somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মোঃ আসিফ ইকবাল রুমি
পড়তে, জানতে ও লিখতে ভালবাসি । বিতর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে জানতে ও জানাতে খুব বেশি ভাল লাগে ।

চিলেকোঠা- বনশ্রীর সেই ভূত বাড়ি

০৮ ই জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১১:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চিলেকোঠা ।। দিনে কয়েকবার বনশ্রী বি-ব্লকের ঐ বাড়ির সামনে দিয়ে যেতে হতো বনশ্রী সি-ব্লকে থাকা আবিরের। ক্লান্তির জন্য কখনও সেভাবে খেয়াল করা হয় নি।

বাড়ি টা ভূতের বাড়ি নামে পরিচিত ছিল।


“ব্যাস্ততার এই শহরে মানুষ থাকার জায়গা পায় না আবার ভূত” এমনটাই ভাবতো আবির।

কিন্তু সেই একটা রাত জীবন বদলে দেয় আবিরের।

৩০ শে জুন, ২০১৫ ।।
রাত ৯ টা, ঘড়ির দিকে তাকাতেই ম্যানেজারের রক্তচক্ষু নজরে পরলো আবিরের।
জুন ক্লোজিং চলছে ব্যাংকে তাই, আজ বাড়ির কথা চিন্তা করাও যেন মহাপাপ ম্যানেজারের তাকানো দেখে কিছুটা এমনই মনে হল।

বারশো টাকার একটা হিসাব মিলাতে প্রায় রাত এগারোটা বেজে গেল সবার।
অর্ধেক শার্টের ইন খুলে শরীরে প্রাকৃতিক বাতাস যাওয়া আশার একটা রাস্তা করে হাঁটা শুরু করলো আবির।
পনেরো মিনিট হাঁটার পর একটা টং দোকান পেয়ে পূর্ণ ঘামাক্তো শরীর নিয়ে বসে একটা চা আর বেনসন ধরালো আবির।
সারাদিনপরে যেন একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো সে ।

রাত ১২ টা বাজে প্রায় বাস রিক্সা কোন কিছুর বালাই নেই।
ক্ষুধায় ইতোমধ্যে ডাবল কনটেন্ট ডিসওর্ডার হওয়া শুরু হয়েছে তাঁর।
সব জিনিষ দুইটা দেখে সে এখন। না খেয়ে একমিনিটও হাঁটা বিপদজনক ।

মালিবাগ রেলগেটে, রাস্তার পাশে, খোলা আকাশের নিচে, দাঁড়িয়ে খেতে হয় একটা
বিরিয়ানি পাওয়া যেত সে সময়, গরীবের বিরিয়ানি নামে এই বিরিয়ানির দাম ছিলো মাত্র ৪০ টাকা ।
দ্বিতীয় কোন সুযোগ না থাকায় ৪০ টাকার বিরিয়ানি দিয়েই আহার শেষ করল আবির।

অবশেষে একটা রিক্সা পেলো কিন্তু রামপুরা পর্যন্ত, বনশ্রী যেতে রাজি হলো না রিক্সাওয়ালা, এতো রাতে।

প্রায় দুই টা বাজে রাতের এমন সময় নিরুপায় হয়েই রামপুরা ব্রিজ থেকে হাঁটা শুরু করলো আবির।
কিছুদূর যেতেই আবারও ডাবল কনটেন্ট ডিসঅর্ডার দেখা দিলো তাঁর ~এবার ক্লান্তিতে~।

ভূতবাড়ির সামনে দিয়ে সোজা হাঁটা দিলো সে, অন্ধকার গলিতে যতদূর চোখ যায় জনমানব শূন্য।
কিছু সিগারেট নিয়ে বাসায় উঠবে ভাবছিলো আবির। তাই একটা সিকিউরিটি গার্ড খুঁজছিলো।
কারণ তাদের কয়েকজনের কাছে রাতে প্রায় সবরকম নেশার সকল রসদ পাওয়া যেতো।

কিছুক্ষণ পরে সামনে একজনকে দেখলো সে। চাঁদর মুরি দিয়ে হাতে টর্চলাইট নিয়ে বসে ছিল।
তার কাছে পাঁচটা খুব সুন্দর বিড়ালের বাচ্চা খেলছিলো এবং একটু দূরে একটা ছোট বিড়াল ছানা একা বসে ছিল।
আবির লোকটার কাছে যেতেই আবিরের পায়ের কাছে এসে পা চাঁটতে শুরু করে বিড়াল ছানাটা।
নেহাত বিড়াল পছন্দ না- না হয় কোলে তুলে আদর করতো তাকে আবির এতোটাই সুন্দর ছিল বিড়ালটা।

লোকটার কাছে গিয়ে ডাকায় লোকটা ঘুরে তাকালে ভয়ে আঁতকে উঠে আবির। একচোখে পাথর বসানো, গালে বড় একটা কাঁটা দাগ।

