somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভয়, অতঃপর ভালবাসা

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সেদিনের কথা আজো মনে পড়ে। ২০১০ সালের ২ জানুয়ারি। অনার্স জীবনের প্রথম ক্লাস শুরু হয়েছিল সেদিন। অনেক জ্ঞানী-গুণি শিক্ষেকের মাঝে আমরা তখন নিতান্তই শিশু। মনের ভিতর অসীম উদ্দীপনা, একদিকে ভাললাগা, অন্যদিকে বুকের ভিতর দূরু দূরু কাঁপন- নতুন জায়গা; নতুন পরিবেশ; নতুন ক্লাস; নতুন শিক্ষক; নতুন আরো যে কত কি!!

প্রথম কয়েকটি ক্লাসে মুগ্ধ হলাম। স্যারদের লেকচার, অসাধারণ যুক্তিনিষ্ঠতা আর অগাধ জ্ঞান ভাণ্ডার দেখে আমার মুগ্ধতার সীমা রইল না। মনে হল ইশ!! যদি আরো কয়েক বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে পারতাম!!

কিন্তু পরক্ষণেই যে আমার ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে এমন ঘোর বিপত্তির উদয় হবে কে জানতো? পরবর্তী ক্লাসে উপস্থিতি দেয়ার সময় "yes sir" বলে পড়লাম মহা বিপাকে। বাংলা বিভাগের ছাত্র হয়ে ইংরেজ আচরণ! এই আমাদের ভাষা প্রেম!! তারপর সে কি অপমান! আমাদের কয়েকজনকে তো ক্লাস থেকেই বের করে দিলেন ক্লাস টিচার। অজান্তেই ঐ শিক্ষককে নিয়ে মনের মধ্যে এক দূর্দান্ত ভয় বাসা বেঁধে নিল। মনে হল, বাবা যেন আমাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিলেন। এ সংসারে আমার আর কোথাও জায়গা নেই।

বলছিলাম বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমার প্রিয় শিক্ষাগুরু ড. মিজানুর রহমান খান (প্রফেসর বাংলা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়) সম্পর্কে। একটা মানুষ যে এত ভাল হতে পারে ঐদিন তা বুঝতে পারিনি। আর যখন বুঝেছি তখনই তিনি চলে এসেছেন আমার প্রিয় ব্যক্তিত্বের তালিকায়।

প্রথম প্রথম স্যারকে দেখলে অনেক দূর দিয়ে যেতাম। মনের ভিতরে সেই ভয়টা তখনও ছিল। একদিন হঠাৎ করেই স্টেডিয়ামের সামনে স্যারের সাথে দেখা হয়ে গেল। আগে থেকে স্যারকে দেখতে পেলে হয়ত দূর দিয়ে যেতাম। কিন্তু হঠাৎ সামনা সামনি হয়ে যাওয়াতে পালানোর কোন উপায় ছিল না। কি আর করা। অগত্যা ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম। একবুক সাহস নিয়ে স্যারের সাথে কথা বললাম। আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছিল না কিভাবে স্যারের সাথে কথা বলে ফেললাম। একটা জিনিস খুব ভালভাবে লক্ষ করলাম কিন্তু ক্লাসরুমের মিজান স্যার আর বাইরের মিজান স্যারকে কিছুতেই এক করতে পারলাম না। মানুষ এতটাও আন্তরিক হতে পারে!!

এই মানুষটি সম্পর্কে জানার আগ্রহ বেড়ে উঠল। গতদিন কথা বলে যে সাহসটুকু পেয়েছিলাম সেই সাহসটাই কাজে লাগালাম। ক্লাসরুমের বাইরে- বিশেষ করে প্রতিটি পিকনিকে, প্রতিটি খেলার মাঠে, নিরিবিলি চেম্বারে একজন আদর্শ মানুষের পরিচয় পেতে লাগলাম। তাঁর কথার যেমন তেজ, তেমনি যুক্তিনিষ্ঠতা। পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, ধর্ম, দর্শন, বিজ্ঞান এমন কিছু নেই যা তাঁর ছায়াতলে থেকে শিক্ষা নেয়া যায় না। তারপর থেকে যতদিন যেতে লাগল ততই তাঁর ব্যক্তিত্বের কাছে ভয়টা ভালবাসায় রুপান্তরিত হল।

একজন শিক্ষক- অথচ তিনি কখনো হয়ে ওঠেন বন্ধুর মত, কখনো বাবার মত, কখনো বড় ভাইয়ের মত আবার কখনো হয়ে ওঠেন নির্মম শাসক।

ভয়?? ভালবাসার মানুষ একটু ভয় দেখালে মিষ্টিই লাগে মনে হয়।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×