর মৃত্যু হয়।

দ্বিতীয় ফ্রান্সিস (১৭৯২-১৮০৬ সাল): ১৭৯২ সালে ‘পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের’ সিংহাসনে বসেন সম্রাট দ্বিতীয় ফ্রান্সিস। ১৮০৬ সালের ৬ আগস্ট পর্যন্ত তিনি ‘পবিত্র রোমান সম্রাট’ ছিলেন। দ্বিতীয় ফ্রান্সিস ছিলেন ‘পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের’ ইতিহাসের সর্বশেষ সম্রাট। ১৮০৬ সালে অস্টার্লিটজের যুদ্ধে তিনি নেপোলিয়নের থার্ড কোয়ালিশনের কাছে শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছিলেন। তাঁর এ পরাজয়ের পর ‘পবিত্র রোমান সাম্রাজ্য’ ভেঙ্গে যায়।

এরপর আর কখনোই এ সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তাই দ্বিতীয় ফ্রান্সিসের পরাজয়ের মধ্য দিয়ে চিরতরে বিলুপ্তি লাভ করেছিল এক হাজার বছরের পুরনো এ সাম্রাজ্য। অন্যদিকে, ১৮০৪ সালে ফ্রান্সিস অস্ট্রিয়ান সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং ‘প্রথম ফ্রান্সিস’ হিসেবে এ সাম্রাজ্যের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন। ১৮০৪ সাল থেকে ১৮৩৫ সাল পর্যন্ত তিনি অস্ট্রিয়ান সাম্রাজ্যের সম্রাট (কাইজার ভন অস্টেরিচ) ছিলেন।

দুটি পৃথক সাম্রাজ্যের সম্রাট হওয়ায় ফ্রান্সিসকে ‘ডপেল কাইজার’ অর্থাৎ ‘ডবল সম্রাট’ সম্রাট বলা হতো। তিনি ছিলেন ইতিহাসের একমাত্র সম্রাট যাকে এই নামে ডাকা হয়েছিল। ফ্রান্সিস উত্তরাধিকারসূত্রে অস্ট্রিয়ার শাসক হয়েছিলেন। তিনি হাঙ্গেরি ও বোহেমিয়ার এপোস্টলিক রাজাও ছিলেন। ১৮১৫ সালে জার্মান কনফেডারেশন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তিনি এর প্রথম প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন।

ফ্রান্সিস ইউরোপের উদীয়মান সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ফ্রান্সের শাসক নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে নেতৃস্থানীয় ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ফ্রান্সের বিরুদ্ধে কয়েকটি যুদ্ধে তিনি অংশ নিয়েছিলেন। অস্টার্লিটজের যুদ্ধের পরও আরও কিছু নেপোলিয়নিক যুদ্ধে তিনি পরাজিত হয়েছিলেন। ১৮১০ সালের ১০ মার্চ তাঁর কন্যা মেরী লুইস অভ অস্ট্রিয়ার সাথে নেপোলিয়নের প্রক্সি বিবাহ সম্পন্ন হয়। অনেকের কাছে এই ‘প্রক্সি মেরেজ অভ স্টেইট’ ফ্রান্সিসের ব্যক্তিগত পরাজয়ের একটি নমুনা হিসেবে বিবেচ্য হয়।

ষষ্ঠ কোয়ালিশনের যুদ্ধের পর নেপোলিয়ন ক্ষমতাচ্যুত হলে অস্ট্রিয়া ‘পবিত্র জোটের’ একটি নেতৃস্থানীয় সদস্য হিসেবে ভিয়েনা কংগ্রেসে যোগদান করে। এরপর ইউরোপ একটি নতুন মানচিত্র লাভ করে এবং ফ্রান্সিস তাঁর পুরনো সাম্রাজ্যের অঞ্চলগুলো পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হন। কিন্তু ‘পবিত্র রোমান সাম্রাজ্য’ আর প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ইউরোপ ক্রমশ এগিয়ে যায় জাতীয়তাবাদ ও জাতিরাষ্ট্রের চূড়ান্ত বিকাশের পথে এবং ইউরোপে চূড়ান্তরূপে প্রাধান্য লাভ করে পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদ।

লেখক: আসিফ আযহার
শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, শাবিপ্রবি
ই-মেইল: [email protected]
ওয়েবসাইট: http://www.asifajhar.wordpress.com
ফেসবুক: Asif Ajhar, যোগাযোগ: 01785 066 880

বি.দ্র: রকমারিসহ বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটে লেখকের সবগুলো বই পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে লেখকের নামে সার্চ দিলেই যথেষ্ট।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:১১
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×