কিছু না বলে চলে যেতে নিলে পিছন থেকে ডাক দেয় লোকটা আবিরকে।
স্যার হুনেন এতো রাইতে কুত্তাউ বিরি পাইবেন না।
পিছের বিল্ডিংটার ছাঁদ ছাড়া। কি জানি কুইন না, আন্নেরা “চিলেকোঠা”।
বলে বীভৎস একটা হাঁসি দিলো- পান খাওয়া দাঁতের হাঁসি এতটা বীভৎস হয় আজ বুঝলো আবির।

লোকটা সুবিধার মনে না হওয়ায় সে সামনে হাঁটা শুরু করলো বাড়ির দিকে।
কিন্তু বিপত্তি ঘটলো যখন আবির তার বাসাটা খুঁজে পাচ্ছিলো না।
এবং সে বুঝতে পারলো বারবার ঘুরে ফিরে সে এক গলিতেই আসছেন।

এবার ভয় লাগা শুরু হয় যখন সে তার চারপাশে ধোঁয়াশা হয়ে যেতে দেখে।
সামনে কিছু দেখতে পাচ্ছিলো না সে।
হঠাৎ ধোঁয়াটা পরিষ্কার হতেই একদম তার মুখের কাছে আবিষ্কার করে সেই নোংরা একপাটি দাঁত। দেখেই চিৎকার করে উঠে সে।

“হে হে হে স্যারের ডর করছে নি।” স্যার ডর পাইয়েন না।
আমি দারুয়ান। কইছিলাম না, কুত্তাউ পাইবেন না। আমার তেই লইতে হইবো।
আহেন আমার লগে। বাড়িতে ঢোকার ঠিক আগে আবির বুঝতে পারলো এটা সেই ভূত বাড়ি। আর এর চিলেকোঠা তে যাচ্ছিলো তারা।

পরিত্যাক্ত সেই বাড়ির ভিতরে ঢুঁকে অবাক আবির। দুবাইয়ের সাত তারকা হোটেলগুলোর চেয়েও বেশি জাঁকজমক পূর্ণ ভিতরটা।
অনেক মানুষ চলাফেরা করছে তাঁদের কাউকেই বাংলাদেশী মনে হল না আবিরের।
প্রতিটা ফ্লোরের সৌন্দর্য অবলোপনের লোভ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলো না সে।
তাই লিফট না নিয়ে চলন্ত সিঁড়ি ব্যবহার করলো সে।
চলন্ত সিঁড়ির প্রথম থেকে পঞ্চম তলা যতটাই পরিত্যাক্ত আর সাদামাঠা, পঞ্চম থেকে এগারোতলা ঠিক ততটাই জাঁকজমক পূর্ণ।

এগারো তলায় সেই চিলেকোঠা । চিলেকোঠায় গিয়ে কিছু মানুষ দেখলো সে যাদের দেখে মনে হচ্ছিলো শূন্যে ভাসছে।
কেন না এতো বেশি ধোঁয়া ছিল সেখানে।

তাঁদের মধ্যে একজন হাত বাড়িয়ে সিগারেট জাতিও কিছু একটা দিলো। যার একটা টানে মূর্ছা গেল আবির।

জ্ঞান ফিরতে শীত অনূভব করলো আবির। ঠিক যেন ডিসেম্বরের ঠাণ্ডা। হয়তো রাতের প্রভাব হবে।
কিন্তু মাসের প্রথম দিন অফিসে তো অনেক কাজ। ভেবে উঠতে গিয়ে নিজেকে বল শূন্য আবিষ্কার করলো সে।

সাদা এপ্রোনে এক মহিলাকে সামনে ঠিক যেন নার্স। তাহলে কি সে হাসপাতালে? জানতে ডাক দিলো নার্সকে। কিন্তু নার্স উত্তর না দিয়ে চিৎকার করে বাইরে গেল, “জ্ঞান ফিরছে” বলে।

ডাক্তার আসায় আবির জিজ্ঞেস করলো, “আমার আফিসে মাসের প্রথমদিন কাজ একটু বেশি থাকে, আমি কি যেতে পারি?” অবাক হয়ে ডাক্তার উত্তর দিলো,“কিন্তু আজ তো পনেরো তারিখ”।

তার মানে আমি পনেরো দিন যাবত এই হাসপাতালে আছি? আবারও অবাক চোখে ডাক্তারের উত্তর “না চার বছর পাঁচ মাস পনেরো দিন”।

শুনে পা’য়ের নিচের মাটি সরে যায় আবিরের। হয়তো মজা করছে নাকি সত্য বলছে কিচ্ছু বুঝতে পারছিলো না আবির।

কিছুক্ষণ পর পুলিশ এসে পুরো ঘটনা শুনে বলল “আপনি একা নন।
আপনার আগে পাঁচ জন এবং পরে সতের জন ছিল। তাঁদের সবার মধ্যে আপনিই এক মাত্র জীবিত।
তবে ভূত বাড়ি তো পাঁচ তলা, আপনি এগারো তলা পেলেন কিভাবে আর ভূত বাড়িতে তো কোন চিলেকোঠাও নেই”।

নিয়মিত আপডেটের জন্য যুক্ত হোন
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১১:০১
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×